Ragging To Loving ? Part:45

0
867

? Ragging To Loving ?
Part:: 45
Writer:: Ridhira Noor

সোহেল বসা থেকে উঠে গেল ছাদের দিকে।

সোহেলঃঃ- না জানি হঠাৎ মায়মুনা ছাদে যেতে বলল কেন? (ফোনের রিং বেজে উঠল। রিসিভ করে কথা বলতে বলতে হাটছে)
.
.
ওইদিকে ছাদে নূর মায়মুনা খুঁজছে। পুরো ছাদ গোল্ডেন মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। এছাড়া আর কোন আলো নেই। বাতির এই আলোতেই ছাদ কিছুটা আলোকিত আছে। নূর মায়মুনাকে খুঁজছে ফুলের টবের পিছনে, মরিচ বাতির আড়ালে। এমনকি ছাদ থেকে নিচে উঁকি মেরেও দেখছে কোথাও ঝুলে আছে নাকি। এতটুকু মানা যায়। অবশেষে খুঁজতে গেল ইটের নিচে। ফুলের টবের নিচে। দরজার চিপায়। ভাবা যায় এগুলা।

নূরঃঃ- ধুরর এই মায়মুনা ফকিন্নি আমাকে আসতে বলে নিজে কোথায় হারিয়ে গেল? (খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে ছাদের কোণায় থাকা দোলনায় দুলতে লাগলো। মুখ লটকিয়ে দোলনায় হেলান দিয়ে আছে। আর গানের সুরে বলছে) মায়মুনা কেন এলো না, কিছু ভালো লাগে না। এবার এলে তাকে আমি মজা দেখাবো।
.
.
পান্নাঃঃ- অনেক্ষণ হয়ে গেল সোহেল আর নূর গেল। এখন আফরানকে পাঠাতে হবে। কিন্তু কিভাবে পাঠাবো? মায়মুনার নাম দিয়ে পাঠাতে পারব না। কারণ সে ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসেছে। অন্য কিছু ভাবতে হবে। (এসব চিন্তা করতে করতে দেখে আফরান নিজে তার কাছে চলে এসেছে।) হাই আফরান! (তার উত্তর না দিয়ে বলতে লাগলো)

আফরানঃঃ- নূরকে দেখেছ?

পান্নাঃঃ- (নূর নূর নূর। সবসময় শুধু নূর। আমার হাই এর জবাব দেওয়াও তোমার কাছে জরুরি না। বাট নো প্রব্লেম। শুধু আজকের জন্যই শেষ বারের মতো নূরের নামে মালা জপে যাও।) নূর? হ্যাঁ দেখেছি তো। ছাদের দিকে যাচ্ছিল।

আফরানঃঃ- ওহ আচ্ছা। (বলে চলে গেল। পান্না মনে মনে পৈশাচিক হাসি দিল।) নূর আমি আর পারছি না নিজের অনুভূতি ধরে রাখতে। নিজের ভালবাসা তোমার কাছে ব্যক্ত করতে চাই। বলতে চাই তোমাকে কতটা ভালবাসি। (পিছনের চুলে হালকা আঙুল বুলালো) হায় রে। দেখ এতদিন ভালবাসতাম কিন্তু বুঝতে পারিনি। আর আজ বুঝতে পেরে কেমন অধৈর্য্য হয়ে পড়েছি। (ছাদে গিয়ে আফরান অবাক হয়ে যায়।)

নূর উল্টো হয়ে দোলনায় শুয়ে আছে। পা উপর দিকে তুলে দোলনার উপর পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে আছে। আর গান গাইছে। “আজ মে উপার পার পার পারররররর…… আসমান নিচে চে চেচে চেচ্চে….. আজ মে আগে গে গে গেগেগগেগে…… (এক লাফ উঠে দাঁড়ালো) জামানা হেএ পিছেএএএএএএ (আরেক লাফ দিয়ে পিছনে ফিরল। আবছা আলোয় আফরানকে দেখতে পেল। ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করা চকচকে দাঁত দিয়ে দিল ভেটকাইয়া।)

নূরঃঃ- হাই জামানা। (হাত উপরে তুলে)

আফরানঃঃ- হোয়াট? জামানা?

নূরঃঃ- হ্যাঁ! আমি এখন গান গাইছিলাম। আজ মে আগে। জামানা হে পিছে। আমার পিছনে তো আপনি ছিলেন। তাই আপনি জামানা। হিহিহিহি। (হুদাই পাগলের মতো ভেটকাচ্ছে)

আফরানঃঃ- তোমার মাথা ঠিক আছে তো? কিসব আবোল তাবোল বকছ।

নূরঃঃ- হোওওওও (দুই গালে হাত দিল) আপনি কি বলতে চাইছেন আমি আবোল তাবোল বকছি? আপনি আমাকে পাগল বলছেন? আপনি কিভাবে পারলেন এমনটা বলতে? (বলেই নাক টেনে কাঁদতে লাগলো। আফরান হতভম্ব হয়ে তার কান্ড দেখছে। হঠাৎ আবার নূরের কি হলো। এমন করছে কেন? নূর নাক টেনে টেনে আফরানের দিকে তাকাল।) একটা কথা বলুন তো! আপনি আমার ব্যাপারে এতকিছু জানলেন কি করে? (ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল)

আফরান হাসবে কি কাঁদবে কিছু বুঝতে পারছে না। হঠাৎ নূর এসব অটপটে কথা বলছে কেন? কথার ধরনও কেমন যেন খটকা লাগছে। নূরের কাছে গিয়ে স্মেল নিতে লাগলো।

আফরানঃঃ- নূর তুমি কি ড্রিংক করেছ?

নূরঃঃ- ইয়েস ইয়েস আই ড্রিংক। আই ড্রিংক।

আফরানঃঃ- হোয়াট? অসম্ভব তুমি ড্রিংক করার মতো মেয়ে না।

নূরঃঃ- বললাম তো আই ড্রিংক। আমি জুস ড্রিংক। উম্মম্ম খুব ট্যাশ। (আবারও পাগলের মতো হাসছে)

আফরানঃঃ- (না জুস খেলে এমন হওয়ার কথা না। আমরাও খেয়েছি আমাদের কিছু হয়নি। নিশ্চয় নূরের জুসে কিছু ছিল।) নূর তোমাকে জুস কে দিয়েছিল?

নূর গালে আঙুল দিয়ে উপর দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো। কে দিয়েছে? আবার নিচে তাকিয়ে দৌড় দিল। আচমকা দৌড় দেওয়ায় আফরান চমকে উঠে। পাশে তাকিয়ে দেখে নূর ফুলের টবের পাশে বসে আছে। দুই গালে হাত দিয়ে কিছু একটা দেখছে। আফরান নূরের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। নূর আফরানকে দেখে হেচকা টান দিয়ে বসিয়ে দিল।

নূরঃঃ- হায় কিতনা কিউট হে। এই দেখেন দেখেন জোনাকি পোকা। ফুলের উপর মিটমিট করছে।

আফরান নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। জোনাকির মিটমিট আলোয় নূরের চোখ চকচক করছে। মুখে এক রাশ হাসি। তার হাসিতেই যেন আফরানের মন ভরে উঠছে। হালকা বাতাসে নূরের খোলা চুল এলোমেলো হয়ে আছে। এতে তাকে দেখতে আরো অপরূপ লাগছে। আফরান এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নূরের কথায় তার ঘোর কাটলো।

নূরঃঃ- জানেন জোনাকিরা নাকি আসার সময় খুশি নিয়ে আসে। যেখানে নাকি ভালবাসার মানুষরা একসাথে থাকে সেখানে তারা তাদের আলো দিয়ে খুশি ছড়িয়ে দেয়। (নূরের কথায় আফরান মুচকি হাসলো) আমার না দুইটা জিনিস ভীষণ পছন্দ। এক দিনের বেলায় প্রজাপতি, দুই রাতের বেলায় জোনাকি। প্রজাপতিরা তাদের ভালবাসার রঙ ছড়িয়ে দেয়। আর জোনাকিরা আলো। আমার দুইটা ইচ্ছে ছিল। এক অনেক গুলো প্রজাপতির মাঝে খেলা করা। যা স্কুল লাইফে পূরণ হয়েছে। শিক্ষা সফরে আমরা মিরাসরাই গিয়েছিলাম। সেখানে ঝর্ণার পাশে ছোট একটা জঙ্গল ছিল। সেখানে অনেক গুলো রঙ বেরঙের প্রজাপতি ছিল। পৃথিবীর সব রঙের মেলা যেন সেখানেই জমে গিয়েছিল। (নূরের মুখের হাসিই বলে দিচ্ছে সে কতটা খুশি।)

আফরানঃঃ- আর দ্বিতীয় ইচ্ছে কি? (বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল)

নূরঃঃ- রাতের বেলায় অনেক গুলো জোনাকির মাঝে খেলা করা। কিন্তু সেই সুযোগ কখনো হয়ে উঠে নি। (চেহারা মলিন হয়ে গেল। আবার এক রাশ হাসি দিয়ে বলল।) একদিন সে ইচ্ছেও পূরণ হবে। (হেসে আফরানের দিকে তাকাল)

আজ আফরান যেন অন্য এক নূরকে দেখছে। এই প্রথম নূর মন খুলে আফরানের সাথে কথা বলছে। অসম্ভব ভালো লাগছে তার। আবারও যেন সে নূরের প্রেমে পড়ছে। আকাশের পানে তাকিয়ে হুট করে নূর দাঁড়িয়ে গেল। তাকে এভাবে উঠে যেতে দেখে আফরানও দাঁড়িয়ে গেল। চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।

নূরঃঃ- আমি যদি পাখি হতাম! তাহলে ওই মুক্ত আকাশে উড়তে পারতাম বাঁধাহীন হয়ে। প্রজাপতির সাথেও খেলতে পারতাম আবার জোনাকির সাথেও খেলতে পারতাম। (হঠাৎ দৌড় দিয়ে ছাদের মাঝে দাঁড়ালো। ওড়না পিছনের দিকে ছড়িয়ে নিল। গান গাইতে লাগলো।) পানচি বানে উড়তা ফিরু মাস্ত গাগান মে, আজ মে আজাদ হু দুনিয়া কে ছামান মে। (ওড়না ছড়িয়ে লাফাতে লাগলো) আহহ উড়ে পারছি না কেন? আফরান ফিক করে হেসে দিল।)

আফরানঃঃ- এমনিতে কি কম পাগল? এখন তো এর পাগলামি আরো বেড়ে গেল। (উড়তে পারছে না বলে নূর মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে। নূরকে এভাবে দেখে আফরানের খারাপ লাগলো। তাই তার কাছে গিয়ে হুট করে হাটু ধরে উপরে তুলে নিল। তাল সামলাতে না পেরে নূর আফরানের কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরল।) ভয় পেয়ো না। উড়তে চাও আকাশে? (নূর হাসি দিয়ে মাথা উপর নিচে করে হ্যাঁ বলল।) তাহলে চোখ বন্ধ করে হাত মেলে নাও।

নূর তাই করল। আফরান আস্তে আস্তে গোল গোল হয়ে ঘুরছে। নূর হাত মেলে অনুভব করছে। হালকা বাতাসে নূরের চুল উড়ছে। অসম্ভব ভালো লাগছে তার। বেশ কিছুক্ষণ ঘুরার পর আফরান আস্তে করে নূরকে নামিয়ে দিল। দুজনে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। নূরের মুখে হাসি দেখে যেন আফরান পৃথিবীর সব সুখ কুড়িয়ে পেল। মরিচ বাতির সোনালী আলো নূরের মুখে পরছে। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণ ত্বক সোনালী আলোতে আলোকিত হয়ে চকচক করছে। তার চেহারাটা ভীষণ মায়াবী লাগছে। তার উপর নূরের চোখ জোড়া আরো আকর্ষণীয় লাগছে। নূরও আফরানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। ফর্সা সাদা ত্বক সোনালী আলোতে সোনালী রঙ ধারণ করেছে। দুজনেই একে অপরের চোখের পানে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম নূর আফরানের চোখের দিকে তাকাল। বাদামী রঙের চোখ জোড়া আলোতে হলদে বর্ণ ধারণ করেছে।
আনমনে নূর গেয়ে উঠল।

নূরঃঃ- শোন বলি তোমায়, না বলার কথাগুলো আজ বলে দিতে চাই। (মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে করুণ সুরে বলল)

আফরানঃঃ- (গানের সুরে বলে উঠল) বল কি বলতে চাও, সারাটি জীবন ধরে শুনে যেতে চাই।

আফরানের মনে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। ভাবছে হয়তো সে যা বলতে চেয়েছে নূর এখন তা বলতে চাইছে। হয়তো নিজের ভালবাসা ব্যক্ত করতে চাইছে। আফরান উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। সে যেন নূরের কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই। বুক ভরা আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। নূর হাতের ইশারা করে আফরানকে কাছে ডাকল। নূর আফরানের কানের কাছে গেল। আফরান চোখ বন্ধ করে নূরকে অনুভব করছে।

নূরঃঃ- ভ্যেএএএএএএএ (চিৎকার দিয়ে উঠল) শুনেন এবার সারাটি জীবন।

নূরের চিৎকারে আফরানের মাথা ঘুরন্তি দিয়ে উঠল। একটু হালকা পাতলা কোমায় চলে গিয়েছিল। বেশ কিছু সময় পর কোমা থেকে ফিরে এলো। আরেকটু হলে বোধহয় আফরান বেহুশ হয়ে পড়ে যেতে। মাথা ঝাকানি দিয়ে কানের মধ্যে আঙুল দিয়ে ঝাড়তে লাগলো। কি হলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। নিজেকে সংযত করে স্বাভাবিক হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে নূর মেঝেতে বসে পেট ধরে জোরে জোরে হাসছে। দেখে মনে হচ্ছে ভূত প্রেত ধরেছে। এখন যদি কেউ তাকে এই অবস্থায় দেখে তাহলে সত্যি সত্যি পাগল ভাববে। আফরান এখনো ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সব কিছু বুঝে উঠতে তার দুই মিনিট সময় লাগলো। এই মূহুর্তে আফরানের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে এক্ষুনি ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে সুইসাইড করবে। চেহারাটা পুরো দেখার মতো হয়েছে। ভেবেছে কি হলো কি?

আফরানঃঃ- (উপরে দুই হাত তুলল) দড়ি ফালাও উঠে যায়। এই দুনিয়ায় যা দেখার দেখে ফেলছি। অবশেষে এই পাগলের পাল্লায় পড়তে গেলাম। এই পাগলকেই ভালবাসতে গেলাম। (নূরের হাসি দেখে রাগ উঠল। তার সামনে গিয়ে হেচকা টান দিতেই নূর পড়ল আফরানের বুকে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আফরানের দিকে।) তুমি কি বুঝ না কিছু? আমি যে তোমাকে…. (নূর ঢলে আফরানের বুকে পড়ে গেল। আফরান তার মাথা উঠিয়ে দেখে নূর চোখ বন্ধ। হয়তো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় কত নিষ্পাপ লাগে। আফরান মুচকি হেসে বুকের মাঝে আবদ্ধ করে জড়িয়ে ধরল।)

ঠিক সেই সময় সিআইডির দয়ার মতো দরজা ভেঙে এন্ট্রি নিল পান্না আফা। স্টপ…. একটু বেশি হয়ে গেল তাই না? দরজা ভাঙেনি তবে চুপচাপ এন্ট্রি নিল। নূর আর আফরানের এই দৃশ্য দেখে রেগে আগুন হয়ে গেল। রাগের চোটে দেয়ালে ঘুসি মারতে গিয়ে হাত লাগলো পাশে থাকা ফুলের টবে। আওয়াজ হওয়ায় সাথে লুকিয়ে পড়ে। আওয়াজে আফরানের ধ্যান ভাঙল। আশেপাশে তাকিয়ে আছে কেউ নেই। নূরকে কোলে নিয়ে রুমে দিকে গেল। যাওয়ার পথে দেখা হলো আলিফার সাথে। নূরকে দেখে চমকে উঠে।

আলিফাঃঃ- এ কি! কি হয়েছে নূরের?

আফরানঃঃ- নূরের ড্রিংকসে কেউ কিছু মিশিয়েছে। এখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। চিন্তার কিছু নেই।

আলিফাঃঃ- মানে? নূরের….? আরিফেরও একই অবস্থা। আমি তাকে রুমে শুয়ে দিয়েছি।(বলে চুপ হয়ে গেল)

আফরানঃঃ- কি? কিন্তু কে করেছে এসব? আচ্ছা শোন কাউকে কিছু বল না। আমি দেখে নিব।

আলিফা আর আফরান গিয়ে নূরকে তার রুমে শুয়ে দিল। আলিফা আজ নূরের সাথেই তার রুমে থাকল।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here