#আমার_গল্পে_তুমি??
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#২_পর্ব
,
অচেনা অজানা কারোর বাড়িতে এসে এভাবে হাহাহিহি করে হাসা মোটেও ঠিক নয়,, কিন্তু কি করবো জীবনের প্রথম শুনলাম কোনো ছেলের নাম মনা তাই জন্য হাসিটা কন্ট্রোল করতে পারিনি তাই হাসতে হাসতেই বললাম,,, সরি আমি আসলে হাসিটা কন্ট্রোল করতে পারিনি এনার নাম নাকি মনা হিহিহিহি এটা বলে আবার হাসতে লাগলাম।
স্টপ,,রেগে চিৎকার করে বলল আর্দ্র,,মা তোমাকে বলেছি না যে বাইরের মানুষের সামনে আমায় এসব উদ্ভট নামে ডাকবে না।
আশা (আর্দ্রের মা) বলল,,আহ এতো রাগ করছিস কেনো,,আসলে কি বলোতো ইয়ানা,, অনিক মানে আমার বড় ছেলে,, ও হওয়ার পর আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার যেনো এবার একটা মেয়ে হয়, তো আমি স্নোও করিয়েছিলাম রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বললো যে বেবি উল্টে আছে ভালো বোঝা যাচ্ছে না তবে আশা করি মেয়েই হবে, তাই ডাক্তারের কথা শুনে আর্দ্র হওয়ার আগেই ওর নাম মনা রেখেছিলাম কিন্তু পরে দেখি মেয়ে নয় ছেলে,, তাই মেয়ের সখ পূরণ করতেই আর্দ্রকে মনা বলে ডাকি।
মা একটা বাইরের মানুষ কে তুৃমি এতো কথা কেনো বলছো,আর এই যে অভদ্র মেয়ে গেট আউট।
আমি রেগে কিছু বলবো তার আগেই অনিক ভাইয়া বলল,
আহ আর্দ্র কি হচ্ছে কি ওনি আজ থেকে পরশ কে পরাবেন, মানে পরশের টিউশন টিচার,, অনিক বলল।
না ভাইয়া আমি পরশের জন্য এর থেকেও ভালো টিচার আনবো,,
ভাইয়া আমি বলছি কি ও থাকুক না, আজকে ওর জন্যই পরশ ভালো আছে আল্লাহ ওর উসিলায় পরশকে বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে,,, অন্তরা (অনিকের বউ) বলল।
কিন্তু ভাবি,,
কোনো কিন্তু নয় তোমার নামটা কি যেনো ও হা ইনায়া,, আজ থেকে ওই পরশকে পরাবে,, কবির,(আর্দ্রের বাবা) বলল।
ঠিক আছে তোমাদের যা ইচ্ছে করো,, আর এই যে মিস অভদ্র তোমায় আমি দেখে নেবো।
দেখুননা নিষেধ করছে কে, দরকার হলে চোখে চশমা লাগিয়ে দেখুন।
ইডিয়ট
সেম টু ইউ।
আর্দ্র রেগে উপরে চলে গেলো।
তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না মা ও এরকমি,, আসলো ছোট ছেলে তো খুব রাগি আর জেদি হয়েছে,, (আশা)
না না আন্টি আমি কিছু মনে করিনি,,, ওসব পাগল ছাগলের কথায় আমি কিছু মনে করি না,, মনে মনে বলল ইয়ানা।
আরে তোমার হাতে তো এখনো কিছু দেওয়াই হলো না এভাবে থাকলে তো ইনফেকশন হয়ে যাবে তুমি আসো আমার সাথে,,, এই বলে অন্তরা ইয়ানা কে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর হাত পরিষ্কার করে ওখানে স্যাভলন লাগাতে লাগল।
প্রায় অনেকক্ষণ পর গল্প গুজব করে ছয়টার দিকে ইয়ানা ওবাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল তবে ওর একটা বিষয়ে খুব খটকা লাগছে পরশ মানে যাকে ও পরাবে সেই পিচ্চি টা ওর সাথে একবারো কথা বলল না কেনো,, দেখে মনে হলো বাচ্চাটা খুবি মুডি,, ভাবা যায় এতোটুকু বাচ্চা আবার মুডি ও হয় হমম হতেও পারে বড়লোকদের বেপার সেপার।
,,,পরদিন,,,,
ভার্সিটি শেষ করে মাসুমকে পড়িয়ে বাড়ি চলে গেলাম কেননা পরশকে ছয়টার দিকে পরাতে যেতে হবে তাই ভাবলাম বাড়ি গিয়ে একেবারে ফ্রেশ হয়ে ছোটখাটো একটা ঘুম দিয়েই নাহয় পরশকে পরাতে যাবো,, যেই ভাবা সেই কাজ,,, সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম। পরশদের বাড়ি গিয়ে কলিং বেল চাপতেই আপু মানে অন্তরা দরজা খুলে দিলো।
আরে তুমি চলে এসেছো আসো ভিতরে আসো। আমিও মুচকি হেসে ভিতরে চলে আসলাম ওনি আমায় পরশের রুমটা দেখিয়ে দিলো আমিও সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম,, পরশের রুমে ঢুকতেই অবাক হয়ে হা করে পুরো রুমটা দেখতে লাগলাম,,সারা রুমের দেওয়ালে পেইন্টিং করা রুমের একপাশে ছোট্ট একটা দোলনা পুরো রুমে খেলনা দিয়ে ভর্তি আর পরশ পরার টেবিলে বসে আছে,,পরনে একটা থ্রী কোয়ার্টার পার্ন্ট গায়ে লাল একটা টির্শাট আর চোখে চশমা,, আমি গিয়ে ওর পাশের চেয়ারটাই বসে বললাম।
হাই আমি ইয়ানা তুমি??
আমি পরশ চৌধুরী,,, অনেকটা গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
বাবা ছেলেতো দেখি হেব্বি মুডি হুমম,,,আচ্ছা তুমি কালকে আমার সাথে কথা বললে না কেনো??
আমি চাচ্চুকে দেখেছি যে চাচ্চু মেয়েদের থেকে দূরে থাকে আর তুমি তো অনেক কিউট আর সুন্দর তাই তোমার থেকে দূরে ছিলাম যদি তুমি আবার আমায় দেখে আমার প্রেমে পড়ে যাও তাই,, আর আমি আমার ছোট চাচ্চুর মতো হবো তাই জন্যই তো চাচ্চুর মতো সব সময় অ্যাটেটিউড নিয়ে থাকি।
ছেলেটার কথাশুনে আমি তো পুরাই হা এতোটুকু একটা ছেলে কতবড় বড় কথা বলছে,, সবটা ওই খাটাস টার জন্য কি সব ভুলভাল জিনিস শিখিয়ে রেখেছে,, তারপর আমি বললাম,,, আরে তোমার ছোট চাচ্চু ভুল বলেছে আর আমরা তো আজকে থেকে বন্ধু,, কি তুমি আমার বন্ধু হবে না??
পরশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,, আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড, কিন্তু আমি তোমাকে কি বলে ডাকবো,, ওমমম পেয়েছি তোমাকে আমি কিউটিপাই বলে ডাকবো ওকে??
ওকে ঠিক আছে,, এই বলে আমি পরশের গাল টিপে দিলাম,, ও রেগেগিয়ে বলল,,এই চেহারায় হাত দিবে না।
আমি তো পরশের কথা শোনে অবাকের উপর অবাক হচ্ছি এতোটুকু ছেলের কি কথা,, বয়স কতই বা হবে সাত কি আট বছর , নানা ওতো হবে না সাত বছর হবে হয়ত কি জানি,,, এই কথা নিশ্চয়ই ওই খবিশটা শিখিয়েছে,, তারপর পরশের সাথে আরো কিছুক্ষণ গল্প করলাম আজকে ওকে পড়ালাম না ওর সাথে পরিচিত হয়ে নিলাম এখন দেখছি পরশ মোটেও শান্ত নয় একেবারে এক নাম্বারের দুষ্ট । পরশ এর থেকে বিদায় নিয়ে ওর রুম থেকে বেরিয়ে কেবলি সামনে যাবো তখনি কারো সাথে প্রবল বেগে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম আর আমার উপর যার সাথে ধাক্কা খেলাম সে পড়ল,, শুধু পড়লেই হতো কিন্তু না তা আর হলো কই না চাইতেও সামনের জনের সাথে আমার অনাকাঙ্ক্ষিত একটা কিসি হয়ে গেলো মানে ওনি আমার উপর পরার সাথে সাথেই আমি মুখটা পাশে সরিয়ে নিলাম আর ওনার ঠোঁট জোড়া এসে ঠেকলো আমার গালে,,মুখটা না সরানে কি যে হতো।
উফফ এই কি করলেন এটা দেখে চলতে পারেন না?? আমি রেগে বললাম।
তুমি?? ইচ্ছা করে এটা করেছো তাই না??,, রেগে বলল আর্দ্র,।
আমরা যেভাবে পড়েছিলাম ওভাবেই দুজন দুজনের সাথেই ঝগড়া করছি,, তখনি পরশ বলল,, একি কিউটিপাই তুমি চাচ্চুর নিচে কি করছো??
পরশের কথায় আমাদের হুশ আসলো আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে আমার উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলাম,, ওনিও উঠে দাঁড়ালো,,
চাচ্চু তুমি কিউটিপাইকে হামি দিয়েছো আমি দেখেছি।
পরশের কথায় আমি আর আর্দ্র পরশের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম,, আর্দ্র পরশের সামনে হাঁটু গেরে বসে বলল।কি বলতো চাম্প আমি তো ইচ্ছে করে দেয়নি বলো এটা একটা এক্সিডেন্ট ওকে।
না না আমি দেখেছি দাঁড়াও আমি আব্বু মাম্মাম দাদু আর দীদুন কে বলে দেবো যে তুমি কিউটিপাইকে হামি দিয়েছো।
পরশের কথায় আমার তো চোখবড় হয়ে গেলো আমি কিছু বলতে যাবো তখনি পরশ দৌড়ে নিচে চলে গেলো।
এই সব আপনার জন্য হয়েছে আপনি দেখে হাঁটতে পারেন না,,রেগে বললাম আমি।
তুমি দেখে চলতে পারোনা?? সেই প্রথম থেকে শুধু উল্টা পাল্টা কাজ করছো,, কি জানি চাম্প নিচে সবাইকে কি বলে,, এই বলে আর্দ্র নিচে চলে গেলো আমিও ওনার পিছে পিছে নিচে গেলাম।
কেবলি অনিক আর্দ্র অফিস থেকে বাসায় এসেছে,, অনিক এসে সোফায় বসেছে আর আর্দ্র রুমে যাচ্ছিলো কিন্তু তা হলো কই, ডয়িং রুমে অনিক আর কবির বসে ছিলো অন্তরা আর আশা কিচেন থেকে খাবার এনে ডাইনিং টেবিলে রাখছিলো তখনি পরশ দৌড়ে এসে সবার সামনে বলল।
এই শোনো সবাই আমার কিউটিপাই মানে হলো ওই যে আমাকে যে পড়ায় ওকে আমি আজ থেকে কিউটিপাই বলে ডাকি,,, জানো তো চাচ্চু না কিউটিপাই কে পেগনেন্ট করে দিছে।
পরশের কথায় আমার তো অঙ্গান হওয়ার মতো অবস্থা,, ছেলে দেখলো কি আর বলল কি,,আর সবচেয়ে বড় কথা ও পেগনেন্ট বলল কেনো আর পেগনেন্ট কথাটা শুনলোই বা কোথা থেকে ও তো বলল যে নিচে গিয়ে সবাইকে হামি দেওয়ার কথা বলবে তাহলে এটা বলল কেনো??.
আর বাকি সবার অবস্থা আমার থেকেও খারাপ।
চলবে,,,,,,,,????