#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৯
সকালবেলা…..
মোবাইল টন এর শব্দে আধুনিক্তার ঘুম ভাঙলো। উঠে দেখে বাবা আর আরমান ঘুমিয়ে আছে মা দাদী দাদাই নেই। হয় তো উনারা উঠে গিয়েছে। আধুনিক্তা বালিরের নিচ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখে মাশরাত কল করেছে। রিসিভ করে কানে ধরলো।
“হ্যালো”
“ঘুমিয়ে আছো?
“ছিলাম, মাত্র উঠলাম।”
“ডিস্টার্ব করলাম হয় তো।”
“না, এমনিতেও দেরি হয়ে গিয়েছে। এখন উঠে যাব।”
“২ টা বাজে আসবো আমি।”
“কিন্তু কেন?”
“কেন মানে? আমি আসলে সমস্যা?”
“না তো, মানে হঠাৎ বললে আসবে তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
“তোমার জন্য আম্মু কি যেন কিনেছে। সেটাই দিতে আসবো।”
“ঠিক আছে, মালিহাকে সাথে নিয়ে এসো।”
“ও আর্ট স্কুল গিয়েছে, বাচ্চাদের ড্রইং পরীক্ষা আজ।”
“ওকে, আম্মু কোথায়?”
“রান্নাঘরে, আচ্ছা এখন রাখি তুমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। নাস্তা করতে ভুলো না।”
“না, তুমি আসো একবারে খাবার খাবো।”
“জেদি মেয়ে, ঠিক আছে আমি তারাতাড়ি আসছি।”
মাশরাত কল কেটে দিলো। আধুনিক্তা ঘড়ির সময় দেখলো, ১২ টা ৪০ বাজে। আযান দিবে কিছুক্ষণের মধ্যে। আধুনিক্তা উঠে কাঁথাগুলো ভাজ করে নিলো। বাবা আর আরমানকে তাদের কাঁথা মুড়িয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেল। দাদাই পেয়াজ কাটছে। আধুনিক্ত হাসলো, দাদাই সবসময় তার দাদীর সাহায্য করে কাজে। আধুনিক্তা সালাম দিলো দুজনকে৷ দুজনই সালামের উত্তর নিলো। আধুনিক্তা দাদাইর পাশে দাঁড়িয়ে বলল-
“মাশরাতকে তোমার মতো বানাবো আমি।”
দাদী হাসলেন আধুনিক্তার কথা শুনে। দাদাই বললেন-
“আমার নাতজামাইকে এত কষ্ট দিয়ে কি লাভ?”
দাদী বললেন-
“কষ্ট? তুমিই তো আমার হাত থেকে পেয়াজ নিয়ে বললে তুমি কাটবে।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছিলাম, আমি বলেছিলাম আর তুমি ঢ্যাং ঢ্যাং করে আমাকে দিয়েও দিলে।”
“দেখলি আধুনিক্তা? তোর দাদাই সবসময় এমন করে।”
আধুনিক্তা হাসছে তাদের ঝগড়া দেখে। তখনই মা আসলেন।
“কি হলো আপনারা ঝগড়া করছেন কেন?”
“আর বলো না আম্মু দাদাই ভালো সাজতে গিয়ে ফেসে গেলো।”
দাদাই বলল-
“ভেবেছিলাম বললে না থাক তুমি যাও আমি একা করতে পারবো। তোমার কষ্ট হবে। কিন্তু না, ২০ টা পেয়াজ এই নিয়ে কাটলাম।”
আধুনিক্তা দাদাইকে ইশারায় বলল দাদীর দিকে তাকাতে। দাদাই দাদীর দিকে তাকাতেই দাদাই চমকে উঠলো। আধুনিক্তা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বলল-
“আচ্ছা এখন ঝগড়া না করে শুনো, মাশরাত আসবে কিছুক্ষণ পর। মা কি যেন কিনেছে সেটাই দিতে আসবে।”
মা বললেন-
“তাহলে তো তারাতাড়ি রান্না শেষ করা দরকার। মাশরাতকে বলবি খাওয়া দাওয়া করে যেতে।”
“হ্যাঁ ও আমাদের সাথেই খাবে।”
“আমি নামাজ পড়ে আসি ও হয় তো নামাজ পড়েই আসবে।”
“ঠিক আছে যাও তুমি।”
আধুনিক্তা তার ঘরে চলে আসলো। হজরের নামাজ আদায় করে নিলো। কিছুক্ষণ পর আরমান আসলো। মাশরাত এসেছে সেটা জানাতে। আধুনিক্তা ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে মাশরাত বসে আছে বাবা আর দাদাইর সাথে। সাদা রং এর পাঞ্জাবিতে ছেলেটাকো বেশ লাগে দেখতে। আধুনিক্তা মাশরাতকে সালাম দিয়ে সোফায় বসলো। মাশরাত সালামের উত্তর নিয়ে আবার দাদাইর দিকে তাকাল। আধুনিক্তা অনেকক্ষণ বসে রইলো। তার বোরিং লাগছে খুব। মাশরাত দাদাই আর বাবার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। আধুনিক্তা উঠে তার ঘরে চলে আসলো। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লগ ইন করে কল করলো। মল্লিকা আর মেহরিন সাথে সাথেই কল রিসিভ করলো। তাদের সাথে কথা বলার মাঝেই দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনলো। পেছনে ফিরে দেখে মাশরাত দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা ইশারায় বলল আসতে। মাশরাত ভেতরে প্রবেশ করে খাটে বসলো। আধুনিক্তা তাদের বলে কল কেটে মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আধুনিক্তা পা টিপে টিপে গিয়ে মাশরাতের কানের কাছে গিয়ে জোরে চিৎকার করলো। হঠাৎ চিৎকার শুনে মাশরাত ভয়ে লাফিয়ে উঠলো। আধুনিক্তা হাসতে হাসতে খাটে বসলো। মাশরাত চোখ ছোটো ছোটো করে আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে আছে।
“এটা কি ঠিক হলো?”
আধুনিক্তা হাসি থামিয়ে বলল-
“কেন আমি কি কিছু করেছি?”
“আসছে সাধুবাবা, তুমি নাস্তা করো নি কেন?”
“বলেছিলাম না তোমার সাথে খাবো? নাস্তা করলে আর কিছু খেতে পারতাম না।”
“তোমার ঔষধ আছে সকালবেলার তাই না?”
“না, আজ থেকে নো ঔষধ। ৪ মাসের ডোজ ছিলো। গতকাল শেষ হয়েছে।”
মাশরাত আর কিছু বলল না। আধুনিক্তার হাত ধরে কাছে নিয়ে আসলো। আলতো করে আধুনিক্তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। আধুনিক্তা মাশরাতকে জড়িয়ে ধরে বলল-
“কি হয়েছে মাশরাত? আমার কেন মনে হচ্ছে তুমি টেনশনে আছো?”
“আমার হঠাৎ অস্থির লাগছে। জানি না কেন এমনটা হচ্ছে। ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই আমার ভালো লাগছে না।”
“কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছ”
“না”
“তাহলে?”
“কথা বলো না এখন।”
আধুনিক্তা কিছু বলল না। মাশরাত আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরে রাখলো।
“তুমি টেনশন করছো তাই না? আমারো গতকাল খুব ভয় করেছিল। কিন্তু আজ ভাবছি যা হওয়ার হবে। আমি নেগেটিভ কিছু ভাববো না।”
“আমি টেনশন করছি না। আমার ভয়ও লাগছে না। আমার ভেতরে শুধু অশান্তি জাগরণ হচ্ছে। আমার মন চাচ্ছিল নিজেকে ঘরে বন্দী করে রাখতে। সেটা করে দেখেছি। তবুও ভালো লাগে না।”
“তো তুমি ভাবলে আধুনিক্তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখি রাখি। বাংলা সিনেমা যত্তসব।”
মাশরাত ফিক করে হেসে দিলো। আধুনিক্তাকে ছেড়ে সে হেলান দিয়ে বসে হাসছে। আধুনিক্তা মুখ বাঁকা করে বলল-
“সত্য শুনে হাসি আসে।”
“না, তোমার বোকা বোকা মন্তব্য শুনে হাসি আসে৷ হাসলে মন ভালো থাকে তাই তোমার কাছে এসেছি বোকা মার্কা কথা শুনতে।”
“হয়েছে হয়েছে তোমাকে চিপকিয়ে ধরে বসে থাকার সময় নেই আমার কাছে। আমি গিয়ে দেখি রান্না হয়েছে কিনা।”
বলেই আধুনিক্তা উঠে দাঁড়াল। মাশরাত আধুনিক্তার কোমড় ধরে বসিয়ে দিলো আবার। আধুনিক্তা ভ্রু কুঁচকে মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত আধুনিক্তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল-
“কি দরকার নিজেই নিজের ভালোবাসার মুহূর্তটাকে বরবাদ করার? বসে থাকা যায় না আমার পাশে।”
“আজ হঠাৎ রোমান্টিক হয়ে গেলে কেন?”
“তুমি আছো হৃদয়ে তাই”
“তোমার ঢং দেখে আমি বাঁচি না। আগামীকাল আমাদের বিয়ে আজ রোমান্টিক হওয়ার দরকার নেই।”
“যদি আগামীকাল আমার বরযাত্রা তোমার দুয়ারে না আসে?”
“এগুলো কি বলছো মাশরাত?”
“বলো না কি হবে তখন?”
“তুমি যেখানেই থাকবে সেখানে এসে তোমার হাড় গুঁড়ো করে ফেলব।”
“আর যদি শুনো আমি মরে গিয়েছি?”
আধুনিক্তার মাথা বিগড়ে গেল। মাশরাতের পাঞ্জাবীর কলার ধরে টেনে সামনে নিয়ে আসো। তার রাগী দৃষ্টি মাশরাতের চোখে। মাশরাতের হাসি আসছে কিন্তু এখন হাসবে না। আধুনিক্তা দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“বিয়ে কি মজা করার বিষয়? লিমিট ক্রস করো না কথা বলতে বলতে।”
“দুনিয়ার প্রত্যেক মানুষের মৃত্যু হবে। কারো আগে কারো পরে। তাই মৃত্যুর সম্পর্কে ভাবা কিন্তু খারাপ কিছু না।”
“জানি, তবুও বলছি। এসব বলে এখন আমাকে কষ্ট দিও না।”
“আচ্ছা দিব না, সরি।”
আধুনিক্তা চোখ বেয়ে পানি পরলো। রাগের কারণে নিজেই টের পায় নি। মাশরাত বুড়ো আঙুল দিয়ে আধুনিক্তার চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিলো। আধুনিক্তা মাশরাতের বুকে মুখ গুঁজে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল-
“অনেক মিনতির পর তোমাকে পেয়েছি। তুমি আমার জন্য কি আমি নিজেও জানি না। যখন তোমাকে দেখেছিলাম, ভেবেছিলাম তুমি শুধু আমার ক্রাশ। কিন্তু না, এখন তুমি আমার জীবনের সবটুকু হয়ে উঠেছো।”
মাশরাত আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো আধুনিক্তাকে। এমন ভালোবাসার শিকার হবে কখনো মাশরাত ভাবে নি। সে এইবার সঠিক মানুষকে ভালোবেসেছে।
রাতেরবেলা…..
মালিহা ছাদে উঠে পেইন্টিং করছে। ছাদে চারপাশে লাইটের ব্যবস্থা করেছে। গত ১ মাস ধরে মালিহা এই পেইন্টিং করছে যাতে আধুনিক্তা আর মাশরাতকে গিফট দিতে পারে। লক্ষ টাকা খরচ করে সে যে কিছু দিতে পারতো। কিন্তু নিজের হাতে তৈরী কোনো উপহার দেওয়ার ফিলিংসই অন্যরকম। হঠাৎ তার মোবাইল বেজে উঠল। তার মন বলছে নাওয়াল দিয়েছে। যা ভেবেছিল তাই হলো। নাওয়ালের নাম ভাসছে স্ক্রিনে। রিসিভ করে কানে ধরলো-
“বলেন”
“তুমি বলেছিলে বাসায় পৌঁছে কল দিবে দাও নি কেন?”
“কি হবে কল দিয়ে?”
“কি হবে মানে? আমার টেনশন হয় বুঝো না কেন?”
“নাওয়াল আপনি কি জানেন আমাদের ভবিষ্যত অসম্ভব?”
“হ্যাঁ জানি, কিন্তু যতদিন না তোমার বিয়ে হচ্ছে আমি তোমার জীবনে থাকতে চাই।”
“আমার জীবন কোনো ঘর না যে আপনি থাকবেন। বার বার আমাকে কল দেওয়া ও আমার স্কুলে আসা বন্ধ করুন।”
“অসম্ভব, দরকার হলে সেই স্কুল আমি কিনে নিলো। আবার দরকার হলে হাজারটা সিম পরিবর্তন করবো। তবুও আমি এসব বন্ধ করবো না।”
“কেন দুর্বল করছেন নাওয়াল?”
নাওয়াল চুপ হয়ে গেল। মালিহা আবার বলল-
“আমি কখনো আপনার প্রস্তাবে রাজি হবো না।”
“আমি..আমি তোমাকে রাজি করাতে চাচ্ছি না মালিহা। আর আমি তোমাকে দুর্বল করতে চাই না। আসলে আমার মন মানে না তাই বার বার ছুটে আসি তোমার কাছে।”
“আপনি ভালো মতো জানেন আপনার ভালোবাসাকে আমি বার বার ফিরিয়ে দিয়ে অপমান করছি। ভালোবাসা পবিত্র অনুভূতি, বার বার এই অনুভূতির অপমান করাবেন না প্লিজ।”
নাওয়াল জবাব দিলো না। মালিহা আকাশের দিকে তাকাল। আজ চাঁদ দেখা যাচ্ছে না।
“এখন রাখি, আমি আবার রিকুয়েষ্ট করছি। বার বার আমার কাছে অপমান হতে আসবেন না। রেসপেক্ট ইওরসেলফ ওকে?”
“হুম”
নাওয়াল কল কেটে দিলো। মালিহা কান থেকে মোবাইল সরিয়ে কিছুক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইল। খারাপ লাগে তার নাওয়ালের জন্য। কিন্তু সে কি করবে। কোনো না কোনো দিক দিয়ে সেও সঠিক। হঠাৎ পেছন থেকে মাশরাতের কন্ঠ ভেসে আসলো-
“ভালোবাসা দূর চলে গেলে খুব কষ্ট হয় রে বোন। মাঝে মধ্যে স্বার্থপর হতে হয় ভালোবাসার জন্য।”
মালিহা পেছনে ফিরলো। মাশরাত দাঁড়িয়ে আছে। মালিহা মোবাইল রেখে আবার ঘুরে পেইন্টে মনোযোগ দিয়ে বলল-
“হ্যাঁ তো আমাকে এসব শোনাচ্ছিস কেন?”
মাশরাত এগিয়ে এসে মালিহার পাশে দাঁড়িয়ে বলল-
“কারণ আমার বোনটা কাওকে ভালোবেসে ফেলেছে।”
“ভালোবাসিনি, আর বাসতেও চাই না।”
“সত্যি বলছিস?”
মালিহা মাশরাতের দিকে তাকাল। মাশরাত বলল-
“তোর মিথ্যা ধরা আমার বাম হাতের কাজ। এনি ওয়েজ, কি বলল নওয়াল।”
“আমি জানতাম তুই সব শুনেছিস।”
“সব না, উপরে এসে দেখি তুই কথা বলছিস। তোর কথার ধরণ শুনেই বুঝতে পেরেছি ফোনের ওপারে নাওয়াল রয়েছে।”
“সে প্রতিদিন আমাকে কল দেয়। স্কুলে পর্যন্ত চলে যায়। এত অপমান করি তবুও পিছু ছাড়ে না।”
“কি করবে বেচারা? ভালোবাসার মায়াজালে বন্দী হয়ে গিয়েছে।”
মালিহা কিছু বলল না। পেইন্টিং-এ মনোযোগ দিলো। মাশরাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল-
“কিন্তু তুই চিন্তা করিস না। এমন কেও তোর জীবনে আসবে যে তোকে নাওয়ালকে ভুলিয়ে দিবে।”
“কেন? তুই কি তাবাসসুম আপুকে ভুলে গিয়েছিস?”
“তাবাসসুম আমার ভালোবাসা ছিল তাই তাকে ভুলা অসম্ভব। নাওয়াল যেহেতু তোর ভালোবাসা না তাই তাকে ভুলতে বেশী সময় লাগবে না, ঠিক বলেছি না?”
মালিহা জবাব দিলো না। সে পেইন্টিং-এর দিকে তাকিয়ে আছে। মাশরাত মালিহার কাঁধে হাত রেখে বলল-
“আমার কথা ভাবা দরকার নেই। তোর ভাই চাইলে নিজেই ব্যবসা শুরু করতে পারবে এখন। কিন্তু যে মানুষটা আমাকে বিপদের সময় চাকরি দিয়েছে তার অফিস ছাড়তে পারবো না। আমার কথা শুন বোন। তুই রাজি হয়ে যা। নাওয়াল তোকে অনেক ভালোবাসে।”
“আমি পেইন্টিং করছি প্লিজ ডিস্টার্ব করিস না৷ নাহলে নষ্ট হয়ে যাবে।”
মাশরাত হাসলো, বোনের মনে গিয়ে লেগেছে কথাটা সে জানে। এখন সে নিশ্চয়ই এই বিষয়ে ভাববে। এমনও হতে পারে রাজি হয়ে যাবে। মাশরাত ছাদ থেকে নেমে গেল। মালিহা ঘাড় ঘুরিয়ে মাশরাতের যাওয়ার পথে তাকাল। মাশরাত চলে যেতেই ঘুরে বর্তমান পেইন্টিং-টা আস্তে করে তুললো। সেই পেইন্টিং-এর নিচে নাওয়ালের একটা পেন্সিল স্কেচ আছে। মালিহা মুচকি হাসলো স্কেচ দেখে।
পরেরদিন…..
মেয়ের বিয়ে, বিয়েতে কোন কমতি রাখতে চান না আধুনিক্তার বাবা। ইনভাইট করেছে দুই হাজারের বেশী মানুষ। খাবারের কমতি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই নিজেই সব দেখেশুনে রাখছে। আধুনিক্তা চুপচাপ সোফায় বসে আছে। মল্লিকা আর মেহরিন সকাল সকালই এসে পরেছে। তিন বান্ধবী মিলে সাজবে আজ। মল্লিকা আর মেহরিন এক রকম সাজ দিবে। যেহেতু আধুনিক্তা কনে, তাই তার সাজ অবশ্যই গর্জিয়াস হবে। দাদী প্লেটে বেশী করে পোলাও নিয়ে আসলেন। আরমান, আধুনিক্তা মল্লিকা আর মেহরিনকে নিজের হাতে খাইয়ে দিবেন উনি। মল্লিকা আর মেহরিনের ডিসকাস যেন কমছেই না। আধুনিক্তা হাসছে তাদের দেখে। আধুনিক্তা দাদীর দিকে তাকাল। দাদীর মন খারাপ ভীষণ। আধুনিক্তার কাছে এখন শান্তনা দেওয়ার জন্য কোনো শব্দ নেই। কারণ এখন সে দাদীকে কিছু বললে নিজেই কান্না করে দিবে। দাদী ৪ জনকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আধুনিক্তা মাথা নিচু করে আছে। তার মেহেদী খুব লাল হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পার্লার থেকে লোক আসলো। মেহরিন, মল্লিকা আর আধুনিক্তা আধুনিক্তার রুমে চলে গেল। আধুনিক্তার মোবাইল ড্রইংরুমেই রাখা। আরমান সোফায় বসে টিভি দেখছে। হঠাৎ আধুনিক্তার মোবাইল বেজে উঠল। আরমান মোবাইল নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরলো-
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আরমান সাহেব না-কি?”
“বাবা আপনি?”
“হ্যাঁ বাবু আমি, কেমন আছো তুমি?”
“আমি একদম ভালো আছি।”
“তাবাসসুম কোথায়?”
“কে?”
“মানে আপনার মাম্মাম কোথায়?”
“মাম্মাম তো ঘরে সাজুগুজু করছে।”
“ওহ আচ্ছা”
তখনই মা আসলো।
“কার সাথে কথা বলছো আরমান?”
“বাবা কল দিয়েছে”
“দাও আমি কথা বলি।”
আরমান মাকে ফোন দিয়ে দিলো। মা কানে ধরে সালাম দিলো।
“কেমন আছেন ভাই?”
“আলহামদুলিল্লাহ আপা, গতকাল কথা হয় নি মেয়ের সাথে। তাই ভাবলাম কল দিয়ে জিজ্ঞেস করি কেমন আছে।”
“আলহামদুলিল্লাহ ও ভালো আছে। মেয়ের বিয়ে কিন্তু আপনারা নেই।”
“আপনারা তো আছেন। আমরা আজ রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসছি।”
“সত্যি বলছেন? মেয়ে তো খুশীতে লাফাবে বাবা মা আসছে শুনে।”
“ওর মাও খুব খুশী মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। আমার কাজের কারণে বিয়েতে আসতে পারলাম না। কিন্তু আমাদের আগামীকালই কথা হবে।”
“যাক ভালোই হলো, তাহলে দেখা হচ্ছে কাল। আর আমি আধুনিক্তাকে বলবো আপনি কল দিয়েছিলেন। কিন্তু এইটা বলবো না যে আপনারা আসবেন। সারপ্রাইজ ওর জন্য।”
“হ্যাঁ এটাই ভালো হবে।”
“আসসালামু আলাইকুম ভাই”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম”
মা কল কেটে দিলো। আধুনিক্তার রুমে গিয়ো দরজা নক করে পারমিশন নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
“আধুনিক্তা”
“জি আম্মু”
“তোমার বাবা কল দিয়েছিল”
“বলো কি? আমাকে এনে দাও নি কেন?”
“তুমি ব্যস্ত আছো তাই।”
“আমার পরিবার থেকে বেশী জরুরি আমার ব্যস্ততা না।”
“ঠিক আছে বাবা বুঝলাম। সাজগোছ শেষ হলে তারপর উনাকে কল দিও।”
“ওকে”
মা চলে গেলেন মেবাইল রেখে চলে গেলেন। মল্লিকা বলল-
“দোস্ত তোর বাবা মানে? বিষয়টা বুঝলাম না।”
“হ্যাঁ উনি আমার বাবা”
“তা বুঝলাম, আসলে আমি কনফিউজ তুই কাকে বাবা ডাকিস।”
“উনারা আমার বাবা মা, এখন তোরা কনফিউজ। ধীরে ধীরে সব জেনে যাবি আমার সম্পর্কে।”
চলবে…….
[দেরি হওয়ার জন্য আমি সরি। মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরছে তাই না?? আপনাদের কনফিউজ করতে আমার ভালো লাগে? আগামীকালও গল্প রাতে দিব❤️❤️]