ভালোবাসা
পায়েল ব্যানার্জি
পর্ব ১৫
* * ৪২ * *
আজ অবশেষে সেই দিন। যেদিন আমি আমার মনের কথা সুজাতাকে বলবো। অধীর আগ্ৰহে অপেক্ষা করছি ওর জন্য এমন সময় দেখলাম ওই তো সুজাতা আসছে। আমার মহারাণী, গোলাপী শাড়ী, খোলা চুল, আর স্বল্পসাজেই সকলের মধ্যে অনন্যা! উফ্! আর কতভাবে তোমার প্রেমে পাগল করবে মহারাণী? মা বাবা ওদের গিয়ে অ্যাটেন্ড
করেছে, আমি চাইলেও আমার গেস্টদের মাঝে থেকে বেরিয়ে ওর কাছে যেতে পারছিলাম না। একবার এ এসে কথা বলছে তো একবার ও। যেই একটু ফাঁকা দেখে সুজাতার দিকে এগোতে যাবো কোথা থেকে পল্লবী আর ওর বাবা এসে হাজির। কোথা থেকে আর কি! বাড়ী থেকেই এসেছে। আমিই সৌজন্য দেখাতে ইনভাইট করেছি। যাই হোক এসেছে ভালো কথা কিন্তু এসেই আমার হাত ধরে ঘুরছে। যতই হাত ছাড়িয়ে নিচ্ছি এই চিপকু আমাকে ছাড়ছেই না। বাধ্য হয়েই সবার সামনে ওকে সঙ্গে নিয়েই কথা বলতে হচ্ছে। দু-একবার বাবা মা আর আমাদের এক সিনিয়র কো-স্টার দাদা আমাকে ওর হাত থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় অন্য কাজের অজুহাতে নিয়ে গেছিলো, কিন্তু সুযোগ পেলেই আবার আপদ এসে ঘাড়ে চাপছে, থুড়ি সঙ্গে চিপকে যাচ্ছে। এভাবে এ ফেভিকলের মতো সঙ্গে চিপকে থাকলে আমি সুজাতার কাছে যাবো কি করে?
আমি লক্ষ্য করেছি পল্লবী যে আমার সঙ্গে এরকম চিপকে আছে এটা সুজাতা লক্ষ্য করেছে। আর এটাও লক্ষ্য করেছি যে পল্লবীকে আমার সঙ্গে দেখে সুজাতার মুখটা কেমন অন্ধকর হয়ে গেছে। ও নিশ্চয়ই আমাকে ভুল বুঝছে। যতবার আমার সুজাতার সঙ্গে চোখাচোখি হয়েছে আমি দেখেছি ওর চোখে অনেক প্রশ্ন এসে জড়ো হয়েছে। হয়ত ভাবছে যে পল্লবীর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই তাহলে আমার সঙ্গে পল্লবী এরকম চিপকে চিপকে কি করছে। ওকে কি করে বোঝাবো যে আমার অনিচ্ছাতেই পল্লবী এরকম করছে। পার্টিতে দু-একজন মিডিয়া পার্সনও আছে, তাই কোনো রকম সিন ক্রিয়েট করতে পারছি না। আমি চাই না, পল্লবীর সঙ্গে আবার আমি হেডলাইন হই। সুজাতাকে আমি ঠিক বুঝিয়ে বলবো। ও সেনসিবল আছে, নিশ্চয়ই বুঝবে। মনে মনে বললাম হে ভগবান! দেখো! সব নষ্ট করে দিও না। সুজাতাকে হারিয়ে যেন না ফেলি।
এসব ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় কেটে গেছে এমন সময় পল্লবী হঠাৎ কি হলো দেখলাম আমার হাত ছেড়ে ওর বাবার দিকে এগিয়ে গেলো, যাক বাবা! শান্তি। আপদ গেছে ভেবে আমি তাড়াতাড়ী সুজাতাকে খুঁজতে লাগলাম। ওর কাছে আমার যাওয়া ভীষণ জরুরী। একটু খুঁজতেই এক কোণে দেখলাম ওরা দাঁড়িয়ে আছে। দ্রুত ওর কাছে পৌছে হেসে কথা বলতে যাবো এমন সময় কেউ একজন সবার মাঝে জোরে বলে উঠল হ্যালো লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান, মে আই হ্যাভ ইয়োর অ্যাটেন্সন প্লিজ। এভাবে বলায় সবার সাথে আমিও বক্তার দিকে তাকাতেই চমকে গেলাম। এ তো পল্লবীর বাবা। এর আমার কি বলার আছে!
* * ৪৩ * *
আজ ভেবেছিলাম পার্টির ফাঁকে সময় করে ওনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবো আর বলবো, আমার নিউ জবের কথাটা। কিন্তু এসে থেকেই দেখছি উনি প্রচন্ড ব্যাস্ত। কখনোও এর সঙ্গে কখনোও তার সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছেন। আমাকে কি আদৌ খেয়াল করেছেন উনি! ধ্যাত! সুজাতা! তুইও না! তুই কোন সেলিব্রিটি? যে এখানে উপস্থিত এত বড় বড় সেলিব্রিটিদের ছেড়ে তোকেই উনি দেখবেন। এখানে আসা সব হিরোইন আর অন্যরা কত্ত সেজেছে। তুই এই চমকধমকে এতই সাধারণ আর ফিকে যে তোর দিকে রজতকুমারের নজরই পড়বে না। তাও বেশ কয়েকবার জয়তি আন্টি আর রমেন আঙ্কেলের সঙ্গে নজরে পড়েছি, তাই ওনারা এসে কথা বলে আমাদের কমফোর্টেবল করার চেষ্টা করে গেছেন।
বেশ অনেকক্ষণ বাদেই দেখলাম উনি ফ্রি হয়ে আমাদের দিকে দেখলেন। উনিও হাসলেন, আমিও প্রত্যুত্তরে হাসলাম। এবার উনি এগিয়ে আসছিলেন আমাদের দিকে হঠাৎ ওনার সামনে একটি মেয়ে ও একটি লোক এসে দাঁড়ালো। উনি ওনাদের সঙ্গে হেসে কথা বললেন। এতক্ষণ মেয়েটিকে ভালো করে দেখতে পাই নি, লোকটি কথা বলে চলে যেতেই ভালো করে দেখলাম মেয়েটাকে। সাধারণত আমি সিনেমা দেখি না বলে এসব হিরোইনদের চিনি না, কিন্তু এই মেয়েটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কে এই মেয়েটা মনে করার একটু চেষ্টা করতেই মনে পড়ল, এই তো সেই হিরোইন পল্লবী। যার সঙ্গে ওনার ছবি দেখেছিলাম কাগজে। কিন্তু ওনার সাথে মেয়েটা কি করছে! উনি তো বলেছিলেন শুধুই সহকর্মী। আর কিছুই নয়। কিন্তু মেয়েটার হাবভাব তো অন্য কথা বলছে। আর উনিও তো বাধা দিচ্ছেন না, বা প্রতিবাদ করছেন না!
ওনাদের দুজনকে একসাথে দেখতে আমার একটুও ভালো লাগছিলো না। এই সন্ধ্যে এই আলো ঝলমলে চারপাশ মুহুর্তে যেন আমার অন্ধকার হয়ে গেলো। বেশ অনেকক্ষণ পর দেখলাম উনি এদিক ওদিক কাউকে যেন খুঁজছেন। মেয়েটি সঙ্গে নেই। তারপর উনি আমার দিকে তাকালেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে উনি আমাকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই একটি ঘোষণা হলো হ্যালো লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান, মে আই হ্যাভ ইয়োর অ্যাটেন্সন প্লিজ। ঘোষণার উৎস অনুসরণ করে সবাই সেই দিকে তাকালাম, দেখলাম এক ভদ্রলোক সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে লাগলেন লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান, টু ডে উই আর হেয়ার টু সেলিব্রেট দ্য বার্থডে অফ আওয়ার বিলাভড সুপারস্টার রজতকুমার। অন দিস হ্যাপি অকেশন, ইচ অফ আস গেভ হিম আওয়ার ব্লেসিংস উইথ সাম লাভলি গিফ্টস। বাট টু ডে, আই ওয়ান্ট আ রিটার্ন গিফ্ট ফ্রম হিস পেরেন্টস। আই, মিস্টার সুরেশ শিকদার, ফাদার অফ পল্লবী শিকদার, ওয়ান্ট দিস নিউলি ফর্মড ফ্রেন্ডশিপ টু বিকাম আ রিলেশনশিপ ইন দ্য ফিউচার। আই অ্যাম রিকুয়েস্টিং রজতকুমার’স পেরেন্টস টু থিঙ্ক অ্যাবাউট দ্য ম্যারেজ অফ মাই ডটার পল্লবী অ্যান্ড মিস্টার রজতকুমার। আই হ্যাভ বিন অবজারভিং বোথ অফ দেম অল ইভিনিং অ্যান্ড আই থিঙ্ক দে বোথ লাভ ইচ আদার অ্যান্ড লাইক টু বি ক্লোজ টু ইচ আদার। সো, আই রিক্যুয়েস্টিং রজতকুমার’স পেরেন্টস টু ডিসকাস অ্যাবাউট দ্য ম্যাটার অ্যান্ড মেক আ কনক্লুশন। থ্যাঙ্ক ইউ। এত অবধি বলে লোকটা থামলো। আর সঙ্গে সঙ্গেই হাততালিতে চারিদিক ভরে উঠলো। আমার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো রকমে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনিও তাকিয়ে আছেন, হয়ত এরকম কিছু হবে আশা করেন নি। তাই উনিও অবাক। ঠিক সেই সময় ওই মেয়েটি, মানে পল্লবী এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো, তারপর রজতের দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে হেই রজত, ড্যাড কলিং ইউ, প্লিজ কাম। বলে টেনে নিয়ে গেলো সকলের মাঝে, ওর বাবার কাছে। আর আমি ওইখানেই অবাক পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। শুধু আমার চোখ রজতকুমারকেই দেখতে থাকল। উনি যদি সত্যিই পল্লবীকে ভালোবাসেন, সেটা আমাকে বললেন না কেন? ব্যাপারটা যে সত্যি, লোকটা যে মিথ্যে কিছু বলেনি তা তো উনি তার প্রতিবাদ না করেই প্রমাণ করে দিচ্ছেন।
আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেলো। চোখদুটো বড় জ্বালা করছে, আর বুকের ভেতর তোলপাড় হচ্ছে কেন জানি না। ওখানে সকলে ওনাকে আর পল্লবীকে কনগ্ৰাচুলেট করছিলো, আমি আর দেখতে পারলাম না। পিসিকে শরীর ঠিক লাগছে না জানিয়ে চলে এলাম ওখান থেকে।
* * ৪৪ * *
কাল রাতে ওখান থেকে যে কি ভাবে ফিরেছি ফ্ল্যাটে আমিও জানি না! শুধু এটুকু জানি ওই লোকটার কথাগুলো কানের ভেতরে বাজছিলো। এখনোও যেন শুনতে পাচ্ছি কথাগুলো। “দে বোথ লাভ ইচ আদার অ্যান্ড লাইক টু বি ক্লোজ টু ইচ আদার।” সত্যিই তো! একে অপরের সঙ্গ পছন্দ না করলে সারা সন্ধ্যে দুজনে ওভাবে হাত ধরাধরি করে ঘুরতেন নাকি! আর ভালোবাসা! সেটাও হয়ত সত্যি। ভালো না বাসা থাকলেও ভালো লাগা তো আছেই, নইলে কি আর একে অপরের সান্নিধ্য এত পছন্দ করতেন? আচ্ছা কালকের পার্টিতে উনি আমাকে ডাকলেন কেন? ওনার আর পল্লবীর সম্পর্কের কথা মুখেই বললে পারতেন। এভাবে ডেকে নিয়ে গিয়ে…………..। বার বার ওই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠে, আর ওই কথা মনে পড়ে মনের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কেন যে এরকম হচ্ছে বুঝতে পারছি না ঠিক। কাল রাত থেকে ভেবেই যাচ্ছি। এবার যেন মনে হচ্ছে আমি পাগলই হয়ে যাবো। আমি বুঝতে পারছি না, যে আমার কেন এত খারাপ লাগছে? ওনার জীবনে কে এলো, কে গেলো এটা নিয়ে তো আমার কিছু যায় আসার কথা নয়। তবে কি! তবে কি আমি ওনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি?
কথাটা মনে হতেই সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো! সব কিছু একে একে মনে করে আস্তে মনের মেঘ কাটতে লাগলো। সত্যিই ওনার ফোনের জন্য রোজ অপেক্ষা করা, সব ছোটো বড় কথা ওনাকে না বলা অবধি শান্তি না হওয়া, উনি আমার কাছে কথা গোপন করলে আমার রাগ হওয়া, ওনাকে অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে দেখে আমার কষ্ট হওয়া, আর এখন উনি অন্য কারোর এটা জেনে আমার ভেতর ভেতর শেষ হয়ে যাওয়া সবই প্রমাণ করছে, আমি ওনার প্রতি দুর্বল। আমি ওনার জন্য ফিল করতে শুরু করেছি। কিন্তু নাহ্! আজ একথা অপ্রাসঙ্গিক। উনি আজ অন্য কারোর। তাই আমার এই কথা ভাবাও অন্যায়। কিন্তু চোখের সামনে ওনাকে অন্য কারোর সঙ্গে যে আমি দেখতে পারবো না। ওনার এসব কথা ভাবতে ভাবতেই চোখ পড়ল টেবিলে রাখা আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটার দিকে। খানিকক্ষণ ওই দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই মনে হল এটাই ঠিক। এর থেকে ঠিক, এর থেকে ভালো বোধহয় আর কিছুই হতে পারে না! হ্যাঁ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। পারলে আজই চলে যাবো এখান থেকে, চিরদিনের জন্য। এই শহর, ওনার স্মৃতি, ওনার জীবন সব কিছু থেকে দুরে চলে যাবো। কথাটা মনে হতেই মনে হলো পিসি পিসেমশাইয়ের সঙ্গে এক্ষুনি কথা বলতে হবে। এতদিন ওদের আশ্রয়ে রয়েছি যখন, তখন যাওয়ার আগে ওদের জানানো আমার কর্তব্য। তাই সঙ্গে সঙ্গে লেটারটা নিয়ে ছুটলাম ওদের কাছে।
পিসি পিসেমশাইকে রাজী করাতে বেশী বেগ পেতে হলো না। যদিও ওরা আজই বেরোনোর পক্ষপাতি ছিলো না, তবু ওদের বোঝালাম যে যেহেতু কাল লেটার পেয়েছি, আর পুজোর ছুটি পড়তে দু সপ্তাহও পুরো নেই আর। আর কতৃপক্ষ জানিয়েছে পুজোর ছুটির আগে জয়েন করতে তাই তাড়াতাড়ি যাওয়াই ভালো। প্রথমে আপত্তি করলেও আমার কেরিয়ারের ব্যাপার বলে ওরা রাজী হলো, তবে কটি সমস্যাও আছে। যেমন এখানের স্কুলে রেজিগনেশন দিতে হবে, গোছগাছ করতে হবে। আর এত তাড়াতাড়ী ট্রেনের টিকিটও পাওয়া যাবে না। তৎকল হলেও চব্বিশ ঘন্টার আগে যাওয়া হবে না, আর আমি আজই রওনা দিতে চাই। যত তাড়াতাড়ী সম্ভব এই শহরটা ছেড়ে, ওনাকে ছেড়ে পালাতে হবে আমাকে। যাতে আমার মনের অনুভূতিগুলো আর কেউ কোনো দিনও জানতে না পারে।
পিসি, পিসেমশাই আর আমি আলোচনা করে স্থির করলাম, বাসেই রওনা দেবো। তবে শর্ত একটাই, পিসেমশাই আমাকে পৌছে দিয়ে আসবেন। আর আমি সকালেই গিয়ে আমার বর্তমান কাজের জায়গায় রেজিগনেশন জমা দিয়ে আসবো। আশা করছি তাড়াতাড়িই সেই ঝামেলা মিটে যাবে। না গেলেও আমি এখানে থাকবো না।
পরিকল্পনা মত সকালেই চলে গেলাম স্কুলে, রেজিগনেশন জমা দিয়ে ফিরে সব প্যাকিং করে নিলাম বিকালের মধ্যে। তারপর পিসেমশাইকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাস ধরার উদ্দ্যেশ্যে। বাসে উঠে যেন মনের তার ছেঁড়ার টান অনুভব করলাম। এতদিন এখানে ছিলাম, তখন যেন পাহাড়, আমার নিজের জন্মভূমি আমাকে টানত। কিন্তু এই কলকাতা শহরটাও যে আমাকে মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে বুঝতে পারিনি। আজ যাওয়ার সময় সুতোয় টান পড়েছে বলে বুঝতে পারছি বেশী। কষ্ট হচ্ছিলো, এই শহরটাকে ছেড়ে চিরকালের মত চলে যাওয়ার জন্য। তার থেকেও বেশী কষ্ট হচ্ছিলো রজতকুমারের জীবন থেকে চলে যাওয়ার জন্য। কয়েক মাস আগেও ভাবতাম উনি যোগাযোগ না রাখলেও আমার কোনো যায় আসে না। কিন্তু আজ বুঝছি। উনি আমার জীবনযাত্রায় কিভাবে জড়িয়ে গেছিলেন। সেই বাঁধন ছেড়ে বেরোতে যে কি কষ্ট তা আজ ভালোভাবেই টের পেতে শুরু করেছি।
বাস ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছে, আস্তে আস্তে শহরের গন্ডি পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমার গন্তব্যের দিকে। যত শহরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি, ততই আমার মন বলছে
ভালো থেকো রজতকুমার। তোমার ভালোবাসাকে নিয়ে সুখে থেকো। আজ সুজাতা তোমার জীবন থেকে চির বিদায় নিলো। আর এই মেয়েটাকে কোনোদিনও তোমায় দেখতে হবে না। সুজাতা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ যে এই অতি সাধারণ মেয়েটাকে একদিন তুমি তোমার বন্ধুর সম্মান দিয়েছিলে। আমি তার যোগ্য ছিলাম না, তাও। সেই সম্মান, সেই সব কথা, আর সেই সব দিনের স্মৃতি নিয়েই আমি বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেবো। বিদায় বন্ধু। বিদায় ভালোবাসা।
(চলবে)