ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু পর্ব_২৪

0
1115

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_২৪
#সুলতানা_সিমা

সকালের সূর্যের স্নিগ্ধ আলো চোখে পড়তেই ঘুমন্ত অরিনের কপালের বাঁজ পড়ে। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে সে। দিহান এক হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে আর এক হাত বিছানায় রাখা। যেটার উপর অরিনের একটা হাত রাখা। অরিন দিহানের বুক থেকে মাথা তুলতে গেলে দিহান অরিনের হাত ছেড়ে ওই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। অরিন মৃদু হেসে ঘুম জড়ানো গলায় বলল,”জেগে আছেন?” দিহান কিছু বলল না। অরিনকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অরিনের ঘুম জড়ানো কণ্ঠ দিহানকে পাগল করে দেয়। তাঁর মনে একটা ঘোর লাগা কাজ করে। দিহান অরিনের মাথায় একটা চুমু খায়৷ তাঁর নেশা ভরা কণ্ঠে ডাক দেয়,”বউপাখি!” দিহানের কণ্ঠটা অরিনের মনের গভীরে গিয়ে স্পর্শ করে। দিহানের উন্মুক্ত বুকে ভারি নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে একটা চুমু এঁকে দেয়। দিহান আবার ডাকে “এই বউপাখি।” অরিন ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে,”এভাবে ডাকবেন না প্লিজ আমি এলোমেলো হয়ে যাই।” দিহান অরিনকে গাল ছুঁয়ে মুখটা তুলে ধরলো। অরিনের চোখ দুটো নেশাতুর। দিহানের মুখটা এগিয়ে যায় অরিনের ঠোঁটের দিকে। ঠোঁট জোড়া ছুঁতেই অরিন দিহানকে খুব সহজেই সাড়া দিলো। এই মানুষটা দেখলে যে তাঁর নেশা ধরে যায়। সাড়া না দিয়ে সে কেমনে থাকবে? ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিতেই দিহান ও অরিনের প্রতিটি শিরায় শিরায় যেন শীতল রক্তস্রোত চলতে লাগে। শিহরণে কয়েকমূহুর্তের জন্য হারিয়ে যায় অজানা দেশে। দিহান গভীর থেকে গভীরে ডুব দিতে চায়। দরজার বাইরে থেকে কেউ বার বার কড়া নেড়ে যাচ্ছে। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে অরিনকে ছেড়ে দিয়ে টিশার্ট টা পড়তে পড়তে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ইশিকে দেখে বলল,”ওই এতো সকাল সকাল এসে ডাকছিস কেন?
_আমি ডাকছি না। বড় ভাইয়া ডাকছে। তোকে কল দিচ্ছে তোর ফোন বন্ধ। কাল তুই কখন যাবি সেটা জানাতে বলছে।” কথাটা বলে ইশি চলে গেলো। দিহানের মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো। কাল সে চলে যাবে। অরিনকে ছাড়া থাকবে কেমনে? পিছন ঘুরে একবার খাটের দিকে তাকালো সে৷ অরিন উঠে বসে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছে। দিহান দরজা বন্ধ না করে গিয়ে অরিনের পাশে বসলো। খুব কান্না পাচ্ছে তাঁর। অরিনকে ছাড়া থাকার কথা ভাবতেই এতো কষ্ট হচ্ছে তাঁকে ছাড়া থাকতে গেলে কত কষ্ট হবে? অরিন দিহানের কাঁধে হাত রেখে বলল,”কি হয়েছে?” দিহান ম্লান হেসে না সূচক মাথা নাড়িয়ে অরিনকে জড়িয়ে ধরলো। অরিন আবার প্রশ্ন করলো,কিন্তু দিহান কোনো জবাব দিলোনা। সে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরে অরিনের ঘাড়ে তরল কিছু পড়লে অরিন দিহানকে ছাড়াতে চায় কিন্তু দিহান ছাড়েনা। সে শক্ত করে জড়িয়ে রেখে যেমন ভাবে ছিলো সেভাবেই থাকে। অরিনকে ছাড়লে যে অরিন দেখে নিবে তাঁর কান্নাটা। অরিন বলে,”ছাড়েন প্লিজ।” দিহান চোখের পানিটা মুছে এক ঢোক গিলে গলায় স্বাভাবিকতা এনে ছোট করে বলল,”
_উঁহু ছাড়বো না।
_আমি কিচেনে যাবো না?
_কাল এসে আজ কিচেনে?
_না গেলে ওনারা কি বলবেন, প্লিজ ছাড়ুন।
_কেউ কিছু বলবে না।”

_দিহান আসবো?” হঠাৎ দরজার সামনে থেকে শান্তি চৌধুরীর কণ্ঠ ভেসে এলো। উনার গলা শুনে অরিন আর দিহান চট করে একজন আরেকজনকে ছেড়ে দুজন দুদিকে ছিটকে গেলো। দুজনই অস্বস্তিতে পড়ে যায়। অরিন তড়িঘড়ি করে ওড়না মাথায় দেয়। দিহান ঠোঁট কামড়ে হেসে হেসে ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে ওয়াসরুমে চলে যায়। শান্তি চৌধুরী রুমের ভেতর আসেন। অরিনের চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে আছে। অরিন দাঁড়িয়ে উনাকে মুখে সালাম দিলো। উনি সালামের উত্তর দিয়ে দুষ্টুমি করে বললেন,”রোমাঞ্চ করার আগে দরজা খুলা নাকি বন্ধ সেদিকে খেয়াল রাখবি ঠিক আছে।” অরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। শান্তি চৌধুরী মৃদু হেসে বললেন,”আয় আমার জন্য তোর মিষ্টি হাতের চা বানাবি।” শান্তি চৌধুরী অরিনকে নিয়ে নিচে গেলেন৷ সুমনা,সায়রা,দিলারা চৌধুরী কিচেনে ছিলেন। শান্তি চৌধুরী অরিনকে নিয়ে কিচেনে গেলেন। অরিনকে দেখে সুমনা চৌধুরী মৃদু হাসলেন। কিন্তু দিলারা চৌধুরীর মুখে কিঞ্চিৎ বিরক্তির চাপ পড়লো। সায়রা চৌধুরীর বিয়েটাও অরিনের মতো হয়েছে তাই তিনি অরিনের অবস্থাটা বুঝতে পারছেন। শান্তি চৌধুরী উনার তিন বউকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”শুনো৷ আজ থেকে তোমাদের কিচ্ছু কর‍তে হবেনা৷ তোমাদের এমন অগোছালো কাজ আমার ভালো লাগেনা। রান্নাবানা,ঘর মুছা ঘর ঝাড়ু দেওয়া সব কাজ আমার নাত বউ করবে। ওর গোছালো কাজকর্ম গুলো আমাকে মুগ্ধ করে। তাই চাই ও নিজ হাতে এই বাড়িটা সাজিয়ে তুলোক। আর একটা কথা, ওর হাতের রান্না ছাড়া আমাকে কেউ খেতে দিবানা আমি খাবো না।” অরিন নিজের এতো তারিফ শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। কিন্তু সুমনা চৌধুরীর মুখে আমাবস্যার আঁধার নেমে এসেছে। উনার কাছে এটা একদম ভালো লাগছে না। অরিন যেমনই হোক উনার ছেলের বউ। উনার ছেলে ভালবেসে বিয়ে করেছে। সংসারের সব মানুষ বসে খাবে আর উনার ছেলের বউ কাজ করবে এটা উনার একদম সয্য হলো না। শান্তি চৌধুরী অরিনকে সব কাজ বলে বলে দিচ্ছেন। কাপড় ধোয়াটাও বাদ দেননি। শান্তি চৌধুরীর মুখের উপর কিছু বলতে পারবেন না কিন্তু না বলেও তিনি থাকতে পারছেন না। উনি শান্তি চৌধুরীকে বললেন,”আম্মা রান্নাবান্নার কথা বলা যায়। তাই বলে এতোগুলা কাজ করবে? তাও কাপড় ধোয়া টয়লেট ধোয়া পর্যন্ত? মাত্র তো কাল এলো মেয়েটা। আর সব কাজ করার জন্য তো সার্ভেন্ট আছে। তাছাড়া দিহান তো রাতে বলে দিলো অরিনের লেখাপড়া বন্ধ করতে দিবেনা। লেখাপড়ার পাশাপাশি এতো কাজ করা কি করে সম্ভব? আপনি এমন ভাবে কাজ দিচ্ছেন যেন আপনি ওকে কোনো শাস্তি দিতে চান।” শান্তি চৌধুরী সুমনা চৌধুরীর দিকে কপাল কুঁচকে তাকালেন। উনার চেহারায় গম্ভীর ভাব। দিলারা চৌধুরী সুমনাকে বললেন,”সুমনা তুই আম্মার মুখের উপর কথা বলছিস? বলবিনা কেন? তোর ছেলের বউকে কাজ দিচ্ছে যে।” দিলারার কথাটা শেষ হতেই শান্তি চৌধুরী রাগান্বিত স্বরে উচ্চারণ করলেন,”বড় বউ।” শাশুড়ীর ধমকে দিলারা চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু উনার তীক্ষ্ণ চোখ সুমনা ও অরিনকে একবার করে খুন করে দিলো। কাল পালিয়ে আসা মেয়েটাকে আজ এতো আহ্লাদ করা উনার সয্য হচ্ছেনা। পালিয়ে আসা মেয়েকে এতো আহ্লাদ করতে হবে কেন? অরিন উনার মনের চলা বিরক্তিটা ছুঁতে পারলো। তাঁর মন খারাপ হয়ে গেলো। শান্তি চৌধুরী অরিনকে স্নিগ্ধ গলায় বললেন,”মেজো বউ ঠিক বলেছে,তুই এতোগুলা কাজ করে লেখাপড়া করবি কেমনে? তুই শুধু প্রতি বেলায় আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে দিস।” অরিন মৃদু হেসে বলল,”নানুমনি আমি সব করতে পারবো। এসব করে লেখাপড়াও করতে পারবো। আপনি চিন্তা করবেন না।” শান্তি চৌধুরী মৃদু হেসে বললেন,”এখনো নানুমনি ডাকবি?
_সরি। দাদুমনি।
_আচ্ছা ঠিক আছে তুই এখন আমাকে চা দে। পরে বাকিটা করিস।” শান্তি চৌধুরী চলে গেলেন। দিলারা চৌধুরীও চলে গেলেন। অরিন চায়ের পানি বসালো। কিছুক্ষণ পরে সায়রা চৌধুরী কোথায় কি রাখা আছে দেখিয়ে চলে গেলেন। শুধু থাকলেন সুমনা চৌধুরী। অরিন লক্ষ্য করলো সুমনা চৌধুরী কাজ করছেন ঠিক কিন্তু উনি জিনিস পত্র গুলা টাস টাস করে রাখছেন। উনি কি তাহলে রেগে আছেন? কিন্তু কেন? অরিন কি বেয়াদবি করেছে? প্রশ্ন গুলা মনে আওড়াতে আওড়াতে চা বানাতে লাগলো অরিন।

নাস্তার টেবিলে বসে দিহান অরিনকে বলল,”অরিন আসো তুমিও বসো।” শান্তি চৌধুরী বললেন, “হ্যাঁ রে অরিন বস না।” অরিন সুমনা চৌধুরীর দিকে তাকালো। উনি দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর বসা কি ঠিক হবে? দিহান অরিনের হাত ধরে তাকে বসিয়ে দিলো। সাথে সাথেই শাওন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। যার নিঃশ্বাসের শব্দ শান্তি চৌধুরীর কান পর্যন্ত গেলো। উনি কাতর চোখে শাওনের দিকে তাকান। শাওনের বিষন্ন মুখটা উনাকে প্রতিনিয়ত খুন করে দেয়। দিহান অরিনের প্লেটে পরোটা তুলে দিলো। ইশি দিশা লুপার চাপা হাসির শব্দ শুনা গেলো। দিহান ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্যাঙ্গ করলো। সবাই নাস্তা শুরু করার পর কলিংবেল বেজে উঠল। দিলারা চৌধুরী গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। মিহানকে দেখে বললেন,”কিরে এতো সকাল চলে এলি?” মিহান মিষ্টি করে হেসে বলল, “তিন তিনটা মাকে ছেড়ে তিন তিনটা দিন থেকেছি। আর কয়দিন থাকবো?
_আয় ভেতরে আয়।” মিহান হাসতে হাসতে ভিতরে এসে টেবিলে সবাইকে বসা দেখে টেবিলে আসলো। মিহানকে দেখে সবাই জিজ্ঞেস করলো,”কি রে নীল কই?” মিহান বলল,”রাস্তায় আসার পর তাঁর ফুপির কল এলো উনার বাসায় নাকি যেতে হবে তাই চলে গেছে। আরেকদিন আসবে।” বলতে বলতে মিহান গ্লাসে পানি নেয়। পানি খাওয়ার আগে তাঁর চোখে পড়লো অরিনকে। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে কপাল কুঁচকে গেলো। অরিন মাথা নিচু করে আছে। মিহান শাওনকে দেখে বলল,”এটা অরিন না?” শাওন ম্লান হেসে বলল,”শুধু অরিন নয়। মিসেস দিহান।” শাওনের কথাটা শুনা মাত্রই মিহানের হাত থেকে গ্লাস পড়ে গেলো। গ্লাস ভাঙার ঝনঝন শব্দে স্তব্ধ হয়ে যায় চারদিক। সবাই মিহানের দিকে তাকালো। মিহান কপালে চিন্তার রেখা ফুটিয়ে কি যেনো ভাবলো তারপর কিছু না বলে চলে গেলো উপরে। দিহান শাওনকে ফিসফিসিয়ে বলল,”মিহান এমন করলো কেন?
_ও অরিনের আগের বিয়ের ঘটনা জানে।” দিহান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর পরিবারে এখনো জানানো হয়নি অরিনের আগে বিয়ে হয়েছে। শান্তি চৌধুরী লুপা জানে। তাই তাদের নিষেধ করা হয়েছে যেন না জানায় কাউকে। দিহানের ভয় হলো মিহান যদি কাউকে জানিয়ে দেয় যে অরিনের আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো তাহলে তো অরিনকে সবাই অন্য চোখে দেখতে লাগবে।

দুপুরের খাওয়া শেষ অনেক আগেই। ঘড়ির কাঁটায় চারটা ছুঁই ছুঁই। দিহানের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। সকালের নাস্তা শেষ হতে হতে বেলা ১১টা বেজে যায়। সব গুছিয়ে রেখে অরিন দুপুরের জন্য রান্না শুরু করে। পাঁচ ছয় পদ রান্না করতে হয়। এতো বড় ফ্যামিলির রান্না। রান্না শেষ হতে হতে দুপুর ২টা বেজে যায়। তারপর সবাইকে খাইয়ে আবার সব গুছাতে লাগে। এখনো দিহানের পাশে আসতে পারছে না। দিহান ইশারায় দু একবার ডেকে এসেছিলো অরিন আসেনি। তারপর দু একবার সবার সামনেই ডেকেছে তবুও অরিন আসেনি। অরিন সবার রুম গুলা মুছে দিয়েছে। এটা দেখার পরে দিহানের মেজাজ সপ্তম আকাশে চড়ে বসে। এই কাজ অরিন কেন করবে? কাল মাত্র এসেছে সে। আর আজ এসব কাজ শুরু। দিহান রাগে গিজগিজ করছে। ঘরে আসুক একবার টাসিয়ে থাপ্পড় দিবে কানের নিচে। কিছুক্ষণ পরে অরিন এসে রুমে ঢুকলো। মুখটা একদম মলিন। অরিনের মলিন মুখটা দেখে দিহানের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। অরিন দিহানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। দিহান কোনো প্রতিক্রিয়া না দিয়ে পিছনে ঘুরে পকেটে হাত দিয়ে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো। অরিন দিহানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,”রেগে আছেন?
_,,,,,,,,(নিশ্চুপ)
_সরি আপনি ডেকেছিলেন তখন অনেক কাজ ছিলো। কাজ ফেলে আসলে সবাই কি ভাবতো বলুন?
_,,,,,,(নিশ্চুপ)
_সরি বললাম তো। প্লিজ মাফ করে দিন।
_,,,,,,,,,(নিশ্চুপ)
_আপনার বাসার সবাই এতো সহজে আমায় মেনে নিবে কল্পনাই করতে পারিনি। জানেন সবাই না অনেক ভালো।” অরিন দিহানের পিঠে লম্বা একটা চুমু এঁকে দেয়। দিহান এতোক্ষণ মনের মধ্যে যতগুলা অভিযোগ জমা রেখেছিলো সেগুলা ফোঁস করে উড়ে গেলো৷ কিন্তু মনের অভিমান রয়ে গেলো। অভিমানে অরিনকে ছাড়িয়ে বারান্দায় চলে গেলো। অরিন বারান্দায় গেলো। দিহান সেখান থেকে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অরিনের এবার খুব কান্না পেলো। সারাদিন সাংসারিক কাজে কষ্ট করে স্বামীর কাছে একটু সুখ খুঁজতে আসা স্ত্রীরা যখন স্বামীর থেকে এই ব্যবহার পায়, তখন তাঁর কাছে মৃত্যুটা খুব প্রিয় মনে হয়। অরিনের ফ্যাসফ্যাসে কান্নার শব্দ শুনে দিহান উঠে বসে পিছন থেকে অরিনকে জড়িয়ে ধরলো। অরিন ছাড়াতে চাইলে দিহান আরো শক্ত করে ধরে। তারপর অভিমানী স্বরে বলে,”তুমি জানো আমি কাল চলে যাবো। তবুও আমায় একটুও সময় দিলেনা? এতো কিছু করতে হবে কেন তোমাকে? বাসায় তো সার্ভেন্ট আছে। আমার থেকে দূরে থাকতে এমন করলে তাইনা? খুব জ্বালাই তোমায়?
_আমি কি করবো সবাই যেটা বলে সেটা তো করতে হবে।” অরিন কাটা গলায় কথাটা বলে কিঞ্চিৎ শব্দ করে কেঁদে উঠে। দিহান অরিনের চোখটা মুছে কপালে চুমু এঁকে দিলো। তারপর জড়িয়ে ধরে বলল, “সরি বউপাখি তোমাকে রাগ দেখিয়েছি। কিন্তু কি করবো বলো? আমার যে সয্য হয়নি তোমাকে এসব কর‍তে দেখে।” অরিন কিছু বলল না। স্বামীর স্নেহে ভুলে গেলো সারাদিনের সব ক্লান্তি কষ্ট সবকিছু। এখন মন হচ্ছে পৃথিবীর সবকিছুই তুচ্ছ। শুধু সত্যি হচ্ছে তাঁর স্বামী। কিছুক্ষণ পরে দিহানের বুক থেকে মাথা তুলে অরিন বলল,”আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি বসেন।” অরিন ওয়াসরুম চলে গেলে দিহান তাঁর মায়ের রুমে গেলো। দিহান উনাকে গিয়ে বলল,”আম্মু কাল না তুমি বললে অরিনকে তুমি মন থেকে মেনে নিয়েছো? তোমার আলাদা কোনো পছন্দ নেই আমার যাকে ভালো লাগবে তোমারও তাকে ভালো লাগবে। আমি যার সাথে ভালো থাকবো তুমি তাঁর পাশে আমাকে চাও। তাহলে আজ ওকে দিয়ে পুরো বাসার কাজ করালে কেন? তাও রুম মুছা পর্যন্ত?” সুমনা চৌধুরী গিয়ে দরজা বন্ধ করে আসলেন। এসে একে একে সকালের সব ঘটনা খুলে বললেন। সবকিছু শুনে দিহান রাগে ড্রেসিং টেবিলে লাত্তি দিয়ে বলে,”যাবোই না আমি বিদেশ।” রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে শান্তি চৌধুরীর রুমে যায়। উনি বসে বসে পান বানাচ্ছিলেন। দিহান নিজেকে কন্ট্রোল করে উনার পাশে বসলো। দিহানকে দেখে উনি বললেন,”কি রে কিছু বলবি মনে হচ্ছে।” দিহান শান্তি চৌধুরীর দুটো হাত ধরে বলল,”দাদুমনি। অরিনকে রেখে যাওয়ার সাহসটা পাচ্ছি তোমার জন্য। আমার বিশ্বাস তুমি থাকতে অরিনকে কোনো কষ্ট ছুঁতে পারবে না। কিন্তু তুমি থাকতে আজ ঠিকই অরিনকে এতো কাজ করতে হলো তাও কাল এসে আজ। আমার চোখের সামনে এতোকিছু হলো, তাহলে আমার চোখের আড়ালে কি হবে ওর সাথে? আমি চলে যাওয়ার পরে কি সত্যিই অরিন ভালো থাকবে? কেন জানি ওকে রেখে যাওয়ার সাহসটা হারিয়ে ফেলেছি দাদুমনি।” দিহান উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। সে তাঁর দাদুমনিকে শিরায় শিরায় চিনে। উনি যখন কাউকে পছন্দ করেন না তখন তাকে এমনভাবে শাস্তি দিবেন যেটা লোকের চোখে শাস্তি নয় ভালোবাসা মনে হবে। কিন্তু উনি তো অরিনকে পছন্দ করতেন অরিন নিজেই বলেছে তাকে নাত বউ ডেকেছেন। তাহলে অরিনকে দেখে কাল এতো রাগলেন কেন? আর আজই বা এতো কাজ দিলেন কেন? কি কারণ তাঁর?

__________________________________

শান্তি চৌধুরীর দেওয়া লিষ্টের সব কেনাকাটা মাত্র শেষ হলো। উনি অরিনের জন্য কেনাকাটা করাচ্ছেন। কাল রাতে দিহান আর শাওন মিলে অরিনের যাবতীয় সব কেনাকাটা করে নিয়েছে। হয়তো ওরা জানতো না শান্তি চৌধুরীর লিষ্ট এটা অরিনের জন্য ছিলো। লিষ্টে ছিলো এগারোটা শাড়ী এগারোটা ড্রেস আরও কিছু টুকটাক জিনিস। প্রতিটি জিনিসের কালার আলাদা আলাদা। দিশা উনার বোকামি দেখে হাসছে। জিনিসগুলা যখন অরিন পরবে তাহলে কি অরিন নিজে এসে এগুলা নিলে তো ভালো হতো না? শুধু শুধু তাদের দিয়ে কেনালেন। দিশা আর শাওন ব্যাগপত্র নিয়ে গাড়িতে উঠলো৷ দিশা সিটে মাথা রেখে লম্বা করে একটা দম ছাড়লো। খুব টায়ার্ড সে। শাওন দিশাকে বলল,”জানিস আজকে থেকে কাল আরও বেশি জিনিস কিনেছি। কিন্তু আমাদের এতো সময় লাগেনি। তোদের মেয়েদের নিয়ে গেলেই সারাদিনের লস।”দিশা শাওনের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে মারল। সিট থেকে মাথা তুলে বলল,”আচ্ছা শাওন ভাই লিফটে তুমি কাঁদলে কেন?
শাওন ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল, ”
_ক ক ক্ক কই কাঁদলাম?
_আমি তোমাকে চোখ মুছতে দেখেছি।
_চো চোখ দিয়ে এ এএমনিই মাঝে মাঝে পানি পড়ে। আচ্ছা তুই কিছু খাবি?
_উঁহু।” দিশা আর কোনো প্রশ্ন করলো না। শাওন ও কিছু বলল না। কিছুদূর এসে শাওনের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। চট করে চোখের পানি মুছে নিয়ে দিশার দিকে তাকায়। দিশা তাঁর দিকে তাকিয়েই ছিলো। শাওন গাড়ি চালাতে মন দেয়। কিন্তু তাঁর চোখ আবার ঝাপসা হয়ে আসে। গাড়িটা রাস্তায় সাইডে নিয়ে দাঁড় করিয়ে জানালার বাইরে থাকায়৷ বুকটা পুড়ে যাচ্ছে তাঁর। ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো পাশে দেখা সহজ কথা নয়। অনেক কষ্টের। এতোবেশি কষ্টের যে এর থেকে মৃত্যু শ্রেয় মনে হয়। প্রথমবার যেদিন অরিনকে ভালোবাসার কথা জানাতে যায় ঠিক তাঁর আগের দিন অরিনের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার যখন অরিনকে পাওয়ার সুযোগ হয় তখন ভাবে অরিন নিজেকে ঠিক করে নিক। আর এটা ভেবে ভেবেই এবারও অরিনকে হারিয়ে ফেললো। শাওনের চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। দিশা শাওনের কাঁধে হাত রাখে। শাওনের কান্নার নাক টানার শব্দ এসে কলিজায় বিঁধছে তাঁর। দিশা ধরা গলায় বলল, “তোমার কি হয়েছে শাওন ভাই?” শাওন আর নিজেকে আটকাতে পারলো না৷ চট করে দিশাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল। দিশা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। শাওন এভাবে ধরায় তাঁর হার্ট চলাচলের গতি অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে লাগে। শাওন কাঁদতে কাঁদতে বলে,”দিশা, আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে রে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি হারিয়ে ফেলেছি দিশা। আমার ভালোবাসার মানুষটিকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।” দিশা দুহাত দিয়ে শাওনকে আঁকড়ে ধরলো। শাওনের শার্ট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো। শাওন কেঁদেই যাচ্ছে এই কান্নাটা দিশাকে যতটা পুড়াচ্ছে ঠিক ততটাই সুখ দিচ্ছে দিহানের ছোঁয়া। ইচ্ছে করছে এই সময়টা থামিয়ে দিতে,শাওনকে জড়িয়ে ধরে মরে যেতে। কিছুক্ষণ পরে দিশা শাওনের কাঁধে চুমু খায়। শাওন তৎক্ষণাৎ কান্না থামিয়ে দিশাকে ছেড়ে দেয়,কিন্তু ছুটে যেতে পারেনা কারণ দিশা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে৷ শাওন দিশার হাত ছাড়াতে চাইলে দিশা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। শাওন বলে,”দিশা ছাড়।” শাওনের কথায় দিশার হুস আসে। চট করে শাওনকে ছেড়ে দেয়। শাওনের ছোঁয়া তাকে অন্য জগতে নিয়ে গেছিলো। ঘোর লেগে গেছিলো তাঁর। নেশা ধরেছিলো মনে। শাওনের কেমন জানি লাগছে। দিশা এটা কি করলো? কেন করলো? সে গাড়ি স্টার্ট দিলো। দিশা লজ্জায় মরে যাচ্ছে। বিবেক বার বার প্রশ্ন করছে,”এ কি করলো সে?

_________________________

রাত ১০:৩০ দশটা বাজে। নীলদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে লুপা। পা এগিয়ে আবার পিছিয়ে নিচ্ছে। কলেজ থেকে আসার সময় তাঁর একটা ফ্রেন্ডের বাসায় এসেছিলো। ওর মা অসুস্থ তাই। এখান থেকে আসতে আসতে ১০টা বেজে যায়। অনেকবার লুপাকে থাকার কথা বলেছে তাঁর ফ্রেন্ড কিন্তু সে থাকেনি। রাস্তায় এসে দেখে আইলেনের উপর কয়েকটা ছেলে বসে টাস খেলছে। এই রাস্তাটা একটু নির্জন। মানুষের চলাচল খুবই কম। রাতের বেলায় নেই বললেই চলে। রিকশাও তেমন পাওয়া যায়না। এইটুকু হেঁটে গিয়ে বাস স্টেশনে উঠতে হয়। লুপার সাহস নেই এই ছেলেদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার। অনেকবার এগিয়ে গিয়েও আবার পিছিয়ে এসেছে যেতে সাহস পায়নি। কিছুদিন আগে এখানে রেপ হয়েছে। এসব জেনেও কোন সাহসে যাবে সে। একবার ভাবলো তাঁর ফ্রেন্ডের বাসায় আবার চলে যেতে কিন্তু এটা তাঁর কাছে কেমন যেন দেখালো। নীলদের বাসাও এখানে তাই লুপা এখানে এসেছে। তাঁর ফুপিকে বলবে তাঁকে এগিয়ে দিতে। চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা দম ছেড়ে নীলদের গেটের ভেতর পা রাখলো সে। গেট খুলা দেখে অবাক হলো। লুপা ধীর পায়ে এগুতে লাগলো। প্রতিটি কদমে কদমে পুরনো স্মৃতি গুলো তাঁর চোখে ভেসে উঠছে। এই বাসা এই বাসার প্রতিটি দেয়াল ঘরের প্রতিটি কোণায় কোণায় সবকিছুতে মিশে আছে তাঁর আর নীলের কাটানো মূহুর্তের স্মৃতি। এই রাস্তা এই গাছ পালা তার স্বাক্ষী। লুপার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসলো। চোখটা মুছে সদর দরজার সামনে দাঁড়ালো সে। অবাক করা বিষয় হলো সদর দরজাটাও খুলা। লুপা বাইরে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালো। নীল টেবিলে বসে আছে। নীলকে দেখে লুপার কলিজা মুচড় দিয়ে উঠলো। কাল রাতে নীল তাকে কল দিয়েছিলো। কথাটা মনে পড়তেই লুপা চলে যেতে ঘুরে গেলো। রাস্তায় এসে আবার এই লোকদের দেখে ঘুরে গেলো সে। তাঁর ফ্রেন্ডের বাসায় কি আবার চলে যাবে? লুপার মন সায় দিলো না। সে আবারও পা বাড়ালো নীলদের বাসার ভিতর৷ সদর দরজা এখনো খোলা। চোখ বন্ধ করে ঘরের ভেতর পা রাখলো সে। মনে পড়লো তাঁর ফুপির বলা কথা। তিনি বলেছিলেন,”তুই যদি মানুষের বাচ্চা হয়ে থাকিস তাহলে আর কোনোদিন এই বাড়িতে আসবি না।” লুপা চোখটা মুছে দু কয়েক ঢোক গিলে নিজেকে শক্ত করলো। শিলা চৌধুরী কিচেন থেকে আসছেন দেখে লুপা দু পা পিছিয়ে যায়। উনার কাছে এসেছে সে তবুও উনার সামনে যেতে সাহস পাচ্ছে না। শিলা চৌধুরী টেবিলে এসে দেখলেন নীল এখনো খেতে শুরু করেনি ফোনে গেম খেলছে। উনি ধমক দিয়ে বললেন,” কি রে এখনো খেতে শুরু করিস নি? ফোনটা রেখে খাওয়া শুরু কর।” নীল ফোন রেখে দিয়ে প্লেটে ভাত নিতে লাগলো। তরকারি নিতে গিয়ে তাঁর চোখে মুখে বিরক্তি ফুটে উঠলো। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,”আম্মু,তোমাকে কতদিন বলেছিনা আমাকে দুপুরে তরকারি রাতে দিবেনা রাতের তরকারি দুপুরে দিবেনা। আমি খাবো না এগুলা দিয়ে। আর কিছু থাকলে দাও।
_আর কিছু নাই এগুলা দিয়ে খেয়ে উঠ। দুদিন পরে তো বউ আসবে তখন দেখবো প্রতি বেলায় রাঁধতে বলিস কিনা।
_আমার বউ তোমার মতো অলস হবেনা। বেলায় বেলায় রেঁধে খাওয়াবে আমাকে। যাও ডিম ভেজে দাও। আমি এগুলা দিয়ে খাবো না।” শিলা চৌধুরী নীলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিচেনে যেতে লাগেন। ঠিক তখনই লুপা ডাক দেয়,”ফুপি।” লুপার ডাকে শিলা চৌধুরীর পা থেমে যায়। লুপাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি অবাক হয়ে তাকালেন। নীলও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা কাকে দেখছে সে? শিলা চৌধুরী কিছু বলছেন না। লুপা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আঁড়চোখে একবার নীলের দিকে তাকালো। নীল আর লুপার চোখাচোখি হয়ে যেতে দুজন চট করে চোখ সরিয়ে নিলো। শিলা চৌধুরী দু পা এগিয়ে এসে বললেন, “লুপা তুই হঠাৎ?” লুপা চোখ তুলে তাঁর ফুপির দিকে তাকালো চোখ দুটো জলে ভর্তি। শিলা চৌধুরীর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। নীল তাঁর মাকে বলল,”আম্মু দরজা খুলা ছিলো কেন? যখন তখন যে কেউ ঢুকে যায়।” নীল কথাটা বলতেই তাঁর মা কড়া চোখে তাকালেন। লুপা ধরা গলায় বলে, “ফুপি আমাকে এই রাস্তাটা একটু এগিয়ে দিবে? এই রাস্তাটা পার হলেই হবে।” শিলা চৌধুরী লুপার গালে ছুঁয়ে বলেন, “হুম দিবো। বস।
_ন্ন ন্ন না ফুপি আমার তাড়া আছে।
_এসেছিস যখন খেয়ে যা কিছু।
_না না বাসা থেকে কল এসেছে আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
_আচ্ছা খাওয়াতে তেমন সময় লস হবেনা তুই বস। তোর ফুপা না আজ দুদিন হলো দেশে নাই। একটা কাজে ডুবাই গেছে।” শিলা চৌধুরী লুপাকে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন নীলের বাবা বাসায় নেই তাই ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই। শিলা দরজা বন্ধ করে এসে লুপাকে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। লুপাকে বসাতেই নীল দাঁড়িয়ে গেলো। শিলা চৌধুরী বললেন, “তুইও বস আমি তোর জন্য ডিম ভেজে আনছি।” শিলা চৌধুরী কিচেনে চলে গেলেন। লুপার মুখটা বিষন্ন,চোখ মুখ শুকনো। চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছে। নীল লুপাকে বলল, “এই রাস্তায় রাতের বেলায় মেয়েরা যেতে ভয় পায় একটা কারণে সেটা হলো ইজ্জত হারানোর ভয়। কিন্তু তোর তো ইজ্জতই নেই। সেটা অনেক আগেই অনেকজনকে বিলিয়ে দিয়েছিস। তাহলে তুই কিসের ভয় পাচ্ছিস? নাকি আমার বাসায় আসার উছিলা খুঁজলি মাত্র?” লুপা কিছু বললো না সে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কান্না আটকাতে গিয়ে তাঁর থুতনি ঠোঁট বার বার কেঁপে ওঠছে। নীল বলল,”আচ্ছা মিহান গিয়ে বলেছে কি আমার বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে গেছে?” লুপা চোখ মুছে মৃদু হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল,”সুখী হও দোয়া করি।
_তা তো অবশ্যই হবো। একটা সৎ স্ত্রী যে পুরুষের ঘরে আছে সে পুরুষ এমনিতেই সুখী থাকে।” লুপা মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চাইলো। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসার আগের চোখ মুছে নিলো। নীল বলল,”কি রে? তোর বিএফ বুঝি তোকে খেয়েদেয়ে ছেড়ে দিলো তাই বন্যা বানিয়ে দিচ্ছিস? [একটু থেমে] জানিস লুপা কাল শেষ বারের মতো তোকে ফোন দিয়েছিলাম। আর শেষ বারের মতোই বলেছিলাম ফিরে আয় আবার৷ এতোদিন কি হয়েছে আমিও ভুলে যাবো তুইও ভুলে যা। কিন্তু তুই কি বললি? আমি বেহায়া? [তাচ্ছিল্য হেসে] তুই আর কোনোদিন আমার কাছে ক্ষমা পাবিনা রে।” লুপা কিছুই বলল না। ততক্ষণে শিলা চৌধুরী চলে আসলেন। উনি আসার পরে সবাই খেতে বসে। লুপা অল্প ভাত নেয়। নীল লুপাকে শুনিয়ে শুনিয়ে তাঁর মাকে বলল,”আম্মু শামু বলেছে কাল একটু ঘুরতে যাবে। আমি কাল সারাদিন শামুর সাথে থাকবো। তোমার কোনো কাজ থাকলে রেখে দিও পরেরদিন করবো।”[মিথ্যে বললো]””শিলা চৌধুরী লুপার দিকে অসহায় চোখে তাকালেন। লুপা মাথা নিচু করে মাছের কাটা ছাড়াচ্ছে। লুপার মনের ঝড়টা অনুভব করতে পারছেন শিলস চৌধুরী। খুব কষ্ট হচ্ছে উনার। নীল শামুকে নিয়ে আরও কিছু বলতে গেলে শিলা চৌধুরী ধমক দিয়ে বলেন,”চুপচাপ খা তো। এতো বকবক করছিস কেন?’ নীল চুপ হয়ে গেলো। সে খেয়াল করলো লুপা কাটা ছাড়িয়েই যাচ্ছে মুখে ভাত তুলছে না। শিলা চৌধুরী লুপাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”দিহানের বউ কেমন রে?”
_ভালোই ফুপি।”(ভেজা গলায়)
_ভালো হলেই’ ভালো। বাসার সবাই স্বাভাবিক আছে তো।
_হুম।
_এদিকে কই থেকে আসলি?
_একটা ফ্রেন্ডের বাসায় গেছিলাম।

_বয়ফ্রেন্ড?”এতক্ষণ প্লেটের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো লুপা। নীলের কথাটা শুনে সে চোখ তুলে তাকালো। নীল বলল, “আই মিন ছেলে ফ্রেন্ড নাকি মেয়ে ফ্রেন্ড?” লুপা যদিও তাঁর মেয়ে ফ্রেন্ডের বাসায় গেছিলো কিন্তু সে নীলকে বলল,”ছেলে ফ্রেন্ড।” নীলের কপালে বিরক্তি ফুটে উঠলো। আর কেউ কোনো কথা বলল না। কিছুক্ষণ নিরবতায় কেটে যায়। ততক্ষণে সবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলো। শিলা চৌধুরীর খুব কষ্ট হচ্ছে। মন চাচ্ছে একবার লুপাকে থাকতে বলবেন কিন্তু ভয় হচ্ছে উনার। লুপা খাবার শেষ করে উঠেই শিলাকে বলল,”ফুপি আমি যাচ্ছি।
_আজ থেকে যা।” লুপা ম্লান হেসে ধরা গলায় বলল,”
_না ফুপি। বিয়েতে যদি আসি থাকবো নে। আমি এখন যাচ্ছি।”
_ওমা সে কি! আমি তো তোকে এগিয়ে দিবো দাঁড়া। এগুলা কিচেনে রেখে আসছি।
_না ফুপি আমি যেতে পারবো।” লুপা আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না। বড় বড় পা ফেলে চলে আসে বাইরে। পিছন থেকে শিলা চৌধুরী অনেকগুলা ডাক দিলেন লুপা দাঁড়ালো না। নীল তাঁর মাকে আসছি বলে সেও বেরিয়ে আসে লুপার পিছু পিছু। শিলা চৌধুরীর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো। এতো কষ্ট কই রাখবেন তিনি? কই লুকাবেন এই কান্নাটা? লুপার অসহায় মুখটা উনার কলিজাটা ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।

লুপা খুব দ্রুত পায়ে হাঁটছে এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে তাঁর। এতোক্ষণ চোখে আটকানো জল গুলা ঝরঝর করে ছেড়ে দিলো। নীলের এতো কাছে থেকে ইচ্ছে করছিলো নীলকে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে। খুব ইচ্ছে করছিলো নীলকে একবার বলতে “তোমায় খুব ভালোবাসি নীল ভাই।

গেটের বাইরে পা রাখতে নীল লুপার হাত খপ করে ধরে ফেলে। লুপা কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে যায়। নীল অগ্নি চোখে লুপার দিকে তাকালো। লুপা নিজের হাত ছাড়াতে মুচড়ায়। নীল রাগান্বিত স্বরে বলল,”কি রে? এতো তেজ কেন তোর? আম্মু তোকে বলেছে তোকে এগিয়ে দিবে তবুও কেন তেজ দেখিয়ে বেরিয়ে এলি? রেপ হওয়ার খুব সখ তাইনা?” লুপা কিছুই বলল না। নীল লুপার হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে এক হাত কোমরে রেখে এক হাতে মাথার চুল মুঠি করে ধরলো। চোখ বন্ধ করে লম্বা দম নিলো। লুপা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নীল বাইকে উঠে বলল,”উঠ।” লুপা সদর দরজার দিকে তাকালো। তাঁর ফুপি দাঁড়িয়ে আছেন। উনি সম্মতি সূচক মাথা নাড়ালেন। লুপা বাইকে উঠলো। শিলা চৌধুরী দরজা বন্ধ করে দিলেন। লুপা একটু দূর বসলো। নীল গম্ভীর গলায় বলল, “ধর নয়তো পড়ে যাবি।” লুপা বাইকে ধরলো তবুও নীলকে ধরলো না। নীল বাইক টান দিতেই লুপা নীলের সাথে কিঞ্চিৎ ধাক্কা খায়। লুপা আবার ঠিক হয়ে বসলো। সারা রাস্তা এলো দুজনের মুখে কোনো কথা নেই। কিন্তু দুজনেরই চোখ দিয়ে অঝোর ধারা বৃষ্টি ঝরেছে। কেউ কারো কান্নাটা দেখলো না। অথচ খুব কাছাকাছি থেকে কাঁদলো দুজন। বাইরে থেকে নিঃশব্দে আর ভিতর থেকে চিৎকার করে। শান্তি নীড়ে পৌঁছে বাইক থামালো নীল। লুপা বাইক থেকে নামলো। নীল পকেট থেকে ফোন বের করে। সারা রাস্তা কল এসেছে ফোন বের করতে পারিনি। লুপা উৎসুক চোখে তাকিয়ে ছিলো কে ফোন দিছে দেখার জন্য। স্ক্রিনে Shamu লেখা দেখে লুপার বুকটা হু হু করে উঠলো। নীল কল কেটে ফোন পকেটে রেখে দিয়ে বাইক স্টার্ট দিতে লাগে। লুপা নীলকে ডাক দেয়,”নীল ভাই।” নীল চট করে লুপার দিকে তাকালো। শামু নীলকে দুদিন সময় দিয়ে বলেছে, যদি নীল মন থেকে চায়না এই বিয়ে হোক তাহলে যেন এই দুদিনের ভেতর বিয়ে ভেঙে দেয়। দুদিন পরে নীল চাইলেও এই বিয়ে ভাঙতে পারবে না। দুদিন থেকে একদিন চলে গেছে। আর আজ রাত চলে যাওয়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় দিনটাও চলে যাবে। “লুপা কি বলবে সে ফিরে আসবে?” উৎসুক চোখে লুপার দিকে তাকিয়ে তাকলো নীল। লুপা কিছু বলছেনা দেখে নীল বলল,”বলছিস না কেন লুপা? বল প্লিজ।”
লুপা মৃদু হেসে নীলকে বলল,”তুমি কি ভেবেছো আমি কালকে ফোন আলাপের বিষয়টা নিয়ে কিছু বলবো? উঁহু আমি এরকম তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভাবিনা। তোমার সাথে যা হয়েছে তা অনেকের সাথে হয়েছে। তোমাকে নিয়ে ভাবতে হলে আমার তাঁদের নিয়েও ভাবতে হবে। বাই দ্যা ওয়ে তোমার বিয়েতে দেখা হবে। বায়।” বলেই ঘুরে গেলো লুপা। নিরবে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে পা বাড়ালো ভিতরের দিকে। নীল রাগে ফুঁসতে লাগলো। লুপার যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলল,”তোকে আমি তিলে তিলে মারবো লুপা। আমাকে ধোঁকা দেওয়ার কঠিন শাস্তি পাবি তুই। তোর শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড।

চলবে,,,,,,।

আপনারা জানেন আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। ডাক্তার বলেছে বেশিক্ষণ মাথা নিচু করে না থাকতে। তাই গত দুদিন লিখতে বসিনি। এতো কষ্ট করে লিখে শুধু গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here