লাভনীতি হাসান-০১

0
2829

০১.

“রাস্তায় বড় বড় কাগজের পোষ্টারের দিকে তাকিয়ে আছে এক অল্প বয়সী তরুনী।এখন আপনারা বলবেন তরুণী আবার অল্প বয়স?তাকে তরুণী বলার একটা কারন অবশ্যই আছে,
সে মাত্র তার কিশোরী বয়সটা পার করে তরুনী বয়সে পা দিয়েছে।যে বয়সটা একদম কিশোরী ও নয়।আবার একদম তরুনীও বলা চলে না।ডান হাতে থাকা ব্যাগটা বাম হাতে নিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।

মনে মনে তার গান গাইছে।এমন সুদর্শন যুবক সে আগে কখনো দেখেনি।কি তার মায়াবী চোখ। উফফফফ।কি সেই চাহনী।গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে।একটু কম হাসলে কি হতো?পোষ্টারের মানুষ টা এতো সুন্দর কেন?নাকি তার কাছেই সুন্দর লাগছে?

–” ঐ নম্র!! ঐ মাইয়য়য়য়য়য়য়া।

কাক ডাকা গলার চিল্লানিতে পিছনে না ফিরে পারল না “নম্রতা”। সে তার এতো সুন্দর ভাবনা থেকে বের করার জন্য তার মামাতো বোন আফসানার প্রতি প্রথমে খুবই ক্ষিপ্ত হলো।আফসানা দৌড়ে তার কাছে আসতেই চুল ধরে টান মারলো নম্রতা। ব্যাথায় কাতরে ওঠে আফসানা।
—” তোর নামের সাথে ব্যবহারের কোন মিলিই নেই নম্রু।কি সুন্দর নাম রাখছে ফুফি তোর “নম্রতা “। এর মানে বুঝিস?তুই কিভাবে বুঝবি তুই তো একটা আধছোলা কচু!!!

আবার চুলে টান পরে আফসানার।নম্রতা তাকে আবার চুল ধরে টেনেছে।আফসানা এবার মুখ গোমরা করে নম্রতার এতক্ষণ এখানে দাড়িয়ে থাকার কারন খুজতে থাকে।না পেয়ে সে জিজ্ঞেস করে ফেলে।

—” আচ্ছা নম্রু!! তুই এতক্ষণ এখানে কি করছিলি??

চমকে ওঠে নম্রতা। সে এই ব্যাপার টা আফসানা কে জানাতে চায় না কোনভাবেই।তাহলে সারাদিন তাকে পচাবে।তাই সে দ্রুত আফসানার সামনে গিয়ে দাড়ায়।নম্রতার এভাবে সামনে আশায় আফসানার এবার একটু সন্দেহ হয়।সে নম্রতা কে সরতে বলে।কিন্তু নম্রতা কেমন আকু পাকু করছে।যেন সরে গেলে তার খেল ক্ষতম।

—“কই কি করছিলাম?আমি কারো দিকে তাকিয়ে ছিলাম না!!সত্যি!!!!

নম্রতার কথায় আফসানার এবার সন্দেহ দূর হয়ে যায়।এবার সে আশেপাশে মানুষ খুজতে থাকে যাকে নম্রতা দেখতে পারে।কিন্তু খুজেও এমন কাউকে চোখে পরলো না।এবার আফসানা নম্রতার দিকে সরু চোখে তাকায়।দেখে নম্রতা একটু পর পর উপরের দিকে তাকাচ্ছে আর হাত কচলাচ্ছে। মানে কি?কি চুরি করলো এই মেয়েটা?সে ও উপরের দিকে তাকাতেই হেসে ফেলে।ওহহ এবার বুঝেছি।

আফসানা কে হাসতে দেখে নম্রতা এবার অবাক হয়।কি হলো এভাবে পাগলের মত হাসার কি করেছে সে?
—“আরে আমার সোনা মনি বড় আপা!!তুমি যাকে দেখছিলে সে কিন্তু কোন যেন তেন মানুষ না।সে জেলা প্রশাসকের একমাত্র ছেলে ২বছর যাবত রাজনীতি করে।বড় ধরনের রাজনীতিবীদ মি.বাবু।মি.আসাদুজ্জামান বাবু।??এবার তোমার কি হব্বে!!

আফসানার হাসি দেখে নম্রতা চরম মাথা গরম হয়ে গেলো।এখানে হাসার কি আছে?ওর তো কান্না পাচ্ছে। ও রাজনৈতিক নেতাদের একদম দেখতে পারে না।সহ্য হয় না।এই ছোট্ট একটা জীবনে কাউকে ভালো লাগল।সে কিনা আবার বড় নেতা।এই বিষয়টা কি হজম হয়?মনে দুঃখে ইচ্ছে করছে কলসি বেদে নদিতে ঝাপ দিতে।তবে এখানে যেহেতু নদি নেই তাই এই ইচ্ছে টা কে দমিয়ে আফসানার চুলে দিলো আবার টান।

——————————-
০২.
নম্রতা আর আফসানা সমবয়সী বান্ধবী রুপে কাজিন হয়।তারা মাত্র কলেজে ওঠেছে।নম্রতার বাড়ি চাদপুরে।চাদপুরে ভালো কলেজ থাকা সত্বেও ফুপিকে অনেক বুঝিয়ে আফসানা নম্রতাকে তাদের বাসায় ঢাকায় নিয়ে আসে।মামা বাড়িই তো মনে করে নম্রতার মা বাবার ও কোন সমস্যা হয়নি।মেয়েকে ভাইয়ের বাসায় থাকতে দিতে।আফসানারা তিন ভাইবোন।বড় ভাই তামিম গ্রাজুয়েশন এর জন্য থাকে বিডির বাহিরে।তারপর আফসানা।এরপর আরেকটা আছে তন্ময়।ক্লাস নাইনে এবার।নম্রতার মামা শাহপরান সাহেব একজন সরকারি কর্মকর্তা। আর্থিক দিক দিয়ে তারা ভালোই।ভাগ্নিকে নিজের বাসায় রেখে পড়ানো নিয়ে তিনি খুবই সন্তুষ্ট।

নম্রতাদের ক্লাস শুরু হয়েছে একমাস হলো।দুজনই একসাথে কলেজে যায়।এর মধ্যে দুজনেই বহু প্রপোজাল পেয়েছে।নম্রতা এগুলোর মধ্যে ইন্টারেস্টেড না হলেও আফসানা কিন্তু এতোদিনে চুটিয়ে প্রেম করছে শাফিনের সাথে।নম্রতার মাথায় আসে না মেয়েটা কে সেই প্রথম দিন থেকে এই ছেলেটা টিজ করতো।এই একমাসে কি এমন গুরলো যে আফসানা রাজি হয়ে গেলো?এখনকার ছেলে গুলো কি সত্যি ভালোবাসা চিনে?এগুলো তো সব সময়খরচ করে।অবশ্য আফসানা ও মন থেকে কারো সাথে রিলেশন করছে না।সবকিছুই টাইমপাস।

—“শুন কলেজে ওঠে রিলেশন না করলে সবাই কি ভাবে জানিস?তোকে কেউ পাত্তা দেয় না।তাই রিলেশন করতে পারিস না।তাই এমন কয়েকটা রিলেশন কথা না শুনার জন্য হলেও করা লাগে”

এই উক্তি তে সেদিন নম্রতা পুরো আধ ঘন্টা থ মেরে ছিলো।মানুষ বর্তমানে সত্যিকারের ভালো তো বাসেই না।তার ওপর ভালোবাসা কে কিসব কারন ও দিয়েছে।ভালোবাসতে এমন কারনও লাগে?কই সে তো দিব্যি আছে।না কাউকে পাত্তা দেয় না কারো সাথে মুখ লাগায়।আফসানা নম্রতার সামনে কখনোই ফোনে কথা বলে না তার বয়ফ্রেন্ডদের সামনে। নম্রতা খুব রেগে যায়।নম্রতার রাগ যেন নাকের ডগায় থাকে।কিছু থেকে কিছু হলেই রেগে যায়।

এতোকিছুর মাঝেও নম্রতার সেই পোষ্টারে দেখা নেতাজি কে মনে পরে।খুব করে পরে।আর মনে পরবেই না কেন?এতো শত ছবি যদি দিনরাত চোখের সামনে থাকে। না চাওয়া সত্বেও চোখ চলে যায়।কারন বাড়ির রাস্তা থেকে কলেজের রাস্তা ফুল ব্লক করা নেতাজির ছবি।সামনেই ভোট বলেই।নম্রতার আজকাল কেন যেন নামাজে দোয়া করতে ইচ্ছে করে সেই নেতাজির জন্য। এবং সে করেও দেয়।অন্যের জন্য দোয়া করলে নিজেও এর ফল পায়। এমন টা শুনেছিলো সে কোথায় যেন।

————————–
০৩.
আজকে ভোটের ফলাফল দিয়েছে।নম্রতার দোয়া কবুল হলো নাকি অন্য কারো হলো বুঝা গেলো না।কিন্তু টিভির স্ক্রিনের খবরের হেডলাইনে বড় বড় অক্ষরে লেখা,

“আবার ও ২৫০০০হাজার ভোটে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাশ করল জেলা প্রশাসকের একমাত্র ছেলে আসাদুজ্জামান বাবু”।

কথাটা শুনে নম্রতার বুক থেকে যেন একটা পাথর ছড়ে গেলো।কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছে না পাথরটা ছিলোই বা কেন?আর কিসেরই বা পাথর?তবে কি সে ঐ বেটা রাজনৈতিকের প্রেমে পরে গেলো কোনভাবে?

সেদিন দুপুরেরই শোনা গেলো হট্টগোল। বাসার বাহিরে এতো শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো নম্রতার। দৌড়ে গেলো বেলকনিতে।গিয়ে সেখানে আফসানাকে আগেই উপস্থিত পেলো।আফসানা একপ্রকার লাফালাফি করছে।এতো খুশি হওয়ার কি হয়েছে।আফসানা কে দেখে নম্রতা হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করলো।
—” কি ব্যাপার বলতো?এতো হট্টগোল কেন?

—“দেখো দেখো মহারানির তবে ঘুম ভেঙে গেলো। আশিক যে এসেছে।

আফসানার কথায় নম্রতার মাথায় কিছুই ডুকলো না।সে এবার আফসানার চুল টেনে ধরলো।আফসানা চিৎকার করে ওঠে,
—“ভাল্লাগে না কিন্তু নম্রু!!!

—“ভালো ভাবে বললে কি হত?কি হয়েছে বল আমায়!?

—“কি হবে তোমার মজনু এসেছে এলাকায়।ভোটে জিতেছে তাই দেখা দিতে এসেছে।ঐ দেখো এই দিকেই আসতেছে।

আফসানাকে ছেড়ে এবার নম্রতা বেলকনির দেয়াল ঘেষে দাড়ায়।বেলকনিতে কোন রেলিং দেওয়া নেই। যার ফলে উকি দিতে থাকে মাথা বের করে।নম্রতার এমন কাজে আফসানা তো হাসতে হাসতে প্রায় বেহুশ। নম্রতা এখন আফসানা কে পাত্তা দিচ্ছে না।সে তো এক পলক তার নেতাজি কে সামনে থেকে দেখতে ব্যস্ত। এক পলক যদি দেখা পায় তার।

দেখতে দেখতে নেতাজির গাড়িটা নিকটে চলে আসে নম্রতাদের।নম্রতার মুখে ফুটে ওঠে এক অদ্ভুত হাসি।ইশশশ।কি সুন্দর লাগছে তার নেতাজি কে। সাদা পাঞ্জাবিতে তো খুন হতে ইচ্ছে করছে।গলায় একটা গাদা ফুলের মালা। জাস্ট ফুটে ওঠেছে। কিন্তু পরক্ষণেই মুখটা মলিন হয়ে যায়।কারন সে কই আর এই বেটা নেতা কই?আর এমনে তে ও সে নেতা ফেতাদের পছন্দ করে না।আফসানা পুরো বিষয়টা লক্ষ করেছে।নম্রতার মুখ চুপসে যাওয়া ও খেয়াল করেছে।তবে সে এখন কিছু জিজ্ঞেস করবে না।

নম্রতাদের বাসার সামনে গাড়ি আশার আগেই মানুষ এসে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।গাড়িটা প্রায় চলছেই না।মানুষ থেলে থেলে কোনরকরম চলছে।নম্রতা এখন কঠিন একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে তার নেতাজির দিকে।হঠাৎ আফসানা বাবু বলে চিল্লিয়ে ওঠে ।যার ফলে চোখাচোখি হয়ে যায় তার আর তার নেতাজির।কিন্তু কোন কিছুতেই তার নজর নরম হয় না।কঠিন হয়ে তাকিয়ে থাকে।

—————————
০৪.
এদিকে আসাদ গাড়িতে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে এতক্ষণ সবাইকে হাই করছিলো।যদি ও তার এই কাজ টা করতে কোন ইচ্ছে করছে না।তার বাবার কড়া আদেশ করতেই হবে। নাহলে জনগন আবার ভোট দিবে না।মানুষ বড্ড লোভি।একবার পাশ করে তার ক্ষান্ত হয়নি।আবার ও করার আশা রাখে।দাড়িয়ে দাড়িয়ে বিরক্ত হলেও তার মুখে ছিলো ভদ্রতার হাসি।

হঠাৎ “বাবববববু”বলে কে যেন ডেকে ওঠে।তাকে খুজতেই এদিক ওদিক তাকাতেই নজর পরে এক লাল সুন্দরীর ওপর।যে ঘুম ঘুম চোখে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।তার পিছনেই আরেকটা মেয়ে লুকিয়ে আছে।তার মানে পিছনে লুকানো মেয়েটাই তাকে ডেকেছে।ডেকে আবার লুকিয়েও গেছে।কিন্তু সামনের এই লাল সুন্দরী কে?কি করেছে সে যে এতো কঠিন তার দৃষ্টি আসাদের দিকে?

——-আসাদের এই দৃষ্টি খুব ইন্টারেস্টিং লাগে।যেখানে সবাই তার দৃষ্টিতে তাকিয়ে জ্ঞান হারায় সেখানে এই পুচকো মেয়েটা কেমন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মুখে কেমন গাম্ভীর্যতায় ভরপুর।তারপর ও মেয়েটা কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে।লাল কামিজে মুখটা টমেটোর মত ফুটে ওঠেছে।চোখ গুলো একটু ফোলা ফোলা লাল হয়ে আছে।চুলগুলো বারবার সামনে এসে পরছে।কিন্তু সে বিরক্ত না হয়ে চুলগুলো কে নিজেদের মধ্যে খেলা করতে দিচ্ছে। আচ্ছা না জানি তার ঐ তাক লাগানো মুখে হাসি কেমন সুন্দর!!!আসাদের গাড়িটা কিছুটা সামনে চলে আসে।পিছনে ফিরে আসাদ মুচকি হাসতে হাসতে সবার দৃষ্টির আড়ালে চোখ মেরে দেয় নম্রতা কে।

হঠাৎ যেন নম্রতার খেয়াল হয়৷।সে স্বপ্নে দেখছে না তো?জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা শুরু করলো কবে?নাকি এটা সত্যি ছিল?কিন্তু নেতাজি তাকে এভাবে দেখছিল কেন?তবে ঘোর তারও লেগেছে?ভাবতেই এক অজানা অনুভূতি লাল হয়ে যায় সে।

চলবে,
#লাভনীতি
বিথি হাসান-০১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here