বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩১
#আনিশা_সাবিহা
সায়ান সেদিন জানতো না ঐশানী কেমন স্বভাবের মেয়ে। সেকারণেই হয়ত যেচে পড়ে ঐশানীর খপ্পরে পড়েছিল এবং তাকে এসাইনমেন্ট করতেও দিয়েছিল। ঐশানী এসাইনমেন্টের বদলে তার ফেবারিট ‘ডোরেমন’ এর ছবি খাতা ভরে এঁকে দেয়। যদিও তার হাত কাঁপছিল এগুলো করতে। সে জানে না এর পরিণাম কি হতে পারে! তার দুই দিন পর সায়ানকে খাতা দিয়ে দেয় ঐশানী। তখন আর এক মিনিটও দাঁড়ায় না। চলে আসে বাড়িতে। যমরাজের সামনে থাকলে প্রাণ নিয়ে নেওয়ার সম্ভবনা তো থেকেই যায়। ওইদিন ভাগ্যিস সায়ান খাতাগুলো জমা দেওয়ার আগে চেক করেছিল! নয়ত স্যারকে এসব আজেবাজে কার্টুন জমা দিয়ে কতই না অপমানিত হতে হতো!
খাতা জমা না দিয়েও সায়ান রেহাই পায় না স্যারের মেজাজ থেকে। স্যারের কাছে অপমানিত হয়ে ঐশানীর প্রতি রাগে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। কিন্তু ঐশানীর নাগাল পায়নি সে। ভয়ের চোটে ঐশানীকে দুটো দিন কলেজের আশেপাশেও দেখা যায় না। পরেরদিন সীঁথির কথায় ভয়ে ভয়ে কলেজে আসে ঐশানী। চোরের মতো মাথায় কাপড় দিয়ে কলেজের গেটে পা রাখতেই তার সামনে একজন পুরুষের পা দেখতে পায়। মাথা তুলে তাকাতেই বিষন্নতায় পরিপূর্ণ সায়ানকে দেখতে পায়। চশমা পড়ে না থাকায় সায়ানের চোখজোড়ায় স্পষ্ট তার প্রতি রাগ দেখতে পেয়ে ঢক গিলে বোকা হাসি হাসে সে। তা দেখে সায়ান ঘাড় কাঁত করে বলে….
–“আমাকে দেখে কি জোকার মনে হচ্ছে?”
–“ক…কই না তো! জোকার লাগবে কে…কেন?”
–“তাহলে অযথা হাসার কারণ কি?”
–“আ…আমি তো সবসময় হাসি। হাসিটা আমার স্বভাব।”
–“গুড। হাসলে ভালো লাগে তোমাকে। স্পেশালি গঁজ দাঁত থাকার কারণে। লুকিং সুইট!”
ঐশানী সায়ানের কথায় হালকা কেশে তাকায়। আসলে সায়ানের মুখে এমন কথা সে আশা করেনি। সায়ান আবার একটু ঝুঁকে প্রশ্ন করে….
–“আমাকে ভয় লাগে?”
–“না তো।”
ঐশানী কখনই নিজের ভয়কে স্বীকার করার মেয়ে নয়। ভয়ে কাঁপা-কাঁপি করবার পরেও সে মুখ দিয়ে ‘না’ শব্দটাই উচ্চারণ করল। সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে ধমক দিয়ে ওঠে…..
–“ইউ….!! এমন অবস্থা করব তোমার আমার ছায়া মারানোর সাহসটাও পাবে না। আমার এসাইনমেন্টের খাতায় ওসব আঁকার সাহস কি করে পাও তুমি?”
–“আপনি কি করে আমাকে আপনার এসাইনমেন্ট করতে বলতে পারেন? তাই আমিও ওসব এঁকেছি। নিজের এসাইমেন্টই স্কুলে ঠিকঠাক করতাম না! কলেজে এসে আপনার এসাইনমেন্ট করব? হাহ, বয়েই গেল।” (দাঁত কেলিয়ে)
ঐশানী আর কি বলবে তার ভাষা খুঁজে পেল না সায়ান। রাগে কিড়মিড় করে দাঁড়িয়ে থেকে অন্যদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
ঐশানী হাফ ছেড়ে বাঁচে যেন। গলার একটু নিচে হাত রেখে বড় নিঃশ্বাস নিয়ে স্বস্তির হাসি নিয়ে সামনে এগোতে নেয়। কিন্তু আরেক বিপত্তি বাঁধে তার সামনে। কতগুলো ছেলে অভদ্রের মতো এসে দাঁড়ায় তার সামনে। ভ্রু কুঁচকে ফেলে সে। এক মূহুর্তের জন্য মনে হয় যে এটা সায়ানের দল। তৎক্ষনাৎ মনে পড়ে এর মাঝে কেউই সায়ানের বন্ধু নয়।
–“কলেজে নতুন মনে হচ্ছে! তা কোন ইয়ার সুন্দরী কমলা?”
এদের মাঝে একটি ছেলের কথার ধরণ দেখে আপনা-আপনি চোখমুখ জড়িয়ে আসে ঐশানীর। ছেলেগুলো মোটেও সুবিধার নয়। তাদের দৃষ্টির ধরণও বাজে।
ঐশানী তাদের কথায় পাত্তা না দিয়ে একপ্রকার দ্রুত হেঁটেই সায়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়। আচমকা সায়ানের সামনে পড়তেই ঐশানীর সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে নিজেকে সামলে নেয় সায়ান। ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে। ঐশানীকে পেছনে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও পেছন ফিরে তাকায়। ছেলেদের দল দেখে চোখমুখের ধরণ পাল্টে যায় তার। হঠাৎ ঐশানী সায়ানের শার্টের হাতা খামচে ধরতেই আশ্চর্যিত হয়ে তাকায় সায়ান। ঐশানী বিড়বিড়িয়ে বলে…..
–“ওদের নজর ভালো না। আপনি প্লিজ কিছু একটা করে ম্যানেজ করুন।”
সায়ানের হাসি পায়। মেয়েটির অসহায় কন্ঠে সত্যিই মানুষকে মায়ায় জড়িয়ে ফেলবে। তবুও তাকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলে…..
–“আমিও যদি ভালো না হই? ওদের দলের কেউ হই?”
–“হতেই পারেন না। আপনি তো ভালো ছেলে। আর আপনি মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকেন।”
কোনোকিছু ভাবনাচিন্তা না করেই কথাটা গড়গড় করে বলে দিল ঐশানী। বলার পর বাঁকা চোখে তাকালো সে। আবার বলল…..
–“আপনি ম্যানেজ করুন না প্লিজ!”
–“ওদের নজর থেকে তোমাকে বাঁচিয়ে কি পাব?”
ঐশানী ভাবনায় পড়ে যায়। ঠোঁট কামড়ে অনেক কিছু চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে। ততক্ষণে বদ ছেলেগুলো তাদের সামনে এসেই দাঁড়ায়। তাদের দলের একজন বলে….
–“কিরে, মেয়েটা নতুন না? তোর সাথে কেন? ওরে আমি পছন্দ করছি।”
–“মেয়েটা কেউ হয় নাকি তোর?”
তাদের কথায় সায়ান সোজা একটাই জবাব দেয়…..
–“সি ইজ মাইন। ও আমার গার্লফ্রেন্ড। অন্য কাউকে খুঁজে নে।”
ছেলেগুলো যতটা না অবাক হয় তার থেকে বেশি অবাক হয় ঐশানী। রোবটের মতো ঘাড় ঘুড়িয়ে সায়ানের দিকে তাকায় সে। লোকটা কি আজেবাজে কথা বলে চলেছে? সায়ানের তাতে কোনো ভাবান্তর হয় না।
অন্য ছেলে বলে ওঠে….
–“সত্যি নাকি?”
সায়ান জোরের সঙ্গে বলে….
–“মিথ্যা বলে আমার লাভ?”
ছেলেগুলো পেছন হটে যায়। সায়ান সামনের দিকে ঘুরে ঐশানীর দিকে এক পলক তাকিয়ে হাঁটতে থাকে। তা দেখে পিছু পিছু ঐশানীও হাঁটতে থাকে। সে আস্তে করে প্রশ্ন করে…..
–“আপনি আমায় নিজের গার্লফ্রেন্ড কেন বললেন?”
–“কারণ ওরা অন্যের গার্লফ্রেন্ড দের ডিস্টার্ব করে না। ওরা মনে করে ভার্জিন মেয়েদের সাথে অশ্লীল আচরণ করে মজা পাওয়া যায়। আর অনেক মেয়ে তাদের আচরণে সাড়া দিলে…..”
–“হয়েছে হয়েছে যথেষ্ট বলেছেন। এবার চুপ করুন। অনেক শুনেছি।”
প্রবল ভাবে বলে ঐশানী। সায়ান ঠোঁট প্রসারিত করে একটু হেসে নেয়। ঐশানীর মনে আবারও প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিতেই বলে…..
–“ওরা এতোটা খারাপ তাও কেউ ওদের কিছু বলে না? আর বেশ কয়েকদিন হলো কলেজে আছি ওদের আজকের আগে তো দেখিনি।”
–“ওরা কলেজে সপ্তাহে একদিনই আসে। আর বড় বড় কলেজে এসব ছোটখাটো ব্যাপার। কেউ মাথা ঘামায় না। এমনকি কলেজের ডিরেক্টরকে বললেও মাথা ঘামাবে না।”
–“মা গো মা! এ কার মাঝে এসে পড়লাম আমি?
সায়ানের আরো হাসি পায়। সে নিজেও জানে না সে হাসির সাথে মেয়েটাকে নিজের হৃদয়ও দিয়ে দিতে চলেছে!
সময় কাটতে থাকে। দিন কাটতে থাকে। দুটো মানুষের মাঝে সেই বিশেষ অনুভূতিগুলো প্রখর হতে থাকে। তাদের মনে শতশত ভালোবাসা এসে জমা হয় একে ওপরের জন্য। শুধুমাত্র প্রকাশ করাটাই বাকি!
কলেজ থেকে ঠিক করা হয় পিকনিকে যাওয়া হবে। জায়গাটা রোজ গার্ডেন। একদিনের ট্যুর। কলেজ থেকে বছরে দুইবার পিকনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। একবার একদিনের ট্যুর আরেকবার বেশ কয়েকদিনের একসাথে। সকলে হৈ হৈ করে পৌঁছায় রোজ গার্ডেনে। সকলে যখন রোজ গার্ডেনে ঘুরতে ফিরতে ব্যস্ত তখন সায়ান ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত রোজ মানে ঐশানীকে দেখতে। ঐশানী বাঁকা চোখে সায়ানকে দেখছে। বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে সে। সায়ানের নজর থেকে লজ্জায় বাঁচতে চাইছে।
ঐশানী ও সীঁথির পিছু পিছু হাঁটছে সায়ান আর তার বন্ধুরা। ঘাসের ওপর পা ফেলে একেকজন ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসে পড়ে। সায়ান বসে গিটার নিয়ে। তাদের খানিকটা দূরে বসেছে মেয়েদের দল। ছেলেরা ছেলেদের মতো মেয়েরা মেয়েদের মতো গল্পের মশগুল হলেও ঐশানী আর সায়ানের চোখাচোখি হতেই থাকে। ঐশানী লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলেও সায়ান নির্লজ্জের মতোই চেয়ে থাকে। তার কোলে তার প্রিয় গিটার টি। নাহিদ এসব দেখে ফাইজলামি করে বলল….
–“আচ্ছা সায়ান একটা কথা বল?”
–“কি?”
ঐশানীতেই মশগুল হয়ে বলে সায়ান।
–“আমরা তো এতটুকু বুঝে গেছি ঐশানীর সাথে তোর…..”
সায়ান চোখ সরিয়ে নাহিদের দিকে তাকাতেই নাহিদের কথা বন্ধ হয়ে যায়। সায়ান তাকে সম্মতি জানিয়ে বলে….
–“কি বল! বলছিস না কেন? আমিও শুনব বল!”
–“বলছিলাম যে, ঐশানীর সাথে তো তোর ইয়ে হয়েই গেছে…..”
–“ইয়ে কি?”
নাহিদ ঢক গিলে বলে….
–“প্রেম মানে ভালোবাসা! এতদিন আমরা ভাবতাম গিটার ছাড়া তোকে কেউ পটাতে পারবে না। ঐশানী ইজ গ্রেট। তো এখন তুই তোর প্রিয় এর লিস্টে গিটার নাকি ঐশানীকে আগে রেখেছিস?”
সায়ান একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে ঐশানীর দিকে তাকায়। ঐশানী হাসছে। ওর হাসি দেখে আরো এক দফা প্রেমে পড়ল সায়ান। আনমনেই বলে ফেলল….
–“প্রেম আর ভালোবাসা এক নয়। তুই যাকে ভালোবাসিস তার প্রেমে সবসময় পড়বি। সেকেন্ডে সেকেন্ডে পড়বি প্রেমে। তার হাসি, তার কথা, তার চাহনি তার প্রত্যেকটা কদমেও প্রেমে পড়বি। কিন্তু সেটা যদি শুধু প্রেম হয় তুই শুধু তার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়বি। কয়েকদিন পর তোর ওই সৌন্দর্যের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে যাবে। এটা এদের মাঝখানে পার্থক্য! আর যদি গিটার আর ঐশানীর কথা বলিস তাহলে বলব এদের দুজনের জায়গায় আলাদা। কারো জায়গা আগে বা কারো জায়গা পড়ে নয়। ঐশানীর জায়গা আমার হৃদয়ে। আর এই গিটার আমার প্রিয় আর শখের জিনিস! নাথিং মোর।”
সায়ানের বন্ধুরা শুনে হাত তালি দিতে শুরু করে। অনেকেই মুখ দিয়ে সুর তোলে। সায়ান হকচকিয়ে গম্ভীর হয়ে পড়ে। মেরাজ সায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে….
–“দোস্ত ফাটিয়ে দিলি! এই একই কথা ঐশানীকে কবে বলবি?”
–“দিনক্ষণ ঠিক করে যেমন ভালোবাসা হয় না তেমনই দিনক্ষণ ঠিক করে ভালোবাসা প্রকাশ করাও যাবে না। এটা আপনা-আপনি হবে। আর এটা প্রকাশ করার জিনিস না। ভালোবাসা যত প্রকাশিত কম হবে ততই অনুভূতি বাড়বে।”
বর্তমান……
–“সব তো তাহলে ঠিকই ছিল ঐশানী! কি এমন হলো? তোমার ভাগ্য আমাকে বেছে নিল? সায়ানের আজ তোমার সাথে থাকার কথা। অথচ দেখো আমি আজ আছি তোমার সাথে।”
বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অভয়। এই দীর্ঘ নিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হতাশা আর যন্ত্রণা। নিজের স্ত্রী এর মুখে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা শোনার যন্ত্রণা যেন মৃত্যু যন্ত্রণার সমান। ঐশানী তা বুঝতে পেরে থেমে যায়। অভয় মুচকি হেসে বলে…..
–“থামলে কেন বলো? ভালোই তো লাগছিল!”
–“মিথ্যে কেন বলছেন? আপনার দীর্ঘশ্বাস প্রমাণ করে দিচ্ছে আপনার কষ্ট। আর নিজের স্বামীর সামনে এসব বলতে আমার অস্বস্তিটাও কম হচ্ছে না।”
–“আমার ভালো লাগছে কারণ দ্যা গ্রেট ঐশানীও একজনকে ভালোবেসেছিল। বলা বাহুল্য, হয়ত এখনো ভালোবাসো। কারণ ভালোবাসা পাস্ট টেন্স হয় না। এটা সবসময়ের জন্য প্রেজেন্ট টেন্স। আমাকে না হক! কাউকে তো ভালোবাসো। এটা শুনে ভালোই লাগছে। আর তুমি আদোও কি আমায় স্বামী বলে মানো?”
ঐশানী থমকায়। তার দৃষ্টি স্থির হয়ে থাকে অভয়ের দিকে। পানিতে নেতিয়ে পড়া অভয়ের চুল। অভয়ের দৃষ্টিতে কাতরতা থাকলেও মুখে এক অদ্ভুত হাসি! ঐশানীও যে অভয়কে স্বামী মানে। সেটা অভয়কে বলতে পারবে না। কখনোই না।
ঐশানী জোরালো ভাবে বলল….
–“আপনার কি মনে হয়?”
–“আমার মনে হওয়া না হওয়ার সাথে কিছু যায় আসে কি?”
ঐশানীর আবারও নিরব হয়ে যায়। তা দেখে অভয় বলে ওঠে…..
–“এই ওয়ান্ট টু নো ঐশানী। এমন কি কারণে নিজের এতো বড় ক্ষতি করেছো তুমি? কেনই বা তোমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল সায়ান?”
ঐশানী আবার অতীতে ডুবে যায়।
–“সব ঠিকঠাক চলছিল। কলেজের ক্যাম্পাসের পেছনে পুকুরের পাড়ে গান গাইতে গাইতে আমাকে তার মনের কথা বলায় খুশিতে সেদিন দিশেহারা হয়ে পড়ি। ভালোবাসা পথচলা শুরু হয়। আমরা দুজনে দুজনের সঙ্গে একটা ভালোবাসাময় পৃথিবী সাজিয়ে চলেছিলাম। এই স্বপ্নের জাল বুনতে বুনতে তিন মাস কেটে যায়। এতো সময়ের পর পরই সায়ানের পরিবর্তন ঘটে। আমাকে আগের মতো সময় দিতে চাইতো না। কলেজে আসতো না। হুটহাট মেজাজ গরম করত। আমার সাথে রুড বিহেব করত। এমনকি ওর কি হয়েছে জানতে গেলে ও একদিন সকলের সামনে আমায় অপমান করে। সেদিন এক পাহাড় অভিমান নিয়ে বাড়ি ফিরি। কিন্তু ভোরবেলা ওর ছোট ভাইয়া সজয় আমায় কল করে। সেটাই যেন ছিল কালো দিনের শুরু!”
–“কি এমন বলেছিল সজয়?”
আগ্রহ নিয়ে বলে অভয়।
–“সজয় আমাকে জানায় যে সায়ান হসপিটালে ভর্তি। গত পনেরো আগে সায়ান জানতে পেরেছিল তার একটা কিডনিতে পানি ঢুকে গিয়েছে এবং আরেকটা কিডনিতেও প্রায় পচন ধরেছে আর সেটা যদি ইমিডিয়েটলি চেঞ্জ না করা হয় তবে সে মারা যাবে।”
অভয়ের দম আঁটকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়। উত্তেজিত হয়ে বলে…..
–“এ-কারণেই কি তুমি তোমার কিডনি ওকে ট্রান্সফার করে দিয়েছিলে?”
–“ঠিকই ধরেছেন। কিন্তু এটা করা এতোটাও সহজ ছিল না। কারণ আমি জানতাম আমার পরিবার এটা করতে দেবে না। তাই আমি আমার পরিবারকে জানাই কোচিং থেকে পিকনিক ঠিক হয়েছে বেশ কয়েকদিনে। অনেক কষ্টে সীঁথিকে দিয়ে ম্যানেজ করিয়ে নিই। তবুও বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ডক্টর। ডক্টর বলে, কিডনি চাইলেই যাকে তাকে দেওয়া যায় না। এর এতে আমার ঝুঁকি আছে। আমার বয়স ১৮ বছরের ওপরে হলেও আমি অপারেশন করার জন্য পরিপূর্ণ বয়সের নই। তাছাড়া অন্যকে কিডনি দেওয়ার জন্য ম্যাচ হতে হয়। আমি ডক্টরকে জানায় আমার এতে কিছুই যায় আসে না। আমি এখন এডাল্ট নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারি। সেদিন আমার আর সায়ানের কিডনি ম্যাচ করে। এটা কাকতালীয় নাকি ভাগ্য ছিল আমার জানা নেই। আমি বন্ড পেপারে সাইন করি। সায়ান তখন পুরোপুরি অজ্ঞান। ও জানেও না যে আমি আমার কিডনি ওকে দিচ্ছি। আমার অপারেশন। সায়ানের জ্ঞান ফিরে।”
–“তারপর? এখানেও সব ঠিক ছিল তাহলে? ও কি তোমায় কোনোভাবে ঠকিয়ে চলে যায়?”
ঐশানী ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে কাঁপতে থাকে। চোখ থেকে পানি পড়ে যায়। ওর এমন বেগতিক অবস্থা দেখে অভয় দ্রুত এসে ওর পাশে বসতেই অভয়ের হাত খামচে ধরে অভয়ের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ধরে। ঐশানী মৃদু চিৎকার করে কেঁদে দিয়ে বলে…..
–“হি ইজ এ চিটার! আমায় ঠকিয়ে চলে গেল সে। ও যখন জানতে পারে আমার বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে। আর একদিন হুট করেই নিখোঁজ হয়ে যায়। আমি পাগলের মতো খুঁজেছি ওকে সেই অবস্থায়। আমার অপারেশনে ঘা তখনও শুকায়নি। আমি তাকে না পেয়ে ছন্নাছারা হয়ে পড়ি। তখন আমার পাশে ছিল সীঁথি। আমার পরিবার যেন কেউ বুঝতে না পারে তাই নিজেকে স্বাভাবিক করে নিই। কেটে গেল তিন মাস। আর….”
–“আর?”
–“ওর মৃত্যুর খবর আমি পেলাম।”
অভয় বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছে যায়। ঐশানী প্রচন্ডভাবে কাঁপছে। অভয় দ্রুত উঠে ঐশানীর বাহু ঝাঁকিয়ে বলে…..
–“ঐশানী আর ইউ ওকে?”
চলবে…..
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]