না_চাওয়া_পূর্ণতা পর্ব : ০৬

0
2305

#না_চাওয়া_পূর্ণতা ?
লেখক : সানজিতা আক্তার মীম
পর্ব : ০৬

সায়ন রুমে ঢুকেই সোফায় বসে পরলো অন্তুকে নিয়ে।
অন্তু : বাবাই তুমি আমাদের সাথেই থাকবে এখন থেকে?
তনু : কোনো থাকা থাকি নেই। বের হও আমার বাসা থেকে ( রেগে সায়নকে বললো)
সায়ন : তোমার মাম্মাম আমার ওপর ভিষণ রেগে আছে তাই তুমি রুমে যাও আমি মাম্মাম এর রাগ ভাঙাই। ( অন্তুর কানে ফিসফিস করে বললো)
অন্তু : ওকে বাবাই ( বলে সায়ন এর গালে চুমু দিয়ে চলে গেল)
তনু : এই তুমি এখনো বসে আছ কেন, যাও এখান থেকে। তোমাকে আমি বলেছিলাম যে আমার আর আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকো। ( রেগে)

সায়ন উঠে তনুর সামনে দাড়ালো। তারপর তনুর সামনে আসা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিতে দিতে বলতে শুরু করলো,,
সায়ন : আগেও বলেছি ও আমাদের মেয়ে আর আমি মানছি আমার সব ভুল। তাই বলে সরিও তো বললাম। তুমি যা শাস্তি দিবে তা মেনে নিব। তাহলে কেন এমন করছো। ( নরম স্বরে)
তনু : তাহলে আমার জীবনের সেই ৫ টা বছর আমাকে ফিরিয়ে দাও। পারবে? পারবে সেই ৫ টা বছর আমাকে ফিরিয়ে দিতে? ( চিৎকার করে)
সায়ন : তুমি যান এটা আমি পারবো না। ( ছলছল চোখে তনুর দিকে তাকিয়ে)
তনু : তাহলে আমাদের থেকে দূরে থাকো।
সায়ন আচমকা তনুর কোমর জড়িয়ে নিজের দিকে টেনে নিল। তনু ছুটার চেষ্টা করছে কিন্তু সায়ন এর সাথে পেরে উঠচ্ছে না।
তনু : ছাড় আমাকে। আমাকে স্পর্শ করার সাহস কি করে হয়! কোন অধিকার থেকে আমাকে ছুঁয়েছো। ছাড়।

সায়ন তনুকে আরও কাছে টেনে নিল তারপর তনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা বলতে লাগলো যার কারনে সায়ন এর ঠোঁট বার বার তনুর কানকে স্পর্শ করছে আর তনু কেঁপে কেঁপে উঠছে।
সায়ন : তোমার ওপর সবচেয়ে বেশি কারও অধিকার থেকে থাকলে তা শুধু আমার আছে তুমি তা ভালো করেই জানো মেরি জান। ( বলে কানে একটা চুমু খেল)

সায়ন তনুকে ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে গেল অন্তুর কাছে। অন্তু সায়ন কে দেখে সায়ন এর কোলে উঠলো।
সায়ন : তা আমার মামনি টা কি বাবাই এর সাথে ঘুরতে যেতে ইচ্ছুক?
অন্তু : ইয়েএএএএএএ!! চল বাবাই। ( খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো)
সায়ন : ওকে চলো।

সায়ন আর অন্তু ড্রইং রুমে এসে তনুর সামনে দাড়ালো। তা দেখে তনু ভ্রু কুচকালো যার অর্থ হলো কি?
সায়ন : তুমি কি যাবা আমাদের সাথে?
তনু : আমাকে না জানিয়ে ওকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার প্লেন তুমি কোন সাহসে করলে? ( রেগে)
সায়ন : তখন এর মতো মনে করিয়ে দিতে হবে নাকি ( বলে চোখ মারলো)
তনু সায়ন এর চোখ মারা দেখে রেগে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
সায়ন : কি হলো যাবা নাকি এই ভাবে ঢং করে বসে থাকবা? ( বিরক্ত হয়ে)
তনু : কি বললা তুমি!! আমি ঢং করছি? ( রেগে ফায়ার)
সায়ন : জান তুমি কানেও কম শুনো? হায় আল্লাহ এখন এই বুড়িকে নিয়ে সংসার কেমনে করি ( কষ্ট পাওয়ার ভাব করে)
তনু : আমি বুড়ি।।।।। দাড়াও আজ তোমার একদিন কি আমার যতদিন লাগে ( বলে মারার জন্য সায়ন এর পিছনে ছুটলো)

এদিকে অন্তু বাবা-মা এর এমন কান্ড দেখে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর তনু সায়নকে ধরার জন্য পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে। সায়ন কে ধরে যেই মারতে যাবে তার আগেই তনু শাড়ির সাথে পা লেগে সায়নকে নিয়ে নিচে পড়ে গেল। সায়ন উপরে আর তনু নিচে। সায়ন অপলক দৃষ্টিতে তনুকে দেখছে। আর তনুও। তনুর মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিল সায়ন। তনু হালকা কেঁপে উঠল। সায়ন তারপর যা করলো তা তনুর চিন্তার বাইরে ছিল।
সায়ন হুট করেই তনুর ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে দিল। তনু ছুটার জন্য কিল ঘুসি দিতে লাগলো তাই সায়ন নিজের হাত দিয়ে তনুর হাত আটকে ধরলো। কিছুক্ষণ পর তনুকে ছেড়ে দিয়ে তনুর কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে হাঁপাতে লাগলো। তনুও যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।আর একটু হলে দম বন্ধ হয়ে যেত। সায়ন উঠে গেল।
সায়ন : নিচে অপেক্ষা করছি ৫ মিনিট এর মধ্যে আসো। ( বলে বেরিয়ে গেল)

তনু ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। সায়ন মাত্র কি করে গেল এটা। তনুতো রেগে ফায়ার। তারপর অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুম লক করে বেরিয়ে গেল৷ নিচে এসে দেখে সানগ্লাস লাগিয়ে মেয়ের এক হাত ধরে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। এরে দেখে কেউ বলবে যে তার ৫ বছরের একটা বাচ্চা আছে। তনু এসব ভাবতে ভাবতে ওদের সামনে গেল।
সায়ন তনুকে দেখে গাড়ির দরজা খুলে দিল সামনের সিটের। তনু মুখ ভেংচি দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। সায়ন অন্তুকে সহ ড্রাইভিং সিটে বসলো। অন্তু তো খুশির ঠেলায় বাবাই ছাড়া কোনো দিকে খেয়ালই করছে না।সাথে যে তনু আছে তা যেন সায়ন আর অন্তু জানেই না। তনু তা নিয়ে রাগ না হয়ে অন্তুকে দেখছে। আজ অন্তু সায়নকে পেয়ে কত খুশি। মেয়ের খুশি দেখে তনুর মন ভালো হয়ে গেল কিন্তু ও সায়নকে মাফ করেনি।

সারা বিকেল ঘুড়লো ওরা একটা পার্কে তারপর একটা cafee তে ঢুকলো।
সায়ন : আমার প্রিন্সেস কি খাবে?
অন্তু : আইসক্রিম!!
তনু : নাহ, ঠান্ডা লাগবে। অন্য কিছু খাও।
অন্তু : না আমি আইসক্রিমই খাব।
তনু : একটা থাপ্পড় লাগাবো।
অন্তু কান্না করে দিল। তারপর সায়নকে বলতে লাগলো,,
অন্তু : দেখলে বাবাই, মাম্মাম আমাকে একটুও ভালোবাসে না। আমি আইসক্রিমই খাবো।
সায়ন : তোমার ভালোর জন্যই তো বললো। তুমি তো আমাদের লক্ষী প্রিন্সেস তাই মাম্মাম এর কথা মেনে নেও, প্লিজ।
অন্তু : ঠিক আছে বাবাই। শুধু তুমি বলেছ তাই খাবো না। ( বলে তনুকে ভেংচি দিল)
তনু তো অন্তুর কাজ দেখে অবাক। কি মেয়ে! বাবাকে পেয়ে মাকে ভুলে গেল।
সায়ন সবার জন্য ওর্ডার করলো তারপর খেয়ে বাসায় চলে এলো সবাই।
বাসায় এসে আগে সায়ন ফ্রেশ হয়ে অন্তুকে ফ্রেশ করালো। তারপর তনু গেলো ফ্রেশ হতে। অন্তু ক্লান্ত হওয়ার কারনে ঘুমিয়ে পরলো। তনু একদম গোসল করে বের হলো। তনু বের হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুচ্ছিলো আর এদিকে সায়ন তনুকে এমন লুকে দেখে অদ্ভুত ঘোড়ে চলে গেছে। সায়ন উঠে আস্তে আস্তে তনুর পিছনে গিয়ে দাড়ালো। তনুর চুল থেকে পানি পরে তনুর পিঠে আর কোমরে জমে আছে। তনু নিজের পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পিছনে ঘুরতে নিলে সায়ন তনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here