#না_চাওয়া_পূর্ণতা ?
লেখক : সানজিতা আক্তার মীম
পর্ব : ০৭
সায়ন তনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি রাখলো। তনু রীতিমতো কাঁপতে লাগলো। তনু চোখ বন্ধ করে শাড়ির আচল শক্ত করে ধরে আছে। হঠাৎ তনুর এই ৫ বছরে হওয়া প্রতিটি কষ্টের মূহুর্ত গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে৷ তনু নিজেকে সায়ন এর কাছে থেকে ছাড়িয়ে সায়ন এর গালে চর মেরে দিল। সায়ন গালে হাত দিয়ে তনুর দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।
তনু : কি পেয়েছো আমাকে? হ্যাঁ,আমাকে কি মনে হয় তোমার? যখন ইচ্ছে হবে কাছে টেনে নিবে আর যখন ইচ্ছে নিজের জীবন থেকে তারিয়ে দিবে। আমাকে কি মানুষ মনে হয় না। আমি কি কোনো খেলনা? ৫ বছর পর আবার আমার কাছে আসার মানে টা কি? আমি তো তোমার কাছে নিজের বা আমার মেয়ের অধিকার নিতে যাই নি তাহলে কেন আমার পিছনে লেগে আছো। আমাকে ৫ টা বছর কষ্ট দিয়ে কি শান্তি পাও নি, তাই আবার এসেছো কষ্ট দিতে। তখন একা ছিলাম তাই মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু তোমার জন্য আমি আমার মেয়েকে কোনো কষ্ট পেতে দিব না। ( তনু কথা গুলো বলছিল আর কান্না করছিল)
সায়ন শুধু তনুর বলা কথা গুলো শুনছিল। তনুর প্রতিটি কথায় সায়নের মনে দাগ কেটে গেছে তবুও একটা শব্দ বের করে নি মুখ থেকে। কারণ তনুর বলা প্রতিটি কথা সঠিক আর ওর জায়গায় ও ঠিক। সায়ন এর চোখ অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে আর ছলছল করছে যেন এখনি পানি গড়িয়ে পড়বে। তার আগেই ও বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
তনু সায়ন এর চোখের দিক তাকিয়ে দেখলো সায়ন এর চোখ লাল হয়ে আছে যেন চোখের জল আটকে রাখার চেষ্টা করছে। সায়ন বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই তনু ফ্লোরে বসে পড়ল আর কান্না করতে লাগলো।
তনু : সরি, সায়ন। আমি চাই নি তোমাকে মারতে। তুমি কেন এলে না ওই দিন। সমস্যা ছিল আমাকে বলতে পারতে কিন্তু তুমি বলো নি। আমাকে মাঝ পথে ছেড়ে দিয়েছো৷ তুমি তো জানতে আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসতাম ৷ যেখানে তোমাকে ছেড়ে বাঁচার কথা ভাবতে পারি না সেখানে ৫ টা বছর তোমার অনুপস্থিতিতে কাটিয়েছি অন্তুর জন্য। আমি চাই না আবার কষ্ট পেতে। ভালোবাসতাম এখন আর না। আমি চাই না তোমাকে। চাই না। ( কান্না করতে করতে তনু জ্ঞান হারিয়ে ওইখানেই পরে থাকে।)
সায়ন রাস্তায় হাটছিলো আর তনুর বলা কথাগুলো ভাবছিলো। ওই দিন যদি একবার তনুকে সব জানাতো তাহলে হয়তো ওরা এক সাথে হতো। আজ সামনে থেকেও ও কতটা দূরে। যদিও তনু আর সায়ন অনেক আগেই বিয়ে করে ফেলেছিল। যে দিন পালিয়েছে তারও ৪ মাস আগে ওরা বিয়ে করেছে। সায়ন ভাবছে তনু ওর বউ হওয়া সত্বেও আজ ও অধিকার খাটিয়ে বলতে পারছে না যে চল আমরা আবার নতুন করে সবটা শুরু করি। নিজের ভুলের জন্যই আজ এমন পরিস্থিতি। এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে এলো।
রুমে ঢুকে দেখলো তনু খাটে নেই। সায়ন খাটের ওপর পাশে এসে দেখে তনু ফ্লোরে পরে আছে। সায়ন জলদি করে তনুকে কোলে তুলে নিল। তারপর খাটে শুইয়ে দিল। দেখলো তনুর অনেক জ্বর। তাই দৌড়ে যেয়ে পানি নিয়ে এলো। তনুর মাথায় জল পট্টি করতে লাগল। মাঝ রাতের দিকে জ্বর কিছুটা কমে যায়। সায়ন এক হাতে তনুর মাথায় হাত বুলাতে থাকে আর এক হাতে তনুর হাত ধরে আছে। এভাবে বসে থেকেই সায়ন ঘুমিয়ে পরে সকালের দিকে।
In morning,,,
তনুর ঘুম ভাংগে রোদের আলো চোখে পরায়। চোখ খুলে ও পাশে তাকিয়ে দেখে অন্তু বসে বসে সায়ন এর ফোনে গেমস খেলছে। সায়ন কোথায় ভাবতে ভাবতে পাশ ফিরে দেখে সায়ন ওর মাথার সামনে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে । সায়ন এর এক হাত তনুর মাথায় আর এক হাতে তনুর হাত। তনু আস্তে করে উঠে বসলো। অন্তু তনুকে উঠতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,,
অন্তু : মাম্মাম, এখন কেমন লাগছে?
তনু : কেন আমার কি হয়েছে? (অবাক হয়ে)
অন্তু : তোমার অনেক জ্বর হয়েছিল তুমি অজ্ঞান হয়ে ছিলে। বাবাই সারারাত তোমার খেয়াল রেখেছে। একটু আগেই ঘুমিয়েছে। ওওও আবার রাতে আমাকে নুডলস রান্না করে খাইয়েছে আমার খুধা লেগেছিল তাই। জানো মাম্মাম বাবাই অনেক মজা করে রান্না করে। ( খুশি হয়ে)
তনু : হুম এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। যাও।
অন্তু : ওকে মাম্মাম।
অন্তু এতো জোড়ে ওকে বলায় সায়ন লাফ দিয়ে উঠে বসে। তনুকে বসে থাকতে দেখে সায়ন তনুর গালে কপালে হাত দিয়ে চেক করতে লাগলো জ্বর আছে কি না।
সায়ন : এখন কেমন লাগছে বল? ( চিন্তিত হয়ে)
তনু : ঠিক আছি। সারারাত ঘুমাও নি তাই শুয়ে পরো। পরে তো বলবে যে আমার সেবা করে অসুস্থ হয়ে গেছো। ( বলে তনু ৎঠে চলে গেল)
সায়ন : তুমি বুঝবা না আমাকে। হুহ। ( একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুয়ে পরলো)
সায়ন ঘুমিয়ে পরলো। আর তনু ঘরের কাজ শেষ করে নাস্তা করে টেবিলে রেখে দিল।
তনু : অন্তু যাও বাবাইকে ডেকে তুলো। নাস্তা করবে।
অন্তু : ওকে।
অন্তু এসে দেখে সায়ন ঘুমায়। অন্তু খাটে উঠে সায়ন এর পেটের ওপর বসে সায়নকে ডাকতে লাগলো।
অন্তু : বাবাই উঠো। মাম্মাম ডাকছে। বাবাইইইইই ( চিৎকার করে)
সায়ন অন্তুর চিৎকার শুনে চোখ খুলে। তাকিয়ে দেখে অন্তু ওর ওপর বসে আছে একদম তনুর ডুবলিকেট। সায়ন ঘুমালে তনু এমন করতো।
ফ্লাসবেক,,,,
তনু, সায়ন আজ একটা ট্রিপে যাওয়ার কথা কিন্তু সায়ন এর খবর নাই ফোনও তুলছে না।তাই তনু সায়নদের বাসায় গেল। বাসায় ঢুকতেই দেখলো সায়নের মা সোফায় বসে।
তনু : আসসালামু আলাইকুম, আন্টি।
সায়নের মা : ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো মা?
তনু : ভালো না আন্টি। ওই সায়ন আর ভালো থাকতে দিলো কই,ও কোথায় আন্টি?
সায়নের মা : ও এখনো ঘুমায়। ওপরে যেয়ে দেখ।
তনু দৌড়ে ওপরে চলে এলো। সায়ন এর রুমে ঢুকে দেখে সায়ন সোজা হয়ে ঘুমিয়ে আছে। তনু লাফ দিয়ে খাটে উঠে সায়ন এর পেটের ওপর বসে পরলো।
সায়ন : ও আল্লাহ, সকাল সকাল হাতি আসলো কোথা থেকে ( ব্যাথায়)
তনু : ওই তুই আমাকে হাতি বললি কেন? ( রেগে)
সায়ন : আরে মেরি জান তুমি!!!! ( ভয়ে ভয়ে)
#চলবে