আমার_গল্পে_তুমি ১_পর্ব

0
900

বান্ধবীর ভাইয়ের বিয়েতে এসে অচেনা একটা ছেলের হাতে দাবাং মার্কা চড় খেয়ে মানসম্মান খোয়াতে হবে ভাবি নি কখনো।চড়টা খেয়ে মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছিলো তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে মাথাটা ধরে দাঁড়ালাম।

হাও ডেয়ার ইউ?? তোমার সাহস কি করে হয় আদ্রান আহমেদ আর্দ্র চৌধুরী কে চড় মারার,, রেগে লাল হয়ে চিৎকার করে বলল ইয়াশ।

আর আমি ভয়ে এককোণে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি,, আসলো ব্যাপার টা হলো আমি ওয়াশরুম থেকে বেরোনোর সময় পিছন থেকে কেউ আমার শাড়ির আঁচল টা টেনে ধরল,, আমি রেগে পিছনে ঘুরেই পিছনে থাকা লোকটাকে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম তারপর অনেক গুলি কথা শুনালাম লোকটা রেগে লাল হয়ে তার দু হাত বুকে গুজে দাঁড়িয়ে আছে,, তখন আমার হুঁশ আসলো আরে ওনার দু-হাত তো বুকে রাখা তাহলে আমার শাড়ির আঁচলটা ধরলো কে? তারপর আঁচলের দিকে তাকিয়ে দেখি ওটা আসলে দরজার সিটকেনির সাথে আটকানো, আমি ভয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলে ওনার দিকে তাকাতেই ওনিও আমার নরম গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।

কি হলো কথা বলছো না কেনো বোবা নাকি তুমি??

আমি নিরবতা ভেঙে বললাম,, আপনি আমায় মারলেন কেনো?? যখন দেখলেন আমি ভুল বসত কাজটা করে ফেলেছি তখন আপনার উচিত ছিলো আমার ভুলটা ভাঙিয়ে দেওয়া কিন্তু আপনি সেটা না করে আমার গায়ে হাত তুললেন কেনো??

একে তো ভুল করেছো তার উপর সরি না বলে মুখের উপর বড় বড় কথা বলছো,, অভদ্র মেয়ে।

এই শুনুন ভুল করলে সরি বলতে হয় সেটা আমি জানি, তবে আপনাকে মোটেও সরি বলবো না কেননা আপনি সরি পাওয়ার যোগ্যই নন,, অভদ্র পুরুষ।

এই তুমি জানো আমি কে?? রেগে বলল আর্দ্র।

আপনি যেই লাট সাহেবই হন না কেনো আমি আপনাকে সরি বলবোনা মানে বলবো না।

হেই লিসেন ভুলটা তুমি করেছো তাই তোমার উচিত নিজ দায়িত্বে ভুলটা শুধরে নেওয়া,, পরবর্তীতে আমার সাথে এ ধরনের ভুল করলে ভুল শুধরানোর সময়টা আর পাবে না,, বুঝেছো?? আশা করি বুঝেছো,, এই বলে আর্দ্র চলে গেলো।

এটা কি ধরনের ছেলে কোনো ভদ্রতা জানে না আহ আমার গালটা,, এতো জোরে কেউ মারে, মনে হয় দাঁতই নরিয়ে দিয়েছে।

এই ইয়ানা এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস চল খেতে হবে না?? আন্টি সেই কখন থেকে তোকে খুঁজছে,,,তারপর রোজা (বান্ধবী) ওর সাথে চলে গেলাম।

,,,,,রাতে,,,

কি হলো মা কি এতো মন দিয়ে ভাবছো?? মায়ের পাশে বসে বললাম।

এভাবে আর কতদিন চলবে ইয়ানা তোর বাবার পেনশনের টাকায় তো সংসার চলছে না,, আবার তোর ভার্সিটি,,, বলছি কি একটা চাকরির খোঁজ করনা তাহলে আমাদের মা মেয়ের ভালোভাবেই চলে যাবে।

কি যে বলো মা চাকরি?? সেটা তো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটা সোনার হরিণ যেটা কিনতে টাকা লাগে,, আর যেখানে মানুষ মাস্টার্স কম্পিলিট করে আরো বড় বড় সার্টিফিকেট নিয়ে অফিসে অফিসে ঘুরেও তাদের চাকরি হচ্ছে না , সেখানে তোমার মেয়ে কেবল অর্নাস পড়ছে,, তোমার এই অর্নাস পড়ুয়া মেয়েকে কে চাকরি দিবে?? আচ্ছা আমি দুইটা টিউশনি করছি তো কালকে না হয় আরেকটা খুঁজবো তাহলেই হয়ে যাবে,, এবার চলো তো তোমাকে আর এসব ভাবতে হবে না।

সকালে খেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম সাড়ে আটটায় আবার একটা টিউশন আছে ওখান থেকে একেবারে ভার্টিসিটি যাবো তারপর ভার্সিটি শেষে আরেকটা আছে,,, তার উপর আজকে আবার আরেকটা টিউশনি খুঁজতে হবে,,, কথাগুলি ভাবতে ভাবতে হাঁটতে লাগলাম,, রোজাকে ওর বাসা থেকে নিয়ে সোজা ভার্সিটি চলে গেলাম।

দুপুরের দিকে ভার্সিটি শেষে বেরিয়ে পরলাম মাসুমদের বাসার উদ্দেশ্য,, মাসুম হলো আমার স্টুডেন্ট এবার ক্লাস ফাইভ এ পড়ে,,, মাসুম কে পড়ানো শেষ করে রাস্তায় এসে ফোনটা বার করে দেখলাম প্রায় চারটা বেজে গেছে ভাবছি সাড়ে পাঁচটা অবধি দেখবো তারপর বাড়ি চলে যাবো,, এই বলে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম কিছুদূর যাওয়ার পর একটা বড় গাড়ি আমাকে পাচ করে বেরিয়ে গেলো একটুর জন্য আমার গায়ের সাথে লাগেনি।

কত্তবড় অভদ্র গাড়ি আছে বলেই কি এভাবে গায়ের মধ্যে দিয়ে চালাতে হবে নাকি, মনে হচ্ছে ওনার বাপের রাস্তা,, রেগে কথাগুলি বলে সামনে তাকিয়ে দেখি গাড়িটা উঁচু দেওয়াল ঘেরা একটা গেটের ভিতর দিয়ে চলে গেলো আমি সামনে এগিয়ে গেলাম গাড়ির মধ্যে কে আছে সেটা দেখার জন্য,, গাড়ি থেকে একটা ছেলে বার হয়ে সোজা সামনের দিকে চলে গেলো,, উফ ছেলেটার ব্যাগ সাইট দেখেই ক্রাশ নামক বাঁশটা খাইলাম দুঃখের বিষয় মুখটা দেখতে পেলাম না,, কেবলি ভালোমতো ক্রাশটা খাবো তখনি মনে মধ্যে একটা গান বেজে উঠল,

৷৷ বালিকা তোমার প্রেমের পদ্দ দিও না এমন জনকে, যে ফুলে ফুলে উড়ে মধুপান করে অবশেষে ভাঙে মন কে।

না ইয়ানা খবরদার ক্রাশ খাশ না তোর ডিকশিনারির তে প্রেম নামক কোনো শব্দই নাই, তোর জন্য প্রেমে পড়া বারণ,,আমি যখন নিজেকে এসব বলে শান্তনা দিচ্ছিলাম তখনি ওই বড় বাড়ির গেটের ভিতর থেকে একটা বাচ্চা ছেলে ফুরুত করে দৌড়ে বাইরে চলে আসলো আমার সামনে দিয়েই দৌড়ে গেলো মনে হয় রাস্তার উপারে যাবে, তখনি দেখি অপর সাইড থেকে একটা কার আসছে আর পিচ্চি টা রাস্তার মাঝে বসে পড়ে পা থেকে জুতা খুলছে,, আমি চারপাশে দেখে দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে রাস্তার কিনায় আসতে গেলেই হুমরি খেয়ে পড়ে গেলাম বাচ্চাটার কিছু হয়নি কিন্তু আমার হাতে অনেক টা ছড়ে গেছে।

তোমার নাম কি?? আর এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলে??

বাচ্চাটা কোনো কথা বললো না, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।

কি হলো বলো?? তখনি একটা মেয়ে দৌড়ে আমাদের কাছে এসে ছেলেটাকে বকতে লাগল।

পরশ তোমাকে কতবার বলেছি এভাবে রাস্তায় আসবে না যদি করে আমার কথা শোনো,, মেয়েটা বাচ্চাটাকে বকা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,, দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে বয়সে ছোট তাই তুমি করেই বললাম,, তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না তবে আজকে তুমি আমার বড় উপকার করলে,,, একি তোমার হাত তো অনেকটা ছড়ে গেছে আসো আমার সাথে।

না না আমি ঠিক আছি,,

কিচ্ছু ঠিক নেই চলো তো,, তারপর ওনি আমাকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো অনেক বড় বাড়ি,, বাড়ির দুপাশে ফুলের বাগান আর মাঝখান দিয়ে রাস্তা আমি বাড়ি ভিতর গিয়ে দেখি ডয়িং রুমে একজন মহিলা আর দুইজন পুরুষ বসে আছে,, একজন বয়স্ক লোক আর একজন ছেলে টাইপ।
মেয়েটা আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো আর সবকিছু বলল।

তোমার কাছে তো আমরা রিনি হয়ে গেলাম,, তুমি আজকে আমাদের অনেক বড় উপকার করলে,,মহিলাটা বলল।

ওনাদের সাথে অনেক কথায় হলো উনারা অনেক ভালো মানুষ, এক পর্যায়ে কথায় কথায় ওনারা জিগাস করলেন যে আমি এদিকে কোথায় যাচ্ছিলাম তখনি বললাম যে টিউশনি খুঁজছিলাম তারপর ওনারা বললেন যে আমি যেনো ওই পিচ্চি মানে পরশকে পড়ায় আমিও রাজি হয়ে গেলাম এতবড় বাড়ি বেতনও ভালো দিবে, তখনি মহিলাটা বলল।

দাঁড়াও তোমাকে আর একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই, এই বলে ওনি মনা বলে কাউকে ডাকতে লাগলেন, আমি ভাবছি যে ওনার মেয়ে হবে হয়ত, কিন্তু না রুমের ভিতর থেকে একটা ছেলে বেরিয়ে আসলো আর ছেলেটাকে দেখে তো আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।

এই অভদ্র মেয়েটা এখানে কি করছে।

এই আপনি অভদ্র পুরুষ,, আপনি এখানে কি করছেন?? নিশ্চয়ই এখানেও খেতে আসছেন বড়লোক দেখেছেন আর চলে আসলেন??

আরে তুমি কাকে কি বলছো?? আমি ওই মেয়েটাকে কিছু বলতে না দিয়ে বললাম,, দাঁড়ান আপু আমি বুঝেছি এনি নিশ্চয়ই চুরি করতে এখানে এসেছে নয়ত বাড়ির ভিতর ঢুকলো কীভাবে,, আর আন্টি আপনার মেয়ে কই মানে যাকে আপনি ডাকলেন মনা।

আরে মনা আমার মেয়ে হবে কেনো আমিতো মনা বলে আমার ছেলেকে ডাকলাম আর এটাই তো আমার ছেলে।

আন্টির কথা শুনে আমি হা করে সেই রাগি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে দিলাম।

#আমার_গল্পে_তুমি??
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#১_পর্ব

,,,,
চলবে,,,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here