বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩২

0
1397

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩২
#আনিশা_সাবিহা

ঐশানীকে শুইয়ে দেয় অভয়। বড় বড় শ্বাস ফেলছে ঐশানী। আর চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে অনবরত। অভয় বুঝতেই পারছে না ঐশানীকে কি করে স্বাভাবিক করবে। ঐশানীর মাথায় হাত বুলিয়ে সে বলে উঠল…..
–“তুমি চোখ বন্ধ করো। তোমার অবস্থা ঠিক নেই। প্লিজ চোখ বন্ধ করো।”
ঐশানী মাথা নাড়ায়। দুর্বল কন্ঠে বলে ওঠে….
–“আমি কষ্ট পাচ্ছি এটা ভাববেন না। এতোদিন চাপা কষ্ট পেয়ে এসেছি আমি। এই চাপা যন্ত্রণা কাউকে বলতে চাইনি। কিন্তু আজকে আপনাকে বলে নিজের কষ্ট কমিয়ে নিয়েছি। আচ্ছা, যাদের মনের কথাগুলো বললে কষ্ট কমে যায় তারা খুব আপন হয় তাই না?”

অভয় কিছুক্ষণ একনাগাড়ে ঐশানীর দিকে তাকিয়ে থেকে ছোট্ট করে বলে…..
–“হুম।”
–“তাহলে আপনি আমার আপনজন।”
বলেই অভয়কে দুটো হাত ধরে জড়িয়ে ধরে ঐশানী। অভয়ের হার্টবিট ফাস্ট হয়ে চলতে থাকে। হার্টের সংকোচন ও প্রসারণের প্রত্যেকটা ধাপ যেন ঐশানীর নামেই। অভয় শান্ত ভঙ্গিতে শুধু অনুভবই করে। প্রথম অভয়কে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরেছে ঐশানী। এর চেয়ে সুন্দর হয়ত আর কোনো অনুভূতি হয় না। অভয় শুনতে পায় ঐশানী অস্পষ্ট কন্ঠে কিছু একটা বলছে। কান পেতে দেয় অভয়।
–“সায়ান চলে গেছে। আপনি যাবেন না! হি ইজ লায়ার। সায়রাকে যদি আপনি ভালো না-ই বাসেন তাহলে আপনি শুধু আমার থাকবেন। ঠিক আছে?”

অভয়ের সবটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। তবে ঐশানীর কথার ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে বেদনাদায়ক দিনগুলোর প্রতিটা যন্ত্রণা। লুকিয়ে আছে অভয়কেও হারিয়ে ফেলার ভয়। অভয়ের হৃদয়কে প্রশান্ত করতে এতোটুকুই কথা যথেষ্ট ছিল। তবে সায়ান মারা গেল কি করে? এটা জানার জন্যেও মনটা আনচান করছে অভয়ের। একটা মেয়ের এতোটা ভালোবাসা পাওয়ার পরেও পূর্ণতা পেল না। একদিকে ভালোই হয়েছে। যদি ভাগ্যটা এমন না হতো সে কখনো ঐশানীর দেখা পেতো না আর না জীবনের মানে খুঁজে পেতো। অভয় ঐশানীর চুলের ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে বলে…..
–“কিন্তু সায়ান কি করে মারা গেল?”

ঐশানী তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে নাক টেনে নিজের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি হাতের পিঠ দিয়ে মুছে নিল। পাশের ল্যাম্পশিট থেকে ফোনটা হাতিয়ে নিয়ে বলে……
–“আমার ফোনে এখনো সেই ভয়েজ নোট টা আছে। এটা আমাকে ওর ছোট ভাই সজয় দিয়েছিল ওর কথাতে। শুনবেন?”
অভয় সম্মতি জানাতেই ভয়েস নোটে ক্লিক করে ঐশানী। অভয় দুরুদুরু মন নিয়ে উঠে সোজা হয়ে বসে। প্রথমেই সায়ানের গিটারের সুর কানে আসে তাদের। গিটারের সুর সত্যিই অস্বাভাবিক মুগ্ধকর! তারপর একটা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসে।

–“গিটারের সুর শুনে নিশ্চয় তোমার চিনতে বাকি নেই যে আমি কে! এই ভয়েস নোট টা তোমার কাছে তখনই পৌঁছাবে যখন আমি এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে পরপারে চলে যাব। হ্যাঁ ঐশানী তুমি ঠিকই শুনেছো। জানি তোমার কাছে আমার কথাগুলো দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। বিগত কয়েকদিন ধরে কিডনি নষ্ট হবার খবর পেলেও যেই কয়টা দিন আমি তোমার সাথে খারাপ আচরণ করেছি তার পেছনেও কারণ ছিল। কিডনি নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে আমার আরেকটিও রোগ ছিল যার নাম আলসার। এর কারণে আমি কিছু খেতে পারতাম না। প্রথম প্রথম বিষয়টাকে পাত্তা না দিলেও বাড়াবাড়ি হলে আমি ডক্টরের কাছে যাই। টেস্ট করিয়ে জানতে পারি আমার আলসার হয়েছিল এবং সেটা এতোটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে যে পচন ধরেছে সেখানে। আর কিডনির সমস্যা তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে আমার বাঁচা খুবই মুশকিল। আমার ওই রোগটার কথা কেউই জানতো না। শুধু জানতো কিডনি নষ্ট হবার কথা। আর তুমি কেন এক কথায় কিডনি ট্রান্সফার করার সিদ্ধান্ত নিলে? এতো ভালোবাসতে কে বলেছে তোমায়? আমি তো বাঁচবই না। সেকারণেই কিডনি আমাকে দেওয়ার পর তোমার কাছে রাগারাগি করেছিলাম। আর নিখোঁজও হই ঠিক সেই কারণেই। আমি জানতাম আমার মৃত্যু নিকটে। ওহ হ্যাঁ, আমার অন্য কিডনিটাও পঁচে গেছে। সেখান থেকে তুমি যেই কিডনি আমায় দান করেছো সেটাতেও পচন ধরেছে। আমাকে ক্ষমা করো ঐশানী। তোমার জীবনে আমার এন্ট্রি নেওয়ায় সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। আমি জানি তুমি আমাকে ভুলতে পারবে না। কিন্তু তোমায় ভুলতে হবে। যেই মানুষ তোমার ভাগ্যে নেই তাকে মনে রেখো না। আমি আশা করছি তোমার জীবনেও একদিন এমন কারোর সাথে পরিচয় হবে সে তোমায় ভালোবাসায় রাঙিয়ে দেবে। সে তোমার ভাগ্য হবে। তোমার ভালোবাসাও হবে। ভালো থেকো। শেষমেশ এতটুকু বলতে চাই যে, তোমায় ভালোবেসেই আমি মরতে চাই।”

সায়ানের শেষ কথা শুনে হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসে অভয়ের। বুকের ক্ষীণ যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। তবুও নিজেকে শান্ত অবস্থায় রাখে অভয়। ঐশানী কান্নাসুরে বলতে শুরু করে…..
–“সেদিনটা এমনই দিন ছিল জানেন? ঝড়ো হাওয়া বইছিল। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। সীঁথির সঙ্গে ডক্টরের কাছে নিজের চেক-আপ করতে এসেছিলাম। হঠাৎ সজয়ের নম্বর থেকে ভয়েজ নোট টা আসে। এগুলো শোনামাত্র সীঁথি হতভম্ব হয়ে পড়ে আর আমি তখন দুঃখে দিশেহারা। সেদিন শুধু পাগলের মতো সায়ানকে এদিক-সেদিক গিটার ঘাড়ে করে নিয়ে যেতে দেখতাম। ছুটে যেতেই সে হারিয়ে যেতো।”
–“তাহলে এই ছিল তোমার গিটারকে ঘৃণা করার কারণ?”

ঐশানীর দিকে মাথা নিচু করে প্রশ্ন করে ওঠে অভয়। ঐশানী মাথা দুলিয়ে বলে……
–“হ্যাঁ। আমি ভেবেছিলাম বিয়েই করব না। তার কারণে এতোকিছু করেছিলাম। তবে আপনাকে এতোবড় সত্যি বলতেও পারিনি। তাই অনেক উপায়ে বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছি। মনে আছে আপনার? বিয়ের দিনে আপনি খবর পেয়েছিলেন বিয়ের আগে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি? সেদিন গুমরে গুমরে কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর বিয়ের দিন রাতে আপনি আমায় বললেন যে আমি নাকি ভালোবাসা বুঝি না! ভালোবাসা হারানোর কষ্ট বুঝি না এসব বলেছিলেন না? কিন্তু ভালোবাসা কি সেটা জানি অভয়। ভালোবাসা হারানোর কষ্ট আমার থেকে বেশি আর কেউ জানে না। কেউ না। এই কষ্ট টা আমি বুঝি সেকারণেই আপনাকে আর সায়রাকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। নয়ত আমি কি পাগল? নিজের পারসোনাল জিনিসই অন্য কাউকে শেয়ার করি না আর নিজের পারসোনাল বরকে শেয়ার করব?”

অভয় শূন্য দৃষ্টিতে তাকায়। আজ ঐশানী নিজের অতীতের সাথে সাথে আরো অদ্ভুত কিছু কথা বলছে যা সম্পূর্ণ অভয়কে জড়িয়ে। তবে অভয়ের ভালো লাগছে। আচ্ছা কখনো কি দ্বিতীয়বার ভালোবাসা যায়? হয়তবা যায়। কারণ ঐশানীর চোখে, ঐশানীর কন্ঠে অভয় তার প্রতি কিছু বিশেষ অনুভূতি পেয়েছে। যেই অনুভূতি ভালোবাসা না থাকলে কখনোই আসবে না। কিন্তু অভয়ের স্থান ঠিক কোথায়? সায়ানের আগে? নাকি পরে?

অভয় এসব চিন্তা বাদ দিয়ে জড়ো হাসি দিয়ে বলে….
–“তোমাকে আমায় শেয়ার করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি অন্য কারো আর হচ্ছি না। আর না তোমায় ছাড়ছি এতো সহজে।”
–“ছাড়তে তো হবেই!”
রোবটের মতো কথাটা বলতেই অভয় চমকে তাকায়। ঐশানীর কথার মানে না বুঝে বলে…..
–“মানে?”
–“কিছু না।”
অভয় উঠে দাঁড়িয়ে বড় খোলা জানালার সামনে এসে দাঁড়ায়। পর্দা অবাধ্যের মতো উড়াউড়ি করছে। আকাশে চমকাচ্ছে বিদ্যুৎ!

–“জানো? আমার আজ হিংসা হচ্ছে সায়ানের প্রতি। একটা ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলের প্রতি নিদারুণ হিংসা হচ্ছে। ও তোমার ভালোবাসা পেয়েছে। আমি পেলাম না। নাকি পেয়েছি?”
ঐশানীর উত্তর পেলো না সে। অভয় জানে সে উত্তর পাবেও না। ওকে ভালোবাসার কথা বললেই ঐশানী শুধুই এড়িয়ে যায়। এটা নতুন কিছু না। হতাশ ভঙ্গিতে পেছন ফিরে তাকায় অভয়। ঐশানী হাঁটুতে মাথা গুঁজে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। অভয়ের মনটা অস্থির হয়ে ওঠে ওকে থামানোর জন্য। আপনজনের কষ্টটা যে কেন এতো আঘাত করে কে জানে?

দ্রুততার সাথে হেঁটে এসে ঐশানীর কাছে বসে অভয়। ঐশানীর গালে আলতো করে হাত রেখে মুখোমুখি বসে ওরা। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকায়। তাদের চোখের গভীরে ডুব দেয়। অভয় নরম সুরে জিজ্ঞেস করে…..
–“কষ্ট হচ্ছে সায়ানের জন্য? তুমি কি ওর জন্যই এখনো আমার থেকে মুক্তি চাও?”
ঐশানীকে নিরব দেখে অভয়ের মনে ভয়ে ভয়ে ছেয়ে যায়। কি করে পারবে ও ঐশানীকে হারাতে? ধড়ফড় করে বলে ওঠে….
–“প্লিজ যেও না। আমি তোমায় জোর করে নিজের করার চেষ্টা জীবনেও করব না। শুধু তুমি আমার সামনে থাকো। তোমায় দেখে আর তোমার সাথে কথা বলেই আমি নিজের জীবন খুশিতে অতিবাহিত করতে পারব। তুমি যাবে না তো?”

–“সায়ান আমার অতীত। ও আমার স্মৃতির পাতা। আমার জীবনের গল্পের কয়েকটা পাতা। যাকে ভুলতে পারা যাবে না। ও স্মৃতি হয়েই থাকবে। ওর জন্য আমি না নতুন করে কিছু করতে চাই আর না করতে চাইব। ওর জন্য আমি কোনো পদক্ষেপই নেব না।”
অভয়ের হৃদয়ের যেন প্রাণ সঞ্চার হয়। এতটুকুই তার কাছে অনেক পাওয়া। ঐশানীকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে সে। তার ঠোঁটের কোণে অসাময়িক হাসি।

বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই যাওয়ার পর অভয়ের মনে পড়ে সে ঐশানীকে তার পারমিশন ব্যতীত জড়িয়ে ধরে রয়েছে। দুম করে ছেড়ে দিয়ে এক হাত দূরে এসে বালিশে মাথা রাখে অভয়। ঐশানী চোখ বুঁজে আছে। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত ও দুর্বল। চোখ মেলে তাকানোরও শক্তি পাচ্ছে না যেন! সে ওই অবস্থা তেই বলে….
–“কি হলো? আমায় ছাড়লেন কেন?”
অভয় বিস্ফোরিত নয়নে তাকায়। চোখের পলক পড়ে না ওর। ঐশানী চোখ বন্ধ করে থেকেই যেন সবটা বুঝে যায়। আবারও বলে…..
–“আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না। আমায় আগের মতো নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরুন। আমি ঘুমাবো। আর হ্যাঁ এক মূহুর্তের জন্যও ছাড়বেন না।”

অভয়ের যেন মনে হলো, সূর্য আজ অন্যদিকে উঠেছিল। তবে ঐশানী যখন নিজে কাছে আসতে চাইছে এর থেকে সুখকর কি হতে পারে? স্বামী-স্ত্রী কাছাকাছি আসবে এতে অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নেই। অভয় হাত বাড়িয়ে নিজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঐশানীকে। দুজনের নিঃশ্বাস দুজনের মুখে আঁচড়ে পড়ে। অভয়ও আবেশে চোখ বন্ধ করে বলে…..
–“রাতের খাবার খাবে না?”
–“না। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। আপনি খেলে খেতে পারেন।”
অভয়ও খাবে না আজ। ঐশানীর ছোঁয়া তার মন আর পেট ভরিয়ে দিয়েছে।

ঐশানী ধীর গলায় বলে….
–“আর একটা কথা! আমি আজ আপনাকে এতোকিছু বললাম। আপনি কিন্তু কখনো কাউকে এসব কথা বলবেন না। আমার পরিবারকেও না। এটা আমার অনুরোধ!”
–“নিজের পরিবারের থেকে এতো বড় কথা লুকানো কি ঠিক হচ্ছে ঐশানী?”
–“ঠিক না ভুল হচ্ছে জানি না। আমি চাই না আমার কথা শুনে আমার পরিবার চিন্তায় পড়ুক। ওদের কানে এই কথা গেলে ওরা ভেতরে ভেতরে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে।”

–“ঠিক আছে বলব না। তবে আমি তোমায় ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব। তোমার শরীরে একটা কিডনি নেই। এর জন্য তোমার শরীরে অনেক কমপ্লিকেশনস দেখা দিতে পারে। তোমার চেকআপের প্রয়োজন।”
বেশ সিরিয়াস হয়ে কথাটা বলল অভয়। ঐশানী আগের ন্যায় বলল….
–“তার কোনো দরকার নেই। মানুষ একটা কিডনি নিয়ে নির্দ্বিধায় বাঁচতে পারে। এই কয়টা বছর তো ছিলাম ভালোভাবে বেঁচে। শেষ পর্যন্ত এভাবেই দিন কেটে যাবে।”
অভয় আরো বেশ কয়েকবার তর্ক করলেও ঐশানীর কাছে হেরে গিয়ে চুপ হয়ে যায় এসে। ঐশানীর চোখমুখে ফুঁ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঐশানীও বিড়াল ছানার মতো ঘুমিয়ে পড়ে অভয়ের সংলগ্নে।

সকাল সকাল ইশানের মেজাজ বেশ ফুরফুরে। মনটাকে আরো ভালো করতে আরেকটা খবরও পেলো সে। তার চাকরিটা হয়ে গেছে। মনে খুশির ছোঁয়া নিয়ে বাইরে বের হলো সে। সবাইকে খবর জানানো উচিত। বিশেষ করে অনিন্দিতাকে জ্বালাতন করা হয়নি অনেকক্ষণ। গতকাল তো ঐশানীকে খুঁজতেই দিন কেটে গেল। সব ভাবনা শেষ করে ঘর থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে ইশান। মুখে যেন তার হাসি ধরে না। এই বাড়িতে সে-ই একমাত্র অলস যার ঘুম সবচেয়ে পড়ে ভাঙ্গে। তারমানে এতোক্ষণে সবাই উঠে পড়েছে। হাঁটতে হাঁটতে অভয়ের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় সে। বিড়বিড় করে বলে…..
–“অভয়কে প্রথমে খবরটা দিলে মন্দ হয় না। যাই ওকেই আগে জানায়। এতোদিন কিছু করছিলাম না বলে ব্যাটা মাথা খারাপ করে দিচ্ছিল। অভয় আসব?”

দরজা একটু ঠেলতেই খুলে যায়। দরজা লক করা নেই। দরজার খটখট শব্দ শুনে অভয় পিটপিট করে তাকায়। ঘুমের রেশ যেন ছাড়ছেই না। চোখ বারংবার খোলার চেষ্টা করে দরজার দিকে তাকায় চোখমুখ কুঁচকে। ইশান দরজার সামনে দুটো হাত ওপরে তুলে দাঁড়িয়ে আছে। ওর অদ্ভুত রিয়েকশন দেখে নিজের দিকে তাকায় অভয়। ঐশানীকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে সে। তার বুঝতে বাকি রইল না ইশানের এমন রিয়েকশনের কারণ। ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। একবার ঐশানী একবার ইশানের দিকে তাকায়। ইশান বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলে…..
–“আমি কিছু দেখিনি। তোরা রুমের দরজা লক করে ঘুমাতে পারিস না?”

–“তু…তুই!!”
–“আমার কি ভাগ্য! যেই দৃশ্য বাসর রাতে দেখব বলে তোদের ঘরে ঢুকেছিলাম এই দৃশ্য আজ দেখতে পাচ্ছি। সেদিন থেকে দুইদিন এককানে শুনতে পাইনি জানিস? আজ না চাইতেই অনেক কিছু দেখে ফেললাম। হেহেহেহে!”
বলেই আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না ইশান। পা ফেলে ধুপধাপ শব্দ করে দৌড় দেয় সে। অভয় দাঁতে দাঁত চেপে বলে….
–“ইউ….! দাঁড়া আমি আসছি।”
অভয়ও ইশানের পিছু নিয়ে ছুটে বেরিয়ে যায়।

ওয়াশরুমের শাওয়ার নিতে ব্যস্ত ঐশানী। আজ ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে। কেন যে গেছিল অভয়কে জড়িয়ে ধরতে বলতে! লোকটার উষ্ণতা এতোটা প্রগাঢ় যে ঘুমই ভাঙেনি। যখন ঘুম ভাঙে তখন অভয় ছিল না। অভয়কে মনে মনে বকতে বকতে বলে…..
–“লোকটার সাহস তো কম না! রাতে আমি বললাম আমায় ছাড়বেন না তাও ছেড়ে উঠে গেল? ডাকও দিল না একবারও? শ্যামলা ঘোড়া তো সাধে বলি না!”
আজেবাজে বকতে বকতে হাতে ফেশওয়াশ নিল ঐশানী। নিয়ে হাতে একটু ফেশওয়াশ ঢেলে মুখের ডান পাশে লাগায়। হঠাৎ নাকে অদ্ভুত গন্ধ আসে। গন্ধ শুঁকে বিরক্ত লাগে ওর। এখন চোখও খুলতে পারছে না।

উপায় না পেয়ে দরজা ফাঁক মাথাটা বের করে বলে…..
–“এইযে শ্যামলা….(একটু থেমে) অভয় আপনি আছেন?”
অভয় ততক্ষণে রুমে এসেছে। ইশানের পেছনে দৌড়ে এসে ফ্যানের নিচে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে ও। ঐশানীকে এভাবে ডাকতে দেখে এগিয়ে আসে সে।
–“কি হয়েছে?”
–“আমি না ওয়াশরুমে থেকে একটা বাজে গন্ধ পাচ্ছি আপনি পাচ্ছেন?”
অভয় সেখান থেকেই শুঁকতে শুরু করে। সেও গন্ধটা পায়। কিন্তু গন্ধটা তার চেনা। ঐশানীর ফেসের দিকে নজর যায় তার। সেখান থেকে ফেশওয়াশ একটু হাতে নিয়ে শুঁকতেই সে চোখ বড় বড় করে চিল্লিয়ে বলে উঠল…..
–“তুমি আমার দাঁড়িতে দেওয়া শেভিং ক্রিম মেখেছো??”

চলবে…..

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here