তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_২৮

0
2012

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৮

গোসল করে বের হলো মাশরাত। আধুনিক্তা তাকে বার বার কল দিয়েই যাচ্ছে। মোবাইল দেখে হাসলো। এই মেয়ে তাকে শান্তি দিবে না। খাটে বসে কল রিসিভ করলো। করার সাথে সাথে আধুনিক্তা ঝাঁঝাল কন্ঠে বলল-
“কি সমস্যা তোমার? বলো তো কতবার কল দিয়েছি তোমাকে? এমনভাবে কল ইগনর করছো যেন আমি তোমার কেও হই না।”
মাশরাত নিঃশব্দে হাসলো। আধুনিক্তা আবার বলল-
“তুমি সত্যি করে বলো তো তোমার কি আফসোস হচ্ছে আমাদের বিয়ে হবে বলে?”
“তোমার কি মনে হয়?”
“আমার তো মনে হয় তুমি এই বিয়ে করতে চাও না।”
“ঠিক আছে তোমার যখন এটাই মনে হচ্ছে হোক।”
আধুনিক্তা ভেংচি কাটলো। মাশরাত হেসে বলল-
“চোখ বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছাড়ো। দেখবে সব রাগ চলে গিয়েছে।”
“আপাতত রাগ কমাতে চাচ্ছি না। আজ আসো সেন্টারে তোমার খবর আছে।”
“ভয় পেলাম খুব তোমার হুমকি শুনে। বলছি যে একটু আস্তে মেরো। সবার সামনে মানসম্মান চলে যাবে নাহলে আমার।”
আধুনিক্তা হেসে দিলো। মাশরাত মুচকি হাসলো আধুনিক্তার হাসি শুনে। আধুনিক্তা বলল-
“আচ্ছা এখন এসব বাদ দাও। কোথায় ছিলে এতক্ষণ? জানো আমি কত মিস করছিলাম তোমাকে।”
“মিস করতে হবে না। আমি তো তোমারই হতে চলেছি।”
“হ্যাঁ কিন্তু আমার ভয় করছে।”
“কেন! মানে ভয় করছে কেন তোমার?”
“জানি না, যত পর্যন্ত আমাদের বিয়ে না হবে আমার ভয় কমবে না।”
“কিছু হবে না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। যদি কোনো গন্ডগোলও হয়ে যায় সমস্যা নেই। আমি পালিয়ে যাব তোমাকে নিয়ে।”
আধুনিক্তা শব্দ করে হেসে উঠলো। হঠাৎ আধুনিক্তার মোবাইলে কল আসলো। কান থেকে মোবাইল সরিয়ে নাম্বার দেখে বলল-
“মাশরাত আমি এখন রাখছি। কিছুক্ষণ পর কল দিব। আর আজ সন্ধ্যায় তো দেখা হচ্ছেই।”
“ওকে আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
মাশরাত কল কাটতেই আধুনিক্তা সেই কল রিসিভ করতে নিলো। কিন্তু তার আগেই কল কেটে গিয়েছে। আধুনিক্তা আফসোসের দৃষ্টিতে তাকাল। কল ব্যাক করার আগেই মেসেজ আসলো তার মোবাইলে।
“জন্মদিনের খুব খুব শুভেচ্ছা তোমাকে মামণি। দোয়া করি তোমার জীবন সবসময় সুখময় হোক।”
আধুনিক্তা মুচকি হাসলো মেসেজ দেখে।

পার্লার থেকে মানুষ এসেছে আধুনিক্তাকে সাজাতে। আধুনিক্তা মেকআপ দেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল-
“মাশরাত আমার মজা উড়াবে এত মেকআপ আমার চেহারায় দেখলে।”
পার্লারের মেয়ে বলল-
“বিয়েতে তো কনেকে সাজাতেই হয় ম্যাম।”
“আপনি আমার হবু বরকে চিনেন না। সে এক নাম্বারের খবিশ৷ কথায় কথায় আমার মজা উড়ায়।”
“হা হা হা, এটাকে ভালোবাসা বলে।”
“হ্যাঁ, সে আমাকে খুব ভালোবাসে।”
“আর আপনি?”
“আমিও খুব ভালোবাসি।”
পার্লারের মেয়েটা হাসলো৷ আধুনিক্তার হলুদের শাড়ি হলুদ আর লাল রং এর। সেটার সাথেই মানানসই মেকআপ করে দিলো। মেকআপ প্রায় শেষ পর্যায়ে তখনই মাশরাতের কল আসলো। আধুনিক্তা তার কল দেখে হেসে রিসিভ করলো-
“বলেন জনাব”
“কোথায় তুমি? আমরা সবাই সেন্টারে এসে পরেছি তোমারই খবর নেই।”
“আমি কনে, আমার আসতে তো দেরি হবেই।”
“ইশশ আটা ময়দা মাখা হয় নি এখনো।”
“তুমি কি মুর্খ? মেকআপকে আটা ময়দা বলো কেন?”
“সত্যি বললে গায়ে লাগে আমি জানি। এনি ওয়ে, আপনার একটা ছবি পাঠান তো দেখি।”
“না, আমি কিছুক্ষণ পর আসছি। একেবারে আমাকে দেখবে, ওকে?”
“অপেক্ষা করাচ্ছো তুমি আমাকে।”
“অপেক্ষার ফল মিষ্টি। ওকে বাই কিপ ওয়েটিং।”
বলেই আধুনিক্তা কল কেটে দিলো।

মাশরাত বিরক্ত চেহারা বানিয়ে মোবাইলের দিকে তাকাল। কবির আর রিয়াজ তার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। কবির বলল-
“কি ব্যাপার মাশরাত তোমার মুড এর ১২ টা বেজে গেল কেন?”
“তো আর কি করবো তোমাদের শালিকা মেকআপ করতে ব্যস্ত।”
রিয়াজ বলল-
“এরা এমনই, আমারজনও পার্লার থেকে এখনো আসে নি। আমি বলে দিয়েছি তুমি একা সেন্টারে আসো আমি পারবো না তোমাকে নিয়ে আসতে।”
কবির বলল-
“আর আমারজন ম্যাচিং চুরি কিনতে গিয়েছিল বিকালবেলা। সেখান থেকে ডাইরেক্ট পার্লার যাবে। আসতে আসতে রাত ৯ টা বাজিয়ে দিবে এই মেয়ে।”
মাশরাত বলল-
“মেয়েরা এত মেকআপ করে কেন? আমরাই ভালো, কোথাও গেলে জামা, ঘড়ি, একটুখানি চুলের স্টাইল। ব্যস হয়ে গেলাম নায়ক।”
তখনই আধুনিক্তার বাবা আসলো।
“আমার মেয়েকে নিয়ে কথা হচ্ছে?”
মাশরাত জিহ্বায় কামড় দিয়ে দিলো। বাবা হেটে এসে মাশরাতের পাশে দাঁড়িয়ে বলল-
“সব শুনে ফেলেছি।”
“বাবা আসলে…”
“সমস্যা নেই যা বলেছো একদম সত্যি বলেছো। শুধু আধুনিক্তা না ওর মা-ও এমন। আগে আমাকে অপেক্ষা করিয়ে নিজে পার্লার চলে গেত। আর আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো।”
“তার মানে আপনার মতো জীবন আমি পেতে চলেছি?”
“এমনটাই কিছু।”
মাশরাত মুখ ভেটকালো। যেন দুনিয়ার সবচেয়ে কুৎসিত সত্য শুনেছে আজ।

ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পর অবশেষে কনে প্রবেশ করলো সেন্টারে। মাশরাত তখন একা-ই হাটাহাটি করছিল। ভীষণ লজ্জা লাগছিল তার এত তারাতাড়ি তার আসার। কিন্তু হলুদ শুরু হওয়ার সময় ছিল ৭ টা৷ মাশরাত এসেছে সাড়ে ৭ টায়৷ আর আধুনিক্তা সাড়ে ৮টায়। এক ঘন্টা মাশরাতকে অপেক্ষা করালো মেয়েটা। দরজার পাশে ভীর। মাশরাত উঁকি মারছে কিন্তু আধুনিক্তার দেখা মেলছে না। মালিহা দৌড়ে এসে মাশরাতকে বলল তার সাথে যেতে। মাশরাতকে নিয়ে গিয়ে ভীর ঠেলে মালিহা আধুনিক্তার পাশে দাঁড় করালো মাশরাতকে। হঠাৎ আধুনিক্তাকে দেখে মাশরাত তব্দা খেয়ে গেল। মেকআপ ছাড়া-ই তো মেয়েটা সুন্দর। কিন্তু আজ খারাপ লাগছে না। কনে কনে ভাব আছে আধুনিক্তার চেহারায়। মাশরাত মুচকি হাসির রেখা টানলো মুখে। আধুনিক্তা মাশরাতকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল-
“আমি ভুল ছিলাম, ভেবেছিলাম তোমাকে খুব হ্যান্ডসাম লাগবে।”
“তো কি খারাপ লাগছে আমাকে?”
“না, মোটামুটি ভালো লাগছে। আজ চুলটা এলোমেলো না রাখলেও পারতে।”
“না এইভাবেই ঠিক আছে।”
আধুনিক্তা পা তুলে আঙুলে ভর দিয়ে উঁচু হলো। মাশরাতের থুতনি ধরে চুল ঠিক করতে লাগলো। চারপাশে সিটি আর তালির শব্দ ভেসে উঠলো। মাশরাত হাসলো আধুনিক্তার কান্ড দেখে। চুল ঠিক করে আধুনিক্তা স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াল।
“এখন ঠিক আছে”
“থ্যাঙ্ক ইউ মাই লাভ।”
মাশরাত হাত এগিয়ে দিলো। আধুনিক্তা মাশরাতের হাতে হাত রাখলো। দুজন এগিয়ে যাচ্ছে স্টেজের দিকে। তাদের উপর গোলাপ ফুলের পাপড়ির বৃষ্টি হচ্ছে। স্টেজে ফুল দিয়ে সোফা সাজানো। তারা গিয়ে সোফায় বসলো। মাশরাতের বিশ্বাস হচ্ছে তার বিয়ে। হতে পারে সে তার প্রথম ভালোবাসা পায় নি। কিন্তু সে তার শেষ ভালোবাসা পেতে চলেছে। সবাই এসে তাদের হলুদ ছুঁইয়ে দিচ্ছে। আধুনিক্তা মাশরাতের হাত ধরে বলল-
“একটা কথা বলি মাশরাত?”
“পারমিশম নেওয়ার কি আছে? বলো।”
“বিয়ের পর যদি তুমি এমন কিছু জানতে পারো যেটা শুনলে তুমি খুব শকড হবে তখন?”
“কেন তুমি কি এলিয়েন?”
“মজা করো না আমি সিরিয়াস।”
“আরে হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে আমি কিভাবে উত্তর দিব?”
“আচ্ছা তুমি বলেছিলে একটা মেয়েকে ভালোবাসতে। কখনো তাকে ভুলতে পারবে না। তুমি কি তাকে ভুলে গিয়েছো?”
“যদি বলি হ্যাঁ?”
আধুনিক্তা মুখ কালো করে ফেলল। মাশরাত হেসে বলল-
“তুমি রাগছো কেন?”
“সত্যি বলো, আমার মিথ্যে শুনতে ভালো লাগে না।”
“শুনো, তাবাসসুমকে ভুলি নি আমি। হৃদয়ের কোনো এক কোণায় পিছুটান হিসেবে রেখেছি। আমি জানি না তার দেখা কখনো পাবো কিনা। প্রথম ভালোবাসা আমাদের অনেক কিছু শেখায়। তাই, চেয়েও আমরা আমাদের প্রথম ভালোবাসা ভুলতে পারবো না। জানো আজ তার জন্মদিন?”
আধুনিক্তা ঢোক গিলল। সে মাশরাতের হাত আরো শক্ত করে বলল। মাশরাত মুচকি হেসে আধুনিক্তার হাতে হাত রেখে বলল-
“তুমি ভয় পেও না। যে কোনো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তুমি আমাকে পাশে পাবে। আমি গতকাল রাত থেকেই আপসেট ছিলাম খুব। তাই তো তোমার কল ইচ্ছে করে ধরি নি। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি পিছুটানের সম্পর্কে আমি যত কম ভাববো তত ভালো। আমাদের ফিউচার সামনে আধুনিক্তা। এখন এসবের ব্যাপারে আমি ভাবতে চাই না।”
“যদি কখনো তাবাসসুম আপু তোমার জীবনে ফিরে আসে তখন?”
মাশরাত হেসে উঠলো। আধুনিক্তা ভ্রু কুঁচকে বলল-
“রহস্যময় হাসি না দিয়ে বলো কি করবে তখন?”
“তোমার হাত শক্ত করে ধরে তাবাসসুমকে বলবো। তোমাকে ধন্যবাদ তাবাসসুম। তুমি আমাকে ভালোবাসার মানে শিখিয়েছ। কিন্তু এখন আমার জীবনে আধুনিক্তা ছাড়া আর কারো জায়গা নেই। সে আমাকে আবার মন খুলে হাসতে শিখিয়েছে। আবার ভালোবাসতে শিখিয়েছে। জীবনের সবচেয়ে কষ্টময় পর্যায়ে আমি আধুনিক্তাকে পেয়েছি। এত সহজে ওর জায়গা কাওকে দিতে পারবো না।”
আধুনিক্তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মাশরাত টিস্যু নিয়ে আধুনিক্তার চোখের কোণা মুছে দিয়ে বলল-
“আর কান্না করো না ভূতনি মার্কা মেকআপ ধুয়ে যাবে নাহলে। পরে তোমার আসল চেহারা অর্থাৎ পেতনি মার্কা চেহারা বেরিয়ে আসবে। কত ছোটো ছোটো বাচ্চারা আছে। ভয় পাবে তারা।”
আধুনিক্তা হেসে দিলো। মাশরাতের হাতে এলোপাথাড়ি থাপ্পর মেরে বলল-
“এই পেতনি ভূতনিকেই নিয়ে জীবন কাটাতে হবে।”
“ওকে তুমি আমার ভূতনি হলে আমি তোমার ভূত।”
আধুনিক্তা হেসে মাশরাতের কাঁধে মাথা রাখলো।

রাত ১ টার মধ্যে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো। বসে থাকতে থাকতে মাশরাতের কোমড় ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। আধুনিক্তার অস্থির লাগছে। সে কখনো এতক্ষণ শাড়ি পড়ে থাকে নি। আবার ঘুমও পাচ্ছে তার খুব। সেন্টার প্রায় খালি। কাছের আত্মীয় স্বজন ছাড়া আর কেও নেই। মাশরাতের বস এসেছিল নাওয়ালকে নিয়ে। ১ ঘন্টার মধ্যেই আবার চলে গিয়েছে। আধুনিক্তা স্টেজ থেকে নেমে আড়মোড়া ভাঙল। মায়ের কাঁধে হেলান দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
“ঘুম পাচ্ছে আমার আম্মুর?”
“হুম, খু বেশী।”
“চলো বাসায় চলে যাই। তোমার দাদী আর দাদাই আরমানকে নিয়ে আগেই চলে গিয়েছে।”
“তাই তো বলি আরমানকে দেখছি না কেন। আব্বু কোথায়?”
“উনার পার্টনারদের গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গিয়েছে।”
“ইশশ যেন উনাদের হাত পা নেই।”
“বিজনেস পার্টনারদের এক্সট্রা কেয়ার করতে হয়। আচ্ছা চলো আমরাও নিচে যাই।”
আধুনিক্তা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়াল। মাশরাতও স্টেজ থেকে নামলো। মায়ের হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে কপাল গাল মুছে নিলো। রিয়াজ আর কবির তাকে হলুদ দিয়ে ভূত করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ থেকে সবাই নিচে চলে গেল। বাবা উনার পার্টনারদের সাথে এখনো দাড়িয়ে কথা বলছে। আধুনিক্তা মায়ের দিকে তাকাল। মা মেয়ের চাহনি দেখে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। আধুনিক্তা দ্রুত বাবার সামনে গিয়ে বলল-
“আব্বু বাসায় যাবে না? আমার খুব অস্থির লাগছে।”
“হ্যাঁ আম্মু যাব, উনারা চলে যাচ্ছেন তাই আমি ভাবলাম কিছু কথা বলে নিই।”
“ওকে আমি হিসাব রাখছি পুরো ২০ মিনিট, ক্যারি অন।”
বলেই আধুনিক্তা মায়ের কাছে চলে গেল। বাবা থতমত খেয়ে গেল। মেয়ে কেন এত রাগে উনার বিজনেস নিয়ে? উনার পার্টনাররা বিষয়টা বুঝতে পেরে গাড়িতে উঠে বসলেন। বিয়ের সময় চলছে এখন বিজনেস এর সম্পর্কে বেশী কথা না বলা-ই ভালো। মা আর আধুনিক্তা গাড়িতে গিয়ে বসলো। বাবা এসে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে সিট বেল্ট পড়তে পড়তে বলল-
“আমার পার্টনারদের সামনে এমনটা না বললেও পারতে আধুনিক্তা। উনারা কি ভেবেছে আল্লাহ জানেন।”
“তুমি তোমার মেয়ের থেকে কাজকে বেশী সময় দাও আমি আর কি করবো? তুমি কি ভুলে যাচ্ছো আমি আর মাত্র ১ দিন তোমাদের সাথে আছি?”
বাবা থমকে গেল। আধুনিক্তার গলা ধরে আসছে। জানালার বাহিরে তাকিয়ে রইলো চুপচাপ। নিমিষেই পরিবেশ থমকে গেল। কারো মুখে কোনো কথা নেই৷ বাবা ইশারায় ড্রাইভারকে বলল গাড়ি চালাতে। পুরো রাস্তায় কেও কোনো কথা বলেনি। বাসায় পৌঁছে আধুনিক্তা দ্রুত গাড়ি থেকে মেনে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। বাবা বলল-
“মেয়েটা রাগ করেছে খুব।”
“স্বাভাবিক, বিয়ে হয়ে চলে যাবে মেয়েটা। আমাদের উচিত তাকে সময় দেওয়া।”
“ঠিক আছে, আজ ও আমরা সবাই একসাথে ঘুমাবো।”
“একসাথে?”
“হ্যাঁ, চলো তারপর দেখাচ্ছি।”

আধুনিক্তা চুলের টান সহ্য করতে পারে না। তাই চুলে জট দিয়ে বাঁধে নি। গোসল করে বাথরুম থেকে বের হলো। এখন হালকা লাগছে তার। শাড়ি পড়া এত ঝামেলা আগে জানলে শাড়ি পড়তো না। খাটে বসে চুল মুছছিলো তখনই আরমান দৌড়ে ঘরে আসলো।
“মাম্মাম মাম্মাম সারপ্রাইজ দেখবে?”
“কিসের সারপ্রাইজ ছোটু?”
“ড্রইংরুমে চলো”
“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে বাবু। আমি এখন ঔষধ খেয়ে ঘুমাবো।”
“আমরা সবাই আজ একসাথে ঘুমাবো।”
“মানে?”
“চলো তারাতাড়ি”
আরমান আধুনিক্তাকে টেনে বাহিরে নিয়ে গেল। আধুনিক্তা ড্রইংরুমে গিয়ে অবাক হলো। ড্রইং রুমের সোফা টি-টেবিল সব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মাটিতে মাদুর চাদর বিছিয়ে বিছানা করা হয়েছে। আধুনিক্তা অবাক হয়ে বলল-
“এগুলো কি করছো তোমরা?”
বাবা হাসিমুখে এগিয়ে এসে আধুনিক্তার বরাবর দাঁড়িয়ে বলল-
“আমার ছোট্ট রাজকন্যা বড়ো হয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস হচ্ছে না তার বিয়ে হতে চলেছে। আমার ছোট্ট রাজকন্যাটা আর মাত্র ২ রাত ও ২ দিন আমাদের সাথে আছে। এই ২ রাত ও ২ দিন আমাদের সকল ব্যস্ততা ফেলে আমাদের রাজকন্যাকে সময় দিবো।”
আধুনিক্তা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। বাবা আধুনিক্তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-
“বিদায় এর মুহূর্তটাই হবে তোমার শেষ কান্না। কারণ আমি জানি মাশরাত কখনো তোমাকে কষ্ট দিবে না। প্রথম প্রথম তাকে চিনতে আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু এখন আমি বুঝেছি সবাই এক না। দুনিয়াতে ভালো মানুষ এখনো আছে।”
আধুনিক্তা বাবাকে ছেড়ে হাসিমুখে তাকাল। বাবা পরম যত্নে আধুনিক্তার চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিলো। মা এগিয়ে এসে আধুনিক্তার কাঁধে হাত রেখে বলল-
“আর আমরা জানি আমাদের মেয়ে সেই বাড়ির যোগ্য বউ হয়ে উঠবে।”
“আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আম্মু। আমি সবাইকে দেখিয়ে দিব আমার পরিবার আমাকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে।”
দাদাই হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললেন-
“এইতো মজুমদারদের মতো কথা।”
আধুনিক্তা হেসে দাদাইকে জড়িয়ে ধরলো। পরিবারের মানুষগুলোকে ছেড়ে যেতে সবারই কষ্ট হয়। কিন্তু এটাই তো নিয়ম৷ না চাইলেও এই নিয়ম পালন করতে হবে। দাদী এসে বললেন-
“তাহলে মজুমদার ফ্যামিলি হাগ হয়ে যাক।”
সবাই হাসিমুখে আধুনিক্তাকে জড়িয়ে ধরলো। আরমান দৌড়ে এসে লাফাতে লাফাতে বলল- “আমি বাকি আমাকে নাও”৷ আধুনিক্তা আরমানকে কোলে তুলে নিলো। পরিবারের কিছু ভালোবাসার মুহূর্ত যেতেই সবাই বসলো গোল হয়ে। কিছুক্ষণ কথা বলে কাটানো গেলে মন্দ হয় না। মা ঘর থেকে আধুনিক্তার ঔষধ নিয়ে আসলো। আধুনিক্তা খেয়ে আধুনিক্তা বসে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঘুম আসবে। সবাই গানের কলি খেলছে। বাবা গান গাইতেই আরমান আর আধুনিক্তা কানে হাত দিয়ে চিৎকার করে বলল বাবাকে গান গাইতে না। এর জন্য বাবা মুখ লটকালো। আধুনিক্তা আর আরমান তা দেখে বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। ১ ঘন্টার মতো একে অপরের সাথে সময় কাটিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পরলো। আধুনিক্তার হঠাৎ ঘুম আসছে না। এমনিতে তার ঘুম এসে পড়ে তারাতাড়ি। উঠে বসে দেখে সবাই ঘুম। আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে নিজের ঘরে গেল। আলমারি খুলে একটা বক্স বের করলো। বক্সের ভেতর একটা প্যাকেট রাখা। প্যাকেট খুলে তিনটা জিনিস বের করলো। ১টা ডায়েরি, ১টা ছবির ফ্রেম আর ১টা ভাঙা মোবাইল। আধুনিক্তা জিনিসগুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। সে চায় নি জিনিসগুলো এখন বের করতে। কিন্তু তার ভালো লাগছে না হঠাৎ। ডায়েরিটা খুলে হাত বুলালো। ডায়েরির উপর লিখা “অনুভূতি”। ছবির ফ্রেমটা হাতে নিলো। ফ্রেমটার কাঁচ ভাঙা। ভেতরে ছেঁড়া ছবি। ছবিটা কার আধুনিক্তা জেনেও যেন জানে না। কিছুক্ষণ জিনিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে আবার বক্সের ভেতরে রেখে দিলো।

চলবে…….

[মজাদার একটা বিষয় শেয়ার করি। কেও একজন আমাকে বলেছে তাবাসসুম আর আধুনিক্তা একজনই। তাই ভাবলাম একটা কনফিউশান তৈরী করা যাক? কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। আরো একটা পর্ব দিব। হয় তো ১১ টা বাজতে পারে। ভুল ক্রুটি ধরিয়ে দিবেন প্লিজ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here