ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_২০
#সুলতানা_সিমা
প্রায় পনেরো মিনিট ধরে শাওন অরিনদের বাড়ির উঠুনে বসে আছে। সেলিনা বেগম ও উনার মেয়েরা ও আমিরুন নেছা ঘরের বাইরে বসে আছে। জহুরা বেগম একবার সেলাই ঘরের দরজার সামনে যাচ্ছেন তো একবার শুবার ঘরে আসছেন। উনাকে দেখে বিচলিত,উদ্বিগ্ন লাগছে। চোখে মুখে স্পষ্ট চিন্তার রেখা ফুটে আছে। শাওনের কাছে ব্যাপারটা কেমন জানি ঘাপলা লাগছে। শাওন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জহুরাকে বলল,” চাচি আমার টিশার্ট টা দেন আমার একটু তাড়া আছে।
_হহহহ হ্যাঁ হ্যাঁ। দি দি দিতাছি বাজান।” জহুরা বেগমের কণ্ঠ অস্বাভাবিক। উনাকে যেন ভয় ঘিরে ধরেছে। সেলাই ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালেন। শাওন তাকিয়ে আছে। উনি দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে এসে শাওনকে বললেন,”তুমি বও বাজান। আমি আইতাছি।” জহুরা বেগম রান্না ঘরে ঢুকলেন। শাওন বসে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো সেলাই ঘরের দিকে। এই ঘরে কিছু একটা তো আছে। কি এমন আছে যে উনি এই ঘরের সামনে গিয়েই একেরপর এক ঢোক গিলছেন?
জহুরা বেগম রান্না ঘরে গিয়ে চা বসালেন। চা টা হচ্ছে শুধু শাওনকে বুঝ দেওয়া। ওর কথা এড়িয়ে যাওয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন দেখলেন অরিন ঘরে বা বাথরুমে নাই। তখন ভাবলেন পুকুরপাড়ে হবে অথবা কলপাড়ে। কিন্তু সবখানে খুঁজে যখন পেলেন না তখন সেলাই ঘরে খুঁজতে গেলেন। ঘর বন্ধ দেখে টিনের ছোট ছিদ্রে তাকিয়ে দেখলেন অরিন দিহানের কোলে বসে দিহানকে জড়িয়ে রাখা। দিহান ও অরিন একজন আরেকজনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। দৃশ্যটা দেখে উনার শরীর ঝরে যায়। ভয়ে উনার পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। দিহানকে একেবারে ঘরে নিয়ে এসেছে? অরিন এতো সাহস করবে কল্পনাই করেন নি তিনি। যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে কি হবে এটা ভেবেই উনার আত্মা শুকিয়ে গেছে। চারদিকে তাকিয়ে কেউ আছে কিনা দেখে অরিনকে ডাক দিতে যাবেন তখনই সেলিনা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। উনাকে দেখে জহুরা শুবার ঘরের দিকে পা বাড়ান। ঠিক তখনই সম্মুখীন হন শাওনের। বিপদ আসলে মনে হয় সব বিপদ এক সাথেই আসে। শাওনকে দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলেন জহুরা। শাওন হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে,”চাচি কি করেন?” জহুরা কি বলবেন বুঝে উঠতে পারেন নি। বিপদ দেখে যেন জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছেন। উনার মনে হলো শাওন সেলাই ঘর থেকে আসতে দেখছে, যদি সন্দেহ করে? ওই বলেনা চোরের মন পুলিশ পুলিশ। তাই উনি চট করে বলেন,”না এইত তো তো তোমার গে গেঞ্জির সে সে সেলাই শেষ কইরা আইলাম।”
_অহ। ঠিক আছে। অরিন কই?
_পুকুরে গেছে। আইতাছে। বাজান কাইল দেই তোমার গেঞ্জি?
_কাল কেন? আপনি তো বললেন সেলাই শেষ?
_হ হ শেষ। তুমি বও বাজান।” উনার কথায় শাওন উঠুনে রাখা চেয়ারটায় বসে। সেই থেকে উনি শাওনকে বসিয়ে রেখেছেন।
পিটপিট করে চোখ খুললো অরিন। দিহানের বুক থেকে মুখ তুলে উপরে তাকাল সে। দিহানের হাতের বাঁধনে খুব শক্ত করে বেঁধে রেখেছে তাকে। ঘুমন্ত দিহানকে দেখে অরিন সেই লেভেলের ক্রাশ খেলো। এই প্রথম দিহানের ঘুমন্ত মুখ দেখলো সে। নিজের স্বামীর এই নজরকাঁড়া রূপ দেখে চোখে নেশা ধরে গেলো তাঁর। দিহানের ঠোঁট জোড়া খুব করে টানছে তাকে। তাঁর খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে দিতে খুব ইচ্ছে করছে। দিহানের চুল গুলায় একবার হাত ডুবাতে ইচ্ছে করছে অরিনের। এতো আকর্ষণীয় কেন তাঁর স্বামীটা? অরিন আস্তে আস্তে দিহানের জ্যাকেটের জিপ খুলে। শার্টের একটা বোতাম খুলে দিহানের বুকটা উন্মুক্ত করে। অরিন দিহানের দিকে একবার তাকালো। দিহান ঘুমে। অরিন দিহানের বুকে চুমু এঁকে দিলো। তারপর দিহানের বুকে নাক ডুবিয়ে দিলো। অসংখ্য চুমু আঁকতে লাগলো তাঁর স্বামীর বুকে। হঠাৎ দিহান ফিক করে হেসে উঠে। হাসির কিঞ্চিৎ শব্দ হয় সাথে সাথে মুখ চেপে ধরে। অরিন তৎক্ষনাৎ লাফ দিয়ে উঠে সরে যায়। দিহান হেসেই যাচ্ছে। হাসির শব্দ হচ্ছেনা কিন্তু তাঁর হাসিতে পুরো চৌকি কাঁপছে। অরিন লজ্জায় মাথা তুলে তাকায় না। লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটি ফাটুক আর সে মাটির নিচে ঢুকে যাক। এতোক্ষণ নির্লজ্জের মতো সে কি করলো এটা। আর এই দিহানও মজা নিলো? অরিনের রাগ হলো কিন্তু সে মুখ তুলে তাকাতে পারছেনা। দিহানের হাসিও থামছে না। সে এতোক্ষণ জেগেই ছিলো। যখনই চোখ খুলতে যাবে জিপ খুলা হচ্ছে টের পেয়ে আর নড়েনি। তারপর অরিনের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে তার যে কি অবস্থা হয়েছিলো সেটা সে প্রকাশ করতে পারবে না। অরিন কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায়। দিহান ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকাতে চায় কিন্তু সে পারছেনা।
জহুরা বেগম রান্না ঘরে কাজ করার থেকে উঠুনের দিকে বেশি উঁকি দিচ্ছেন। উনার এমন আচরণ শাওনের মনে সন্দেহ জন্ম নেয়। শাওন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সেলাই ঘরের দিকে পা বাড়ালো। অরিন দিহানের হাসি থামছেনা দেখে সে বের হতে যাবে তার আগে মনে হলো বাইরে কেউ আছে কিনা দেখা উচিত। তাই ছিদ্রে চোখ রেখে বাইরে তাকালো। শাওন ঘরের দিকে আসছে দেখে তাঁর আত্মা শুকিয়ে যায়। এদিকে জহুরা বেগম রান্না ঘরে থেকে শুকনো ঢোক গিলে যাচ্ছেন। শাওনের একেকটা কদম যেন অরিন আর জহুরার কলিজায় গিয়ে পড়ছে। ও যত পা বাড়াচ্ছে ততই যেন অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। জহুরা বেগম তড়িঘড়ি করে কাপে চা ঢালতে লাগলেন। উনার সমস্ত শরীর কাঁপছে। চা কাপের থেকে বাইরে পড়ছে বেশি। এদিকে অরিনের নিশ্বাস আটকে আসছে। শাওন দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। জহুরা বেগম চায়ের কাপ নিয়ে দৌড় দিতে গেলে মাটিতে যে চা পড়ছিলো সেখানে পা পড়ে তিনি পা পিছলে পড়ে গেলেন। শাওন দরজায় ধাক্কা দিতে যাচ্ছিলো উনি পড়ে গেছেন দেখে দৌড়ে রান্না ঘরে ছুটে যায়। অরিন হাফ ছেড়ে বাঁচে।
সেলিনা উনার মেয়েরা আমিরুন নেছাও রান্না ঘরের দিকে দৌড়ে যান। দিহান জিজ্ঞাসুক চোখে অরিনের দিকে তাকায় অরিন কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। দরজা এটে দিহানকে বলল ভিতর থেকে বন্ধ করে দিতে। অরিন দৌড়ে রান্না ঘরে গেলো। জহুরা বেগমকে তুলে বসিয়েছেন। উনি শাওনকে ধরে উঠে দাঁড়ালেন। অরিন যেতেই সেলিনা বেগম উনার মেয়েরা ও আমিরুন নেছা চলে গেলেন। অরিন গিয়ে জহুরাকে ধরলো। শাওন অরিন মিলে উনাকে এনে শুবার ঘরে রাখলো। শুবার ঘর আর সেলাই ঘর পাশাপাশি। এক বেড়ার ঘর। তাই এই ঘরের শব্দ ওই ঘরে স্পষ্ট বুঝা যায়। শুবার ঘরে পায়ের শব্দ শুনা যাচ্ছে। এদিকে দিহানের কাশিও পাচ্ছে। দিহান কোনো রকম নিজেকে সামনে চুপচাপ বসে থাকলো। জহুরা বেগমকে খাটে বসিয়ে শাওন বলল,”তুমি কই ছিলা অরিন?”
_পুকুরে আছিলো বাজান।” শাওনের প্রশ্নের উত্তরটা যেন একটু তাড়া করে দিলেন তিনি। শাওনের ভ্রুযুগল কুঁচকে গেলো। দিহান কান পেতে বসে আছে। শাওনের গলার মতো গলা শুনে তাঁর বুকটা ধুক করে উঠেছে। শাওন অরিনকে বললো, “আচ্ছা আমি মেডিসিন নিয়ে আসছি।
_না না বাজান আমি ভালা আছি। কিচ্ছু অয় নাই।
_তারপরও চাচি মেডিসিন নিলে ভালো হতো।
_না বাজান। লাগলে অরিনরে পাঠাইয়া দিমুনে। তুমি যাওগা। অরিন বাজানের জামাডা দিয়া দে।” অরিন সেলাই ঘরে গেলো। যেহেতু দিহান সব কথা শুনছে তাই সে বলার আগেই দরজা খুলে দিছে। ঘরে আসতেই অরিনের হাত খপ করে ধরে ফিসফিসয়ে বলল,”ওই শাওন এখানে কেন?
_আমি কি জানি আপনার ফুফুতো ভাই এখানে কেন।
_ওরে এখানে আসতে দাও কেন? নিষেধ করতে পারো না?
_না পারিনা। আপনার ফুফুতো ভাই আসে কেন?
_এখন কেন এসেছে?
_কাল জামা দিয়ে গেছে সেলাইয়ে।”
চারপাশটা নিরব হওয়াও অরিন আর দিহানের অস্পষ্ট ফিসফিসানি শুবার ঘর থেকে শুনা যাচ্ছে। শাওন কান খাড়া করে বসে আছে। ওর মনোযোগ ফিসফিস আওয়াজের দিকে। জহুরা বেগম শুকনো একটা ঢোক গিললেন। অরিন আর দিহানের ফিসফিসানি থেকে এখন চাপা হাসির শব্দ আসছে। শাওন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সে যে সেলাই ঘরের উদ্দেশ্যে উঠেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জহুরা বেগম গলা উঁচিয়ে ডাক দিলেন,”অরিন কি রে আইতাছস না কেন। বাজান বইতে বইতে সেলাই ঘরে যাইতাছে।” শাওন মাত্র চৌকাঠের বাইরে পা রাখছিলো। উনার কথা শেষ হতেই শাওন উনার দিকেন তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। শাওনের চোখ জোড়া হঠাৎ করেই অদ্ভুত হয়ে গেছে। কেমন জানি ভয়ানক একটা দৃষ্টি। যেন এই চোখ দিয়ে বলে দিচ্ছে “কথা বললেন কেন? শাওন চৌকাঠ পেরোলেই মুহুর্তেই অরিন দৌড়ে বেরিয়ে এলো সেলাই ঘর থেকে। শাওনের দিকে ব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এবার আপনি যান ভাইয়া।” অরিনের কথায় ধাক্কানো টের পেলো শাওন। কিন্তু সে চুপ থাকলো। ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে। কিছুক্ষণ পরে সে আসবে। হুট করে এসে সে দেখবে মা মেয়ে তলে তলে কি করে বেড়াচ্ছে।
শাওন চলে যেতেই জহুরা বেগম অরিনের হাত ধরে এনে খাটে বসালেন। কোনো ভণিতা ছাড়াই প্রশ্ন করলেন,”এই পোলা আমাগো বাড়িত কেন আইছে?” অরিন অবাক হয়ে তাকালো। উনি বললেন,”আল্লাহ বাঁচাইছে কেউ দেখেনাই। তুই কোন সাহসে এইডা করলি?
_কি করছি?
_এই পোলারে বাড়িতে আনলি কোন সাহসে। এহন যদি কেউ এই পোলারে আর তোরে ঘরে ভিতর কেউ দেখত কি অইতো?
_মা আস্তে কথা বলো উনি শুনবে।” জহুরা চুপ হয়ে গেলেন। যদিও তিনি আস্তেই কথা বলছিলেন। কিন্তু সব তো শুনাই যাবে।
এদিকে দিহানের খারাপ লাগছে। তবে সেটা জহুরা বেগমের কথা শুনে নয়। তাঁর খুব হিসু পাচ্ছে। কিন্তু বের হবে কেমনে? অরিনকে ডাক দিতেও পারছে না। অরিনও আসছে না। দিহানের হঠাৎ মনে হলো ফোন দিলে তো অরিনকে পাবে। তৎক্ষনাৎ ফোন বের করে অরিনকে ফোন দিলো। অরিন ফোন হাতে নিয়ে দিহানের কল দেখে সাথে সাথেই সেলাই ঘরে গেলো। দিহান বসে আছে। অরিন দিহানের পাশে বসলো। দিহান বলল,”ওয়াসরুমে যাবো।” অরিন ভিতু চোখে তাকালো। এখন সে দিহানকে ওয়াসরুমে নিয়ে যাবে কেমনে? দিহান কাতর গলায় বলল,”প্লিজ।” অরিন বাইরে এসে তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে কেউ আছে কিনা। কেউ নাই। সে গিয়ে দিহানের হাত ধরে দ্রুত পায়ে শুবার ঘরে এসে ঢুকলো। জহুরা বেগম চোখ কপালে তুলে তাকালেন। অরিনের সাহস দেখে তিনি অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাচ্ছেন। শেষ মেশ একেবারে শুবার ঘরে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছে? অরিন উনাকে বলল,”মা তুমি একটু বাইরে যাও।” জহুরা বেগম বাইরে চলে গেলেন। বলতে গেলে উনি অরিনের কথায় নয় রাগ করে এসেছেন।
শুবার ঘরের সাথে লাগানো ছোটখাটো একটা বাথরুম আছে। এটা দিছিলেন তাঁর বাবা। শুধুমাত্র অরিন যেন রাতের বেলায় বাইরে না যায় সে জন্য। অরিন দিহানকে বাথরুমটা দেখিয়ে দিলো। দিহান ঢুকে চারদিকটা দেখলো। টিনের একটা বাথরুম। বেশ বড় না কিন্তু অনেকটা পরিষ্কার। দুইটা বালতিতে পানি রাখা। একটায় ঢাকনা দেওয়া একটায় ঢাকনা নাই। নিচটা পাঁকা করা। লো কমোড। দিহানের অভ্যাস নেই লো কমোড ব্যবহার করার। কিন্তু কি করবে? এখন তো চলতে হবে।
অরিন দরজাটা এটে রান্না ঘরে গেলো। জহুরা বেগম মুখটা কালো করে আছেন। চুলায় কি জানি বসানো। অরিন উনার সামনে বসে বলল,”সরি মা।” উনি কিছু বললেন না। উনার সত্যি রাগ হচ্ছে অরিনের উপর। এখন যদি দিহানকে কেউ দেখে ফেলে, তখন? অরিন জহুরাকে আবার বলল,”
_মা কি রান্না বসাইছো?
_,,,,(নিশ্চুপ)
_মা উনাকে আমি ফোন করিয়ে এনেছি। উনি আসতে চাননি।
_,,,,(নিশ্চুপ)
_ উনি রাতে খাননি উনার জন্য কিছু নিয়ে আসো।” এতোক্ষণে মুখ খুললেন জহুরা। চায়ের দুধ চিনি মিলাতে মিলাতে বললেন,”কি কি লাগব লিষ্ট কইরা দে।
_টাকা আছে তো?
_আছে দুই হাজার। আলমারিতে আছে লইয়া আইবি।।” অরিন উঠে ঘরে গেলো। দিহান এখনো বাথরুমে। অরিন একটা লিষ্ট করে আলমারি থেকে টাকাটা নিয়ে আসলো। জহুরা বেগম অরিনের হাতে চা দিয়ে বললেন,”ঘরে বিস্কুট আছে দেইছ। আমি যাইতাছি।” উনি বাজারে চলে গেলেন। অরিন চা নিয়ে ঘরে গেলো। দিহান বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে বসে আছে। অরিন আসতেই উঠে এসে অরিনের ওড়নায় মুখ মুছলো। দিহান অরিনকে বলল,”তোমার আম্মু কী রেগে গেছে আমি এসেছি বলে?
_ উঁহু রাগেনি। নিন চা খান।
_আমি জানি রেগেছে।
_সত্যি রাগেনি। চা টা খান।” দিহান চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল,”রাগলেও সমস্যা নাই। শ্বশুর বাড়িটা কিন্তু আমার অনেক ভালো লাগছে। এরকম করলেও আমি হাজার বার আসতে রাজি।
_ তাই?
_হুম তাই।
জহুরা বেগম বাজার করে নিয়ে এসে রান্না শুরু করে দিলেন। অরিন ঘরে আছে। তাকে ডাকার প্রয়োজন মনে করলেন না তিনি। আধা কেজি গরুর মাংস এনেছেন। ছোট সাইজের একটা দেশি মুরুগ। আর দু’শ টাকার একটা ছোট আকারের রুই মাছ। মাংস রান্নার জন্য কিছু মশলাপাতি কিনলেন। এখানেই উনার একহাজার শেষ। বাকি এক হাজার খরচ করেন নি। এতো বাজার করলে লোকে সন্দেহের চোখে দেখবে। এই যে উনি রান্নাবান্না করছেন উনার ভয় লাগছে। কেউ যদি ঘ্রাণ পেয়ে এসে জিজ্ঞেস করে এতো আয়োজন কেন? তখন কি বলবেন? গরীবের ঘরে এমন রান্না তো আয়োজন ছাড়া কিছুই নয়।
রান্নাবান্না শেষ করে রান্নাঘরেই বসে থাকলেন তিনি। রান্না ঘরে কোনো দরজা নাই এর জন্যই রান্না শেষে বেশিরভাগ সময় খাবার বাটিতে করে নিয়ে ঘরে তুলে রাখেন। তারপর যখন খুশি খান। অরিনের ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো খুঁজ না দেখে রান্না ঘর থেকে গলা উঁচিয়ে ডাক দিলেন তিনি।
_অরিইইইইইইন
“অরিন দিহান একজন আরেকজনের মাঝে মগ্ন ছিলো। হঠাৎ উনার ডাক শুনে চট করে দুজন দুজনকে ছেড়ে দেয়। দুজনেই ভয় পেয়ে গেছে। অরিন জামা ওড়না ঠিক করতে করতে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। তাঁর মায়ের সামনে যেতে লজ্জা লাগছে। ইশ উনি না জানি কি ভাবছেন। জহুরা খাবার বাটিতে তুলে তুলে দিলেন অরিন খাবার গুলা নিয়ে ঘরে গেলো। দিহান খাটে শুয়ে আছে। অরিন খাবার নিয়ে এসেছে দেখে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলল,” এখন কিসের খাবার।” দিহান স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে ফেলে। অরিন ফিসফিসিয়ে বলে,”আস্তে।” দিহান শুয়ে থেকেই ঠোঁটে আঙুল দিলো। অরিন একটা একটা করে সব খাবার এনে ঘরে রাখলো। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে জহুরাকে বলল,”মা তুমি উনার সাথে কথা বলবে না?
_আমি কি কথা কইবো?
_ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবে না?
_যা আমার সরম করে।
_মা প্লিজ। উনি ভাবছে তুমি উনাকে দেখে রেগে আছো।” জহুরা বেগম আর না বললেন না। তাছাড়া উনি সৎ মা।। লজ্জা পেয়ে সামনে না গেলে দিহান ভাববে সৎ মা বলে এমন করছেন। উনি সৎ মা শব্দটা ঘৃণা করেন। তাই নিজে সৎ মা হতে চান না। দিহানকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে চলে আসলেন। এসে সেলাই ঘরে সেলাই করতে লাগলেন কিছুক্ষণ পরে অরিন এসে বললো, “মা একটা কথা বলি?
_হু ক।
_তুমি নানুদের বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসো না।” জহুরা বেগম কপাল কুঁচকে তাকালেন। অরিন বলল,” না মানে তোমার বাপের বাড়ির কথা বলছি।” জহুরা চুপচাপ সেলাই করে গেলেন। অরিন বলল,”খালা না তোমায় যাইতে কইলো তুমি যাওনা ঘুরে আসো।
_আমি কোথাও যামুনা।” অরিনের মুখটা কালো হয়ে গেলো। সে মন খারাপ করে চলে আছে। দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে জহুরা অরিনকে সেলাই ঘরে ডেকে এনে বলেন,”তোর খালাগো বাড়ি যামু কাইল কিন্তু চইলা আইমু তুই সাবধানে থাকবি।”উনি কিছুক্ষণ পরে চলে যান। খুশিতে অরিন আত্মহারা হয়ে যায় দিহান বলছে আজ যাবেনা আজ থাকবে কিন্তু দিহান কই থাকবে এটা নিয়ে টেনশন ছিলো তাঁর কিন্তু এখন আর টেনশন নাই। এখন তাঁর স্বামী আর সে। তাঁরা ছাড়া এই ছোট ঘরে আর কেউ নাই। শুবার ঘরে আসতেই দিহান তাকে জড়িয়ে ধরে অরিনের ঘাড়ে চুমু খায়। অরিন চোখ বন্ধ করে দেয়। লজ্জায় নয় সুখে। তাঁর লজ্জা তো ভেঙে গেছে অনেক আগেই।
চলবে,,,,,।