আমার_গল্পে_তুমি ৩_পর্ব

0
500

#আমার_গল্পে_তুমি??
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#৩_পর্ব
,
সকলে অবাক চোখে পরশের দিকে তাকিয়ে আছে, অনিক কেবলি গলা থেকে টাইটা খুলছিলো কিন্তু পরশের কথা শুনে টাইয়ে হাত দিয়ে হা করে বসে আছে।

হোয়াট?? ,,, জোরে চেঁচিয়ে বলল আর্দ্র।

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা মাথার মধ্যে সবকিছু কেমন গোল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে,,,, এসব তুমি কি বলছো দাদু ভাই,, আশা বলল।

আমি ঠিকি বলছি দীদুন,, চাচ্চু কিউটিপাই কে পেগনেন্ট করে দিছে আমি দেখেছি।

পরশের কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতাছি না,, তাই কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি তখনি অন্তরা আপু বলল,,, এসব কি বলছো পরশ আর একটা ভুলভাল কথা বললে মেরে সব বাঁদরামো ছুটাই দেবো,,

দাদু দেখো না মাম্মাম শুধু বকা দেয় আমিতো ঠিক কথাই বলেছি,,, পরশ গিয়ে কবির এর কোলে বসে বলল।

আচ্ছা তুমি কি করে জানলে ইনায়া মানে তোমার কিউটিপাই পেগনেন্ট??

কি বলতো দাদু কালকে সকালে আমি টিভিতে কার্টুন দেখছিলাম তারপর কার্টুন দেখতে ভালো লাগছিলো না তাই অন্য জায়গায় দিলাম, তখনি দেখলাম টিভিতে একটা ছোট বাচ্চা তার মায়ের কাছে বলছে যে পেগনেন্ট কীভাবে হয়,(এখানে বলে রাখি, হামি মুভিতে এমন বলে),, তখন ওর মা ওকে বলল যে হামি দিলে নাকি সে পেগনেন্ট হয়ে যায়,, তো এখন উপরে চাচ্চু কিউটিপাই কে হামি দিয়ে পেগনেন্ট বানিয়ে দিছে।

পরশের কথা শুনে যেনো দেহে প্রাণ ফিরে এলো একটা ভুল বুঝাবুঝির থেকে বাঁচলাম,, আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে দেখি ওনি রেগে তাকিয়ে আছে আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,,, আ,,আমি তাহলে আসি অনেক রাত হয়ে গেছে৷৷ এই বলে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসলাম,,,

উফ বাবা বাঁচলাম, কি বিচ্ছু ছেলে এক মহুর্তেই বিয়ে না করেই আমায় পেগনেন্ট বানিয়ে দিলো,, না বাবা এখন থেকে সাবধানে চলতে হবে। এই বলে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।

আর্দ্র পরশ যা বলছে তাকি সত্যি?? তুমি ইয়ানা কে পেগনেন্ট না মানে হামি দিয়েছো??

অনিক সোফা থেকে উঠে এসে আর্দ্রর গলা জরিয়ে ধরে বলল,,কিরে ভাই শুধু কি হামিই দিয়েছিস নাকি সত্যি সত্যি পেগনেন্ট বানিয়ে দিয়েছিস,, দ্যাখ আমায় বলতে পারিস আমি তোকে সাহায্য করতে পারি।

ভাবি তোমার বরকে সামলাও কিন্তু নইলে কবে আমি ওকে কিছু করে দেবো কেউ ঠিক ও পাবে না,,, আর আমি ওই অভদ্র মেয়েটাকে ওসব হামি টামি কিছুই দেয়নি ওটা যাস্ট একটা এক্সিডেন্ট পরশ ভুল দেখেছে,, এই বলে আর্দ্র চলে গেলো।

বুঝলে অন্তরা এটা একটা এক্সিডেন্ট,,, চোখ মেরে বলল অনিক।

,,,,,,,,,,,,,

কিরে খেতে বসে একা একা ওমন পাগলের মতো হাসছিস কেনো??

তখন পরশের কথা মনে পড়ে খুব হাসি পাচ্ছিলো বাব্বাহ ওই খাটাসটার চেহারাটা যা হয়েছিলো না একেবারে দেখার মতো এসব ভেবে হাসছিলাম তখনি মা এসে কথাটা বলল,,, নাহ মা কিছু না এমনিতেই।

তা আজকে আসতে এতো দেরি হলো কেনো??

আরে তোমাকে বলেছিলাম না,, যে আমি একটা নতুন টিউশন পাইছি তো ওখান থেকে আসতেই এতো দেরি হয়ে গেলো।

আমার কিন্তু এসব মোটেও ভালো লাগে না এখন সময় ভালো নাকি?? তুই একা একটা মেয়ে এভাবে রাত করে বাড়ি ফিরিস আল্লাহ না করুক, যদি একটা অঘটন ঘটে যাই তখন??

ওহ মা তুমি এতো চিন্তা করো নাতো, আর আমি তো আটটার আগেই আসার চেষ্টা করি, আজকে একটা ঝামেলা হয়েছিলো তাই।

ঝামেলা কিসের ঝামেলা?? মা অস্থির হয়ে বলল।

আরে ও কিছু না তুমি এতো চিন্তা করো না,, শোনো না মা কালকে তো শুক্রবার তুমি রেডি থাকবা বিকেলে তোমাকে নিয়ে চটপটি খেতে যাবো।

না না আমি ওসব খাই না,,

আরে রাখোতো আমি যেতে বলছি যাবা দেখবা ভালো লাগবে,, আমিও সবাইকে দেখিয়ে দেবো আমি মেয়ে হয়েও আমার মাকে সুখে রেখেছি।

পাগলি একটা এবার হা কর আমি তোকে খাইয়ে দিই,,, এরপর মায়ের হাতে খেয়ে সবকিছু গুছিয়ে ঘুমাতে চলে গেলাম।

,,,,সকালে,,,,

যেহেতু আজকে শুক্রবার তাই ভোরে উঠে নামাজটা পড়ে আবার ঘুমাই গেছি,, নয়টার দিকে উঠে ক্লিপ দিয়ে চুলগুলি কোনো রকমে আটকে ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম তখনি মা বলল।

এই পাশের দোকান থেকে হলুদ,, ডিম,, আর মরিচের গুঁড়ো আনতো এগুলি সব ফুরাই গেছে,,,

ওকে আনছি,, এই বলে ব্রাশটা মুখের ভিতর পুরে হাঁটতে লাগলাম,, পরনে একটা ঢিলেঢালা প্লাজু আর গায়ে একটা টিশার্ট এটাকে টিশার্ট বললে ভুল হবে টিশার্ট তো ছোট হয় কিন্তু আমার এটা হাঁটুর উপর অবধি পড়ে,, উরনাটা মাথায় দিয়ে ব্রাশ করতে করতে হাঁটছিলাম তখনি দেখি একটা লোক কিছু বাচ্চাদের বলছে,,,,শোনো যেখানে সেখানে থু থু ফেলবে না ওকে আর সব সময় পরিষ্কার পরিছন্ন থাকবে,, লোকটার কথা শুনে আমি কিছু বলতে যাবো কিন্তু গালের মধ্যে থুথুর জন্য বলতে পারলাম না অগত্যা পাশেই থুথু ফেললাম তখনি কেউ বলল।

ছিঃ কি নোংরা এভাবে যেখানে সেখানে কেউ থু থু ফেলে, এই মেয়ে তুমি তো দেখছি কোনো ডিসিপ্লিনই জানো না।

কারো গলার আওয়াজ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি সেই লোকটা মানে আর্দ্র,, জগিং সুট পরে দাঁড়িয়ে আছে,, আমাকে দেখে বলল।

তুমি?? অবশ্য তোমার থেকে এসবি আশা করা যায়, কোনো ডিসিপ্লিন নেই নোংরা একটা।

আমি আবারো পাশে থু থু ফেলে বললাম,,, এই আপনার প্রবলেম কি বলুন তো সব সময় আমার সাথে ঝগড়া করার সুযোগ খোঁজেন,, আর আমি জানি যে যেখানে সেখানে থুথু ফেলতে হয় না,, তাই আমি রাস্তার পাশেই ফেলেছি, আর আপনি আমায় ডিসিপ্লিন সেখাচ্ছেন?? নিজে তো বেলা নয়টার সময় জগিং করতে বেরিয়েছেন।

এই শোনো আমি তোমার মতো এতো অলস নয় যে এতো বেলা করে পড়ে পড়ে ঘুমিয়ে এখন উঠে ব্রাশ করবো,, আমি সকালেই জগিং করতে বেরিয়েছিলাম কিন্তু রাস্তায় এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলো তাই ওর সাথে ওর বাসায় গিয়েছিলাম এই জন্যই দেরি হয়ে গেলো।

হুমম জানি জানি উল্লুক একটা।

এই কি বললে তুমি?? ,,এই আচ্ছা উল্লুক মানে কি??

এ বাবা আপনি এটাও জানেন না?? হাঁদারাম একটা।

স্টপ,, এতো যে ভাব দেখাচ্ছো তুমি বলো উল্লুক মানে কি??

আমিও জানি জানি না,,, দেখি সরুন আমায় দোকানে যেতে হবে যত্তসব,, এই বলে ইয়ানা চলে গেলো।

এ কি মেয়ে ধ্যাত,,, আর্দ্র চলে গেলো,, আর্দ্র বাড়িতে ঢুকলেই পরশ দৌড়ে এসে ওর কোলে উঠে গলা জরিয়ে ধরে বলল,, চাচ্চু তোমাকে একটা প্রশ্ন করি??

হুম করো।

আচ্ছা বলতো,, একটা গাছে তিনটা পাখি বসে আছে ওখান থেকে যদি দুইটা পাখিকে গুলি করে মেরে ফেলা যায় তাহলে আর ওই গাছে কয়টা পাখি থাকবে??

এটা তো খুবি সিম্পল,, ওখানে আর একটা পাখি থাকবে।

নো নো হয়নি ওখানে আর একটাও পাখি থাকবে না কেননা গুলির শব্দে সব পাখি উড়ে যাবে,,,কি মজা কি মজা চাচ্চু পারে না,, আচ্ছা বলতো হাঁদা।

হাঁদা,,ভ্রু কুঁচকে বলল আর্দ্র।

তুমি একটা গাধা,, হিহিহি চাচ্চু গাধা। হাতে তালি দিয়ে বলল পরশ।

এসব তোমাকে কে শিখিয়েছে পরশ,,,রেগে বলল আর্দ্র।

কেনো কিউটিপাই,, এখন ছাড়ো আমায় তুমি একটা গাধা,, এই বলে পরশ আর্দ্রর কোল থেকে নেমে চলে গেলো।

এই মেয়েটাও না, কি সব ভুলভুল জিনিস শিখাচ্ছে কালকে আসুক তারপর বোঝাবো,, একটা ছোট বাচ্চাকে এসব শিখানোর জন্য ওনাকে তো শাস্তি পেতেই হবে।,, এই বলে আর্দ্র গটগট করে রুমে চলে গেলো।

চলবে,,,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here