বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩৪

0
1318

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩৪
#আনিশা_সাবিহা

তিনদিন ও তিন রাত কোন দিক দিয়ে কেটে গেল অভয় টেরই পেলো না। এই কয়টা দিন সে অত্যন্ত ব্যস্ততার মাঝে কাটিয়েছে। বসে বসে দম ফেলার মতোও সময় পায়নি সে। একটা বড় বিখ্যাত কোম্পানির সাথে তাদের বিজনেস ডিল হওয়ার কথা। ডিল যদি না হয় তবে তাদের ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। সেই কারণেই অভয়ের এতো পরিশ্রম। তবে অভয় একটা ব্যাপারে ভীষণই খুশি। সেটা হলো ঐশানী আর তার সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। ঐশানী আর দূরে ঠেলে দেয় না অভয়কে। এটা অভয়ের কাছে স্বপ্নের মতো।

দুপুরবেলা খেয়ে এসে সবে বই নিয়ে বসেছে ঐশানী। সামনে পরিক্ষা! পড়াশোনা বিয়ের কারণে কিছুই হয়নি। যদিও সে আহামরি কোনো স্টুডেন্ট না। মোটামুটি বলা যায়। বইটা খুলতেই মনে আসে অভয়ের কথা। বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে চোখে ভাসতে থাকে অভয়ের প্রতিচ্ছবি। মনটা প্রশ্ন করে….
–“আচ্ছা শ্যামলা ঘোড়া দুপুরের খাবার খেয়েছেন?”
বিষয়টা ভাবার পর সে অসহায় ভঙ্গিতে বিড়বিড় করে বলে…..
–“ঐশানী, তুই তো আগে আগে খেয়ে নিলি। মানুষটা দিনরাত খেটে চলেছেন। ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করে কি না তার তো খোঁজ নেওয়া উচিত! তুই মাছ বিক্রেতা মানে সেলফিশ-ই রয়ে গেলি। যদিও আমি খুব মহৎ মনের।

বইটা ঠাস করে বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় ঐশানী। ফোন খুঁজতে খুঁজতে বালিশের পাশে ফোন পেয়ে হাতে নেয় সে। তৎক্ষনাৎ খেয়াল করে তারই ফোনটা বাজছে। তাও আবার আননোন নম্বর! অভয়ের নম্বর সে শ্যামলা ঘোড়া দিয়ে সেভ করেছে তার মনে আছে। তবে এটা কার নম্বর? আগপাছ ভাবতে ভাবতে ফোনটা রিসিভড করেই বসে ঐশানী।
–“হ্যালো! কে বলছেন?”
–“হ্যালো! এটা কি মিসেস. ঐশানী খানের নম্বর?”
ঐশানী অবাক হয় তার নাম শুনে। তার থেকে বেশি অবাক হয় মেয়েলি কন্ঠ শুনে। কন্ঠ টা তার কাছে অপরিচিত আবার পরিচিতও!

–“কে আপনি? চিনলাম না তো?”
–“না চেনাই স্বাভাবিক। আমাকে মনে রেখে আর কি হবে? তোমার স্বামীই তো আমাকে ভুলে গেছে। তুমি আর কেন মনে রাখবে?”
ঐশানীর চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে। মেয়েটা কে? এতো হেয়ালি করছে কেন? অদ্ভুত! তবুও নম্রভাবে সে জিজ্ঞেসা করল….
–“হেয়ালি না করে একটু পরিষ্কার করে যদি বলে দিতেন আপনি পরিচায় তাহলে ভালো হতো।”
ওপাশের মেয়েটা থেমে থেমে বলে ওঠে….
–“আমি সায়রা। সেই সায়রা যার সঙ্গে অভয়ের সম্পর্ক ছিল।”

ঐশানীর বুকটা অজান্তেই ধক করে ওঠে। মেয়েটা এখানে কেন ফোন করেছে? আর ওর নম্বরটাই বা কোথায় পেলো? ও কি অভয়কে আবার কেঁড়ে নিতে কল করেছে? ঐশানী বিশ্বাস করে অভয় একমাত্র তার। আর কারো নয়। এখন কি সায়রা আবারও অভয়কে ফিরে পেতে চায়? যদি চায় তাহলে ঐশানী কি বলবে? ফিরিয়ে দেবে? এটা আদোও সম্ভব?
–“কি হলো? কথা বন্ধ হয়ে গেল আমার নাম শুনেই?”
–“তুমি আমার কাছে এমন কোনো ভয়ের বস্তু নও যে নাম শুনেই আমার কথা বন্ধ হয়ে যাবে।”

নিজেকে সামলে কাঠকাঠ গলায় বলল ঐশানী। ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ এলো। হাসির শব্দটা ঐশানীকে যেন বলে দিল সায়রা তাকে বিদ্রুপ করছে। ঐশানী চোয়াল শক্ত করে বলল….
–“আমাকে কেন ফোন করেছো জানতে পারি? কি দরকার আমার সাথে তোমার? আর আমার নম্বরই বা তুমি কোথা থেকে পেলে?

–“পেয়েছি কোথাও থেকে।”
–“কি বলতে চাও তুমি?”
–“তুমি কি জানো? আমি অভয়কে ভালোবাসতাম। এখনো ভালোবাসি।”
ঐশানী দম ফেলতে পারে না। অন্য নারী তার স্বামীকে ভালোবাসার কথা তারই সামনে বলছে। ব্যাপারটা হৃদয়ে ঝড় তুলতে যথেষ্ট। কিন্তু ঐশানী নিজে সায়রাকে এই সুযোগ দিয়েছে। কেননা, সে চেয়েছিল সায়রাকে অভয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে। শ্বাসরুদ্ধকর কন্ঠে বলল….
–“তুমি উনাকে ভালোবাসো নাকি ঘৃণা করো এটা আমায় জানিয়ে কোনো লাভ নেই সায়রা। তুমি যাকে ভালোবাসো সেই মানুষটা যদি তোমায় ভালো না বাসে তাহলে আমার এসব জেনে কি লাভ?”
–“না না। ও আমায় ভালোবাসতো। খুব ভালোবাসতো। কিন্তু তুমি এলে! আমার ভালোবাসায় ভাগ বসালে।”

পাগলের মতো প্রলাপ বকে গেল সায়রা। তার কন্ঠে কান্নাসুর। ঐশানীর ভালো লাগল না কান্নাসুর শুনে। ঢক গিলে বলল….
–“এটা অসম্ভব সায়রা। ভালোবাসতো, ভালোবাসতাম বলে কোনো ওয়ার্ড হয় না। উনি যদি তোমায় ভালোবাসে থাকেন তাহলে তোমায় চিরজীবনের জন্যই ভালোবাসবে। তাছাড়া আমি তোমাদের নিজে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।”
–“তাহলে এখন কেন চাইছো না আমাদের মিলিয়ে দিতে? বলো বলো!”
অস্থির কন্ঠে বলে উঠল সায়রা। ঐশানী বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকে। সেই সময় আর এই সময়টা আলাদা! ওই পরিস্থিতিতে ও নিজের অতীতকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল আর আজ সে অভয়কে আঁকড়ে ধরতে চায়। তাহলে কি করে পারবে ওর সঙ্গে মিলিয়ে দিতে অভয়কে?

ঐশানী অস্ফুটস্বরে বলে….
–“কারণ অভয় চান না তোমার সাথে থাকতে। এতে আমার কি করণীয়?”
–“বাহানা বানিয়ো না ঐশানী। আসল কারণ তো এটাই যে, তুমি অভয়ের সাথে থাকতে চাও।”
–“হ্যাঁ তো? আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমরা একে ওপরের সঙ্গে থাকতে চাইব এটা কি স্বাভাবিক নয়?”
কথাগুলো বলে ঐশানীর মনে হলো সে স্বার্থপরতা করছে। এক মূহুর্তে আবারও তার ধারণা পাল্টে গেল। নিজের মানুষকে নিজের করতে কীসের স্বার্থপরতা? ওপাশ থেকে কান্নার সুরটা আরো প্রগাঢ় হলো।

–“বিলিভ মি ঐশানী! এই কয়টা দিন আমি অভয়কে ভুলতে চেষ্টা করেই গেছি। কিন্তু যত ভুলতে চেষ্টা করেছি ততই ওর কথা মনে পড়েছে। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। প্রতি মূহুর্তে আমি এই কামনা করি তোমাদের বিচ্ছেদ ঘটুক। হয়ত এই কথা শুনে তোমরা রাগ লাগছে। কিন্তু এটাই সত্যি। আমি সবসময় চাই তুমি চলে যাও। কিন্তু আমার উইশ পূরণ হয় না। এমন চলতে থাকলে আমি নিজেকে শেষ করে দেব। কেউ বাঁচাতে পারবে না আমাকে।”
ঐশানী নিজেও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। দোটানায় ভুগতে ভুগতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে তার। হঠাৎ করেই ইশানের মাথায় আসতেই ঢক গিলে বলল….

–“তাহলে ইশানের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?”
–“ইশান? ও আমার বন্ধু। আমাকে সবসময় হাসিখুশি চেষ্টা করেছে। এর মাঝে যেই দুইবার ওর সাথে দেখা করেছি সেই দুই বার ও আমাকে হাসানোর চেষ্টা করেছে। ও আমার আসল বন্ধু। যে বিপদে আমার পাশে আছে। আর ইশানও আমাকে ভালো বন্ধুই মনে করে। হঠাৎ ইশানের নামে প্রশ্ন করছো যে?”
–“না কিছু না। রাখছি আমি।”
ঐশানী কলটা কেটে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে। এখন তার কি করা উচিত? বেশকিছুক্ষণ ভাবার পরে তার মনে হলো অনিন্দিতার সঙ্গে কথা বলা উচিত তার। অনিন্দিতা তো এই ভেবে বসে আছে যে ইশান সায়রাকে ভালোবাসে। ফোনটা হাত থেকে রাখার আগেই আবারও ফোনের রিংটোন বাজতে থাকে।

এবার সায়রা নয় ঐশানী যাকে নিয়ে ভাবছে সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটিই কল করেছে। শুঁকিয়ে যাওয়া মুখে আপনা-আপনি হাসির রেশ ফুটে ওঠে ঐশানীর। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে তাড়াতাড়ি কল ধরে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে সেই মানুষটির প্রাণোচ্ছল গলার সুর শুনে হৃদয়ের দোলা দিল তার।
–“তুমি কি আগের থেকেই এতোটা হৃদয়হীনা? বরকে দুপুরের খাবার খেয়েছে কি না তার খবর অবধি নিলে না!”
ঐশানী গাল ফুলিয়ে বলে…..
–“আপনার থেকে দ্বিগুণ মহৎ হৃদয় আমার। বিয়ের আগের থেকে প্রমাণ পেয়ে এসেছি আপনি কতটা হার্টলেস! আমি আপনাকে কল করতেই যাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই….”

কথাগুলো বলার মাঝরাস্তায় থেমে গেল ঐশানী। মস্তিষ্ক দৃঢ় ভাবে জানান দিল সায়রার কথা না জানাতে। অভয় ঐশানীর পুরো কথা জানতে প্রশ্ন করল…..
–“কি তার আগে?”
–“আপনিই কল দিলেন। আপনি খেয়েছেন?”
–“হুমম পাঁচ মিনিট একটুখানি খাওয়ার সময় পেয়েছি তারপরেই তো মিটিং শুরু হলো আর ইউ নো হোয়াট কি হয়েছে?”
–“কি হয়েছে?” (আগ্রহ নিয়ে)
–“উনারা আমাদের সাথে ডিল ফিক্সড করেছেন।”
আনন্দের সাথে কথাটা বলে ওঠে অভয়। অভয়ের আনন্দিত সুর শুনে ঐশানীর হাসিও প্রসারিত হয়।
–“কংগ্রাচুলেশনস!”
–“জাস্ট কংগ্রাচুলেশনস?”

ঐশানীর চোখজোড়া ছোট হয়ে আসে। উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন করে….
–“তাহলে?”
–“ভাবলাম সামথিং স্পেশাল কিছু পাবো। ইউ আর স্টিল আনরোমান্টিক ঐশানী। নো প্রবলেম। আমি আছি না? রোমান্টিকতার প্রতিটা ধাপ শিখিয়ে দেব ওকে?”
ঐশানী চোখ ছানাবড়া করে ফেলে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে….
–“আ…আমি ফোন রাখলাম।”
অভয় ওপাশ থেকে হেসে দেয়। ছেলেটা আজকাল মাঝেমাঝেই হাসে। এই ছেলেকে কিনা হাসানোর একপ্রকার যুদ্ধ ছিল। সে হাসলেও তার কোনো শব্দ শোনা যেত না। যাকে বলে মৃদু শব্দহীন হাসি। এখন সে প্রাণখুলে হাসে। ভালোবাসার মানুষ সার্বক্ষণিক নিজের কাছে থাকলে হাসিটা বোধহয় আপনাআপনি আসে।

–“ঠিক আছে রাখো।”
অভয়ও ফোন কাটতে নেয়। তৎক্ষনাৎ ঐশানীর কি যেন মনে হয়। চটপটে হয়ে বলে…..
–“আর শুনুন! আরেকটা কথা ছিল।”
–“বাবাহ, আজকাল ফোনটাও কাটতে ইচ্ছে করে না বুঝি? কি বলবে বলো।”
–“আমার স্থান আপনার কাছে কোথায় বলতে পারবেন?”
ঐশানীর অদ্ভুত প্রশ্নে চোখ সরু হয়ে এলো অভয়ের। তবে কিছু না ভেবেই বলে দিল….
–“তোমার স্থান আমার সর্বাঙ্গে। আমার শিরা-উপশিরায় তুমি বিরাজমান। আমার মস্তিষ্ক প্রতিটা সেকেন্ডে তোমার নাম করে। আমার হৃদয় তোমাতে অভ্যস্ত।”

ঐশানীর মনটা শান্ত হয়ে এলো। চোখজোড়া শীতলতায় ছেয়ে গেল। এই কথাটা বারবার শুনতে চাইছে তার কান। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলে…..
–“আর সায়রার স্থান?”
–“হঠাৎ ওর কথা কেন বলছো? আমাদের মাঝে ওর নাম আনতে চাও কেন তুমি? আমি সায়রাকে ঘৃণা করিনা। কিন্তু ওকে আমাদের মাঝে পছন্দ করি না। একসময় ও আমার মস্তিষ্কে ছিল। কিন্তু হৃদয়ে পৌঁছাতে পারেনি। আর না ও আমার অভ্যেস হয়ে উঠেছে। এটা আমার লাস্ট ওয়ার্নিং। সবসময় ওর কথা তুলবে না।”
কঠোর গলায় জবাব দিয়ে ঐশানীর মুখের ওপর কলটা কেটে দেয় অভয়।

মুখের ওপর কল কেটে দিলেও মোটেও খারাপ লাগল না ঐশানীর। তার ভালো লাগছে। সায়রা নামক মেয়েটা তার অভয়কে কেঁড়ে নিতে পারবে না। চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে সে। এই শব্দহীন অনুভূতিটা কতই না সুন্দর এবং মোহনীয়….!!

সন্ধ্যেবেলা ঘুম ঘুম চোখে বসে আছে অনিন্দিতা। এসাইনমেন্টে চোটে ঘুম হয় ঠিকঠাক রাতে। এই মূহুর্তে সোফায় বসে সে দুজন ব্যক্তির অপেক্ষা করছে। প্রথমজন ইশান আর দ্বিতীয় জন অভয়। আজকে এক তারিখ ছিল। ইশানের প্রথম কাজের দিন ছিল আজ। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সদরদরজা পেরিয়ে বাড়িতে ঢোকে ইশান। তবে অনিন্দিতা সেটা খেয়াল করে না। ঘুমে সোফার সাথে মাথা লাগিয়ে ঢুলতে থাকে সে। অনিন্দিতাকে ওই অবস্থায় দেখে দুষ্টু হাসি দেয় ইশান। পা টিপে টিপে গিয়ে বসে অনিন্দিতার পাশে। ওকে একটু ধাক্কা দিতেই আচমকা ধড়ফড়িয়ে সোজা হয়ে বসে ছিটকে গিয়ে বলে…..
–“ও মাগো!”

পাশে লক্ষ্য করেই ইশানকে দেখে চোখ ডলতে ডলতে বলে…..
–“ঘুম থেকে মানুষকে ডেকে তোলার এটা কেমন উপায় ইশান ভাইয়া?”
–“ওমা আমি কি করলাম? তোকে তো অভ্যাস করাচ্ছি।”
–“কীসের অভ্যাস?” (ভ্রু কুঁচকে)
–“আরে তোর স্বামী তো প্রতিদিন মদ খেয়ে এসে গভীর রাতে দরজা ধাক্কাবে। তোকে ঠিক এভাবেই ভয়ের চোটে ধড়ফড়িয়ে উঠতে হবে। তাই আগে থেকে অভ্যেস করে রাখ।”
তা শুনে অনিন্দিতা মুখ ফসকে বলে উঠল…..
–“এই তোমার মদ টদ খাওয়া অভ্যেস আছে? জানতাম না তো?”

বলে নিজেই থতমত খেয়ে চুপ হয়ে যায় অনিন্দিতা। ইশান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে। অনিন্দিতার মাথায় টোকা মেরে হেসে দিয়ে বলে….
–“আরে রামছাগলের ছানা! আমি আমার না তোর বরের কথা বলছিলাম।”
–“উঁহু, আমার বিয়ের কথা বাদ দাও। তোমার বিয়ের কথা বলো।”
–“আমার বিয়ের কথা কি শুনতে চাস?”
–“কেন সায়রাকে যে আমার ভাবি বানিয়ে আনতে চাইলে?”
কথাটা বলা অনিন্দিতার পক্ষে কষ্টসাধ্য হলেও শান্ত থেকে বলার চেষ্টা করল সে। ইশান কিছুক্ষণ নিরব থেকে ফিক করেই হেসে দিল। ওর হাসার কোনো কারণ পেল না অনিন্দিতা।

–“সায়রাকে নিজের বউ বানিয়ে আনব? এই কথা কি করে ভাবলি? ওই কথাটা তো সেদিন আমি এমনিই মজা করে বলেছিলাম। তুইও সিরিয়াসলি নিয়ে নিলি? এমনি এমনি তোকে রামছাগলের ছানা বলি?”
অনিন্দতার মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল যেন। চোখ দুটো খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠল। মুখেও হাসি ফুটে উঠল অজান্তেই। ওকে হাসতে দেখে হাসি বন্ধ হয়ে গেল ইশানের। ওর চোখজোড়া আবদ্ধ হলো অনিন্দিতার হাসিতে। ওর হাসিটা একটু বেশিই সুন্দর মনে হলো তার। কই আগে তো এমন কিছু মনে হয়নি? চোখ সরিয়ে হালকা কেশে সে বলে ওঠে…..

–“হেহে করে হাসছিস কেন?”
–“কিছু না যাও তো ফ্রেশ হয়ে নাও। ঘামের জামাকাপড় ছাড়ো। যাও যাও।”
অনিন্দিতা ঠেলেই ইশানকে তার ঘরে পাঠিয়ে দিল। তবে নিজের ভাইকে এখনো আসতে না দেখে হতাশও হলো সে। বিগত তিনদিন ধরে সায়রার সত্যিটা অভয়কে জানাতে গিয়েও সে পারেনি। অভয় এতোটাই ব্যস্ত! অনিন্দিতাও এসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে কারোরই সময় হয় না। সে হতাশ ভঙ্গিতে হেলেদুলে ঘরে চলে গেল।

রাত প্রায় সাড়ে দশটা! বিধ্বস্ত ক্লান্ত ভঙিতে পা জোড়া কোনোমতে চালিয়ে ঘরে ঢোকে অভয়। চোখটাও যেন বন্ধ হয়ে আসছে তার। আজ যে শান্তির ঘুম দেবে ঐশানীকে জড়িয়ে ধরে। অনেক ধকল গেছে। দরজা খোলার শব্দে তড়িঘড়ি করে ঐশানীর সামনে থাকা ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়। অভয়ের চোখ এড়ায় না সেটা। ক্লান্তিমাখা সুরে বলে….
–“কি করছো তুমি আমার ল্যাপটপে হু?”
–“তেমন কিছু না শুধু দেখছিলাম।”
–“ঐশানী, তুমি বড়ই মোহময়ী এক নারী সেই সঙ্গে রহস্যময়ী নারীও বটে। মাঝে মাঝে মনে হয় তোমার মাঝে আরো কিছু রহস্য আছে যা আমি ভেদ করতে পারিনি।”

ঐশানী একটা হাসি দেয়। রাতের আঁধারে সফট নীল রঙের লাইট টাই জ্বালানো আছে শুধু। ক্লান্তি মাখা অভয়ের মনে ঐশানীকে দেখে তার মনে ইচ্ছে জাগল তাকে কাছে পাবার আকাঙ্ক্ষা। ঐশানী ল্যাপটপ টা গোল টেবিলে রাখতে গিয়ে পায়ে হোঁচট খেতেই অস্থিরতার সঙ্গে ছুটে আসে অভয়। দ্রুত ঐশানীর বাহু ধরে বসিয়ে কাতর সুরে বলে…..
–“ব্যাথা পেলে? কোথায় পেয়েছো ব্যাথা? দেখাও আমাকে?”
ঐশানীর কাছ থেকে সে কোনো উত্তর পায় না। ফোঁপানোর শব্দ পেয়ে মাথা তুলে তাকায় অভয়। ঐশানী ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আচমকা ঐশানী অভয়কে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। অভয় বলল….

–” কাঁদছ কেন?”
ঐশানীর কান্না পরক্ষণেই থেমে যায়। মাথা উঠিয়ে বলে….
–“খুশিতে। আপনি আমার এতোটা চিন্তা করেন, কেয়ার করেন তাই।”
–“তোমরা মেয়েরা না সত্যি অদ্ভুত। খুশিতে কাঁদো, দুঃখ পেলে কাঁদো, রাগ হলে কাঁদো, কনফিউজড হলেও কাঁদো। দিনশেষে বলো, আমরা ছেলেরা তোমাদের বুঝতেই পারিনা।”

চলবে….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here