#যখন_তুমি_এলে।
#পর্ব- ২৪।
#লেখা- জাহান লিমু।
সায়াহ্ন কুনোব্যাঙকে এ কয়দিন একদম দেখতে পাই নি বিরুনিকা। বোধহয় একেবারে গর্তের ভেতর ঢুকে গেছে।
একটা মানুষ কি করে এতো ঘরকুনো হয়,সেটা বিরুনিকা জাস্ট ভাবতে পারেনা। তাও আবার ছেলে মানুষ। মেয়ে মানুষের ঘরকুনো স্বভাবটা তাও মানা যায়।
বিরুনিকাও এ কয়দিন ভীষণ ব্যাস্ত ছিলো। তাই সেও দেখা করার কোন সুযোগ পাই নি।
জানালার পাশে বসে বিষন্ন মনে, বিষন্ন আকাশ দেখতে লাগলো সে। হ্যাঁ,আকাশটাকেও বিরুনিকার বিষন্ন মনে হচ্ছে। কেমন একটা গুমোট ভাব করে আছে। যেন সে কারো প্রতি চূড়ান্ত বিরক্ত। সেজন্য মুখ ভার করে রেখেছে।
বিরুনিকাও সায়াহ্নর প্রতি বিরক্ত।
চরম বিরক্ত!
এই ছেলেকে বুঝা মুশকিল। সেদিন বিরুনিকা কত চেষ্টা করেছিলো,ইশারা ইঙ্গিতে বোঝানোর যে,বিরুনিকা ওকে পছন্দ করে। ভালোবাসা টাইপ পছন্দ। কিন্তু এতো কিছু স্বত্বেও, বিশেষ কোন লাভ হলো না। সে তার মতোই খেতে ব্যাস্ত ছিলো। মনে হচ্ছিলো,জীবনে চাউমিন খায় নি। বিরুনিকার বলতে মন চাইছিলো, ওকে বিয়ে করলে সে সকাল বিকাল চাউমিন রান্না করে খাওয়াবে। আর শুধু চাউমিন কেন,আরো বিভিন্ন দেশের রান্না সে জানে। ইতালিয়ান,আরবিক,ইন্ডিয়ান। কুনোব্যাঙ শুধু ঘরের কোনে বসে বসে গিলবে। কাঁটাচামচ দিয়ে সায়াহ্নর হাত ফুটো করে দিতে মন চাইছিলো ওর।
কারন বিরুনিকার কথা শুনলো কিনা, কে জানে। বিরুনিকার আরেকটা কাজ করতে মন চাইছিলো, সায়াহ্নর প্লেটে পানি ঢেলে দিতে। কিন্তু সেটা সে করতে পারলোনা। কারন খাবারের তো কোন দোষ নেই। শুধু শুধু খাবার কেন নষ্ট করবে?
তবে সায়াহ্নর মাথায় ঐদিনের মত আরেকটু পানি ঢালতে পারলে,বেশ লাগতো।
অবশ্য খাওয়ার মধ্যে কতটা মরিচ গুলা মিশিয়ে দিতে পারলে শান্তি লাগতো ওর। সায়াহ্ন কুনোব্যাঙ তখন চিনা জোঁকের মত লাফাতো।
সেটা দেখলেই বিরুনিকার শান্তি লাগতো।
এতোটা উদাসীন কোন মানুষ হয়?
সে কি সংসার ধর্ম করবে না?
যদি করে,তাহলে আমার সাথে করতে সমস্যা কি?
বিরুনিকা কথাটা বলে নিজেই অবাক হলো। কি সব বলছে সে?
মাথাটা কি পুরো গেছে?
পরক্ষণেই নিজেই নিজের কাঁধ চাপড়ে বললো,না! মাথা যাবে কেন?
ঠিকই আছে আমার মাথা। সে ভালোবাসে, এটাই কি যথেষ্ট নয় সায়াহ্নর তাকে ভালোবাসার?
কিন্তু ভালোবাসাতো জোর করে হয় না,বিরুনিকা সেটাও জানে।
কিন্তু সে তো সায়াহ্নকে কোনপ্রকার জোর করছে না। সেটা অন্তত তার বয়সের সাথে যায় না। কিশোরী মেয়েরা সেরকম পাগলামি করতে পারে।
কিন্তু মন যে আজ সেই অবাধ্য কিশোরী হতে চাইছে।
তবুও যদি সে আমাকে বুঝে,ভালোবাসে।
তবে না হয়,সেই উড়নচণ্ডী কিশোরীই হয়ে যেতাম। মন যে কোন যুক্তি বুঝেনা,বুঝতে চায় না। সে শুধু ভালোবাসা পেতে চায়। নিবিড় ভালোবাসা। ভালোবাসাকে কাছে পাওয়ার আঁকুতি তাকে,অবাধ্য করে তোলে।
মন শুধু মন ছুঁতে চায়,
অজানা বাহানায়।
চেনা অচেনা মায়ায়।
.
সেদিন আরাদ রোহানীর সাথে কোন কথা বলেনি। এমনকি পরবর্তীতে রোহানীর ফোনও ধরে নি। এদিকে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। অথচ রোহানীর বাবা দেশে নেই। এমনকি তিনি বিয়ের আগেরদিন সকালের ফ্লাইটে দেশে আসবেন। মেয়ের বিয়েতে,কোন বাবা অনুপস্থিত থাকে?
রোহানী জানে,এগুলো সব ওর মায়ের প্ল্যান। কারন সোহানী পুরোটা রোহানীকে বলেছে। বাবা যে ওকে তানিম ভাইয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলো। তখন সেও,সব বলে দিয়েছে। আর পরে তানিম ভাইয়ার থেকে, জানতে পারে বাবা ভাইয়াদের বাসায় গিয়েছিলো। এমনকি ভাইয়াকে পছন্দও করেছে। ভাইয়াকে বলেছে,পরিবার নিয়ে আসার জন্য। তখন তানিমই রায়হান সাহেবকে বলেন, যেন রোহানীকে কিছু না বলে। সারপ্রাইজ দিবে। আর সোহানীর সাথে মিলে,সেই প্ল্যানই করছিলো। কিন্তু রোহানী তো ওর মায়ের ভয়ে,সব ভেস্তে দিলো।
রোহানীরও অবশ্য এতে দোষ নেই। কারন সে এসবের কিছুই জানতোনা। সে তো তানিমের প্রতি রাগে,আর মায়ের ভয়ে এমন কথা বলেছিলো।
সে এবার হতবুদ্ধিকর হয়ে গেলো।
এতোকিছু না জেনেই,সে তানিমের প্রতি রাগ পুষে বসেছিলো।
আর যেহেতু বাবার সাপোর্ট ছিলো,তাহলে অন্তত একটু চেষ্টা তো করা যেতো।
কিন্তু এখন সে কি করবে?
গতকাল ওর মা ওদের দু’বোনের ফোনও নিয়ে নিয়েছে। যেন কোন চালাকি না করতে পারে। ফোন করার দরকার হলে,ওর মায়ের রুমের ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করবে।
তাই বাবা, আরাদ কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারছেনা সে। একটা অদ্ভুত বিষন্নতা এসে ভর করলো রোহানীর উপর। ভীষণ অসহায় লাগছে।
আরাদ এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন?
সে তো সবটা জানে। জানা স্বত্বেও, কি করে মায়ের সাথে তাল মিলাচ্ছে? রোহানীর মাথা কাজ করছেনা।
এতোদিনের বন্ধুত্ব ওদের। বন্ধুর এমন সময়ে,সে বন্ধুর সাহায্য না করে,উল্টো বিপদে ফেলতে উঠে পড়ে লেগেছে।
কারন রোহানী আরাদকে ওর মায়ের সাথে কথা বলতে শুনেছে। আর কথার বিষয়বস্তু ছিলো,বিয়ে কোন কমিউনিটি সেন্টারে হবে। সবচেয়ে ভিআইপিটাই বুক করলো দুজনে মিলে। কিছু ভিআইপি গেস্টেরও লিস্ট করলো। সে তালিকায় বেশ কজন সেলিব্রিটিও আছে। রোহানীর মাথা রাগে, ক্ষোভে কাজ করছিলো না। সবার প্রতি তার চরম ক্ষোভ জন্মালো। মা,বাবা,বোন,তানিম এমনকি এখন বিশেষ করে আরাদের প্রতি। সবাই মিলে ওর জীবনটা তছনছ করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।
রোহানী নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে অনবরত কাঁদতে লাগলো। রাগে মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলো। সে জানে,তার মা ভয়ংকর রাগী। একজন বদরাগী মেজাজের মহিলা। ছোটবেলায় একবার রোহানী ওর মায়ের নেইলপলিশের বোতল ভেঙ্গে ফেলেছিলো। সেটা ছিলো বিদেশ থেকে সরাসরি ইমপোর্টেড। তার কোন বান্ধবী এনে দিয়েছিলো। একদিন মাত্র ব্যবহার করেছিলেন।
সেটা এভাবে নষ্ট হতে দেখে,রাগে জোর করে মেয়েকে নেইলপালিশ খাওয়াতে নিলেন। তখন ওর বাবা এসে ওকে বাঁচিয়েছিলো। রোহানীর মাঝে মাঝে মনে হয়,উনি বোধহয় ওর আপন মা না।
কারো আপন মা এমন করতে পারে?
সেদিন রোহানী ভয়ে কেঁপেছিলো। এরপর আর কখনো মায়ের রুমেই যায় নি।
একা একাই খেয়েছে,ঘুমিয়েছে,পড়েছে।
তবুও যে সে সুস্থ স্বাভাবিক আছে,সেটাই বোধহয় বেশি। কারন এরকম আচরণ সন্তানের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে।
সে ছোটবেলার ভয়,এখনো যায় নি।
আর সেটাই তাকে এতোবড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিলো। আরাদ অবশ্য রোহানীকে আগেই বুঝিয়েছিলো,এমন কিছুই হতে পারে। কিন্তু তখন কি যেন হয়েছিলো,সেসব কিছুই মাথায় আসছিলো না। ভালোবাসাটা বোধহয় এমনি।
কিন্তু এখন এই ভালোবাসার পরিণতি কি,সেটা সে জানেনা।
তবে অন্য কাউকে গ্রহণ করা, তার পক্ষে সম্ভব না কোনভাবেই।
বিয়ের দিন সকালে আরাদ রোহানীদের বাসায় উপস্থিত। এবার সরাসরি রোহানীর রুমে গেলো। কিন্তু রুমে ঢুকেই আরাদ জোরে চিৎকার করে উঠলো!
#চলবে…