ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_১২
#সুলতানা_সিমা
শাওন রুমে ঢুকে দেখলো নীল রুমে রেডি হয়ে বসে ফোনে কথা বলছে। শাওন বলল,”ওই নীল দিহান কই রে?” নীল ফোনে কথা বলার ফাঁকে বলল,”তোকে খুঁজে গেলো একটু আগে। জানিনা কই গেছে।” নীল আবার ফোনে কথা বলতে লাগে। শাওন রুম থেকে বেরিয়ে শায়লা বেগমের রুমে যায়। গিয়ে দেখে তাঁর নানু সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছেন। শাওন গিয়ে তাঁর নানুকে বলল,” নানুমনি এখনি রেডি হয়ে গেছো কেন? নিজেদের গাড়িতে যাবে তাহলে বিকালে যাও।” তিনি বলেন,” বিকালে গেলে হবেনা রে ভাই। তোর বড় মামা রেগে আছে।” শাওন তাঁর নানুর পাশে বসলো। শায়লা চৌধুরী উঠে বেরিয়ে আসলেন রুম থেকে। শাওন মেঝেতে বসে তাঁর নানুর কোলে মাথা রেখে বলল,”নানুমনি একটা কথা বলি?” উনি শাওনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,”বল। অনুমতি লাগে বুঝি?
_নানুমনি জানো,আমি একজনকে অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশি। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। কিন্তু আম্মুকে বলার সাহস পাচ্ছিনা। তুমি আম্মুকে তাঁর কথাটা বলে দাওনা প্লিজ।” শান্তি চৌধুরী ছোট করে তাকালেন। তারপর দুষ্টুমি করে বললেন,”
_বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছিস? মেয়েটা কে রে?” শাওন একটু লজ্জা পেয়ে মৃদু গলায় বলল”
_অরিন।” অরিনের নাম শুনে শান্তি চৌধুরী প্রথমে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর হেসে উঠলেন। অরিনকে দিহানের জন্য পছন্দ করছিলেন তিনি। মনে মনে ভাবছিলেন বাসায় গিয়ে হানিফকে (দিহানের বাবা) পাটিয়ে দিবেন অরিনের মায়ের কাছে। কিন্তু এখন জানলেন শাওন অরিন একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। যাক যার বউ হোক নাতবউ তো হলো। শাওন অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল, “নানুমনি হাসছো কেন?” শান্তি চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন,”নারে আমি তো আগে থেকেই অরিনকে নাতবউ বানাবো ভাবছিলাম। কিন্তু আমার নাতি যে তাঁর সাথে জুটিয়ে প্রেম করছে সেটা তো জানতমই না।
_আরে না নানু,কি যে বলোনা। এসব কিছু না।
_বুঝি বুঝি সব বুঝি। [শাওনের কান টেনে] প্রেম করতে পারো আর সাহস করে মাকে বিয়ের কথা বলতে পারো না?
_আউচচচচ,,,,নানুমনি লাগছে।” শান্তি চৌধুরী ছেড়ে দিলেন। শাওন বললো” মজা করোনা প্লিজ। অরিনকে না পেলে আমি মরেই যাবো। খুব ভালোবেসে ফেলেছি ওকে। ওর জন্য আমি সব ত্যাগ করতে পারবো। ওকে পাওয়ার জন্য আমাকে যা করতে হয় আমি তাই করবো৷ কিন্তু আম্মুকে বলতে ভয় লাগে। আম্মু মেনে নিবে নাকি নিবেনা সেটার ভয়। প্লিজ নানু তুমি এবার আম্মুকে বলে যেও। আর কতো ওকে চোখে চোখে রাখবো বলো? হঠাৎ যদি কেউ ওকে নিজের করে নেয়। তখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো?
_বুঝেছি তুমি প্রেমের খাদে পুরোটাই গেড়ে গেছো। এতো ভাবতে হবেনা। আমি শায়লাকে ম্যানেজ করে নিবো।
_কে কাকে ম্যানেজ করবে দাদুমনি?” দরজার সামনে থেকে কথাটা ভেসে আসতেই শাওন ও শান্তি চৌধুরী দরজার দিকে তাকালেন। দিশা দাঁড়িয়ে আছে। সিলভার কালার একটা লং ড্রেস পড়েছে। চুলগুলা খুলা। দেখতে মাশাআল্লাহ লাগছে। শাওন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। দিশা এসে ঘরে ঢুকলো। শান্তি চৌধুরী বললেন,”শাওন বিয়ে করবে রে দিশা। আমাকে ধরেছে শায়লাকে তাঁর বিয়ের কথা বলতে। তলে তলে প্রেম করে বেড়াচ্ছে শয়তানটা।” শাওন কোমল ধমকে নানুমনি বলে উঠল। লজ্জায় তাঁর চেহারা লাল হয়ে আছে। দিশা শাওনের দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে আছে। শান্তি চৌধুরীর কথাটা এসে তাঁর কলিজায় লেগেছে। শাওন বিয়ে করবে? প্রেম করছে? ক্লাস এইটে থাকতে দিশাকে শাওন ভালোবাসার কথা বলেছিলো। তখন দিশা ছোট বলে এসবে পাত্তা দেয়নি। কিন্তু শাওন বলে ছিলো আমি বড় হয়ে তোকে বিয়ে করবো। তুই হবি আমার রাণী আর আমি হবো তোর রাজা। এই একটা কথায় দিশা শাওনকে নিয়ে ভাবতে লাগে আস্তে আস্তে ভালোবাসা। বড় হওয়ার পরে শাওনকে ভালোবাসি বলার মতো সাহস তার হয়নি। যতবার ভালোবাসি বলতে গিয়েছে ততবার লজ্জায় ফিরে এসেছে। ওই যে বলেনা,মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফুটেনা। কিন্তু বলতে না পারলেও ধাপে ধাপে দিশা বুঝাতে চেয়েছে সে শাওনকে চায় খুব করে চায়। কিন্তু শাওন বুঝেনি। তারমানে এ জন্যই শাওন বুঝেনি,কারণ তার বুঝার মনটা অন্যকাউকে দিয়ে বসে আছে? শাওন দিশার দিকে তাকাতেই দিশা চট করে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর জোরপূর্বক হেসে ধরা গলায় বলে,”আব,,,ভা ভালো,,তো তোমার বিয়েতে আবার আসবো আমরা। [একটু থেমে] আ আচ্ছা ভা ভাইয়া কই?”শান্তি চৌধুরীও বললেন,” হ্যাঁ রে শাওন দিহান কই? ওরা দুটো রেডি হয়েছে তো?” শাওন বলল,”নীল রেডি হয়ে বসে আছে দিহান কই জানিনা। আমি দেখছি কই।”শাওন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। দিশার চোখ থেকে টুপ করে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। এতোক্ষণ মনে হয় খুব কষ্ট করে চোখের ভেতর থেকেছে তাঁরা। খুব সাবধানে দিশা চোখের পানিটা মুছে চলে যেতে লাগলো। শান্তি চৌধুরী পিছন থেকে গম্ভীর গলায় ডাক দিলেন,”দিশা” দাদীর ডাক শুনে দিশা থেমে গেলো। শুকনো একটা ঢোক গিলে নিজেকে শক্ত করলো। তারপর পিছন ঘুরে তাকিয়ে বলল,”কি দাদুমনি?”
_আমার পাশে এসে বস।” দিশা এসে তাঁর দাদীর পাশে বসলো।
_কাঁদলি কেন?” দিশা একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তারপর বলে,”আ আসলে ক্ক কতোদিন থাকলাম বলো। ফুপিমণিকে ছেড়ে যাবো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।” শান্তি চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সত্যি বলতে উনারও কষ্ট হচ্ছে মেয়েকে ছেড়ে যেতে। এই একটাই সন্তান উনার অনেক দূর থাকে। মাঝে মাঝে মেয়েকে বলেন চলে আয় ঢাকায়। কিন্তু মেয়ে শুনেনা। তাঁর এই বাড়ি ছেড়ে সে কোথাও যাবেনা।”শান্তি চৌধুরী দিশাকে বললেন,”তুই যা দিহান কই গিয়ে দেখ। আর অরিনকে একটু আসতে বলবি।” দিশা চলে গেলো৷ দিহানকে সব জায়গা খুঁজে পেলোনা। ড্রয়িংরুমে এসে দেখলো শাওন সোফায় বসে ফোন টিপছে। দিশা বলল” ওই তোকে না দাদুমনি বলল ভাইয়া কই খুঁজবি। তুই এখানে বসে খুঁজছিস?” শাওন দিশাকে ফোন দেখিয়ে বলল,”এটা আমি কি করছি? তোর ভাইকে অনেক খুঁজেও পাইনি। এখন আমি তাঁকে ফোন দিচ্ছি। কিন্তু শালার ফোনটাও বন্ধ।
_ওই তুই আমার ভাইকে শালা ডাকলি কেন?
_তাতে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে শুনি?” দিশা শাওনকে ভেংচি কেটে কিচেনে চলে গেলো।
অরিন মাত্র রান্নাটা শেষ করেছে। দিশাকে দেখে হাসলো। দিশা বলল,”তোমাকে হাসলে অনেক সুন্দর লাগে অরিন।
_ধন্যবাদ আপু।
_তোমাকে দাদুমণি ডাকছে। ফুপির রুমেই আছে। শুনে এসো একবার।
_জ্বি। আমি যাচ্ছি।” দিশা কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলো। আসার পরে দেখলো শাওন ড্রয়িংরুমে নেই৷ দিশা এসে সোফায় বসলো। শাওন যেখানটায় বসেছিলো ঠিক সেখানটায়। তারপর ম্লান হাসলো। এই জায়গায় শাওনের ছোঁয়া লেগে আছে। তাইতো খুব সুখ সুখ লাগছে তাঁর।
অরিন কিচেন থেকে বেরিয়ে শায়লা বেগমের রুমে ঢুকলো। শান্তি চৌধুরী অরিনকে দেখে মিষ্টি হেসে বললেন,”আমার পাশে এসে বসো।” অরিন ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে উনার পাশে বসলো। কিঞ্চিৎ অস্বস্তিবোধ করছে সে। শান্তি চৌধুরী অরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর বললেন,”আজ তো চলে যাবো। এতোদিন তোর অনেক কষ্ট হয়েছে তাইনা?
_আরে না নানুমনি। কী বলেন এগুলা?” শান্তি চৌধুরী অরিনের হাত ধরে বললেন”
_তোকে আমার নাতবউ বানাবো।” অরিনের বুকটা ধুক করে উঠল। চট করে দিহানের কথাটা তাঁর মনে পড়লো। নাতবউ বলতে কি উনি দিহানের কথআ বলছেন? একরাশ সুখ আর আর লজ্জা অরিনকে এসে ঝেঁকে ধরলো। খুশিতে অরিনের কান্না পাচ্ছে। শান্তি চৌধুরী কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলেন তারপর উনার গলার স্বর্নের চেইনটা খুলে অরিনকে পরিয়ে দিতে লাগেন। অরিন অবাক হয়ে বলে,”নানুমনি এসব কি করছেন? আমি এটা নিবোনা।” শান্তি চৌধুরী বললেন,”চুপ। বেয়াদবি আমার পছন্দ না। বেয়াদবি করলে পরে নাতবউ বানাবো না। এসব তো কিছুই না। শুন খুব শীঘ্রই আমরা সবাই আসবো তোর বিয়ে খেতে।” অরিন হাসলো। লজ্জায় তাঁর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। শান্তি চৌধুরীর ফোন বেজে উঠল। উনার ছেলে ফোন দিচ্ছে। উনি অরিনকে বললেন,”তুই এখন যা। আমি কথা বলে নেই।”
_জ্বি নানুমনি।
অরিন চলে আসলো। তাঁর খুব খুশি লাগছে। বার বার কানে বাজছে ,”তোকে আমার নাতবউ বানাবো।” তাঁর দুচোখ দিহানকে খুঁজছে। এতো খুশিতে ইচ্ছে করছে তাঁর প্রাণের স্বামীকে জড়িয়ে ধরে খুশির কথাটা জানাতে।
অনেক্ষণ হয়ে গেলো দিহানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। শান্তি চৌধুরীর চোখে পানি চলে আসলো। দিহান কই গেলো তাঁর ফোনটাও বন্ধ সবাই দিহানকে খুঁজতেছে। চিন্তায় অরিনের চোখ থেকেও জল বেরিয়ে আসলো। শান্তি চৌধুরী কেঁদে কেঁদে বললেন,”শায়লা আমার দিহানকে খুঁজে পাচ্ছেনা কেন? ও কই গিয়েছে?” শায়লা চৌধুরীর ও চোখে পানি। শাওন বলল,”কেঁদোনা নানু। দিহান তো ছোট বাচ্চা নয়। হয়তো কোথাও গেছে চলে আসবে।” উনি শান্ত হলেন না। কেন জানি উনার মন বলছে দিহান ভালো নেই। শাওনের খুব কষ্ট হচ্ছে তাঁর নানুর কান্না দেখে। নীলেরও ভেতরটা খুব কাঁদছে। তাঁর নানুমণিকে কাঁদতে খুব কমই দেখেছে সে। শাওন বলল,”নীল তুই বাড়ির আশপাশটা দেখে আমি বাজারে গিয়ে দেখছি ও বাজারে গেছে কিনা।”
নীল আর দিহান খুঁজতে বেরিয়ে গেলো। দিশা আর ইশিও খুঁজতে বের হলো। লুপা ছাদে গেলো। এই নিয়ে তিনবার ছাদে এসে খুঁজেছে সে,কিন্তু কিছুই পায়নি৷ তবুও তাঁর বার বার মনে হচ্ছে দিহান ছাদে আছে। লুপা কেঁদে কেঁদে বলল,”ভাইয়া কই তুমি? প্লিজ চলে আসো।” চোখের পানিটা মুছে লুপা চলে যেতে লেগে আবার থেমে যায়। আস্তে আস্তে পাশ ফিরে থাকায়। পানির ট্যাংকের ছায়া এসে ছাদে পড়ছে। ট্যাংকের ছায়ার সাথে আরেকটা ছায়া। লুপা এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো। যত পা এগুচ্ছে তত ভয়ে তাঁর কলিজা লাফাচ্ছে। ট্যাংকের পিছন দিকে তাকিয়েই ধপ করে বসে পড়লো সে। রেলিঙের থেকে এক হাত ফাঁক করে ট্যাংক বসানো। এই একটু জায়গায় জড়সড় করে দিহানকে বসিয়ে রাখা আছে। চোখ মুখ শুষ্ক। লুপা অনেক জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে, “ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া” লুপার চিৎকারে ডাক্তার বাড়ি কেঁপে উঠে। নীল মাত্র এসে গেটের ভেতর পা রাখছিলো। ছাদ থেকে লুপার চিৎকার শুনে ছাদের উঠার জন্য বাইরের যে সিঁড়ি আছে ওইটার দিকে দৌঁড় দেয়। দিশা ইশি নীলের পিছু পিছু যায়। শায়লা চৌধুরী শান্তি চৌধুরী অরিন শাঞ্জু দিয়া রুহানও দৌড়ে আসে। সবাই এক সাথে ছাদে পৌঁছালো। লুপা মাথার চুল মুঠি ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। সবার দিকে তাকিয়ে কেঁদে কেঁদে আঙুল দিয়ে ট্যাংকের পিছনের দিকে দেখালো। নীল এগিয়ে গিয়ে এই অবস্থায় দিহানকে দেখে তাঁর কলিজা মুচড় দিয়ে উঠল। দৌড়ে গিয়ে দিহানকে টেনে বের করলো। দিহান দেখেই সবাই এক সাথে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে। শান্তি চৌধুরী সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যান। অরিনের দমটা যেন বন্ধ হয়ে আসতে লাগে। দিহানের এই অবস্থা কে করলো? কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে অরিন। আশে পাশে তাঁর কোনো খেয়াল নেই। তাঁর কান্না দেখে কেউ কিছু বলবে নাকি বলবে না এসব নিয়েও তাঁর কোন মাথা ব্যথা নেই।
শায়লা বেগম শান্তি চৌধুরীকে ধরে কেঁদে যাচ্ছেন। নীল পকেট থেকে ফোন বের করে শাওনকে ফোন দিয়ে শাওন তাঁর বাবাকে নিয়ে আসতে বলে,” অরিন চোখ মুছে বলল,”উ উ উনাকে নি নি নিচে নিয়ে চলুন প্লিজ।” নীল রুহানকে বলল,”রুহান ধর এসে।” রুহান আর নীল মিলে দিহানকে নিচে নামাতে লাগলো। ইশি অরিন শায়লা মিলে শান্তি চৌধুরীকে নামাতে লাগে। দিশা আর দিয়া হাউমাউ করে কাঁদছে। তাদের কান্না দেখে কাঁদছে শাঞ্জুও। লুপা চোখ মুছে দিশাকে ধরে তুলতে চাইলে দিশা উঠেনা সে কান্না করেই যাচ্ছে। তাঁর ভাইয়ের মাথা দিয়ে কত রক্ত পড়েছে। এভাব কে তাঁর ভাইকে রেখেছে? এখানে কে তাদের শত্রু? কেউ না দেখলে তো এখানেই মরে পঁচে যেতো সে। লুপা দিশাকে বলল “আপু চলো প্লিজ।” দিশা উঠে দাঁড়ায়। দাঁড়াতেই আবার পা ভেঙে বসে পড়ে। লুপা আবার ধরে উঠায়। ধরে ধরে নিচে নিয়ে আসে। দিয়া নিজেই হেঁটে আসে।
মনসুর সাহেব দিহানকে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিলেন। শান্তি চৌধুরীর একবার জ্ঞান ফিরেছিলো। দিহানের জ্ঞান ফিরেনি দেখে কাঁদতে কাঁদতে আবার অজ্ঞান হয়ে গেছেন। মুরুব্বি মানুষ অসুস্থ শরীর তার উপর আবার এই ঘটনা। কিভাবে সামলাবেন নিজেকে? আসরের আজানের পরে দিহানের জ্ঞান ফিরে।
পিটপিট করে চোখ খুললো দিহান। প্রথমেই চোখ যায় অরিনের দিকে। ছলছল চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে সে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। চোখ ফুলে আছে। দিহানকে চোখ খুলতে দেখেই চোখ ভর্তি জল নিয়ে হেসে উঠে অরিন। নীল দিহানের মাথার সামনে বসে ছিলো। অরিনের হাসি দেখে খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল দিহান চোখ খুলে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল হন্তদন্ত হয়ে বলল,”দিহান। কেমন লাগছে এখন তোর? তোর খুব কষ্ট হচ্ছে? কি হয়েছিলো রে?” নীলের কথায় সবাই তাকালো দিহানের দিকে। সবাই হন্তদন্ত হয়ে দিহানকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,”এখন কেমন লাগছে। তাঁর কষ্ট হচ্ছে কিনা। কী হয়েছিলো? কে করেছিলো এমন?” দিহান মাথা ঘুরাতে একটু নড়লো। মাথার তীব্র ব্যথায় আহহহ বলে আর্তনাদ করে উঠল। দিশা কেঁদে কেঁদে বলল,”খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা ভাইয়া?” শাওন দিহানকে ধরে বসালো। দিহানের মুখটা বিষন্ন। তাঁর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে কতোটা কষ্ট পাচ্ছে সে। শাওন দিহানকে বলল,”কি হয়েছিলো দিহান?” দিহান কিছু বলল না। কি বলবে সে? তাঁর সাথে কি হয়েছে এটা সে নিজেও জানেনা। সে শুধু জানে তাঁর মাথায় অনেক জোরে আঘাত পেয়েছিলো। তাঁর মনে হয়েছিলো এই বুঝি তাঁর পৃথীবি থেমে যাবে। পরে কি হয়েছে সে জানেনা। নীল বলল,”দিহান বল কি হয়েছিলো?” দিহান কিছু বলল না। মনসুর সাহেব বললেন,”এতো প্রশ্ন এখন করো না। রেস্ট নিতে দাও।” দিহান এক হাতে কপালের এক পাশ চেপে ধরলো। শাওন বলল,”ব্যথা পাচ্ছিস?” দিহান হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। শাওন তার মাকে বলল,”আম্মু ভাত আনো ওকে খাইয়ে অষুধ খাওয়াতে হবে নয়তো ওর ব্যথা কমবে না।” অরিন বলল,”আ আ আমি নিয়ে আসছি।” অরিন দৌঁড়ে নিচে গেলো। উপরওয়ালার কাছে লক্ষ্য কোটি শুকরিয়া আদায় করছে সে। তাঁর স্বামীর সুস্থতার জন্য সে দু’রাকাত নফল পড়েছে। সেজদায় গিয়ে উপরওয়ালার কুদরতি পায়ে পড়ে কেঁদেছে। আল্লাহ তাঁর ডাক শুনেছেন। উনার দরবারে হাজারো শুকরিয়া।
ভাত নিয়ে উপরে গেলো অরিন। খুব ইচ্ছে করছে দিহানকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে। কষ্ট হচ্ছে তাঁর। নিজের স্বামীকে প্রকাশ্যে ভালোবাসতে না পারার কষ্ট। দিশা অরিনের হাত থেকে প্লেট নিয়ে দিহানকে খাওয়াতে বসে। দিহানের মুখের সামনে ভাত তুলে দিলে দিহান চোখ বন্ধ করে লম্বা দম নেয়। সবার জন্য অরিনের দিকে তাকাতেও পারছেনা সে। সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। উপরওয়ালা জানেন অরিন কিছু খেয়েছে কিনা। দিশা কান্নাজড়িত গলায় বলল,”ভাইয়া খা না প্লিজ। সবাই তোর জন্য না খেয়ে আছে, জানিস? দিহান একপলক অরিনের দিকে তাকিয়ে খেয়ে নিলো। দিশা দিহানকে খাচ্ছিলো তখনই জহুরা বেগম এসেছেন বলে মামুনুল হক জানিয়ে গেলেন। শায়লা বাইরে আসলেন। উনাকে দেখে জহুরা বেগম সালাম দিয়ে বললেন,”ভাবি কাইল ভাইজান কইলেন আইজকা অরিন যাইব গা। আন্ধার অইয়া যইতাছে। পথ চাইতে চাইতে নিতে আইলাম।” শান্তি চৌধুরী বললেন, “দাঁড়াও আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।” শায়লা ভিতরে চলে গেলেন। জহুরার কাছে উনাকে খুব চিন্তিত আর ব্যথিত লাগছে। কিছু কী হয়েছে? নিজের মনের প্রশ্নের উপর নিজে বিরক্ত হলেন জহুরা। আজ উনার মা চলে গেছেন উনার তো কষ্ট থাকবেই?
শায়লা অরিনকে গিয়ে বললেন,”তোমার মা আসছে তোমায় নিতে তুমি চলে যাও।”অরিন আড়চোখে দিহানের দিকে তাকালো। দিহানও মাত্র তাকিয়ে ছিলো দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। এই একটু পলকেই দিহান কাতর চোখে বুঝিয়ে দিলো অরিন যেন যায়না। অরিন শায়লাকে বলল,”চাচি নানুমনিরা তো আজ যাবেনা মনে হয়। আমি কাল নানুমনিকে বিদায় করে যাই? শাওন বলল,”না অরিন তুমি চলে যাও। কাল যাওয়ার সময় নানুমনিকে নিয়ে তোমাদের বাড়ি উঠে যাবো।” লুপা বলল,”না শাওন ভাই। আমিও চাই অরিন আমাদের বিদায় করে যাক।” শাওন আর কিছুই বলল না। মনসুর সাহেব বা শায়লা বেগমের মুখেও কোনো রা নেই। উনারা কি বলবেন? বাড়িতে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে কে করেছে কারা করেছে এগুলা ভেবেই উনারা শেষ হয়ে যাচ্ছেন। মাথায় এই প্রশ্নগুলা ছাড়া কিছুই ঢুকছেনা। অরিন সবার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। অরিন চলে যাচ্ছে দেখে দিহানের বুক ফেটে কান্না আসছে। ভেবেছিলো যাওয়ার আগে অরিনকে বুকে জড়িয়ে সব কষ্ট গুলো উড়িয়ে দিবে সে। কিন্তু অরিন চলে গেলো? অরিন কি তাঁর চোখের ভাষাটা বুঝেনি? দিশা আবার খাবার তুলে দিতে চাইলে দিহান বলে,”আমি খাবো না নিয়ে যা এটা।”
_এইটুকু খেয়ে বলছিস আর খাবিনা? আরেকটু খা না ভাইয়া প্লিজ?
_আমি খাবো না। নিয়ে যা।” দিশা কাতর চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো। দিহানের একটা চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসলো। সবাই ভাবলো দিহানের খুব কষ্ট হচ্ছে।
অরিন বাইরে এসে দেখলো তাঁর মা উঠুনে দাঁড়িয়ে আছেন। অরিনকে দেখে তিনি হেসে এগিয়ে আসলেন। অরিন পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো উনার পায়ে জুতো নেই৷ অরিন ধমক দিয়ে বলল,” মা তুমি জুতো পড়নাই কেন? এই ঠান্ডার মাঝে খালি পায়ে এসেছো?” জহুরা বেগম মেয়ের কথার জবাব না দিয়ে বললেন,”আয় বাড়ি আয়। একলা বাড়ি আমার আর ভালা লাগেনা।”অরিন বলল,”মা কাল যাই। নানুমনি, মানে চাচির মা আমায় বলছেন উনাদের বিদায় করে যেতে। কাল যাবো আমি। খুব সকালে চলে যাবো। তুমি যাও প্লিজ।
_কাইল যাইবি?” জহুরা বেগমের কণ্ঠ ব্যথিত। অরিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,”মা কাল যাই প্লিজ।
_কাইল সকাল যাইবি।
_আচ্ছা। তুমি যাও।” জহুরা বেগম চলে গেলেন। গেটের সামনে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালেন তিনি। মেয়ের পছন্দের রান্নাগুলো এখন গরম করে রেখে দিতে হবে। কত শখ করে রান্না করেছিলেন। ধনিয়াপাতা দিয়েছিলেন যেন স্বাদ বাড়ে। অরিন কাল যাবে কাল কি তরকারিগুলার স্বাদ ভালো থাকবে?
মাগরিবের আজানের সাথে সাথে শান্তি চৌধুরীর জ্ঞান ফিরলো। কিন্তু উনি চোখ টেনে যেন চাইতেই পারছেন না। উনাকে শায়লা বেগমের রুমে রাখা আছে। শাঞ্জু গিয়ে সবাইকে জানালো নানুর জ্ঞান ফিরেছে। খবর শুনে সবাই চলে আসলো শান্তি চৌধুরীকে দেখতে। দিহান আসতে পারলো না তাঁর মন শরীর সবকিছুই অসুস্থ। পা এগুবে না তাঁর।
সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়া মাত্রই অরিন এসে রুমে ঢুকলো। রুমে কেউ নেই দেখে অরিন অবাক হয়। সুযোগ বুঝে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে দিহানের পাশে বসে। দিহান হাতে কপাল ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। অরিন দিহানের মাথায় হাত রাখলো। কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা তুলে তাকাল দিহান। তাঁর চোখের কোণে জল জমে আছে। এই জলটা অরিনের উপর অভিমান করে জমেছিলো। অরিন ছলছল চোখে দিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। দিহান চট করে অরিনকে জড়িয়ে ধরে। দিহানকে জড়িয়ে অরিন ডুকরে কেঁদে উঠলো। অরিন কেঁদে কেঁদে বলল, “আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো আপনার কিছু হলে আমি মরে যাবো। বিশ্বাস করেন আমি সত্যি মরে যেতাম আপনার কিছু হলে।
_চুপ করো।
_ খুব হচ্ছে আপনার তাইনা?” দিহান অভিমানী স্বরে বলল,”কষ্ট হচ্ছে জেনেই তো চলে যাচ্ছো।
_কই যাচ্ছি। আমি তো মাকে চলে যেতে বলতে গেছিলাম।” দিহান শক্ত করে অরিনকে জড়িয়ে ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পরে অরিনকে ছেড়ে বলে,”আমি তমালপুরে জন্ম নিলাম না কেন অরিন? তখন তোমাকে ছেড়ে আমার কোথাও যেতে হতোনা। তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি ভাবলেই কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।
_আপনি যেখানে যান,যতদূরেই যান। কখনো আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
_মনে থাকবে তো?” অরিন দিহানের দুগাল ছুঁয়ে কপালে চুমু এঁকে দিলো। তারপর বলল,”স্বামীকে ভুলে যাওয়া কী খুব সহজ?” দিহান মৃদু হেসে অরিনের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে শান্তিতে একটা লম্বা দম ছাড়লো। অরিনের ইচ্ছে করছেনা দিহানের বুক থেকে মাথা তুলতে কিন্তু সব দিক ভেবে যে তাকে তুলতেই হবে। অরিন দিহানকে বলল,”আমাকে যেতে হবে। ছাড়ুন।
_উঁহু।
_প্লিজ। কেউ চলে আসবে।” দিহান অরিনকে ছেড়ে দিলো। এখানে পাগলামি করতে পারবে সে। কিন্তু কেউ দেখে নিলে অরিনকে কথা শুনাবে যা দিহান চায়না। মুখের কথায় তো কেউ বিশ্বাস করবে না অরিন আর তাঁর বিয়ে হয়েছে।
শান্তি চৌধুরীর অবস্থা দেখে বেশ ভালো মনে হচ্ছেনা। শাওন উনার প্রেশারটা মেপে দেখলো উনার প্রেশার বেড়ে গেছে। সবার চোখেমুখে চিন্তার চাপ। অরিন এসে রুমে ঢুকলো কারো চোখে পড়লো না। নীলের চোখে পড়লো। নীলের চোখে যে সব পড়ে সেটা অরিনও বুঝতে পারে। তাইতো এই নীলকে চিল মনে হয় তাঁর৷ অরিন আসার মিনিট খানেক পড়ে দিহান আসলো। দিহানের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে শান্তি চৌধুরীর চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসলো। জল গড়িয়ে এসে কান ছুঁয়ে গেল। দিহান দাদীর হাত ধরে পাশে বসলো। উনি কিছু বলতে চাইছেন,কিন্তু পারছেন না।” শাওন বললো,”দিহান নানুমনির প্রেশার বেড়ে গেছে।” দিহানের বুক ছ্যাৎ করে উঠল। সে তৎক্ষণাৎ শায়লা বেগমকে বলল,”ফুপি আমরা চলে যাবো।
_এখন তো রাত হয়ে গেছে দিহান। সকালে যা।
_না ফুপি আজই যাবো।” দিহান শান্তি চৌধুরীকে বলল,”তোমার কী খুব কষ্ট হচ্ছে দাদুমনি?” শান্তি চৌধুরী কাঁপা কাঁপা হাতে দিহানের গাল ছুঁয়ে দিলেন। দিহানকে ছুঁয়েই ডুকরে কেঁদে উঠেন তিনি। দিহান এবার অস্থির হয়ে গেলো। সে আর এক মূহুর্তও থাকবেনা। শাওন নীল কতো বুঝালো দিহান আর থাকবেই না। আসলে থাকার মতো সাহস সে পাচ্ছেনা। তাঁর দাদী দু দু’বার স্টোক করেছেন। এখানে সে কোন ভরসায় থাকবে। দিহান তাঁর দাদীকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলো। একবার কারো দিকে তাকাচ্ছেই না। অরিনের দিকেও না। সে শান্তি চৌধুরীকে নিয়ে ব্যস্ত। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে তাঁর দাদীকে কতোটা ভালোবাসে। দাদীর প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে অরিনের মনে কেন জানি খুব ভয় হলো। কখনো এই মানুষটা যদি দিহানকে বলে অরিনকে ছেড়ে দিতে দিহান তাকে ছেড়ে দিবেনা তো? দিহান বলেছে তাঁর দাদী পৃথিবীর সব খারাপকে ভালো বললে সেটাকে সবাই ভালো বলে। আর ভালোকে খারাপ বললে সেটাকে সবাই খারাপ বলে। অজানা ভয়ে অরিনের আত্মা কেঁপে উঠল। আবার শান্তি চৌধুরী তাকে নাতবউ বানাবো বলে চেইন পরিয়ে দেওয়ার কথা মনে হতেই আস্তে আস্তে ভয়টা কেটে গেলো।
দিশা ইশি রুহান দিয়া গিয়ে গাড়িতে উঠলো। লুপা নাই। নীল নিজের লাগেজ নিয়ে মাত্র বেরিয়ে আসছিলো। শায়লা বেগম গাড়ির সামনে থেকে দাঁড়িয়ে নীলকে বললেন,”নীল লুপাকে নিয়ে আয়।” মনসুর সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন দেখে নীল বেয়াদবি করতে পারলো না। লাগেজ রেখে ভিতরে গেলো। লুপা যে রুমে এতোদিন থেকেছে ওই রুমে গেলো। লুপা ড্রেসিংটেবিলে কি যেন খুঁজছে। নীল কর্কশ গলায় বলল, “এখন তোর জন্য কি গাড়িতে বসে সারারাত অপেক্ষা করতে হবে?” লুপা পিছন ঘুরে তাকাল নীল তীক্ষ্ণ চোখে লুপার দিকে তাকিয়ে আছে। লুপা চুপচাপ এসে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো। রুম থেকে বের হতেই নীল খপ করে লুপার হাত ধরে নিলো। লুপা হাত মোচড়ায় নীল আরো শক্ত করে ধরে। লুপা ব্যথায় আহহ বলে কুঁকিয়ে উঠে। নীল দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”আর কিভাবে প্রমাণ দিতে চাস তুই একটা বেশ্যা?” লুপা ছলছল চোখে নীলের দিকে তাকায়। কাঁটা গলায় বলে,” বু বুঝে ক্ক কথা বলবে। আ আ আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার অধিকার তো তোমার নেই।” নীল বলে,”তোর চরিত্র? তোর চরিত্রও আছে? এই জন্যই বুঝি ব্র***এর ফিতা বের করে রাখছিস। যেন তোর চরিত্রটা খুব সহজেই চোখে পরে?” নীলের কথায় লুপা ঘাড়ের দিকে তাকিয়ে চট করে ড্রেস টেনে তুলে। এই ড্রেসের গলাটা বড় বলে সে এটা চেঞ্জ করতে চাইছিলো। কিন্তু লাগেজের চাবিই পাচ্ছিলো না। লুপার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসলো,”নীলের সামনেই কেন তাকে বাজে অবস্থায় ধরা পরতে হয়? “নীল আবার দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”এই মিথ্যে চোখের পানি দিয়ে অনেক ঠকিয়েছিস মানুষকে। ন্যাকামি বন্ধ কর আর নিচে আয়। আর হ্যাঁ কোন ব্রেন্ডের পড়েছিস সেটাও দেখিয়ে আয়।” নীল লুপাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। ধাক্কা খেয়ে লুপা দুপা পিছিয়ে গেলো। তারপর চোখটা মুছে সেও নিচে গেলো।
চলবে,,,,,।