#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২_৩
আধুনিকতাকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে বাবা অফিস চলে গেলো। আধুনিকতার মন ভীষণ খারাপ। চুপচাপ মাথা নিচু করে সে হেটে যাচ্ছে তার ক্লাসের দিকে। ৩ বছর আগে যখন প্রথমদিন এসেছিলো ভার্সিটিতে তার অনেকগুলো বন্ধু হয়ে ছিলো। এখন তো তারা আরো উপরের ক্লাসে চলে গিয়েছে। আধুনিকতা এখন তাদের ক্লাসে বয়সে সবার সিনিয়র। কেও তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবে কী না কে জানে? বেঞ্চের উপর ব্যাগ রেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ কেও পেছন থেকে বললো-
“এক্সকিউজ মি এইটা আমার সিট।”
আধুনিকতা পেছনে ফিরে দেখে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিকতা সরি বলে সরে গেলো। মেয়েটা বেঞ্চে ব্যাগ রেখে বললো-
“নতুন?”
আধুনিকতা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। মেয়েটা বললো-
“চাইলে আমার সাথে বসতে পারো। এমনিতেও আমার সাথে কেও বসে না।”
“কেন?”
“এক সপ্তাহ হয়েছে মাত্র ভার্সিটিতে জয়েন হয়েছি। কিন্তু এই সাত দিনে ক্লাসের সবার সাথে আমার পাঙা হয়ে গিয়েছে। শুধু একজন বাদে।”
“কিন্তু কেন?”
“বলবো বলবো আগে বলো বসবে এইখানে?”
“হ্য..হ্যাঁ আমার সমস্যা নেই।”
“ঠিক আছে, ক্লাস শুরু হতে আরো ২০ মিনিট বাকি চলো আমার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে আসি।”
আধুনিকতা মাথা নাড়ালো। ব্যাগ বেঞ্চে রেখে দুজনই হাঁটা ধরলো। আধুনিকতা খেয়াল করলো মেয়েটা তাকে ভার্সিটির স্পোর্টস ক্লাবে নিয়ে যাচ্ছে।
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“বাস্কেটবল সেকশন।”
আধুনিকতা আগ্রহী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
“তোমার ফ্রেন্ড বাস্কেটবল খেলে?”
“হ্যাঁ, সে মেয়েদের মধ্যে নাম্বার ওয়ান প্লেয়ার। কিন্তু একটা সমস্যা আছে তার মধ্যে।”
“কী সমস্যা?”
“সে খুব ভীতু, একটুর মধ্যে ভয় পেয়ে যায়।”
আধুনিকতা হেসে দিলো। হঠাৎ মাথায় একটা কথা আসতেই বললো-
“তোমার নামটাই জানা হলো না এখনো। তোমার নাম কী?”
“আমার নাম মল্লিকা চৌধুরী, তোমার?”
“আধুনিকতা মজুমদার।”
“বাহ বেশ সুন্দর নাম।”
আধুনিকতা মুচকি হাসলো। দুজনই বাস্কেটবল সেকশনে ঢুকলো। আধুনিকতার দৃষ্টি হঠাৎ ছলছল করে উঠলো। তার চোখের সামনে কিছু কিছু মেয়েরা বাস্কেটবল খেলছে। অনেকজন বসে বসে দেখছে। আধুনিকতা ঢোক গিললো। তিন বছর আগে ঠিক এই জায়গায়ই বাস্কেটবল ট্রেইনিং এর সময় তার জীবন বদলে গিয়েছে। প্রতিদিন ভাবে যদি সেদিন না আসতো ভার্সিটি তাহলে ভালো হতো। মল্লিকার ডাকে আধুনিকতার হুঁশ ফিরলো।
“কি হলো তোমার?”
“কিছু না।”
আধুনিকতা আড়ালে চোখ মুছে নিলো। মল্লিকা তাকে নিয়ে গেলো সামনে। একটা মেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর একটা মেয়ের সাথে। মেয়েটার পরনে একটা নীল টি-শার্ট ও কালো টাওজার। মল্লিকা পা টিপে টিপে গিয়ে মেয়েটার মাথায় থাপ্পড় দিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। মেয়েটা মাথায় হাত দিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো। আধুনিকতা মেয়েটাকে দেখে মুচকি হাসলো। মেয়েটা ভারী সুন্দর দেখতে। মেয়েটা চোখ ছোটো ছোটো তাকিয়ে আছে মল্লিকার দিকে। মল্লিকা হেসে বললো-
“সরি দোস্ত, বেশী জোরে লেগেছে।”
“না তো, আয় তোকেও একটু আদর দিয়ে দেই।”
বলেই মেয়েটা মল্লিকার গালে থাপ্পড় দিয়ে আবার বললো-
“আই লাভ ইউ বেবি।”
মল্লিকা গালে হাত দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো-
“আমি এত জোরে মারি নি। এর প্রতিশোধ আমি নিবোই।”
“ইয়া ইয়া দেখা যাবে।”
“আচ্ছা এইসব ছাড় আমার নতুন বান্ধবীর সাথে পরিচয় হয়ে নে।”
মল্লিকা আধুনিকতার হাত ধরে সামনে টেনে নিয়ে বললো-
“ওর নাম আধুনিকতা, আজই ভার্সিটি জয়েন করেছে। এন্ড গেস হোয়াট? আমাদের ফ্রেন্ডশিপের মাত্র ১০ মিনিট হয়েছে। আর আধুনিকতা ওর নাম মেহরিন।”
“নাইস টু মিট ইউ মেহরিন।”
আধুনিকতা মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো। মেহরিনও হাত মিলিয়ে বললো-
“মি টু, কিন্তু কী করলে এইটা? কেন করলে?”
“আ..আমি কী করলাম?”
“এই ঝগরুটের সাথে কেন ফ্রেন্ডশিপ করলে? আসতে না আসতেই মেয়েটা পুরো ক্লাসের স্টুডেন্টদের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলেছে। আমি ঝগড়া পছন্দ করি না। ভাবছিলাম ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপই ভেঙে ফেলবো।”
মল্লিকা ভেংচি কেটে বললো-
“এত সহজ না মল্লিকার থেকে পিছু ছাড়ানো।”
“ইয়া দ্যাটস মাই ব্যাড লাক।”
আধুনিকতা হাসছে তাদের কথা শুনে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আধুনিকতা ও তাদের মধ্যে বেস্টফ্রেন্ড নামক সম্পর্কে গড়ে উঠলো। মল্লিকা আর মেহরিন খুবই ভালো মানুষ। মল্লিকা একটু বাঁচাল। আর মেহরিন কথা কম বললেও পয়েন্টের কথা বলে। মেহরিন তারাতাড়ি জামা বদলে নিলো। তারপর তিনজনই ফিরে আসলো তাদের ক্লাসে। প্রথম দিনেই আধুনিকতা বেশ মজা পেলো ক্লাস করে। টিফিনের সময় হতেই তারা ক্লাস থেকে বের হয়ে কেন্টিনে চলে গেলো।
“কী খাবে?”
মেহরিনের কথায় আধুনিকতা ভাবনার গভীরে ঢুকে গেলো। তৈলাক্ত খাবার তার খাওয়া বারন কিন্তু এই কেন্টিনে বেশীর ভাগ ফাস্ট ফুড। মল্লিকা আধুনিকতার কাঁধে হাত রাখতেই আধুনিকতার হুঁশ ফিরলো।
“ডেকেছিস?”
“কোথায় হারিয়ে গেলি তুই?”
“ভাবছি কী খাবো।”
“খাবার নিয়ে ভাবতে নেই বিন্দাস খাওয়া উচিত সবসময়।”
“আমার বেছে খাওয়া দাওয়া করতে হয়।”
“কেন?”
“বলবো, কিন্তু মেহরিন কোথায়?”
“টয়লেট গিয়েছে।”
কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো তারা। মেহরিন এসে মল্লিকা আর আধুনিকতাকে জিজ্ঞেস করে খাবার অর্ডার দিতে চলে গেলো। হঠাৎ আধুনিকতার পেছন থেকে ঝগড়ার শব্দ ভেসে আসলো। আধুনিকতা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে একটা ছেলে একটা মেয়েকে উঁচু স্বরে বকছে। শুধু বকছে না বেশ বাজে বাজে গালাগালও করছে। আধুনিকতা অবাক হয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বললো-
“এই ছেলেটা কী বলছে শুনেছিস? এত বাজে গালি কেও দেয় তাও পাবলিক প্লেসে?”
“এই ছেলে এমনই, দুইদিন পর পর গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে। মন ভরে গেলে এইভাবে ঝগড়া করে ব্রেকআপ করে ফেলে। আমাদের কলেজেই ছিলো ছেলেটা খুব খারাপ।”
“যেহেতু ছেলেটা খারাপ মেয়েরা তার সাথে রিলেশন কেন করে?”
“তার চেহারা দেখ বুঝতে পারবি।”
আধুনিকতা ছেলেটাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। আবার মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বললো-
“দেখলাম এখন?”
“বেশ হ্যান্ডসাম তাই না? বড়লোক বাবার ছেলে তাই কিছু কিছু মেয়েরা গলে যায়।”
তখনই মেহরিন আসলো। আধুনিকতা আর মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বললো-
“গাইস চল মাঠে বসে টিফিন খাই এইখানে ঝগড়া বেঁধে গিয়েছে।”
“মেহরিন আমাদের উচিত ছেলেটাকে থামানো। অতিরিক্ত বাজে কথা বলছে।”
“আধু তুই নতুন, এখনো ছেলেটাকে চিনিস না। আর আমরা তিনজনই ঝগড়া পছন্দ করি না।”
“পছন্দ না করলেও ঝগড়া থামাতে তো পারি।”
“আধু তুই..”
আধুনিকতা আর একটা কথা শুনলো না। দাঁড়িয়ে দ্রুত হেটে গিয়ে ছেলেটার সামনে গিয়ে বললো-
“এক্সকিউজ মি এইটা ভার্সিটি আপনার বাড়ি না। এত বাজে বাজে কথা কেন বলছেন মেয়েটাকে।”
ছেলেটা মাথা থেকে পা পর্যন্ত আধুনিকতাকে দেখে ফিক করে হেসে দিলো।
“কেন বেবি তোমার কোনো সমস্যা এতে?”
আধুনিকতার কিছুটা অস্বস্তি হলো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে আবার বললো-
“না.. মা.. মানে বাজে দে..দেখা যায় তা..তাই বললাম।”
“আমাকে নিজের বয়ফ্রেন্ড ভাবলে আর বাজে দেখাবে না।”
ছেলেটা ও তার বন্ধুরা শব্দ করে হেসে উঠলো। ছেলেটা আবার বললো-
“চলো আজ লং ড্রাইভে যাই, অনেক টাকা আছে আমার কাছে। যা চাইবে তা দিবো। এমনিতেও তোমাকে দেখে আমি প্রেমে পড়ে গিয়েছি। তোমাকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু আছে আমার কাছে।”
বলেই ছেলেটা পৈশাচিক হাসি দিলো। আধুনিকতা হাত মুঠো শক্ত করে ফেললো। রাগে তার শরীর কাঁপছে। মেহরিন দ্রুত হেটে এসে বললো-
“সরি ভাইয়া, উই আর রিয়েলি সরি। ইউ ক্যারি অন প্লিজ। আধুনিকতা চল।”
মেহরিন আধুনিকতার হাত ধরে টানতেই আধুনিকতা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে ছেলেটার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
“ব্রেকআপ করতে হলে মুখের উপর বলে দিন এইভাবে মেয়েটাকে হেনস্তা কেন করছেন?”
ছেলেটা উঁচু স্বরে হাসতে হাসতে বললো-
“দেখ ভাই দেখ, উনি হয় তো এনজিও থেকে এসেছেন প্রতিবাদ করতে। তো ম্যাম আপনিই বলুন কিভাবে মুখের উপর বলতে হয়।”
বলেই ছেলেটা আধুনিকতার কাঁধে হাত রাখলো। রাখার সাথে সাথে আধুনিকতা তার হাতের দিকে এক নজর দেখে আবার চেহারার দিকে তাকালো। ছেলেটার স্পর্শই বলে দিচ্ছে ছেলেটার পরিচয়৷ আধুনিকতা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো-
“অনেক হয়েছে আদরের ভাষা এখন নিজের আসল রূপে আসতে হবে।”
“মানে?”
আধুনিকতা ছেলেটার হাত শক্ত করে ধরে সজোড়ে মোচড় দিয়ে দিলো। ছেলেটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। সবাই ভয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো। আধুনিকতা ছেলেটার হাত সোজা করে আবার মোচড় দিয়ে দিলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
“বাজে ব্যবহার করার আগে তোর উচিত ছিলো একবার আধুনিকতার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া। তিন বছর আগের আধুনিকতা যদি ফিরে আসে তোকে এইখানেই পুঁতে রেখে দিবে।”
আধুনিকতা ধাক্কা দিতেই ছেলেটা মাটিতে পড়ে গেলো৷ ডান হাত শক্ত করে ধরে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। মল্লিকা মেহরিনের কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো-
“ইয়ার আমি তো ভাবলাম মেয়েটা শান্তশিষ্ট। কিন্তু এখন তো দেখছি তার উল্টো।”
আধুনিকতা হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। চারপাশে সবাই তার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আধুনিকতা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেললো। হঠাৎ পাশ থেকে কারো শব্দ ভেসে আসলো-
“কী হচ্ছে এইখানে?”
সবাই সেদিকে তাকিয়ে দেখে চেয়ারম্যান সাহেব দাঁড়িয়ে আছে। উনি ধীরে ধীরে হেটে এসে আধুনিকতার সামনে দাঁড়ালো।
“তোমাকে না বলেছি গুন্ডামী করতে না।”
“দাদাই আসলে…”
সবাই অবাক হয়ে গেল। মেহরিন বললো-
“দাদাই? আধু তুই আমাদের বলিস নি কেন তুই চেয়ারম্যান সাহেবের নাতনি?”
“কেন বললে কী ফ্রেন্ডশিপ করতি না?”
মেহরিন কিছু বললো না। দাদাই বললো-
“প্রথমদিনেই ১২টা বাজিয়ে দিয়েছো পরিবেশের।”
“দাদাই এই ছেলেটা খুব বাজে বাজে কথা বলে ওকে বের করে দাও ভার্সিটি থেকে।”
“ঠিক আছে আমি ওকে বের করার ব্যবস্থা করছি। তুমি তোমার ব্যাগ নিয়ে বাহিরে আসো আমরা বাসায় যাবো এখন।”
“কিন্তু দাদাই আরো কিছু ক্লাস বাকি আছে।”
“আজকের জন্য এইটুকুই, চলো বাসায়।”
আধুনিকতা মাথা নাড়িয়ে হাঁটা ধরলো। দাদাই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে চলে গেলো। মেহরিন আর মল্লিকা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাতেরবেলা…..
মাশরাত ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে সিগারেট ও দৃষ্টি পাশের বাড়ির ছাদের দোলনার দিকে। তাবাসসুম আগে এই বাসায় থাকতো। প্রথম দেখা তাদের ছাদেই হয়েছিলো। তার বাবা তাদের রিলেশনের ব্যাপারে জানার পর বাসা পরিবর্তন করে ফেলে। ছাদটা আজও তেমন যেমনটা তাবাসসুম সাজিয়ে গিয়েছিলো। টবগুলোয় আজও নানা ধরনের ফুল ফুটে। দোলনা লাইট দিয়ে সাজিয়েছিলো আজও ঠিক তেমনই সাজানো। সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে মাশরাত ধোঁয়া ছাড়লো। ধুমপান করলে নাকি কষ্ট কমে? মাশরাত তো তাই শুনেছে। কিন্তু এই সিগারেট তার কষ্ট কখনো কমাতে পারে নি কেন? দিন যত যায় তত তার কষ্ট যেনো বাড়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। হঠাৎ চোখের সামনে অতীত ভেসে উঠলো।
অতীতের কিছু অংশ….
মাশরাত ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। আজ বাস্কেটবল খেলে পা ব্যাথা করে ফেলেছে যার কারণে মা বাহিরে যেতে দিবে না। নাহলে বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলতে চলে গেতো। মাশরাত সবে মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তাই পড়াশোনাও নেই। পাশ হলে নতুন পড়া ভার্সিটি থেকে শুরু হবে। হঠাৎ তার কানে নুপুরের শব্দ ভেসে আসলো। পাশের ছাদে তাকাতেই সে থমকে গেলো। একটা মেয়ে হাতে পানির জগ নিয়ে লাফাতে লাফাতে এগিয়ে আসছে। ফুলে ভরা টবগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে বড়ো হাসি দিয়ে বললো-
“তোমরা দেখছি আরো বড়ো হয়ে গেলে। গতকাল তো ছোটো ছিলে অনেক।”
মাশরাত ভ্রু কুঁচকালো। মেয়েটা কি ফুলগুলোর সাথে কথা বলছে? মেয়েটা এক এক করে টবগুলোয় পানি দিয়ে জগ নিচে রাখলো। আলতো করে গোলাপ ফুলের উপর হাত বুলিয়ে মুচকি হাসলো৷ সেদিন জীবনে প্রথম মাশরাত কারো হাসি দেখে বুকের বা পাশে কম্পন অনুভব করেছিলো। হঠাৎ মেয়েটাকে ডাকায় মেয়েটা দৌড়ে নিচে চলে যায়। মাশরাত সেদিন ২ ঘন্টা ছাদে দাঁড়িয়ে মেয়েটার অপেক্ষা করেছিলো কিন্তু মেয়েটা আর আসে নি। মাশরাত মন খারাপ করে নিচে ফিরেছিলো সেদিন।
পরেরদিন মাশরাত খেলতে না গিয়ে আবার ছাদে উঠেছিলো মেয়েটাকে দেখার উদ্দেশ্যে। গিয়ে দেখে পাশের বাড়ির ছাদে কেও নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো মাশরাত। এক সময় অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। নুপুরের শব্দ আবারো ছনছন করে ভেসে আসতে লাগলো। মাশরাতের দৃষ্টি ছাদের দরজার দিকে। মেয়েটা ভেতরে আসতেই মাশরাতের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মেয়েটা আজ হাতে একটা ডাইরি নিয়ে এসেছে। দোলনায় হেলান দিয়ে বসে ঠোঁট উল্টে বসে রইলো। দেখে মনে হচ্ছে মন খারাপ। মাশরাতের ভালো লাগলো না মেয়েটার মন খারাপ দেখে। হঠাৎ মেয়েটা মাথা তুলে চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে তার দিকে তাকালো। তার দিকে তাকাতেই মাশরাত দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো। মেয়েটা কী যেনো ভেবে উঠে এসে রেলিং ধরে দাঁড়ালো। মাশরাত এখন তাকে স্পষ্ট দেখতে পারছে। দুজনের দৃষ্টিই এদিক সেদিক যাচ্ছে। হঠাৎ চোখে চোখ পড়তেই আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে দুজন। মাশরাত ভাবলো এইবার কথা বলে নেওয়া যাক। দুবার কেশে “হাই” বললো। মেয়েটা মাশরাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে “হ্যালো” বললো।
“তুমি এই বাসায় কবে থেকে থাকো? না মানে আমি জন্মের পর থেকে এইখানে থাকি তোমাকে কখনো দেখি নি।”
“গত মাসে আমরা এসেছি এই বাসায়। আমি ঢাকা প্রথমবার এসেছি আগে গ্রামে ছিলাম।”
“ওহ, একটা প্রশ্ন করি যদি তুমি মাইন্ড না করো।”
“জ্বী করুন।”
“তোমার কি মন খারাপ?”
মেয়েটা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।
“জানতে পারি কেন?”
“আমার কবিতা লিখার খুব শখ। আজ সকালে প্রচুর বকা দিয়েছে আম্মু তাই কিছু ভাবতে পারছি না।”
“একটা কবিতা শোনাবে আমাকে তোমার লিখা?”
“আপনি শুনবেন?”
“হ্যাঁ শুনবো”
মেয়েটা বড়ো এক হাসি দিয়ে ডাইরির পাতা উল্টে কবিতা খুঁজতে লাগলো। পেয়ে যেতেই হাসিমাখা মুখে বলা শুরু করলো-
“আকাশের উড়ন্ত পাখির মতো আমার এই মন,
ডানা দু’টো মেলে দিয়ে উড়তে চায় সারাক্ষণ,
কেও খোপ করে ধরে নিলে কী হবে তখন?
ধরে রাখা যাবে তাকে কতক্ষণ?
ছুটে যাবে সে বহুদূর,
কারণ ধরা দিতে চায় না সে এখন।”
কবিতা শেষ করে মেয়েটা আগ্রহ দৃষ্টিতে তাকালো মাশরাতের দিকে। মাশরাত মুচকি হাসি দিয়ে নিচু শব্দে তালি বাজাতে শুরু করলো। মেয়েটা খুশীতে খিলখিল করে হেসে উঠলো। এত সুন্দর হাসি মাশরাত আর কারো দেখে নি। তালি বাজানো বন্ধ করে বললো-
“আচ্ছা তোমার নামটা জানতে পারি?”
“তাবাসসুম সিদ্দিকী। আপনার নাম?”
“মাশরাত তোফাজ্জল হোসেন।”
“বাপ রে এইটা নাম নাকি হোম এড্রেস?”
মাশরাত হেসে উঠলো তাবাসসুমের কথায়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে তারা কথা বললো। এই প্রথম মাশরাত কোনো মেয়ের সাথে মন খুলে কথা বলেছে। মেয়েটা খুব সহজ সরল। পেটে হয় তো কথা থাকে না তাই বক বক করে সব বলে দেয়। কী আর করার? বয়সই না কত মেয়েটার? মাত্র ১৫ বছর চলছে। এইবার এসএসসি দিবে। কিছুক্ষণ পর তাবাসসুম চলে গেলো মাশরাতকে বিদায় দিয়ে। তাবাসসুম যেতেই মাশরাত খুশীতে লাফাতে শুরু করলো। তারপর থেকে মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে আকাশের দিকে তাকালো।
হঠাৎ হাতে গরম অনুভব করতেই মাশরাতের হুঁশ ফিরলো। সিগারেটটা পুরো জ্বলে শেষের দিকে এসে পড়েছে। মাটিতে ফেলে পা দিয়ে ডলে একটা লম্বা নিশ্বাস ফেললো। অতীত মনে করে কষ্ট পেতে চায় না সে। কিন্তু ছাদে আসলে অতীত এসে মাথায় ভর করে। ভাবতে বাধ্য করে দেয় মাশরাতকে। মাশরাত ভাবলো এখন এইসব ভাবার সময় না। তার এখন বাস্কেটবল নিয়ে ভাবা উচিত। এখন সে ট্রেইনার হতে চলেছে। অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
আজ থেকে মাশরাত ট্রেইনার। সকাল সকাল উঠে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরেছে নাশতা না করেই। মা অনেকবার বলার পরও খায় নি। যেহেতু ভার্সিটি বেশী দূর না তাই হেটেই চলে গেলো। ভার্সিটির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নার্ভাস লাগছে হঠাৎ তার। একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে হাঁটা ধরলো। প্রথম অফিসরুম গিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করে স্পোর্টস ক্লাবের দিকে হাঁটা ধরলো। বাস্কেটবল সেকশনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে তিন কদম বাড়তেই হঠাৎ তার বুকে কেও ঝাঁপিয়ে পড়লো। টাল সামলাতে না পেরে মাশরাত পড়ে যেতে নিলো। কিন্তু কোনো মতো নিজেকে সামলে নিয়ে মানুষটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মাশরাত খেয়াল করলো সে যাকে ধরে রেখেছে সে একজন মেয়ে। মাশরাত কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। মেয়েটা অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ দু’টো মেয়ে বললো-
“আধুনিকতা তুই ঠিক আছিস?”
মেয়েটা কোনো পাত্তা দিলো না তাদের। মাশরাত মেয়েটাকে ছেড়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বললো-
“আই এম সরি আর ইউ ওকে?”
মেয়েটা কিছু বলছে না এখনো তাকিয়ে আছে। মাশরাত অবাক না হয়ে পারলো। সাথে কিছুটা বিরক্তও হলো। মেহরিন আধুনিকতার কনুই ধরে ঝাকিয়ে বললো-
“ওই আধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
আধুনিকতা স্বাভাবিক হলো। ডান বাম দেখে আবার মাশরাতের দিকে তাকিয়ে বললো-
“আমি ঠিক আছি, ধন্যবাদ।”
মাশরাত জবাবে মুচকি হাসলো। মাশরাতের হাসি দেখে আধুনিকতার হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে গেলো। আধুনিকতার মনে হচ্ছে তার হৃদয়ে বিস্ফোরণ ঘটবে। মল্লিকা বললো-
“আপনিও কি নতুন স্টুডেন্ট?”
মাশরাত হেসে বললো-
“কেন আমাকে দেখে কি স্টুডেন্ট মনে হয়?”
“হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে।”
“আমি বাস্কেটবল প্লেয়ারদের নতুন ট্রেইনার।”
মেহরিন হাসিমাখা মুখে বললো-
“নাইস টু মিট ইউ স্যার আমি আপনার স্টুডেন্ট। অর্থাৎ একজন বাস্কেটবল প্লেয়ার।”
“নাইস টু মিট ইউ টু তুমি কি আমাকে সব প্লেয়ারদের সাথে দেখা করাতে পারবে?”
“নিশ্চয়ই স্যার, আসুন।”
মাশরাত মেহরিনের সাথে চলে গেলো। আধুনিকতা এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ কি হলো তার নিজেও জানে না। দৃষ্টি সরাতে পারছে না সে মাশরাতের উপর থেকে। মল্লিকা আধুনিকতাকে ধাক্কা দিয়ে বললো-
“তোর আবার কি হলো?”
“জানি না, হঠাৎ আজব একটা অনুভূতি হচ্ছে মনে।”
“দোস্ত তুই ক্রাশ খাইলি নাকি?”
“সেটাও জানি না।”
মল্লিকা কিছুই বুঝতে পারলো না। আধুনিকতার দৃষ্টি মাশরাতের উপর এখনো। মাশরাত সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আধুনিকতার ইচ্ছে করছে হাসিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে। বুকের বা পাশে হাত রেখে লম্বা নিশ্বাস ফেললো। হৃদয়টা বার বার জানা দিচ্ছে কেও তার ভেতরে প্রবেশ করতে চায়। যেনো এই মৃত হৃদয়টা আবার জীবিত হয়ে উঠলো। হঠাৎ মাশরাতের চোখ গেলো আধুনিকতার দিকে। মেয়েটার দৃষ্টি তার ভালো লাগছে না। কেন যেন ভয় কাজ করছে মনে হঠাৎ। কারণ মেয়েটার ছোঁয়া পেতেই মাশরাত তার হৃদয়ে আবার কম্পন অনুভব করেছে।
চলবে……
[একটা কথা ক্লিয়ার করতে চাই। নায়িকার নামটা কিভাবে উচ্চারণ করেন? “Adhunikota?” যদি করে থাকেন সমস্যা নেই৷ কিন্তু শব্দটাকে যদি ল্যাটিন শব্দে উচ্চারণ করতে চান উচ্চারণ হবে “Adhunikta” (আধুনিক্তা)। আসলে নায়িকার নাম আধুনিক্তা। কিন্তু এই শব্দ ভুল তাই আধুনিকতা লিখেছি। আধুনিকতা আর মাশরাতকে নিয়ে আগেও গল্প লিখেছি তখন অনেকজনকে বলে দিয়েছিলাম। এখন যেহেতু অনেকজন নতুন তাই আবার বলে দিলাম। অবশেষে, গল্প প্রতিদিন ৫ টার মধ্যে দিব ইন শাহ আল্লাহ। পর্বগুলো কেমন হচ্ছে ছোট্ট করে কমেন্ট করে জানানোর অনুরোধ রইলো। ভুল ক্রুটি ধরিয়ে দিবেন প্লিজ❤️❤️]
#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৩
হঠাৎ মাশরাতের চোখ গেলো আধুনিকতার দিকে। মেয়েটার দৃষ্টি তার ভালো লাগছে না। কেন যেন ভয় কাজ করছে মনে হঠাৎ। কারণ মেয়েটার ছোঁয়া পেতেই মাশরাত তার হৃদয়ে আবার কম্পন অনুভব করেছে। মাশরাত চোখ ফিরিয়ে নিলো। মল্লিকা আধুনিক্তার ভাবসাব বুঝতে না পেরে বললো-
“দোস্ত মাত্র ৫ মিনিট হয়েছে তোদের দেখা হওয়ার এত তারাতাড়ি প্রেমে পড়ে গেলি?”
আধুনিক্তা চোখ ছোটো ছোটো করে মল্লিকার দিকে তাকালো। মল্লিকা ডান বাম দেখে আবার আধুনিক্তার দিকে তাকালো। আধুনিক্তা হঠাৎ হাসিভরা মুখে বললো-
“দোস্ত আমি প্রেমে পড়ি নি। প্রথম দেখাতে কাওকে পছন্দ হতেই পারে। আর এই মানুষটা…”
আধুনিক্তা মাশরাতের দিকে তাকিয়ে আবার বললো-
“এই মানুষটাকে আমি কোথাও তো দেখিছি মনে হচ্ছে।”
“উনি হয় তো এই এলাকারই। রাস্তায় কোথাও দেখেছিস হ শিওর।”
“হয় তো, কিন্তু কোথায় দেখেছি খেয়াল আসছে না।”
রাতেরবেলা…..
“না মানে না।”
“আব্বু প্লিজ আমি একদম সুস্থ আছি রাজি হয়ে যাও।”
“হব না আমি রাজি।”
আধুনিক্তা মায়ের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকালো। মা আরমানকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। আধুনিক্তার চাহনি দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো। আধুনিক্তা এইবার আগুনের মতো জ্বলে উঠলো।
“সমস্যা কী হ্যাঁ? তোমরা ভালো মতো জানো আমি এখন সুস্থ আছি৷ তো আমাকে বাস্কেটবল খেলতে দিচ্ছো না কেন?”
বাবা রাগান্বিত কন্ঠে বললো-
“চিৎকার করতে না করেছি তোমাকে। তুমিও ভালো মতো জানো তুমি দৌড়াতে পারবে না খেলা তো দূরের কথা।”
“ডাক্তার কী বলেছিলো? যদি আমাকে সুস্থ রাখতে চাও আমার মন খারাপ যেন না হয়। আর তোমরা আমার মন খারাপ করছো বার বার। বাস্কেটবল খেলা আমার জন্য কী তোমরা ভালো মতো জানো।”
“হ্যাঁ জানি, আর তুমিও ভালো মতো জানো তুমি আমাদের জন্য কী। তাই জেদ করো না।”
আধুনিক্তা হাত মুঠো শক্ত করে রাখলো। রাগে তার এখন কান্না আসছে। তখনই দাদাই আর দাদী আসলো। আধুনিক্তা উনাদের দেখে মাথা নিচু করে ফেললো। দাদাইকে ও ভীষণ ভয় পায়। দাদাই চেয়ার টেনে বসে ভারী গলায় বললো-
“আমি কী জানতে পারি এত চিৎকার চেচামেচি কিসের?”
“আব্বু তোমার নাতনিকে বুঝাও। ও কেন বুঝতে চাইছে না ওর বাস্কেটবল খেলা বারণ?”
দাদাই আধুনিক্তার দিকে তাকালো। আধুনিক্তার চোখ তুলে দাদাইকে দেখে আবার নিচু করে ফেললো। দাদী বললো-
“ওকে বকা না দিয়ে সুন্দর করেও বুঝাতে পারিস।”
“কিন্তু মা তোমার নাতনি তো কোনো মতেই বুঝতে চায় না।”
দাদাই চোখের ইশারায় ছেলেকে চুপ থাকতে বললো। বাবা চুপ হয়ে গেলো। দাদাই বললো-
“বাস্কেটবল খেললে তোমার মৃত্যু ঘটতে পারে তা কি তুমি জানো?”
আধুনিক্তা চুপ করে আছে। দাদাইর সামনে তার হাত পা কাঁপে। দাদাই আবার জিজ্ঞেস করায় কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো-
“জা..জানি”
“তো জেদ করছো কেন?”
আধুনিক্তা কান্না জড়িত কন্ঠে বললো-
“দাদাই, ছোটোবেলায় সবাই বলতো আমি পড়াশোনায় খুব খারাপ। আমি ভবিষ্যতে কিছু হতে পারবো না। কারণ আমি সারাদিন খেলায় ব্যস্ত থাকতাম। একটা খেলা, যেটা আমাকে পুরোপুরি বশে এনে ফেলে। বাস্কেটবল, আমার একটাই তো চাওয়া। আমি একজন বেস্ট বাস্কেটবল প্লেয়ার হতে চাই। এখন আমার এক্সিডেন্টের কারণে আমার স্বপ্ন কেন ভেঙে যাবে?”
“অবুঝদের মতো কথা বলছো তুমি। তোমার হার্ট দুর্বল, এখন যদি তুমি খেলো বাঁচতে পারবে?”
“জানি না, কিন্তু যদি স্বপ্ন পূরণ করতে না পারি আমার বেঁচে থেকে কি লাভ? তার চেয়ে ভালো মরে যাই।”
“ঠিক আছে যাও মরে। কী হবে তখন? আমাদের বুক খালি হবে। প্রতিদিন মরে করবো আর কাঁদবো।”
আধুনিক্তা আর কিছু বললো না। তার চোখ গড়িয়ে অশ্রু পড়ছে। ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো। কেও তাকে থামালো না। তারা জানে আধুনিক্তা নিজেকে সামলে নিবে।
গভীর রাত ৩ টা, আধুনিক্তা এখনো ঘুমায় নি। ফেসবুকে একটা নাম বার বার সার্চ দিচ্ছে “মাশরাত হোসেন” কিন্তু মাশরাতকে খুঁজে পাচ্ছে না। সে আড়ালে শুনেছিলো ছেলেটার নাম। কিন্তু পুরো নাম মনে করতে পারছে না। রাগে মোবাইলটা ধপ করে বিছানায় রেখে সোজা হয়ে বসলো। তার জীবনটা বেশ আজব। যা চায় তা পেয়েও অনেক সময় হারিয়ে ফেলে। আবার সময় পায় না। মাশরাত নামের ছেলেটাকে আধুনিক্তার বেশ পছন্দ হয়েছে। প্রথমবার কোনো অচেনা ছেলে তার এতটা কাছে ছিলো। ভাবতেই আবার হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে গেল। আধুনিক্তা মুচকি হাসি দিচ্ছে বার বার। হঠাৎ একটা কথা মাথায় আসলো। মেহরিন? হয় তো মেহরিনের সাথে এতক্ষণে ফেসবুকে এড হয়ে গিয়েছে। কারণ আধুনিক্তা বুঝতে পেরেছে মেহরিনের বেশ পছন্দ হয়েছে মাশরাতকে। আধুনিক্তা যা ভেবেছিলো তাই। মেহরিনের ফ্রেন্ডলিস্ট পাবলিক করা যেখানে প্রিয় নামটা দেখা যাচ্ছে। “মাশরাত তোফাজ্জল হোসেন” নামটা বেশ মানিয়েছে ছেলেটার উপর। আধুনিক্তা মাশরাতের আইডিতে প্রবেশ করলো। প্রবেশ করতেই তার চোখ কপালে উঠে গেল। ইন এ রিলেশনশিপ দেওয়া। আধুনিক্তার মনে হচ্ছে তার হৃদয়ের হাজার টুকরো হয়ে গেলো। স্ট্যাটাসের ডেট কোনো মতে চেক করে দেখে সাড়ে ৩ বছর আগে দিয়েছিল। আধুনিক্তা মন খারাপ করে ফেসবুক থেকে বের হয়ে চুপচাপ শুয়ে পরলো। আপাতত সে মুখ লটকিয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু পারছে না।
পরেরদিন….
ভার্সিটির শেষে বাস্কেটবল খেলার সময়। সব প্লেয়াররা বাদে সবাই বাসায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু আধুনিক্তা যায় নি। সে খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিস দেখবে আজ। আর মাশরাত তো আছেই। গতকাল ট্রেইনিং ক্লাস চলাকালীন সময়ে হয়েছে যার কারণে আধুনিক্তা দেখতে পারে নি। আর খেলোয়াড়রা ক্লাস করতে পারে নি। তাই প্রিন্সিপাল বাস্কেটবলের জন্য আলাদা রুটিন করেছে। মেহরিন ব্যাগ থেকে তার ট্রেইনিং স্যুট বের করে চুপ বাঁধতে লাগলো। আধুনিক্তা জুসের বোতলে চুমুক বসিয়ে এক ঢোক গিলে বললো-
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি দোস্ত?”
“হুম কর”
“ট্রেইনার কেমন রে?”
“মাশরাত ভাইয়া খুব ভালো। উনি যে বাস্কেটবল খেলায় চ্যাম্পিয়ন উনার ট্রেইনিং দেখেই বুঝা যায়।”
“ওও, আচ্ছা উনার জীবনের সম্পর্কে কিছু জানিস?”
“হ্যাঁ টুকটাক গতকাল শুনলাম। উনার পরিবারে আছেন মা এবং বোন। বাবা উনি ছোটো থাকতেই মারা গিয়েছেন।”
“আর কিছু?”
“আপাতত এইটুকুই জানি?”
“উনার কি গাল..গার্লফ্রেন্ড আছে?”
“উমমমম তা তো জানি না। হয় তো আছে, উনার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তাই দেওয়া। আচ্ছা, তুই হঠাৎ উনার জীবনের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিস কেন?”
আধুনিক্তা থতমত খেয়ে গেল। মেহরিনকে যদি বলে মাশরাতকে তার পছন্দ হয়েছে মজা নিতে নিতে শেষ করবে৷ আধুনিক্তা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো-
“না দোস্ত, এইভাবেই আর কী। বয়স্ক মানুস, তাই ভাবলাম বিবাহিত হয় তো।”
“বয়স্ক? তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? স্যারের মাত্র ২৯ বছর।”
“স্যারের বেলায় তোর ২৯ বছরকে মাত্র মনে হচ্ছে। নিজের বেলায় দেখবো নি কী ভাবিস।”
মেহরিন চিন্তায় ডুবলো। আধুনিক্তা পয়েন্টের কথা বলেছে একদম। তখনই একটা ছেলে ক্লাসে প্রবেশ করলো।
“মেহরিন কোথায় তুমি?”
মেহরিন পেছনে ফিরে ছেলেটাকে দেখে বিরক্ত চেহারা বানিয়ে বললো-
“কী চাই?”
“তোমাকে।”
“হোয়াট?”
“মা..মানে ট্রেইনার ডাকছে আমাদের প্র্যাকটিসের জন্য।”
“হুম যাও তুমি এখন।”
ছেলেটা মুখ লটকিয়ে চলে গেলো। মেহরিন একা একা ফিসফিস করে কী যেন বললো। আধুনিক্তা জিজ্ঞেস করলো-
“ছেলেটা কে রে? আজ প্রথম দেখলাম।”
“ছেলেদের ক্লাসে যাস তুই?”
“ছেলেদের সেকশনে আমাদের যাওয়া বারণ জানিস না?”
“হুম তা জানি, ওর নাম রিয়াজ। যবে থেকে আমাকে দেখেছে হাত ধুয়ে পেছনে পড়ে আছে।”
“তার মানে এই ছেলে তোকে পছন্দ করে?”
“হয় তো, কিন্তু আমার ভালো লাগে না।”
“দেখতে তো ভালোই তো ভালো না লাগার কারণ।”
“এখন আমাকে দেখে ও পছন্দ করে ফেলেছে। ভবিষ্যতে যদি আমার থেকে সুন্দর কাওকে দেখে আমাকে ছেড়ে দেয়। দোস্ত আমি সব সহ্য করতে পারলেও কষ্ট সহ্য করতে পারবো না।”
আধুনিক্তা আর কিছু বললো না। যেহেতু জীবনটা মেহরিনের তাই জোর করে লাভ নেই। মেহরিনের ভাগ্যে রিয়াজ লিখা থাকলে কোনো না কোনো ভাবে তাদের মিলন হবেই।
মাশরাত দাঁড়িয়ে আছে। আজ তাকে একজন প্রফেশনাল বাস্কেটবল ট্রেইনারদের মতো লাগছে। পরণে নীল রং এর টাওজার ও সাদা রং এর হাফ হাতার টি-শার্ট। গলায় একটা হুইসেল ঝুলানো। তার বরাবর দাঁড়িয়ে আছে সব প্লেয়াররা। কিছুক্ষণ পর মেহরিন, মল্লিকা ও আধুনিক্তা আসলো৷ তারা এসে মাশরাতের সামনে দাঁড়ালো। মাশরাতকে সালাম দিয়ে মেহরিন বললো-
“সরি স্যার আই এম লেইট”
“ইটস ওকে, মেয়েদের সাথে গিয়ে দাঁড়াও”
মেহরিন মাথা নাড়িয়ে হেটে গিয়ে মেয়েদের সাথে দাঁড়ালো। হঠাৎ রিয়াজের দিকে চোখ যেতেই দেখে রিয়াজ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহরিন ভেংচি কেটে মুখ ফিরিয়ে দিলো। তা দেখে রিয়াজ হাসলো। মাশরাত মল্লিকা ও আধুনিক্তাকে দেখে বললো-
“তোমরা এখনো রেডি হও নি কেন? যাও রেডি হয়ে আসো তারপর প্র্যাকটিস শুরু করবো আমরা।”
মল্লিকা বললো-
“স্যার আমরা প্লেয়ার নই। আমরা কী বসে প্র্যাকটিস দেখতে পারি?”
“ঠিক আছে”
মাশরাত বেশী কথা বাড়ালো না। সময় চলে যাচ্ছে প্র্যাকটিস শুরু করতে হবে। মল্লিকা ও আধুনিক্তা দূরে গিয়ে বসলো। শুরু হলো প্র্যাকটিস। মাশরাত বেশ ইম্প্রেশড হলো। কারণ প্রত্যেকটা প্লেয়ার বেশ মনোযোগ দিয়ে খেলছে। আধুনিক্তার দৃষ্টি মাশরাতের দিকে। মাশরাতকে দেখে তার ইচ্ছে করছে বাস্কেটবল খেলতে। যদি মাশরাত তার ট্রেইনার হতো অনেক কিছুই জানতে পারতো মাশরাতের সম্পর্কে। খেলতে খেলতে হঠাৎ মেহরিন পড়ে গেলো। বেশ ব্যাথা পেয়েছে হাতে। রিয়াজ দৌড়ে এসে মেহরিনরে তুলে দাঁড় করালো। মল্লিকা, মাশরাত, আধুনিক্তা ও বাকি প্লেয়াররাও দৌড়ে গেলো।
“তুমি ঠিক আছো তো?”
রিয়াজের কথায় মেহরিন কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। সবার সামনে এইভাবে ধরে রাখার মানে হয়? মেহরিন নিজেকে তারাতাড়ি ছাড়িয়ে বললো-
“হ্য..হ্যাঁ ঠিক আছি ছাড়ো আমাকে।”
মাশরাত বললো-
“তোমরা সাবধানে খেলো প্লিজ। আর ধাক্কাধাক্কি করো না। যদি কেও ব্যাথা পেয়ে যায়?”
আধুনিক্তা বললো-
“একে অপরকে ধাক্কা না দিয়েও খেলা যায়। নিজেকে প্রটেক্ট করার সাথে অন্যকেও প্রটেক্ট করা ভালো। কিন্তু এমনভাবে কেও প্রটেক্ট করো না যাতে নিজেই আঘাত পেয়ে যাও। মনে রেখো, স্বপ্ন পূরণ পথে বেশ বাঁধা আসে। যদি একবার সে বাঁধা তোমাকে বেঁধে ফেলে আর কখনো ছাড়া পাবে না।”
এইটুকু বলে আধুনিক্তা মাথা নিচু করে ফেললো। কষ্ট হচ্ছে তার খুব। মাশরাত আধুনিক্তার কথায় অবাক হলো। মেয়েটাকে তার আজব প্রকৃতির মনে হয়। মাশরাত জিজ্ঞেস করলো-
“বাস্কেটবল তুমি খেলতে পারো?”
আধুনিক্তা মাথা তুলে মাশরাতের দিকে তাকালো। একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বললো-
“জ্বী স্যার, অতীতে খেলতাম এখন আর খেলি না।”
“কিন্তু কেন?”
“আছে একটা সমস্যা। আমার জন্য বাস্কেটবল খেলা মানেই আমার জীবন নিয়ে খেলা। এনি ওয়েজ সবাই খেলা আবার শুরু করুন।”
বলেই আধুনিক্তা দ্রুত হেটে গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরলো। মাশরাত আধুনিক্তার কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারলো না। কিন্তু তার ইচ্ছে করছে মেয়েটার সম্পর্কে জানতে। কেন এই কথাটা বললো যে, বাস্কেটবল খেলা মানেই নিজের জীবন নিয়ে খেলা?
আজকের মতো প্র্যাকটিস শেষ। এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছে। মেহরিন বুঝতে দেয় নি কিন্তু সে তার বাম হাতের কনুইতে বেশ ব্যাথা পেয়েছে। আধুনিক্তার পাশে বসে কনুই ধরে রাখলো। আধুনিক্তা বললো-
“তুই খুব ব্যাথা পেয়েছিস তাই না?”
মেহরিন আধুনিক্তার দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। আধুনিক্তা মুচকি হেসে মেহরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো-
“একজন বেস্ট প্লেয়ার হতে হলে এইসব সহ্য করতে হয়। তুই চাইলে সবাইকে বলে আজ বিশ্রাম নিতে পারতি। কিন্তু না, তুই ব্যাথাকে না খেলাটাকে গুরুত্ব দিয়েছিস। তুই একদিন এই ভার্সিটির নাম্বার ওয়ান ফিমেল বাস্কেটবল প্লেয়ার হবি দেখে নিস।”
“উঁহু, তোর জায়গা কেও নিতে পারবে না মিস চ্যাম্পিয়ন।”
আধুনিক্তা থতমত খেয়ে বললো-
“তু..তুই কী করে জানলি?”
“আমি আগে খেয়াল করি নি। গতকাল অফিস রুমে সবার খাতা জমা দিতে গিয়েছিলাম তখন তোর ছবি দেখেছিলাম। তুই ৩ বছর আগে ন্যাশনাল এওয়ার্ড জিতেছিলি তাই না?”
“জিতেছিলাম, অতীত টানতে হবে না। তুই তোর চিন্তা কর এখন।”
“দোস্ত সেদিন তোর কী হয়েছিলো? প্র্যাকটিসের সময় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তোর তারপর তোকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর চেয়ারম্যান সাহেব সবাইকে বলে তুই আর কখনো খেলবি না। তুই ৬ মাস হসপিটাল ছিলি তারপর……”
আধুনিক্তা মেহরিনের মুখ হালকা করে চেপে ধরে বললো-
“মা আমার চুপ এইবার। বলবো আমি সব বলবো। এখন তুই তোর ব্যাথার দিকে মনোযোগ দে প্লিজ।”
মেহরিন কিছু বলতে যাবে তখনই পাশ থেকে রিয়াজ দৌড়ে এসে বললো-
“মেহরিন এই ঠান্ডার পানির ব্যাগটা হাতে লাগাও দেখবে আরাম লাগবে।”
মেহরিন আর আধুনিক্তা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে রিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। মেহরিন রাগান্বিত কন্ঠে বললো-
“এমন ছ্যাচরা কেন তুমি? একবার বললে শুনো না তোমার হেল্প আমার লাগবে না।”
রিয়াজ লজ্জা পেলো অচেনা এক মেয়ের সামনে এইভাবে অপমান করতে পারলো মেহরিন তাকে? আধুনিক্তা ধমকের গলায় মেহরিনকে বললো-
“কেও সাহায্য করতে আসলে এইভাবে ব্যবহার করতে হয়? তোর তো তাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।”
“ধন্যবাদ আর এই ছেলেকে? ওর কী সম্মান বলতে কিছু নেই? একটা মেয়ে যেহেতু বার বার তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে তার উচিত মেয়েটাকে আর পাত্তা না দেওয়া। এই তুমি বার বার আমার পেছনে কেন আসো হ্যাঁ?”
“ভালোবাসে তাই”
পেছন থেকে মল্লিকার কন্ঠ ভেসে আসলো। তারা তিনজন পেছনে ফিরে দেখে মল্লিকা দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে মুখে বিরক্ত ফুটে আছে। মল্লিকা দ্রুত হেটে এসে রিয়াজের সামনে দাঁড়িয়ে বললো-
“তোমাদের দুই বন্ধুর মধ্যে আকাশ জমিন পার্থক্য কেন?”
“কবির আবার কিছু বলেছে?”
আধুনিক্তা দাঁড়িয়ে বললো-
“ইয়ার তোরা কী বিষয়ে কথা বলছিস? আমি তো নতুন একটু বুঝিয়ে বল।”
“বলছি, রিয়াজের বেস্টফ্রেন্ড কবির। কবির ছেলেটা এমন অহংকারী, আমি জানলে কখনো ভালোবাসতাম না তাকে।”
আধুনিক্তা অবাক না হয়ে পারলো না। মল্লিকা কাওকে ভালোবাসে? মল্লিকা আবার বললো-
“পুরো ক্লাসের স্টুডেন্টদের সাথে আমার এমনে এমনেই ঝগড়া হয় নি। তারা সবাই বলেছিলো কবির অহংকারী, বাজে ছেলে, কারো সাথে ভালো ব্যবহার করতে জানে না। সেদিন রাগের মাথায় সবার সাথে জগড়া করেছিলাম। আর এখন বুঝতে পারলাম তারা সঠিক ছিলো। কবির সত্যি খুব অহংকারী।”
রিয়াজ বললো-
“এইভাবে বলো না। কবির একটু গম্ভীর টাইপ মানুষ৷ ওর জীবনে আমি ছাড়া আর কোনো বন্ধু নেই। আমি জানি ও অনেক ভালো মানুষ।”
“তো আমার ভালোবাসা গ্রহন করতে ওর কী সমস্যা?”
“তা আমি জানি না। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু ও কিছু বলে নি।”
মল্লিকার মন খারাপ হলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারা কথা বলে ভার্সিটি থেকে বের হলো। কবির বাইকের উপর বসে অপেক্ষা করছিলো। রিয়াজ আসতেই তারা দুজন চলে গেলো। মেহরিন আর মল্লিকা এক এলাকায় থাকে তারা দুজনও একসাথে বাসার জন্য রওয়ানা দিলো। আধুনিক্তা অপেক্ষা করছে দাদাইর৷ দাদাই আসবে তাকে নিতে। হঠাৎ কেও বলে উঠলো-
“তোমার নাম জানতে পারি?”
আধুনিক্তা চমকে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মাশরাত পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক্তা নড়েচড়ে বললো-
“আধুনিক্তা মজুমদার।”
“আধুনিক্তা, এইটা কেমন নাম জানতে পারি?”
“এইটা ভিন্ন দেশীয় নাম।”
“হুম বুঝলাম, বাস্কেটবল ছাড়ার কারণ কী?”
“আছে একটা কারণ”
“কারণটাই তো জানতে চাই।”
“আমার হার্টে সমস্যা আছে। বাস্কেটবল খেললে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। যদি চাপ সৃষ্টি হয় আমি মরে যাবো।”
“তুমি অনেক ভালো খেলোয়াড় ছিলে। আমি তোমার ছবি দেখেছিলাম অফিস-রুমে। ন্যাশনাল এওয়ার্ড জিতেছিলে।”
আধুনিক্তা জবাবে মুচকি হাসলো। মাশরাত ধীরপায়ে হেটে এসে আধুনিক্তার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বললো-
“জীবনের সব স্বপ্ন আশা পূরণ হয় না। তুমি এর জন্য মন খারাপ করো না। তোমার স্বপ্ন পূরণ করবে তোমার ভবিষ্যতের সন্তান দেখে নিও। আমার বাবারও স্বপ্ন ছিলো বাস্কেটবল প্লেয়ার হওয়ার কিন্তু আমার দাদা চাইতেন বাবা আর্মি হোক। তাই আব্বু পারে নি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে। আব্বুর স্বপ্ন যেমন আমি পূরণ করেছি। তোমার স্বপ্ন তোমার সন্তান পূরণ করবে।”
আধুনিক্তা মুগ্ধ হলো মাশরাতের কথা শুনে। বেশ সুন্দর করে মাশরাত বুঝাতে পারে। মাশরাত মুচকি হেসে বললো-
“আজ আসি, আগামীকাল দেখা হবে ইন শাহ আল্লাহ।”
“জ্বী স্যার”
মাশরাত হেটে চলে গেলো। আধুনিক্তা তাকিয়ে আছে মাশরাতের যাওয়ার পথে। হঠাৎ মাশরাত দাঁড়িয়ে গেলো। কী যেনো ভেবে আবার পেছনে ফিরলো। আধুনিক্তা পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাশরাতের বরাবরই অপছন্দ হলো বিষয়টা। এইভাবে তাকানোর মানে হয় না। আধুনিক্তার চোখদুটোকে মাশরাত ভীষণ ভয় পেলো। কারণ মাশরাত জানে বেশীক্ষণ এই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে মাশরাত মোহে ডুবে যাবে।
চলবে……..
[যারা যারা নাম বুঝতে পারেন নি তাদের জন্য উচ্চারণ পরিবর্তন করলাম। আবার বলছি নায়িকার নাম Adhunikota না। কারণ আমি জানি এই নাম মানুষের হয় না? “আধুনিক্তা” নায়িকার নাম। কিন্তু এই শব্দটা ভুল তাই আমি আধুনিকতা লিখেছিলাম। আশা করছি এখন সবাই বুঝতে পেরেছেন। ভুল ক্রুটি ধরিয়ে দিবেন প্লিজ❤️❤️]