#শেষের_পাতায়_তুমি?
#পর্ব-১১
#writer_Shanta_islam
-ছাতার মাথা কিছুই হয়নি। কিছু বলতেও পারিনি কিছু খেতেও পারিনি।
রাফি আমার কাধে শান্তনা দিয়ে বললো,,আগেই বুঝে গেছিলাম তোর কিস সম্পর্কে ধারনা নেই। তোকে শিখাতে হবে কিস কীভাবে করতে হয়।
ছোট ভাই এখন বড় ভাইকে চুম্মু খাওয়ার টিউটোরিয়াল দিবে কি দিন এলো।
-এমন লাথি মারবো উগান্ডা যেয়ে পরবি। সর এখান থেকে।
রাতে আর ঘুম হলো না। একে তো সুচরিতার টেনশন দুইয়ে সাওনের গ্যাসের প্রবলেম। কতোক্ষন পর পর একটা করে বোমা ছারছে। ছি কি বিছরি গন্ধ। যেই পরিমান বিরিয়ানি আর কেক গিলেছে এক সপ্তাহ না খেলেও চলবে। রাফির নাকে কি গন্ধ যায় না। এতো গন্ধের মধ্যে ঘুমাচ্ছে কীভাবে ছেলেটা এটাই বুঝতে পারছি না।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি বিছানার নিচে পরে আছি আর মহারাজ দুটো চেগিয়ে খাটে ঘুমোচ্ছে।
আমি এতো তারাতারি উঠার বান্ধা না কিন্তু আজ একটু তারাতারিই ঘুম থেকে উঠে গেলাম।
ডাইনিং রুমের সামনে যেতেই কিছু শুনতে পেলাম,,,ইশা সুচরিতার হাতে খাবারের প্লেট দিচ্ছিলো আর বলছিলো,,,সাওন বলেছে তারাতাড়ি বাচ্চা নিবে। আগে থেকেই বেবির জন্য সব প্লেনিং করে রেখেছে। সেদিনও নাকি এক জোরা ছোট ছোট জুতো আর মুজা নিয়ে এসেছিলো।
-সুচরিতা তোর আর সাদিকের প্লেন কি? কবে বাচ্চা নিছিস?
ইশার কথাশুনে সুচরিতা কোনো জবাব দেয় না। একটা বাটি নিয়ে কিছু আনার ভান করে রান্নাঘরে চলে যায়। আমি সুচরিতার পিছু যাই। রান্না ঘরে যেয়ে দেখি মেয়েটা কাদছে। আমার জন্য আজ সুচরিতার এই অবস্থা। বেচারি কাওকে কিছু বলতেও পারে না সইতেও পারে না। আমি একজন অক্ষম স্বামী,,, নিজের স্ত্রীকে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই দেইনি। দুখের দিন শেষ সুচরিতা তোমাকে আর কাদতে হবে না। কথাগুলো আনমনে ভাবছিলাম হঠাৎ সুচরিতা আমাকে দেখে ফেলে।
– তুমি! কখন উঠলে?
– এই তো একটু আগে,,,
– বাহ আজ তারাতাড়ি উঠে গেছো। টেবিলে বসে পরো নাস্তা লাগিয়ে দিচ্ছি। কথাটা বলে সুচরিতা আমাকে ক্রোস করে যেতে নেয় আমি পিছন থেকে ওর হাতটা ধরে নেই,,,তুমি আবার কাদছো!
– কই কাদছি? ওহ চোখে কিছু একটা চলে গিয়েছিলো তাই,,,
– তুমি মিথ্যেটাও ভালো করে বলতে পারো না সুচরিতা।
– আরে কি মিথ্যা বললাম,,,,
এমন সময় তানিয়া রান্নাঘরে এসে পরে তাই সুচরিতা আর আমার মধ্যের কথাটা ওখানেই থেমে যায়।
নাস্তার টেবিলে তানিয়া আর রাফি এক সাথে বসতে নিলে আমি ওদের মধ্যে বসে পরি তাই তানিয়া অপজিট সাইডে বসে। এদের প্রেম কাহিনির জন্য একদিন আমাকে ফাসি খেতে হবে।
-তোরা আরো কয়েকটা দিন থেকে গেলে ভালো হতো,,,
মার কথায় রাফি উত্তেজিত হয়ে বললো,,,হ্যাঁ হ্যাঁ তানিয়া মানে সবাই আরো কয়েকটা দিন থেকে গেলে ভালো হতো। হঠাৎ টের পেলাম আমার পায়ের পাশে কিছু একটা নাড়াচড়া করছে নিচে তাকিয়ে দেখি তানিয়া আর রাফি পায়ে পা লাগিয়ে দুজন দুজনকে ঘুতো দিচ্ছে। সর্বনাশ সুচরিতা জানতে পারলে আমার গলা টিপে মেরে ফেলবে। সাথে সাথে মাথা উচু করে তানিয়ার দিকে তাকাতেই দেখি শালিকা আমার মিটমিট করে হাসছে আর রাফিকে চোখ মারছে। রাফিও কম কিসে ঠোঁট উচু করে চুমু দেখাচ্ছে। এরা কি সরম লজ্জার মাথা খেয়েছে নাকি বড়দের সামনেই প্রেম শুরু করে দিয়েছে। তানিয়ার কথা নাহয় বাদি দিলাম,,, রাফি! রাফি আমার ভাই হয়ে কীভাবে এতো লুইচ্চা হলো। কই আমি তো আমার পুরো জীবনে এমন লুইচ্চামি করিনি। কার থেকে শিখলো ছেলেটা আবার ঠোঁট উচু করে চুমু দেখাচ্ছে,,,আর আমি এখন পর্যন্ত নিজের বউয়েরি চুমু খেতে পারলাম না। কী জীবন! এদের নিব্বা নিব্বির প্রেম দেখে আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না। পানি খেতে গেলাম সাথে সাথে বিশুম খেলাম। সুচরিতা তারাহুরো করে আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,,আস্তে পানি খাও,,,নাহলে আবার বিশুম খাবে। সুচরিতা যদি একবার জানতে পারে তানিয়া আর রাফির মধ্যে ইটিস পিটিস চারশো বিশ চলছে তাহলে এ পানির মধ্যেই আমাকে তেলাপোকার বিষ মিশিয়ে খাইয়ে দিবে এটা সিওর।
,
,
,
নাস্তা শেষে তারাতারি ওদের বিদায় করলাম। বিপদ ঘরে না রাখাই ভালো। ভাগিস সুচরিতা কিছু টের পায়নি। টের পেলে আমার অবস্থা যে কি হতো আল্লাহ মালুম। সারারাত ঘুম হয়নি। তাই নিজের রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কাধটা প্রচুর ব্যাথা করছে। রাতে নিচে পরে গিয়েছিলাম তাই হয়তো আঘাত লেগেছে। কাধে হাত রেখে আহ করে হালকা চেচাতেই সুচরিতা দৌড়ে আসে।
– কি হলো,,চেচালে মনে হলো?
– তুমি আমার শব্দ শুনলে কীভাবে?
– না মনে হলো,,তাই ছুটে এলাম। একি তুমি কাধে হাত দিয়ে রেখেছো কেনো? কি হয়েছে?
-কাল রাতে বিছানা থেকে পরে গিয়েছিলাম তাই হয়তো আঘাত লেগেছে। কথাটা বলতেই সুচরিতা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর হাতে একটা বাটি নিয়ে এসে বললো গেঞ্জি খোলো।
– গেঞ্জি খুলবো কিন্তু কেনো?
– যেটা বলেছি সেটা করো এতো প্রশ্ন করো কেনো?
সুচরিতা হয়তো ইশার বেবি নেওয়ার কথাটায় বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছে। কি আর করার বউ যখন এখনি চাইছে তাহলে এখনি বাসর আর বেবি দুটোরি কাজ একসাথে সেরে ফেলি। গেঞ্জি খুলতেই সুচরিতা আমার কাধে তেল জাতীয় গরম কিছু দিয়ে মালিশ করতে শুরু করলো। ওহ তাহলে এই ব্যাপার আর আমি কি না কি ভেবে বসলাম। আরাম লাগছে খুব। বলতেই হবে মেয়েটার হাতে যাদু আছে।
ঘুম থেকে উঠে দেখি সুচরিতা নেই। মালিশ করায় কখন ঘুমিয়ে গেছি দুপুর ঘরিয়ে সন্ধ্যা পার হলো। হঠাৎ ফোনে একটা মেসেজ আসলো,,ফোন অন করে দেখি ইন্টারভিউয়ের সিলেকশনের মেসেজ এসেছে আমি সিলেক্ট হয়ে গেছি কাল থেকে জয়েন।
-সুচরিতা,,মা,,সুচরিতা সবাই গেলো কোথায়?
ডাইনিং এ যেয়ে দেখি মা আর সুচরিতা মিলে টিভি দেখছে। সুচরিতার হাতে ফোনটা ধরিয়ে বললাম,,,এই নেও ইন্টারভিউয়ের রেজাল্ট সিলেক্ট হয়ে গেছি,,এখন খুশি তো।
মা আর সুচরিতার খুশি দেখে কে,,,মা গেছে মিষ্টি আনতে আর সুচরিতা মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে বার বার মেসেজটা চেক করছে। বুঝতে পারছি মেয়েটা খুব খুশি হয়েছে।
-সুচরিতা একটা প্রবলেম হয়ে গেছে!
কথাটা বলতেই ক্ষনিকের মধ্যে সুচরিতার মুখ থেকে হাসিটা উধাও হয়ে গেলো,,সুচরিতা একটু ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
– আমি যে টাই বাধতে পারিনা। আমার কথাশুনে সুচরিতা একটা বড় হাফ ছেরে বললো,,ওহ আল্লাহ,, সাদিক এভাবে কেও ভয় দেখায়। আমি ভাবলাম কী না কী হয়ে গেছে।
আমার আর সুচরিতার টুনাটুনির সংসারটা খুব ভালো চলছে। সুচরিতা প্রতিদিন আমাকে টাই বেধে দেয়,,শুধু টাই না ওকে ছাড়া এখন আমার জীবন চলে না। ঘড়ি মানিব্যাগ অফিসের ফাইল হাতের কাছে থাকলেও খুজে পাই না যতক্ষণ না সুচরিতা খুজে দেয়। মধ্যে দিয়ে হঠাৎ আমার প্রচন্ড জ্বর এসেছিলো। মেয়েটা না ঘুমিয়ে দিন রাত আমার সেবা করে গেছে। যত দিন যাচ্ছে মেয়েটার প্রতি ভালোবাসা বেরে যাচ্ছে। ওকে ছাড়া এক মূহুর্ত এখন কল্পনা করতে পারি না। আজ ভাবছি অফিস থেকে এসে ওকে আমার মনের কথা বলে দিব। বিয়ে হয়েছে অনেকগুলো দিন পার হয়ে গেলো কিন্তু এখনো সুচরিতাকে আমার মনের কথা বলতে পারিনি। অফিস থেকে আসার পথে এক মুঠো গোলাপ সাথে কিছু চকলেট আর একটা টেডি নিয়ে নিলাম। টেডিটা ওর হাতে ধরিয়ে বলবো এটার মতো আমার একটা কিউট বেবি চাই। তখন সুচরিতার চেহারাটা নিশ্চয়ই লজ্জায় লাল হয়ে যাবে। সেদিন ইশার কথায় সুচরিতা অনেক কেদেছিলো আর কাদতে হবে না মেয়েটাকে। আচ্ছা ওর কী গোলাপ পছন্দ হবে? প্রোপোজ করার সময় বেশিরভাগ ছেলেরা গোলাপ ফুল দিয়েই প্রোপোজ করে। গোলাপ পছন্দ না হলে কাল অন্য ফুল নিয়ে আবার প্রোপোজ করবো। দূর আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাবো। কী ভাবছি এসব সুচরিতার অবশ্যই গোলাপ পছন্দ হবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাসায় পৌছে গেলাম। পিছনে একহাতে ফুলগুলো লুকিয়ে অন্য হাতে টেডি আর চকলেট নিয়ে কলিং বেল চাপলাম। বেল দিতেই সুচরিতা দরজা খুলে দিলো। সুচরিতার ঠোঁটে সেই মলিন হাসি নিশ্চয়ই টেডিটা দেখে খুশি হয়েছে। আমিও ওকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলাম যেই ওর হাতে টেডিটা দিতে যাবো সুচরিতার চোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। ওর কান্না দেখে মুহুর্তের মধ্যেই আমার হাসি মুখে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। সুচরিতা দরজা থেকে একটু সরে দাড়াতেই ওর পিছন থেকে রিয়া বেরিয়ে এলো।
-সাদিক তুমি চলে এসেছো। কথাটা বলে রিয়া দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আর আমার পিছন থেকে লুকানো গোলাপগুলো মাটিতে লুটিয়ে পরে। দরজার ওপাশে সুচরিতা কাদছে আর এপাশে রিয়া। আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি,,আমার সাথে এটা কী হচ্ছে,,,
চলবে,,,,