লাভনীতি-০৮

0
1838

#লাভনীতি
বিথি হাসান-০৮

২৪.
আসাদ সারা রুম পায়চারী করছে আর ফোনে কার সাথে যেন জোরে জোরে কথা বলছে।যা শুনে একটু পর পর কেপে কেপে ওঠছে বেডে ঠেস মেরে বসে থাকা নম্রতা।তার ভেতরে এমনে তে ভয়ে লাগছে।তার মধ্যে আসাদের এমন কথা বার্তা।যা কিছুক্ষণ পর পর ভূমিকম্পের মত লাগছে নম্রতার কাছে।না জানি ফোনের ওপর পাশের মানুষটির কেমন লাগছে।এই ভয়ংকর রকমের মানুষের সাথে কেউ ফোনে কিভাবে এতোটা সময় কথা বলতে পারে?

ফোনটা কিছুটা শব্দ করেই বেডে ছুড়ে মারে আসাদ। যাতে পূর্বের থেকে কিছুটা জোরেই কেপে ওঠে নম্রতা।সে কোন রকম চোখ তুলে তাকায় আসাদের দিকে।আসাদ নিজের চুলে হাত ভুলাচ্ছে।নম্রতার কাছে আসাদকে একদম নরমাল লাগছে।যেন একটু আগে সে কারো সাথে কথাই বলেনি।

নম্রতা কে নিজের দিকে তাকাতে দেখে আসাদ একটা বাকা হাসি দিলো।যার ফলে নম্রতা ডেব ডেব করে তাকিয়েই রইল।নম্রতার গোল গোল করে তাকানো তে আসাদ প্রায় পাগল হয়ে যায়।আর এভাবে ভয়ে জরো সরো হয়ে বসে তার দিকে এভাবে তাকালে তো তার মন চায় নম্রতা কে একদম খেয়ে ফেলতে।আচ্ছা মেয়েটা তাকে আজকে আগের তুলনায় একটু বেশি ভয় পাচ্ছে না?তার কি উচিত আরো ভয় দেখানো??কি জানি পরে যদি হিতে বিপরীত হয়??

নম্রতার রুমে আফসানার আগমনে তাদের নিরিবিলি পরিস্থিতি টা কিছুটা নরমাল হয়।আফসানা হেসে হেসে বলছে,,
—“নেতাদা!!!আপনাকে কি আমি নাতাদা ডাকতে পারি?

আফসানার কথায় নম্রতা ভ্রু যুগল কুচকে যায়।এটা আবার কেমন ডাক?এই মেয়েটা আসলেই তার ছিড়া।কাকে কি নামে ডাকবে তাই এখনো জানলো না।এই মেয়ের কোন ভরসা নেই।কখন না আবার বলে দেয়, “জানেন ভাইয়া নম্রু না আপনাকে তার নেতাজি বলে ডাকে”
ইশশশ!!এ কে এখনোই চুপ করাতে হবে।

আফসানার কথায় আসাদ একটু জোরে হেসেই বেডে থাপ করে শুয়ে পরে।এবং বলে,

—“তোমার যা ইচ্ছে ডাকো প্রানের শালিকা!!!আমি তো তোমারই।

কথাটা বলে আসাদ আরো উচ্চস্বরে হাসে।আসাদের কথায় আফসানা হাসলেও নম্রতা সরু চোখে আসাদের দিকে তাকায়।তার কথাটা হজম করতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। নম্রতা কে এভাবে তাকাতে দেখে আসাদ প্রায় পাগল। সে নম্রতা কে আরো আপত্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য বলে,

—-“জানোই তো শালি আধি ঘরওয়ালি”তুমি আমার আমি তোমার ভাগাভাগি।কি বলো??

—“ইয়াহ নেতাদা!!!

—-“সিঙ্গেল আছো নাকি কেউ আশে পাশে আছে?থাকলে বলো আজই সাটাই করে দেই।আমি আবার নিজের জিনিসের উপর কারো নজর পছন্দ করি না।তা আজকে রাতে থাকসো তো আমাদের সাথে। তিনজনে সেই মজা হবে এক খাটে।

কথাটা শুনে আফসানা আবারও সশব্দে হেসে দেয়।আর আসাদ নম্রতার ওরনার কোনা পেচাতে পেচাতে তার দিকে দুস্টু হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে। নম্রতা আর বসে থাকতে পারো না।তার কান এতোক্ষণে গরম হয়ে গেছে।আসাদ কে সে এতোদিন গম্ভীর প্রকৃতির মনে করেছিলো।এখন তো দেখছে রসিকতায় টইটুম্বুর। মুখ ভেংচি কেটে সে আফসানর দিকে কি যেন একটা ইশারা করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

—————————-
২৫.
মাত্রই ডিনার করে রুমে ডুকে আসাদ।আফসানারা তাকে নিয়ে একটু আনইজি।কারন তারা মনে করছে আসাদের মেহমানদারিতে কোন রকম কমতি হচ্ছে। আসাদের যদিও সামান্য সমস্যা হচ্ছে। তাও কোনরকম চালাচ্ছে।এই বাড়িতে বউ আছে যেহেতু এই একটু সমস্যা না পোহালেই নয়।

নম্রতা যদিও সেই কখন থেকে তাকে তাড়ানোর জন্য বলেই যাচ্ছে।

—-“আপনি এখানে আর কেন থাকবেন?আপনার প্রবলেম হবে!!আপনি এই পরিবেশে কর্মফর্ট না।চলে যান।

আসাদ জানে নম্রতা কেন এগুলো বলছে।সে শুধু আসাদের থেকে পালিয়েই বেড়াচ্ছে। আজকে আসাদ তাকে ধরবেই।এবং তা সে পরিকল্পনা করেই এসেছে।

আসাদের ভাবনার মাঝেই রুমে ডুকে নম্রতা। নম্রতা খুব স্বাভাবিক ভাবে দাড়িয়ে বেডে ঘুমানোর জন্য বালিশ ঠিক করছে। তাকে দেখে এতোই নরমাল লাগছে যে আসাদ অবাক হচ্ছে।তার আচরনে এটা একদম প্রকাশ পাচ্ছে যে সে আসাদকে একদমই ভয় পাচ্ছে না।এমনকি কোন বিষয় নিয়ে সংকচও করছে না।

একটু পর নম্রতা আসাদ কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—-“আপনি এখানেই ঘুমিয়ে যান।বিছানার এইদিক টা আরাম দায়ক।

—-“তুমি কোথায় ঘুমাবে তাহলে???

—-“আমি ঘুমাবো না।পরবো।প্রচুর পড়া বাকি।আপনি শুয়ে পড়ুন।

এতটুকু বলে নম্রতা আসাদ কে ক্রস করে ওয়াশরুমে ডুকে।আর আসাদ কিছুটা রেগে যায়।কিন্তু প্রকাশ না করে বেডে গিয়ে বসে।কিছুক্ষণ পর নম্রতা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আসাদ বড় বড় চোখ করে তাকায়।নম্রতা একটা কালো টি-শার্ট পরেছে।যাতে লিখা”Don’t Disturb me”।সাথে হাটু পর্যন্ত কালো পেন্ট।চুল গুলো হাটু পর্যন্ত এবং তা একদম খোলা।আর মুখের উপর ছোট ছোট চুলগুলো চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।কারন মুখটা ভিজা।বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা মুখে লেপ্টে।চোখের পাপড়ি গুলো জোটবাধা।

নম্রতা এক পলক আসাদের দিকে তাকিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে টাওয়ালটা ড্রেসিংটেবিলের সামনের টুলে ছড়িয়ে দেয়।তারপর টুলে বসে চুল আচরে একটা উচু করে জুটি করে।তারপর ঠোটে লিপ বাম দিয়ে ওঠে দাড়ায়।কয়েক কদম হেটে পড়ার টেবিলের কাছে যায়।এবং দপ করে বসে পরে।আসাদের দিকে একবার মাথা গুরে তাকায়।আসাদের হাবভাব কিছুটা বুঝতে পারে নম্রতা। আসাদ যে তার উপর রেগে আছে তা নম্রতা বুঝতে পেরেছে মাত্রই।এখন আর তার কিছু করার নেই।সে মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে পরতে থাকে।

আসাদের অবস্থার কথা বর্ননা না করলেই নয়।আসাদ সেই ওয়াশরুম থেকে বের হওয়া হুরের রুপের ঘোর এখনো কাটাতে পারছে না।সে নম্রতা কে এই রুপে আজ প্রথম দেখেছে।নম্রতা তাদের বাড়িতে কখনোই এমন ড্রেস পরেনি।আজ হয়ত নিজের বাড়িতে এসেছে বলে।

তার ওপর নম্রতার ভাবে বুঝা যাচ্ছে সে কাজ গুলো ইচ্ছে করে করছে।নম্রতা মানুষটা নিজেকে এতই চালাক ভাবে যে সৃষ্টিকর্তা মনে হয় বুদ্ধি শুধু তাকেই দিয়েছে।আসাদ আগে সামান্য রেগে থাকলেও এখন তার রাগের পরিমান টা হয়েছে প্রচুর।সে হাস ফাস করে ওঠে দাড়ায়।এবং শ শ বেগে নম্রতার পড়ার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়।গিয়েই নম্রতা কে দু কাধে ধরে দাড়া করায়।নম্রতা যেন এমন কিছুই আশা করোছিলো।তাই সে স্বাভাবিক।

নম্রতা কে স্বাভাবিক দেখে আসাদের রাগ আরো বেড়ে যায়।এই মেয়েটা আসাদের আবেগ আসাদের মনের ভাব কেন বুঝে না?কেন সে অবুঝের মত কাজ করে?হোয়ায়?নম্রতা কে দাড় করিয়ে টেনে খাটের কাছে নিয়ে আসে আসাদ।তারপর থাপ করে শুয়িয়ে দেয়।লাইট ওফ করে নিজেও শুয়ে পরে নম্রতার পাশে।

নম্রতা এতক্ষণ কিছু না বললেও ভালোই রেগে আছে।সে তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বলে ওঠে,

—-“মানে কি এসবের?আমার পড়া আছে।অনেক পড়া।

—“বেডের থেকে নামলেই মাইর।

আসাদের ভয়াবহ কন্ঠে দমে যায় নম্রতা। তার অবুঝ মন একটু হলেও বুঝতে পারে এখন উল্টা পাল্টা কিছু করলেই মাইর।সে চুপচাপ অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পরে।আর এদিকে আসাদ একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে দুচোখ বন্ধ করে।এই জীবনে হয়ত তার আর নম্রতার ভালোবাসা পাওয়া হবে না।কি জানি?মেয়েটা কেন এমন করছে.?আর কেনই বা আসাদ এই মেয়েটার উপর নিজের কোন জোর দেখাতে পারে না?এতো শতো মেয়ে তার পিছনে গুরলেও নম্রতা যেন অন্য রকম।যাকে নিজের করে পাওয়ার ইচ্ছা আসাদ কে সহস্র বার বাচার অনুপ্রেরণা জাগায়।আসাদ কখনো ভাবে ও নি তার জীবনে এমন কিছু ও লেখা ছিলো।

—————————
২৬.
অর্ক আসবে কালকে।আফসানা রাগ করেছে অর্কের সাথে।আসি আসি বলে ফাকি দিচ্ছে বলে।সব জায়গা থেকে ব্লক দিয়েছে।সে ভাবছে অর্ক আসলেও কথা বলবে না তার সাথে।কেউ এভাবে অপেক্ষা করায় তার প্রিয়তমা কে।অর্ক কেন সবার মত প্রিয়তমার চাহিদা বুঝে না।সে তো একটু সময়ই চায়?তাহলে??

আফসানা ভেবেছে,
অর্ক কে বলে তাড়াতাড়ি বিয়ের কথাটা ফেমেলিকে জানাবে।যদি অর্ক না করে দেয় তবে নম্রতা তো আছেই।নম্রতা এমন মানুষ যাকে আত্মীয় সজন সবাই অনেক ভালো পায়।তাই নম্রতার কথা রাখতে পারে।অর্ককে সে হারাতে চায় না।সেই ছোট বেলার ভালো লাগা।এতো দিন তার জন্যই তো কাউকে মন থেকো ভালো লাগেনি।কিন্তু এই কথাটা নম্রতা কে তো আর বলা যায় না।তাই বানিয়ে বুনিয়ে যা বলেছে।

আফসানা নিজের বিছানায় শুয়ে শুয়ে তার আগের দিন গুলোই ভাবছিলো এর মধ্যে আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে।সে নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।তারপর রিসিভ করে।এবং গম্ভীর স্বরে বলে,,,

—-“আরিফ!!! তুমি পরে ফোন দিয়ো।এখন আমার দূরসম্পর্কের চাচা ফোন দিতে পারে।তোমার সাথে কালকে দেখা করব।
ঠিক আছে বায়!!!!

কট করে ফোনটা কেটে দেয় আফসানা।এবং হেসে কুটিকুটি হয়।একটুপর আবারও ফোন আসে।সেই নাম্বার থেকে আফসানা রিসিভ করে আবার বলে,,,

—“রনি!!! তোমাকে আমি বলেছি তো ভালোবাসি। তারপর ও বারবার শুনতে হবে ফোন দিয়ে।অনেক দুস্টু হয়ে গেছো।আচ্ছা কালকে দেখা হবে কলেজে এখন ঘুমাবো।ওকে বায়!!!

লাইন কেটে আফসানা মুখে বালিশ চাপা দেয়। কারন তার দম ফাটানো হাসি পাচ্ছে। এতো রাতে একা একা হাসলে যে কেউ সন্দেহ করতে পারে।পাগল ছাড়া আর কিছু ভাববে না তাকে।হাতে ফোনটা নিয়ে নেক্সট কলের অপেক্ষা করে।বেশি অপেক্ষা করতে হয় না।এবার রিসিভ করে বলে,,,

—-“আচ্ছা সাহিল,,, তুমি মাত্রই তো ভিডিও কল দিলা।আবার ও তু,,,,,,,,

——“আরেকটা কথা বললে আমি এখনই তোর জিব টেনে বের করে ফেলবো আফসানা ।

অর্কের বাজ খাই কন্ঠ শুনে আফসানার আবার অভিমানে চারপাশ ডেকে যায়।সে একদম চুপ হয়ে যায়।কান্না ও করে দেয়।ওপর পাশের লোকটা ও চুপচাপ।

—–“একদম নেকা কাদবি না।ছিচ কাদুনি।সারাক্ষণ খালি কান্নাকাটি।কি হয়েছে এতো কান্নার কি আছে?

—–“তোর সাথে ব্রেকআপ কুত্তা!!!!

হেচকি তুলে কেদে কেদে বলে ওঠে আফসানা।তার প্রচুর রাগে ক্ষোভে মাথা অটো।কাকে কি বলেছে সে তা জানে না।কট করে লাইন কেটে দেয় আফসানা।তারপর এই নাম্বার টা ও ব্লক করে দেয়।লাগবে না তার এমন পাদের বফ।এমনে তে সে মন খাটো করে রেখেছিলো।তার উপর তাকে অপমান করেছে।আফসানা কে কি এতই নঘ্ন মনে হয়?সে ও মানুষ। সে ও দুনিয়ার সকল প্রেমিকাদের মতই তার প্রেমিকের সঙ্গে অভিমান করেছিলো।কিন্তু তার প্রেমিক দুনিয়ার সকল প্রেমিকদের মত তার অভিমান ভাঙায় নাই তো নাই।আরো তাকে অপমান করেছে।সে বিড়বিড় করে বলে,
—“আমার প্রথম প্রেম এতো অবহেলিত হতে পারে না।কিছুতেই নাহহহহহ!!!

চলবে,
আমি দুঃখিত প্রিয় পাঠকগন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here