#লাভনীতি
বিথি হাসান-০২
০৫.
—“আরে নম্রু আমার কি মনে হয় জানিস?আমার মনে হয় এই রাজনীতিবীদ না তোর সাথে ফ্লাট করছে!!লাইক সিরিয়াসলি? তোর সাথে? হাহাহহা!!! আর মানুষ পেলো না।হাহহাহা!!!
আফসানার এমন হিট মারা কথা গুলো অনেক্ক্ষণ ধরে সহ্য করছে নম্রতা। একটু পর পর এসে বলছে,
—“আমার কি মনে হয় জানিস?তোর ও একটা প্রেম করা দরকার!!”তুই তো মিয়া একটা জিনিস।পুরাই নেতাকেই পটিয়ে ফেললি?”এই এখন কি করবি?রাজনৈতিক নেতা তো তোর পছন্দ না।আমারে দিয়ে দিস!!
——–নাহ।আর সহে না এই অপমান।কে বলছিলো ডাক দিতে!!তাইতো তাকালো সে,
সানার বাচ্চা।
নম্রতা এতোক্ষণ কিছু বলেনি বলে আফসানা মজা নিয়েছে।আসলে নম্রতা চোখ মারার ব্যাপার টা নিয়েছে ভাবছে।এতোবড় নেতা তাকে কেন চোখ মারলো? ব্যাপারটা হজম হয়? যদি কেউ দেখে ফেলত?তবে তো তারই সম্মান যেত।এই বিষয় গুলো খুব ভাবাচ্ছে নম্রতাকে।এর মধ্যে আবার এই সানার বাচ্চা।
“মামমমমমমমী” বলে এক চিৎকার দিতেই আফসানা উল্টো পায়ে দৌড়।সে তার মাকে খুব ভয় পায়।যেটার সুযোগ নম্রতা খুব ভালো ভাবে নেয়।আফসানার দৌড় দেখে নম্রতা হেসে ফেলে।
————————–
০৬.
কলেজের গেটে কিছু মানুষের ভীর।নম্রতার কেমন যেন খটকা লাগল।এতো মানুষ একসাথে কি করছে?আগে তো কখনো দেখা হয়নি।তার ওপর আবার কয়টা পুলিশ ও দেখা যাচ্ছে। কলেজে ডুকতে ডুকতে আরো কয়টা দেখা গেলো পুলিশ। কারো মুখে খটকা হাসি তো আবার কারো মুখে গম্ভীরতা।কি হলো কলেজে এতো পুলিশ??
আফসানা সেই গেটের সামনে পুলিশ দেখে যে নম্রতার হাতটা শক্ত করে ধরে ছিলো এখনো ছাড়েনি।আসলে আফসানা পুলিশদের অনেক ভয় পায়।নম্রতা বুঝে না এই মেয়েটা এতো উল্টো কেন?এ প্রেম ভালোবাসা কে ভয় পায় না অথচ পুলিশ দেখলে এর হাটু কাপে।আর নম্রতা ছেলেরা যেই রাস্তায় দাড়িয়ে থাকবে সেখান দিয়ে ভুলেও যাবে না।আর অতি জরুরি কাজ থাকলে এমন ভাবে যাবে যেন সে বিড়াল বাচ্চা। সেদিন এই বিষয় টা নিয়ে সানা তাকে খুব ক্ষেপিয়ে ছিলো।আফসানার শর্টফর্ম সানা।নম্রতাই দিয়েছে এই নাম।বাড়িতেও সবাই এতেই ডাকে।
এখন সে ও একটু মজা নিবে।ক্লাসে গিয়ে বসতেই সানা তার সাথে ঘেষে বসল।পুলিশ কয়টা তাদের ক্লাসের সামনেও ছিলো।নম্রতার এই পর্যায়ে খুব হাসি পাচ্ছে।এর মধ্যে ওয়াশরুমে গিয়েও নম্রতা কে ছাড়তে ভুলেনি এই মেয়েটা।ওয়াশরুম থেকে আফসানা কে আসতে দেখে নম্রতা এবার তার প্লেন শুরু করল।
—“সানা তোকে ডাকছে,
নম্রতার এমন উৎসুক কন্ঠে কথাটা শুনে আফসানা কিছুটা ভরকে গেলো।এবং ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
—“ক কে?
—“তোর আশিক!!আই মিন ঐ যে গেটের কাছে ইয়া বড় বড় গোফওয়ালা পুলিশ আঙ্কেল টা দেখছিলি না?উনি তোকে যেতে বলেছে।
নম্রতার কথায় সানা যেন সাত আসমান থেকে পরল।তাকে কেন ডাকতে যাবে তাও আবার ঐ মটু পুলিশ টা।সে ভয়ে কত শত দোয়া পরে ফু দিচ্ছে।কিন্তু নম্রতার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সত্যি হয়ত ডেকেছে। আফসানা কে ভয় পেতে দেখে নম্রতা হাসি চেপে বলল,
—“কিরে যা।ক্যাম্পাসের মাঠে যেতে বলেছে।
—“কিন্তু আমি কি করেছি?
—“আমি কি জানি বাপু।আমিও জিজ্ঞেস করেছিলাম।বলল,তুই নাকি উনার সাথে বেয়াদবি করেছিস।
আফসানার মুখে এখন স্পষ্ট ভয় এবং বিরক্তি দুটোই ফুটে ওঠে।কি না জ্বালা।”যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়” নম্রতার দিকে একটা রাগি লুক দিয়ে তাকেও টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে মাঠে।মাঠে এসে দেখে এখানে কোন পুলিশ কেন?পুলিশের বাল ও তার জন্য অপেক্ষারত নেই।তার বুঝতে একটু সময় লাগে যে এই সবকিছু কার কারবারি।যখনই বুঝতে পারে পিছনে ফিরে দেখে এতোক্ষণে নম্রতা হেসে কুটিকুটি।
আফসানা রাগে ফুস ফুস করতে থাকে। তার মন চাচ্ছে এখনই নম্রতা কে চিবিয়ে খেতে।মেয়েটা কি করে এতো জঘন্য কাজ করতে পারল তার মত অসহায় একটা বাচ্চার সাথে।একে তো একটা উচিত শিক্ষা দিবে।আর তা যত জলদি সম্ভব।নাহলে তার মাথার আগুন নিভবে না,,
—————————
০৭.
মাত্র প্রিন্সিপালের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছিলো আসাদ।সে এই কলেজেরই একজন ছাত্র ছিলো এক সময়।সে আরো আট বছর আগের ব্যাচের।অনেক নাম করাই ছিলো সে কলেজে।বাবা জেলা প্রশাসক হওয়ার সুবাদে।তাকে সব জায়গা ট্রিট করা হত বেশি।তাই প্রিন্সিপালের সাথে সম্পর্কটা একটু ভালো।হঠাৎ জরুরি দরকারে প্রিন্সিপাল তাকে ডেকে ছিল।সময় না থাকা সত্বেও স্যার মানুষ ডাকে না পেলে কষ্ট পাবে বলে মাত্র ৩০মিনিটের জন্য এসেছে সে।
রুম থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে যাওয়ার সময় চোখ পরল সেই লাল সুন্দরীর ওপর।এক দেখাতেই চিনে ফেলল সে।এটা কিভাবে সম্ভব?যেখানে তার প্রতিদিন কত শত মানুষের সাথে দেখা হয়।কাউকে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ভুলে যায় সে।আর সে কিনা এক নজরে একটা মেয়েকে মনে রাখতে পেরেছে?হাউ ক্যান ইট পসিবল?মেয়েটাকে তার সাধারন লাগছে না।যেন অদৃশ্য কোন দূত মেয়েটা কে অসাধারণ করে দিচ্ছে তার কাছে।
কিন্তু আজকে যে তাকে গোলাপি সুন্দরী লাগছে।গোলাপি একটা লং ড্রেস পরে আছে বাম হাতে একটা পাথরের ব্রেস।চুল গুলো উচু করে ঝুটি করা।গোলাপি সুন্দরী হেসে লুটিয়ে পরছে।ইশশশ।সেদিন এই হাসি দেখার জন্য তার মনে যে ঝড় বয়েছিলো তা আজ থেমে গেলো।সেই ঝড়ের বদলে অন্য ঝড় শুরু হলো।হাসি নয় যেন মুক্তদানা চিকচিক করছে।আবার বা গালে টোল পরতে হলো কেন?এমনে তে কি কম সুন্দর ছিলো হাসিটা?ভাবতেই ঠোট কামড়ে ফেলল আসাদ।এই মেয়েটা কে তার চাই চাই।যে করেই হোক।এক রাতের জন্য হলেও চাই।
—-“হেই প্রিটিগার্ল!!!হোয়াটসঅ্যাপ??
হঠাৎ কারো ভারি কন্ঠে হাসি থেমে যায় নম্রতার।আফসানার দিকে তাকিয়ে দেখে সে চোখ বড় বড় করে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমা করছে।সাথে সাথে সে পিছনে গুরে দেখার জন্য কাকে দেখে এই বজ্জাত মেয়েটা এতো লজ্জা পাচ্ছে। হু ইজ? পিছনে ফিরে তার বুকে মুহূর্তেই পিটপিট করা শুরু করে দিয়েছে।
সাদা পাঞ্জাবিতে কিলার লুক নিয়ে নিচের ঠোঁটের একপাশ কামড়ে ধরে একটা বেহায়া হাসি এটে সিনা সটান করে দাড়িয়ে আছে তার নেতাজি।যে কিনা বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক।ইশশ!!!এই হাসিতে যে সাত খুন ও মাফ।পাঞ্জাবির ওপরে পরেছে একটা কালো কটি।যার বা পাশে পকেটের কাছে সোনালি সুতার কাজ।আর পকেটে একটা সাদা কাপড়ের ভাজ যা ত্রিকর্নার।এক হাতে কালো ক্যাজুয়াল ঘড়ি।আরেক হাত খালি।ব্লাক শুজে ও মাই গড।জাস্ট ক্রাশড।
ক্রাশড যেভাবে খাচ্ছে তাতে তার কোনদিকই খেয়াল নেই যে এই মানুষটা এখানে কেন?
হঠাৎ পুলিশের গাড়ির সাইরেনে কেপে ওঠে নম্রতা। মেয়েটা খুবই আবেগি হয়ে ওঠেছিলো।নাহ তার এতো আবেগি হলে যে চলবে না।তাকে থাকতে হবে কঠিন।মানুষ তো সুন্দর হতেই পারে।এবার সে সামনে দাড়ানো ব্যাক্তির থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়।পাশে তাকাতেই দেখে আফসানা অলরেডি নেতাজির সাথে হ্যান্ডশেক করছে।ও মাই গড।মেয়েটার সাহস দেখো,
পুলিশ কে ভয় পায়।অথচ এতো বড় নেতার সাথে ডাইরেক্ট হ্যান্ডশেক। নম্রতা এবার চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিলো।
—“নম্রু জাস্ট কাম না!!!!
আফসানার ডাকাডাকি তে নম্রতা সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।অলরেডি নেতাজির পিছনে অনেক গুলো পুলিশ এসে দাড়িয়ে গেছে।সানা হয়ত তাদের দেখেই ভয়ে তাকে ডাকছে।কিন্তু তার মাথা এটা ডুকছে না।এই নেতাজি তাদের কলেজে কি করছে?
সামনে দাড়াতেই মাথা নিচু করে ফেলে নম্রতা।আসাদ যা দেখে ঠোট কামড়ে হেসে দেয়।কিন্তু বিন্দু মাত্র শব্দ হয় না সেই হাসির। নম্রতা এসে আফসানা কে টানছে চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নাছোড়বান্দা এই মেয়েটা যেতেই চাচ্ছে না।আসলে আফসানা নম্রতা কে এখন একটা বাশ দেওয়ার জন্যই ডেকেছে।আফসানা খুব ভালো করে জানে নম্রতা রাজনীতিবীদদের পছন্দ করে না।তাই সে এই সুযোগটাই কাজে লাগাবে,
—“স্যার সি ইজ নম্রু।আ আই মিন নম্রতা। মাই সিস্টার।কাজিন সিস্টার ওর বেস্টফ্রেন্ড।আসলে ওর না রাজনৈতিক করা খুব পছন্দ। আর ও আপনার ওপর ক্রাশড। আপনার অনেক বড় ফ্যান।নম্রু স্যার কে হাই বল?
আফসানার কথা শুনে নম্রতা ভিতরটা কেপে ওঠল।ও ঠোটে ঠোট চেপে আফসানার দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসি দিচ্ছে।আর আফসানা!!!! সে তো অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখছে।না জানি কখন আবার ভেত করে হেসে ফেলে।নম্রতা আাসাদের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়।আসাদ কঠিন দৃষ্টিতে ঠোট প্রসারিত করে বাকা হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।নম্রতা চটজলদি নজর নামিয়ে ফেলে।ইশশশ।লোকটার নজর কত তীক্ষ্ণ।বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না।কখন না আবার নজর দিয়ে যাদু করে দেয়।
—“নম্রতাহহহহহ!!!ইন্টারেস্টিং,,,,,,,,
বলেই একবার নম্রতার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায় আসাদ। আর এদিকে নম্রতা কম্পনরত বুক নিয়ে তাকিয়ে থাকে তার চলে যাওয়ার দিকে।তার মুখে নিজের নামটা এতো মিষ্টি লাগল কেন?
চলবে,
( আসলে এখন একটু ব্যস্ত সময় পার করছি। তাই গল্পটা একদিন পর পর দিবো।তবে সময় পেলে অবশ্যই প্রত্যেকদিন দেওয়ার চেষ্টা করব।আর ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন।ধন্যবাদ)