#তবু_মনে_রেখো
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_৫
হিমজুড়ি আর শিউলির পাতায় জমেছে কত নতুন প্রেমের গল্প, চেয়ে দেখো ভোরের আকাশে কুয়াশা মিশেছে অল্পস্বল্প।
সন্ধ্যা মুহিবের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। মুহিব বুকে দুহাত গুঁজে সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে কবিতা আওড়াচ্ছে। সন্ধ্যা বেশ কিছুক্ষন চুপ রইল। সেও সামনে তাকিয়ে মুহিবের উদ্দেশ্যে শুধালো,
‘কী ব্যাপার! মনমরা লাগছে আপনাকে।’
‘হয়ত…’
সন্ধ্যা মুহিবের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। সে সামনের দিকে তাকিয়েই শুধালো,
‘কারণটা কী জানতে পারি?’
মুহিব তাকালো সন্ধ্যার দিকে। তাতে সন্ধ্যা আরেকটু সরে দাঁড়ালো। মুহিব তার উদ্দেশ্যে বলল,
‘এই ধরো, তুমিই কারণ।’
সন্ধ্যা ভড়কে গিয়ে বলল,
‘মানে আমি আবার কী করলাম!’
সন্ধ্যার ভড়কানো দেখে মুহিব হাসলো। বলল,
‘ভয় নেই, গুরুতর অপরাধ নয় যে ফাঁ’সি হবে।’
‘সে না হোক, কিন্তু অপরাধী তো অপরাধের কারণটা জানতেই পারে।’
‘সব অপরাধ তো আর জেনেশুনে হয় না।’
মুহিবের কথা সন্ধ্যা বুঝতে না পেরে নিশ্চুপ রইল। তাতে মুহিব হাসলো। সে আচমকা সন্ধ্যার কাছাকাছি এসে দাঁড়াতেই সন্ধ্যা কয়েক পা পিছু সরে গেল। মুহিব এগিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে নেশাগ্রস্থ কণ্ঠে বলল,
‘মেয়ে তোমার তো শাস্তি প্রাপ্য।’
‘কেন বলুন তো।’
‘আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছো তাই।’
‘এটা আবার অপরাধ নাকি!’
‘হ্যাঁ আমার জন্য অপরাধ।’
‘আচ্ছা শাস্তিটা কী!’
‘যাবজ্জীবন এবং সশ্রম কারাদণ্ড দিবো।’
‘জেলার আপনি?’
‘হ্যাঁ সেই দায়িত্ব আমি নিবো।’
‘মানে!’
‘মানে আমার সাথে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে থাকতে।’
‘সশ্রম?’
‘হ্যাঁ, আমাকে ভালোবাসতে হবে।’
সন্ধ্যা হাসলো। সে অদূরে আঁধারের মাঝে আকাশে অস্পষ্ট চাঁদটার দিকে দৃষ্টি দিল। সে চোখ সরাতেই দেখতে পেল মুহিব হাল্কা আলোতেও তার দিকে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা সরে দাঁড়ালো।
‘ঐভাবে চেয়ে আছেন কেন? আমার অস্বস্তি হচ্ছে।’
‘চোখ সরছে না যে আমার কী দোষ!’
‘আকাশের দিকে চেয়ে দেখুন একবার চাঁদটা কী সুন্দর!’
‘চাঁদই তো দেখছি।’
‘কী?’
‘একটা শুভ্র নিষ্কলুস চাঁদ।’
‘চাঁদ কী আবার নিস্কলঙ্ক হয় না কি?’
‘হয় হয়। আমার আকাশে যে চাঁদ বিচরণ করে সে একেবারে নিস্কলঙ্ক, নিষ্পাপ।’
সন্ধ্যা তাকালো,’যদি সেটি অমবস্যায় হারিয়ে যায়?’
মুহিব হাসলো,’হারাতে দিলেই তো! তাকে তো আমি গ্রহণ করে আগলে বুঁকের মধ্যে সযত্নে রেখে দিবো। ‘
সন্ধ্যার হুট্ করে ভীষণরকম সুখ অনুভব হলো। সে সামনে এগিয়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপরে আলতো করে পা রাখলো। তাতেই সে উৎফুল্ল হয়ে মুহিবকে ডাকলো। মুহিব এগিয়ে গেল। সেও সন্ধ্যাকে অনুকরণ করে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দাঁড়ালো। এক অদ্ভুত শিরশিরে অনুভূতি।
সন্ধ্যা ঐভাবেই দাঁড়িয়ে অদূরে তাকালো। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ঝিঁঝি পোকারা ডাক থামিয়ে দিয়েছে। সে আনমনা হয়ে গেল। সে জানেনা এটার পরিণতি কী হবে! সে কী আদো এই সুখটা পাবে!
সন্ধ্যা আচমকা মুহিবকে প্রশ্ন করে বসলো,
‘আমাকে সত্যি চান?’
‘হ্যাঁ চাই। এতে সন্দেহ আছে? কেন তুমি চাও না?’
‘তবে হালালভাবেই সব হোক।’ সন্ধ্যার কথায় মুহিব আশস্তভরা কণ্ঠে উত্তর দিল,
‘তবে তাই হোক।’
‘যাচ্ছি আমি।’ বলেই সন্ধ্যা পা বাড়ালো।
‘কই যাচ্ছ?’
‘বাড়িতে।’
‘কিন্তু আমার কথাটার জবাব দিলে না, সন্ধ্যা!’
‘যেদিন হালাল হবেন সেদিনের জন্য তোলা রইল জবাব।’
‘কোনদিন পাঠাবো বাবাকে?’মুহিবের কথায় সন্ধ্যা ভরসা খুঁজে পেল। সে জবাবে বলল,
‘যেদিন আপনার মন চাই।’
‘কিন্তু আমার যে শেষ বর্ষের পরীক্ষা বাকী। তারপর নাহয় পাঠাবো প্রস্তাব। কিন্তু এতদিন সহ্য করবো কিভাবে!’
‘আর কোনো পথ নেই। আপনি ততদিনে ভালোমতো পরীক্ষা শেষ করেন। ভালো থাকবেন।’
‘বিদায়টা এভাবে দিচ্ছ? আমি আজ রাতে চলে যাবো।’
সন্ধ্যা চলে আসতে নিতেই থমকে দাঁড়ালো। মুহিব আজ চলে যাবে! সে কীভাবে থাকবে! সন্ধ্যা নিজেকে শক্ত করলো। কেন! মুহিব আসার আগে সে তো দিব্যি ভালো ছিল! এখনও সেভাবেই থাকবে। কিন্তু থাকবে কীভাবে! মুহিবের মায়াতে যে সে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে! তাই তো মুহিবের দিকে আর তাকানোর সাহস পাচ্ছে না সে। যদি কান্না আটকাতে না পারে!
সন্ধ্যা পিছু ফিরে তাকালো। মুহিব তারই দিকে জবাবের আশায় তাকিয়ে আছে। সে সামনে ফিরে জবাব দিল,
‘আপনি ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়েন। সহীহ সালামতে ফিরে আসবেন। অপেক্ষায় থাকবো।’
মুহিবের মন খারাপ হলো। সন্ধ্যা তাকে এভাবে বিদায় দিচ্ছে!সন্ধ্যার হুট্ করে কঠিন হওয়াটা মুহিবকে প্যারা দিল। কী হয়েছে মেয়েটার হুট্ করে!
‘ঠিকাছে। এই পরীক্ষাটা শেষ হোক তারপর তোমার আমার মিল আর কেউ আটকাতে পারবে না সন্ধ্যা। প্রমিস করলাম। এসেই তোমার বাড়িতে প্রস্তাব দিয়েই নিজের সাথে বেঁধে নিবো।’
সন্ধ্যা চলে যেতে যেতে মুহিবের কথাগুলো শুনে কান্নার মাঝেও মুচকি হাসলো।
————-
রাতে রওনা দিবে মুহিব। প্রতিবার এভাবে যাওয়ার সময় তার মন ভালো থাকে কেননা বহুদিন পরে আবার বন্ধুদের দেখবে কিন্তু এইবার কেন জানি খারাপ লাগা কাজ করছে। সে রুমে গিয়েই জানালা খুলে দিল। জানালার মুখোমুখি টেবিলে খাতা কলম নিয়ে বসে পড়লো।
বেশ কিছুক্ষন ভাবনা থেকে লিখে সে দরজা খুলে ছাদের কর্নারে গিয়ে দাঁড়ালো। মুগ্ধ চোখে শীতের কুয়াশা ঘেরা নিস্তব্ধ নির্জীব রাত দেখছে সে। আশ্চর্য! ইদানিং সবকিছু তার চোখে এতো মনোমুগ্ধকর লাগছে কেন!
পরমুহূর্তে বিদায়ের কথা মনে হতেই তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই কয়েকদিন প্রতিটাদিন সন্ধ্যাকে নিয়ম করে দেখা তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন সেই মেয়েটিকে সে পুরো দুইটা মাস চোখের দেখাও দেখতে পারবে না। থাকবে কীভাবে সে! মেয়েটা যে তাকে এক অদৃশ্য মায়াতে জড়িয়ে নিয়েছে। একটু ছুঁয়ে দেখার তৃষ্ণা তাকে এই দুইমাস গুমরে গুমরে খাবে। সন্ধ্যা তাকে ছাড়া ভালো থাকবে তো! না কি সন্ধ্যাও তারই মত অপেক্ষায় দিন কাটাবে!
মুহিব অদূরে দৃষ্টি দিয়ে বুলি আওড়ালো,’মন খারাপ করো না। আমি পরীক্ষাটা শেষ করেই ফিরে আসবো তোমার কাছে। এসেই নিজের সাথে বেঁধে নিবো।’
‘বিড়বিড় করে কী কইতাছোস?’
মুহিব ফিরে তাকালো। হারুনকে দেখতে পেয়ে আবার সামনে দৃষ্টি দিল।
‘কইলি না তো!’
‘তোর মতো তো খবর নিয়ে ঘুরি না।’
‘প্রেমে পড়ার পরে তুমি বদলায় যাইতেছো মিয়া।’
মুহিব ফিরে তাকিয়ে বলল,’তুইও নিজেকে বদলে ফেল।’
হারুন মাথা দুদিকে হেলিয়ে হাত দুটো সোজা করে আরমোড়া ভেঙে হামি তুলল। বলল,
‘আমি কী খারাপ নাকি?’
মুহিব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,’সেটা পুরো এলাকা জানে। তোর ভয়ে পাড়ার মহিলারা মেয়েদের বের হতে দেয় না। সেটা তো বুঝি।’
‘চিন্তা করো না। ওই মাইয়ারে পাইলে আর কারোর দিকে তাকামু না।’
মুহিব কিছু একটা আঁচ করতে পেরে বলল,’তুই যেভাবে বলছিলি। সেই অনুযায়ী মেয়েটি ভালো। এতো ভালো মেয়ে আর পরিবার তোর কাছে তাকে দিবেই বা কেন?’
‘তুই আমার ভাই বন্ধু হইয়া এভাবে কইস না।’
‘তো কিভাবে বলবো? তোর কোনো ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই যে তোরে তাকে দিবে। এজন্য বলি কী ভালো হয়ে যা। বটতলায় বসে মেয়েদের টি’জ করিস না। তাদের একটা স্বাভাবিক জীবন দেয় ভাই। কোনো একটা কাজ টাজ ধর।’
‘সবকিছু ছাইড়া দিমু যদি ওই মাইয়াটারে পাই।’
‘যদি মেয়েটাকে না পাস?’
‘হারুন চাইছে আর পাইনি এমন কিছু আছে? আমি তো পামুই। যেভাবেই হোক।’
মুহিব কিছু একটা আঁচ করতে পেরে হারুনকে শাসনের সুরে শুধালো,
‘ভুলক্রমেও মেয়েটির বিপরীতে গিয়ে কিছু করবি না বলে দিলাম।’
‘ঠিকাছে।’ হারুনের জবাব পেয়েও মুহিব বেশ কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে রইল। ছেলেটির বিশ্বাস নেই। যদি সে আর কয়েকদিন থেকে যেতে পারতো এখানে! তাহলে কিছু একটা করে হারুনকে সংশোধন করা যেত কিন্তু এখন তো থাকা সম্ভব না। তার যে ফাইনাল পরীক্ষা!
#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার নজরে দেখার অনুরোধ।রিচেক দেওয়া হয়নি। অগোছালো হওয়ার জন্য দুঃখিত।)