না_চাওয়া_পূর্ণতা পর্ব : ০৫

0
2521

#না_চাওয়া_পূর্ণতা ?
লেখক : সানজিতা আক্তার মীম
পর্ব : ০৫

সায়ন অফিস রুমে যেয়ে অন্তুর পাশে বসে পরলো। অন্তু ক্লাস করছিল তাই কথা বলে নি। ক্লাস শেষে পাশ ফিরতেই সায়নকে দেখে কথা বলল,

অন্তু : আরে আঙ্কেল, আপনি! ( খুশি হয়ে)
সায়ন : আচ্ছা তোমার নাম যেন কি বলেছিলে?
অন্তু : অন্তু রায়জাদা।
সায়ন : তোমার বাবা কোথায়?

সায়ন খেয়াল করলো বাবার কথা জিজ্ঞেস করাতে অন্তুর মন খারাপ হয়ে গেছে। অন্তু মন খারাপ করেই উত্তর দিল।

অন্তু : আমি বাবাই কে কখনো দেখি নি। মাম্মাম বলেছে বাবাই একটা সিক্রেট মিশনে গেছে আমি স্কুলে ভর্তি হলে চলে আসবে। আমি গতকাল স্কুলে ভর্তি হয়েছি কিন্তু বাবাই আসে নি। ( মন খারাপ করে)
সায়ন : তুমি কি জানো তোমার বাবার নাম কি? ( আগ্রহ নিয়ে)
অন্তু : এটা কোনো কথা হলো। বাবাই এর নাম কেন জানবো না।
সায়ন : হুম তাই তো। আচ্ছা বলো,,,
অন্তু : সায়ন রায়জাদা
সায়ন অন্তুর বাবার নাম শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। অন্তু সায়ন আর তনুর মেয়ে। তাহলে কি তনু এই বাচ্চার জন্য আর বাড়ি ফিরে যায় নি!!
সায়ন নিজের ভাবনা ছেড়ে অন্তুকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমু দিতে লাগলো অন্তুর গালে, কপালে।
অন্তু : আঙ্কেল কি হলো তুমি আমাকে চুমু দিচ্ছেন কেন?
সায়ন : আঙ্কেল না আমি তোমার বাবাই বেবি। আমি ফিরে এসেছি।
অন্তু : সত্যি তুমি আমার বাবাই? ( খুশি হয়ে)
সায়ন : হুম সত্যি বলছি আমি তোমার বাবাই।
নিজের বাবাইকে পেয়ে অন্তু সাথে সাথে সায়নকে জড়িয়ে ধরলো। আর জমানো সব কথা বলতে শুরু করলো,,
অন্তু : জানো বাবাই তুমি অনেক পঁচা। আমি তোমার জন্য কতো কান্না করেছি, সবাই জিজ্ঞেস করতো আমার বাবাই কোথায় কিন্তু আমি বলতে পারতাম না, মাম্মাম অনেক কান্না করতো আমি ঘুমিয়ে পরলে মাম্মাম ভাবতো আমি ঘুমিয়ে কিন্তু আমি সব দেখতাম। তুমি কেন চলে এলে না আগে। তোমার সাথে একটুও কথা বলবো না আমি আর মাম্মাম।( রাগ করে অন্য দিক ঘুরে দাড়ালো অন্তু)

সায়ন মেয়ের কথা শুনে বুঝতে পেরেছে ঠিক কতোটা কষ্ট করেছে তনু। কতোটা অভিমান করে আছে সায়ন এর প্রতি। হয়তো সায়নকে ঘৃণা করে কিন্তু মেয়ের কাছে সায়নের ইমেজ খারাপ করেনি যা থেকে বুঝা যায় এখনো মনের কোনো এক জায়গায় তনু সায়নকে ভালোবাসে। আর সায়ন সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে আনবেই যত কষ্টই হোক।
কিছু একটা ভেবে সায়ন অন্তুকে সব বুঝিয়ে বললো। অন্তুও সায়ন এর কথায় রাজি হয়ে গেল।
সায়ন অন্তুর গালে চুমু দিয়ে অফিস রুম থেকে বেরিয়ে গেল তনুর ক্লাসের উদ্দেশ্যে।

তনু সবে মাত্র ক্লাস শেষে বাইরে বের হতে যাচ্ছিলো এমন সময় সায়ন রুমে আসলো। সায়নকে দেখে তনু চলে যেতে নিলে সায়ন তনুর হাত চেপে ধরলো।

তনু : হাত ছাড়েন। ( শান্ত কন্ঠে)
সায়ন : আমার কিছু বলার আছে। ৫ মিনিট সময় দাও৷
তনু : আমি কিছু শুনতে চাই না তাই হাতটা ছাড়েন আমার কাজ আছে। ( হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে)
সায়ন : তনু তুমি ভালো করে জানো আমার সাথে পেরে উঠবা না তাহলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করছো কেন?
তনু : হাত ছাড়ুন। তারপর বলেন কি বলতে চান। ( রেগে)
সায়ন : ওকে, বস এখানে।

তনু একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। সায়নও তনুর বরাবর একটি চেয়ার টেনে বসে পরলো।
সায়ন : কেমন আছো? ( তনুর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে)
তনু : আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। আপনি আশেপাশে না থাকলে আরও ভালো থাকবো। ( ঝাঁঝালো কণ্ঠে)
সায়ন : আমাকে জিজ্ঞেস করবে না, আমি কেমন আছি?
তনু : আমি জানতে চাই না। ( মুখ শক্ত করে)
সায়ন : আমার বলতে ইচ্ছে হলো তাই বলছি, তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো ছিলাম না। ওই দিন স্টেশনে আসার সময় বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছে যার কারনে বাবা প্যারালাইজ্ড হয়ে গেছে। তাই আমি বাবাকে ছেড়ে আসতে পারি নি। আমি ভেবেছি তুমি বাড়ি ফিরে বিয়ে করে ফেলেছো তাই আর খোজঁ নেই নি। নিজেকে ২ মাস ঘর বন্দী করে রেখেছিলাম তারপর বাবার বিজনেস সামলাতে লাগলাম। বাবা এখন সুস্থ ৩ মাস হলো। আমি জানি আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি। প্লিজ তনু আমাকে ক্ষমা করে দেও। প্লিজ। ( বলে তনুর হাত ধরে তনুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো)

তনু : বলা শেষ আপনার? এবার আমি আশি৷ আমার মেয়ে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। ( বলে চলে আসছিল সায়ন এর বলা কথায় দাড়িয়ে গেল)
সায়ন : আমাদের মেয়ে।
তনু : কোন আমাদের কথা বলছেন? ও শুধু আমার মেয়ে। কোন অধিকার থেকে নিজেকে বাবা দাবি করছেন? যখন খুব দরকার ছিল কোথায় ছিল এই বাবা, যখন মৃত্যুর সাথে লরছিলাম কোথায় ছিলেন? ওই সময়টাতে খুব করে দরকার ছিল কারও হাত এর কারও ভরসার কিন্তু তখন কেউ ছিল না। একা একা সব সহ্য করেছি। সমাজে বাবা ছাড়া একটা সন্তান নিয়ে বাঁচা কতোটা কঠিন তা আপনি হয়তো বুঝবেন না কিন্তু আমি সবকিছু অতিক্রম করে এসেছি। মেয়েকে কোনোকিছুর অভাব পরতে দেই নি। ও শুধু আমার মেয়ে আপনি না। তাই আমাদের থেকে দূরে থাকাটাই আপনার জন্য ভালো। ( বলে তনু চলে গেল)

সায়ন ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। তনুর বলা প্রতিটি কথা সত্য। তনুর প্রতিটা কথা সায়ন এর বুকে ছুড়ি চালাচ্ছিল। সায়ন বুঝে গেছে তনু অনেক অভিমান করে আছে। সায়ন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল,,
সায়ন: আর কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। সব ঠিক করেই ছাড়বো। i promise you tonu.

বলে সায়ন বাড়িতে চলে এলো। আর তনুও অন্তুকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছে। তনু অন্তুকে পড়াচ্ছিল এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। অন্তুকে কোলে নিয়ে দরজা খুলে দিল তনু। দরজার বাইরে থাকা ব্যক্তিকে দেখে তনুতো রেগে ফায়ার।
তনু : আপনি এখানে কেন? তাও লাগেজ নিয়ে।
সায়ন : তাহলে কোথায় আসবো আজব। নিজের বউ বাচ্চার কাছে না এসে কি পাশের বাসায় যাব নাকি।
তনু তো রেগে ফায়ার সায়ন এর কথা শুনে।
সায়ন : কি হলো আসতে দিবে না নাকি বাইরেই দাড়িয়ে থাকবো? বেবি কোলে আসো।
অন্তু লাফ দিয়ে সায়ন এর কোলে যেয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো।
তনু : এই তুমি তার কোলে গেলে কেন? নামো জলদি।
অন্তু : বাবাই দেখো মাম্মাম আমাকে বকা দিচ্ছে। ( বলে সায়নকে আবার জড়িয়ে ধরলো)
সায়ন তনুকে পাস করে রুমে ঢুকে পরলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here