#লাভনীতি
বিথি হাসান-০৪
১১.
নম্রতা একটা বিষয়ে কনফিউজড। বিষয়টি হলো তার প্রায় ১মাস ধরে মনে হচ্ছে কেউ তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করে।সে প্রতিবারই খুব সাবধনতার সাথেই বাহিরে বের হয়।তারপরও তার এমন মনে হয়।এমনকি সে খেয়াল ও করেছে। আজকাল অনেক সময়ই তাদের বাসার সামনে রাস্তায় অপরিচিত অনেক গাড়িই পার্ক করা থাকে। যা আগে থাকত না।
এইতো সেদিন সে একটু বাহিরে গিয়েছিলো প্রয়োজনীয় নোটস আনতে।আফসানা তার সাথে যায়নি।মেয়েটা বড্ড অলস।তাই সে একাই চলে গেছে।নোটস গুলো সংগ্রহ করতে তার প্রায় ঘাম ছুটে গিয়েছিলো।বহু জায়গায় ছুটতে হয়েছিলো।এর মধ্যে সে একটা বিষয় খেয়াল করেছে।সে রিক্সায় করে যেখানে যাচ্ছে তার পিছন পিছন একটা রেড রঙের প্রাইভেট কার ও আসছে। সে বুদ্ধি করে এমন জায়গায় ও গিয়েছে যেখানে যাওয়া তার প্রয়োজন ছিলো না।সে শুধু দেখতে চেয়ে আসলে গাড়িটা কার?নীলক্ষেতের কাছে আসার পর হঠাৎ গাড়িটা উদাও হয়ে যায়।তারপর নম্রতা ও গুরুত্ব না দিয়ে সেখান থেকে নোটস নিয়ে চলে আসে।
আসলে রেড রঙের প্রাইভেট কারে আসাদের লোকই ছিলো। যাকে সে নম্রতার আগে পিছে থাকতে বলেছে সমসময়।আজ যখন নম্রতা বিষয়টা খেয়াল করে তখন লোকটা ও বুঝে আসাদ কে ইনফর্ম করে যে নম্রতা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে।তাই আসাদই তাকে চলে আসতে বলেছে গাড়ি নিয়ে।আর অন্য একজন কে বলেছে চরি চরি নম্রতা কে বাসায় সেফলি পৌছে দিতে।
এইসব বিষয়ই নম্রতার কাছে অজানা।সে জানল ও না তাকে কেউ সেফ রাখার জন্য এতটা মরিয়া হয়ে ওঠেছে।জানলে হয়ত সে ও আগ্রহ করত তাকে জানতে।হয়ত করত!!!আবার না ও করত!!!
————————
১২.
আফসানার রিসেন্টলি ব্রেকআপ হয়েছে। তাই সে এখন একদম সিঙ্গেল। যেটা কে তার ভাষায় পিউর সিঙ্গেল বলে।বর্তমানে তার কাছে প্রচুর সময়।সারাদিন এখন পরে পরে ঘুমায়।নম্রতা বুঝে না মেয়েটা ব্রেকআপ করে কিভাবে এতো শান্তিতে ঘুমাতে পারে?পারবে না কেন?আদো কি ভালো বেসেছিলো?না বাসেনি।তাইতো এতো কেয়ারলেস।
—“সানা!! তুই কি কখনো কাউকে ভালোবাসবি না?
নম্রতার এমন প্রশ্ন শুনে আফসানার একটু বিরক্ত লাগল।যেন ওর মনই নেই তাই নম্রতা এমন প্রশ্ন করছে। আজব!!
—“এটা কেমন প্রশ্ন? অবশ্যই বাসবো।
—“একদম মন থেকে?
—“যখন কাউকে ভালোবাসবো একমন পিউর ভাবে বাসবো।মন থেকে ভালোবাসা বর্তমানে খুব কঠিন। এই যেমন ধর কোন হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে ভালো লাগাটা স্বাভাবিক। তবে তাকে মন থেকে ভালোবাসা আর ভালোলাগা তফাত প্রচুর।আমরা অনেক সময় এই ভালোলাগা কে ভালোবাসা বলে ফেলি।আসলে আমি ভালোবাসার একটা অর্থ দেই!!!
—“তুই অর্থ দিবি?
—“হোপপ!তুই আমাকে চিনিস না।আমি ও এইসব নেকামো ভালোবাসার পিছনে আসল ভালোবাসার অর্থ জানি।শোন,
“ভালোবাসা হলো বসন্তের মত!!!যে শীতে ঝরে যাওয়া পাতা ছাড়া গাছটাকে নিমিষেই রঙবেরঙে পাতায় ফুলে ফলে সুসজ্জিত করে তুলে।হাজারো প্রজাতির উড়ে বেরায় তার প্রাঙ্গনে।খুব কম মানুষের জীবনেই এমন বসন্ত আসে।তবে বসন্ত আসার ও সঠিক সময় লাগে।
[আমার মতে ভালেবাসার অর্থ।ভালোবাসার অর্থ এক জনের কাছে একেক রকম]
—” আমার জীবনে যদি আসে তাহলে আমি বুঝবো কিভাবে?
নম্রতার প্রশ্নে চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে আফসানার।নম্রতা আজকাল একটু বেশি ভাবতে দেখছে সে।যেখানে সেখানে মেয়েটা ভাবতে শুরু করে।মতিগতি ভালো না!!!এর মধ্যে কি চলছে তা তাকে জানতেই হবে।তাই কোন রকম একটা বলে দিলো,
“যখন দেখবি তোর মনের প্রজাপতি গুলো কারো জন্য উড়ে বেরাচ্ছে।সব কিছু রঙিন মনে হবে।তখনই বুঝবি দোস্ত!!ইউ আর ইন লাভ”
কথা গুলো বলে একটা ছোট ভেংচি কেটে প্রস্থান করে আফসানা।আর নম্রতা কথাগুলো ভেবেই যায় ভেবেই যায়।তার মাথাই একটা কথাই গুরগুর করছে,
যার জন্য মনের প্রজাপতি গুলো উড়বে সে যদি তার মত তাকে ভালো না বাসে?তবে তার এমন পিউর লাভের দাম থাকবে কোথায়?
—————————-
১৩.
আসাদ যেন এই ১মাসে পুরো উম্মাদ হয়ে ওঠেছে।তার পাগলামো তে রীতি মত তফাজ্জল করিম ও ভয়ে আছেন।তিনি এই ২৫টা বছরে ছেলেকে এমন পাগলামি করতে এই প্রথম দেখছেন।আসাদ পাগলামি দিন দিন ভারছে।তার একমাত্র কারন তার বাবা।তফাজ্জল করিম যেদিন প্রথম নম্রতার কথা শুনেছিলেন তার পিএ এর কাছে সেদিনই আসাদ কে ডেকে বলে,
——-“সে যাতে তার স্টাটাস মেইনটেইন করে চলে।তার ইকুয়ালিটি বজায় রাখে।বেশ,সেই থেকে ছেলে না বাবার সামনে গেছে না কোন প্রতিবাদ করেছে।
রাজনীতি তে এমন গাফলতির চরম দাম দিতে হবে।তফাজ্জল করিম ভেবে পাচ্ছে না।যে ছেলে কে কখনো মেয়েদের নিয়ে কথা বলতে হয় নি।স্টাটাস ছাড়া কোন মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড তো দূর পাশেও ঘেষতে দেয়নি।সেখানে এই মেয়ে কি করলো?
ছেলের এমন পরিনতি মেনে নিতে পারছেন নাহ তিনি।তার স্ত্রী তো আছেই একজন।সারাদিন ঘেন ঘেন করে তার মাথা আরো গরম করে দেয়।
“এই তোমার জন্য ছেলেটার এমন অবস্থা।জীবনে বিয়ে তো একবারই হয়।ছেলেটা সুখি হলে আমাদের ও সুখ।তুমি মেয়েটার বাবার সাথে কথা বলো”
উনি ভেবে পায় না।তার বউ ও ছেলের হলোটা কি?উনি জেলা প্রশাসক হয়ে একজন সাধারন ব্যাঙ্কে কর্মকর্তা কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবে তাও আবার সাধারণ সম্পাদক ছেলেট জন্য। তার বংশগত বৈশিষ্ট্য কি থাকবে?কিন্তু ছেলের যা অবস্থা তা আর বলতে নেই।মেয়ের নেশা যে ছেলে করে তা তিনি জানেন।তবে কি হলো যে এমন সাধারন মেয়েকে বিয়ে করতে হবে?
—-সেদিন এই কথাই সে আসাদ কে বলেছিল।তবে ছেলেটা তাকে তখন কিছু না বললে ও বাসায় এসে নাকি সব ভেঙে তচনচ করে ফেলে।ছেলেটা সেই যে তার সামনে এসেছিল আজ একমাস হতে চলল তার দেখা তফাজ্জল করিম পাননি।বাড়িতে থাকলে দরজা লক করে রাখেন।কাজেও ফোকাস করছে না।বিভিন্ন লোক তাকে ফোন করে নানা কথা জিজ্ঞেস করছে।সে কোনরকম অসুস্থতার বাহনা দিয়েছে এতোদিন।আর কত?তাই সে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা করার তাকেই করতে হবে এবং তা খুব দ্রুত।
————————–
১৪.
আসাদ তার রুমে ছুঁয়ে ছুয়ে নম্রতার ফেবুতে আপলোড দেওয়া ছবি গুলো দেখছে।একটা চার বছর আগের পিকে আসাদের নজর আটকে যায়।তার লাল সুন্দরী কে দেখো কি ভালোই না দেখাচ্ছে। এই মেয়েটা তাকে কিভাবে পাগল করে দিচ্ছে। সে এমন অনুভূতি অন্য কোন মেয়ের প্রতি কখনো অনুভব করেনি।তাকে দেখলে মেয়েটার নজর সড়িয়ে নেওয়া।হাসি জায়গায় কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করা।এতো তেজ এতো তেজ।এসব কিছুই তো তাকে ইমপ্রেস করেছে।সে যে করেই হোক মেয়েটা কে চায়।
আসলে কথায় আছে না,
আমাদের যারা এভয়েড করে আমরা তাকেই বেশি পাত্তা দেই।আমাদের কে যারা পাত্তা দেয় আমরা তাদের অবহেলা করি।ঠিক এমনটাই হয়েছে আসাদের সাথে। যেখানে মেয়েরা তাকে দেখলে ভিমরী খায় সেখানে নম্রতা সবসময় কঠিন চাহনী। এই চাহনীতে কতবার ঘায়েল হয়েছে এই রাজনীতিবিদ নেতা তার হিসেব নেই।
—-“নম্রতাহহহহ!!!আই উইল কিল ইউ বাই মাই লাভ।এমন ভাবে মারব।কেউ বুঝতে ও পারবে না।কোন শব্দ ও হবে না।আফটার ওল, রাজনীতি করি এসব কুটিনীতি বুদ্ধি দিয়েই তোমাকে ঘায়েল করব মাই লাভ।ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
আসাদ শোয়া থেকে ওঠে গায়ে শার্ট পরতে থাকে।তার এখন লাল সুন্দরী কে দেখার খুব ইচ্ছে করছে।সে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।সে জানে না তার বাবা বাসায় আছে।আসাদ কে বের হতে দেখে তফাজ্জল করিমও পিছু নেয়।আসাদ দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে নম্রতাদের বাসার সামনে থামে।নিজের গাড়ি করে আসাদ আসেনি।অন্য গাড়ি নিয়ে এসেছে।পাছে আবার কেউ নিউজে না দিয়ে দেয়।এই বিষয় টা তফাজ্জল করিম লক্ষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।ছেলেটা তার প্রেমে একদম গেছে।
নম্রতার বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে আসাদ।মনে মনে প্রার্থনা করছে যাতে নম্রতা একটু দেখা দেয়।
নম্রতা মাত্রই গোছল করে টাওয়াল রাখতে বেলকনি তে এসেছে।চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পরছে।মুখের বহু পাশে পানির ফোটা জমে তার রুপ দিগুন করে দিয়েছে।আসাদের তীব্র নজরে যেন নম্রতা কেপে ওঠল।তার কেন যেন মনে হলো কেউ তাকে দেখছে।সে উকি দিয়ে রাস্তায় দেখলো।রাস্তার পাশে একটা লাল কুকুর শুয়ে আছে আর একটা গাড়ি।গাড়ির গ্লাস লাগানো।ভেতরে যা আছে তা নম্রতার নজরে পরবে না।পার্পেল রঙের জামায় নম্রতা ফুটে ওঠেছে।গলায় সোনার চিকন চেইনটা চিকচিক করছে।নম্রতা একটু বেকে চুল সামনে নিয়ে এসে টাওয়াল দিয়ে ঝারছে।কি দারুণ দৃশ্য।হাজার টাকা দিয়েও এমন দৃশ্যর দেখা মিলবে না বলে মনে হলো আসাদের।
সে মনে মনে বিড়বিড় করছে,
—“আমাকে উম্মাদ করছো তো!! এই উম্মাদরে পাগলামির জন্য প্রস্তুতি নাও মিস ভদ্রতা!!!
চলবে,