#শেষের_পাতায়_তুমি?
#পর্ব-১০
#writer_Shanta_islam
-তুই এখনো ভার্জিন আছিস?
-তোকে তো ওসকার ছুরে মারা উচিত,,শুধু ওসকার না তোর নাম স্বর্নঅক্ষরে লিখে রাখা উচিৎ।
রাফি আর সাওন আমাকে নিয়ে অনেক্ষন মজা করলো। আর আমি বোকা প্রানী ওদের মজার কোনো উত্তর ও দিতে পারলাম না।
আজ ওরা যাবে না অনেক রাত হয়েছে তাই আমাদের এখানেই থাকবে। ইশা, আর তানিয়া সুচরিতার সাথে আমাদের রুমে ঘুমাবে। আমি, সাওন আর রাফি একসাথে রাফির রুমে ঘুমাবো।
রাফি- সাদিক ভাই আর যাই করো ঘুমের মধ্যে আবার চিৎকার করে উঠো না। তোমার এই জিনিসটা খুব ভয়ংকর। রাফি বিছানা করতে করতে কথাগুলো বললো। রাফির কথাশুনে সাওন আমার থেকে একটু দূরে সরে বললো,,,আয় হায় সাদিক তোর সাথে আবার জ্বীন ভুত আছে নাকি? আমি আয়াতুল কুসরি পুরোটা জানি না।
-আরে না কি যে বলিস,,,এখন আর রাতে চিৎকার করে উঠি না,,প্যানিক এটাকটাও বেশি হয় না,,,
রাফি- ভাইয়া সত্যি বলছিস? তার মানে তুই আস্তে আস্তে ভালো হচ্ছিস?
সাদিক- তেমন কিছু না সুচরিতা থাকে যে তাই,,,,,কথাটা অর্ধেক বলে থেমে গেলাম।
সাওন রাফিকে পানির খালি গ্লাসটা হাতে ধরিয়ে পানি আনতে বললো রাফি রুম থেকে বের হতেই সাওন আমাকে বললো,,,তুই কি এখনো রিয়াকে নিয়ে পরে আছিস?
সাওনের কথায় আমি সোয়া থেকে উঠে বসে বললাম,,,তুই কি বলতে চাইছিস রিয়াকে নিয়ে পরে আছি মানে? রিয়া আমার ভালোবাসা,,আমি ওকে ভালোবাসি। রিয়াকে আমি কখনো ভুলতে পারবো না। আর কেও ওর স্থানও নিতে পারবে না।
কথাটা বলা শেষ করতেই পিছন থেকে কিছু একটা পরে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি ফুলদানি পরে আছে আর পাশে দাড়িয়ে আছে সুচরিতা। ছলছল চোখে সুচরিতা বললো,,,ঘুমোনোর আগে ওষুধটা খেয়ে নিও! টেবিলে ওষুধ রেখে এক প্রকার দৌড়েই সুচরিতা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
– সুচরিতার কি হলো? আমি দেখে আসছি,,,যেই বিছানা থেকে উঠতে যাবো সাওন আমার হাত ধরে বললো,,,মেয়েটাকে আর কত কস্ট দিবি?
-সাওন তুই কি বলছিস? আমি সুচরিতাকে কস্ট দিব কেনো?
-হ্যাঁ তুই সুচরিতাকে কস্ট দিচ্ছিস,,নিজেও কস্ট পাচ্ছিস ওই মেয়েটাকেও কস্ট দিচ্ছিস? কেনো? কোন কারনে এতো কস্ট? রিয়া রিয়ার জন্য? কোন রিয়া যার এখন কোনো অস্তিত্বই নেই সেই রিয়া রিয়া করে নিজেও কস্ট পাচ্ছিস নিজের স্ত্রীকেও কস্ট দিচ্ছিস। গ্রোয়াপ সাদিক তুই শুধু নিজের জীবনকে থামিয়ে রাখিসনি তোর সাথে ওই মেয়েটার জীবনটাও থামকে আছে। তুই রিয়াকে নিয়ে এতোটা ডুবে আছিস সুচরিতার কথাটা একবারো ভাবিসনি। মেয়েটাকে কখনো ওর স্ত্রীর মর্যাদা দেসনি।
সাওনের কথায় আমি মাথা নিচু করে বললাম,,,সুচরিতা আর আমি শুধু ভালো বন্ধু,,স্বামী স্ত্রীর মতো আমাদের মধ্যে তেমন কিছু নেই সুচরিতাই বলেছে।
– তুই কি সুচরিতার চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখতে পাস না? আমাকে একটা কথা বল মেয়েটা যদি তোকে নাইবা ভালোবাসে তাহলে তোর মতো একটা আধ মরা ছেলের সাথে কেনো আছে? ও তোকে ডিবোর্স দিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পারতো,,, বিয়ের এতোগুলো দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনো কেনো ও তোর কাছে পরে আছে?
সাওনকে জবাব দেওয়ার মতো কোনো উত্তর আমার কাছে নেই৷ ওর প্রতিটি কথা সত্যি,,সুচরিতা এখনো কেনো আমার কাছে পরে আছে? বন্ধুত্বের খাতিরে নাকি সত্যিই সত্যিই ভালোবাসার টানে! সুচরিতা কী সত্যিই আমাকে ভালোবাসে?
সাওন- সাদিক মেয়েটার ব্যাপারে একটু ভাব। তোদের দুজনের জীবন আবার নতুন করে শুরু কর। তোর জন্য না হলেও অন্তত ওই মেয়েটার জন্য।
আমি সাওনের কথার কোনো জবাব দিলাম না। শুধু শুনলাম!
,
,
,
– এই শুন আমি কিন্তু মধ্যে ঘুমাবো,,এই সিটটা আমার।
– হ্যাঁ তুই মধ্যে ঘুমাবি আর আমাদের দুজনকে কোলবালিশ বানাবি। এই তানিয়া সুচরিতা কোথায় রে? সেই কখন থেকে ওকে দেখছি না।
-হ্যা আমিও ওকে দেখছি না।
এমন সময় জানালা দিয়ে একটা ডিল মারার শব্দ হলো ইশা দেখতে চাইলে তানিয়া আটকে দেয়,,,আমি দেখছি ইশাপু তুই ঘুমা। তানিয়া জানালায় যেয়ে দেখে রাফি ওকে ডাকছে,,,
-জান জলদি বের হও!
তানিয়া হাতের ইশারায় বললো আসছি। রাফি ঠোঁট দুটো উচু করে চুম্মা দিয়ে চলে গেলো।
,
,
অনেক চেষ্টা করছি ঘুমানোর কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। পাশে সাওন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে,,এক ঘন্টা হয়ে গেছে রাফি এখনো পানি নিয়ে আসেনি। আমি সুয়ে সুয়ে সুচরিতার কথা ভাবছি। মেয়েটা আমার জীবনে আসায় অনেক কিছুই চেঞ্জ করে দিয়েছে। যেই ছেলেটা রুমের এক কোনায় বসে কাদতো সে ছেলেটা এখন হাসতে শিখেছে শুধু ওর জন্য। সুচরিতাকে দেখতে ঘুম ইচ্ছে করছে। আমি আর থাকতে পারলাম না বিছানা থেকে উঠে সুচরিতাকে খুজতে লাগলাম ইশা বললো সুচরিতা নাকি ওখানে নেই। হয়তো ছাদে গেছে আমি এক পা দু পা করে ছাদের দিকে এগোতে লাগলাম। ছাদে পৌছে যা দেখলাম আমার চোখ উল্টে গেলো। রাফি আর তানিয়া চুমু খাচ্ছে লিপ টু লিপ।
সর্বনাশ সুচরিতা জানতে পারলে আমাকে আস্তো গিলে খাবে। আমি ওদের ধমক দিয়ে বললাম এসব কি করছিস তোরা?
আমার কথাশুনে দুজন দু’দিকে সরে গেলো। এমন সময় পিছন থেকে সুচরিতার কন্ঠ ভেসে এলো- কি হয়েছে? পিছনে তাকিয়ে দেখি সুচরিতা। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। সুচরিতা আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলো।
-সু,, সু,,সু,,,সুচরিতা,,,,
-কি হয়েছে তুমি এভাবে আটকে আটকে কথা বলছো কেনো? আর তোরা দুজনি বা এতো রাতে ছাদে কি করছিস।
-আ,,আ,,আসলে আপু আমরা তিনজন মিলে ট্রুথ ডেয়ার খেলছিলাম। কি দুলাভাই বলেন ট্রুথ ডেয়ার খেলছিলাম। তানিয়া ইশারা দিয়ে সাদিককে মিথ্যা বলতে বললো। সাদিকো তানিয়ার কথায় তাল মিলিয়ে বললো,,,হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা তো ট্রুথ ডেয়ারি খেলছিলাম।
-এতো রাতে ছাদের মধ্যে কীসের ট্রুথ ডেয়ার?
রাফি দৌড়ে এসে সাদিকের কানে বললো,,,ভাই এইবার বাচিয়ে নে। কিছু একটা কর আমি তানিয়াকে নিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছি আর ভাবি বেশি প্রশ্ন করলে সাওন ভাইয়ের নিঞ্জা টেকনিক কাজে লাগিয়ে চুমু দিয়ে দিবি। কথাটা বলেই রাফি আমার কাছ থেকে সরে গেলো। এরা দুজন ফাসবে ফাসবে আমাকেও ফাসাবে।
– এই তোমরা ফিসফিসিয়ে কানে কানে কি বলছো? সন্দেহ লাগছে কিছুতো একটা ঘটেছে,,,কথাটা শেষ হতে না হতেই আমি সুচরিতার হাত দুটো ধরে ওর চোখে চোখ রেখে বললাম,,,সুচরিতা তোমার সাথে আমার কিছু ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে। এই ফাকে রাফি তানিয়াকে নিয়ে চমপট দিলো। আমি সুচরিতার হাত ধরে ভাবছি কি বলবো।
– সাদিক কিছু হয়েছে? তুমি এতো ঘামছো কেনো?
কি বলি এখন? চুমু দিবো? চুমু দিলে আবার যদি থাপ্পড় মেরে বসে। সুচরিতার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ভাবছি চুমু দিবো কি দিবো না?
– সাদিক? কি হলো? তুমি ঠিকাছো?
– না ইয়ে মানে,,সুচরিতা!
– হ্যাঁ বলো আমি শুনছি,,,
-সুচরিতা!
– হ্যাঁ বলো?
– আসলে মানে সুচরিতা!
– থাকো তুমি তোমার ইয়ে মানে আসলে নিয়ে। আমি চললাম৷ কথাটা বলে যেই দু পা বারালাম সাদিক পিছন থেকে আমার বা হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে আমাকে জাপটে ধরলো। এই প্রথম সাদিক আমাকে ওর এতো কাছে টেনে নিয়েছে। আমার হৃদপিন্ডের স্পিড বেরে যাচ্ছে। সাদিকের চোখ থেকে চোখ সরাতে পারছি না। অনেক কস্টে নিজেকে সংযত করে বললাম
– সাদিক! কি করছো?
-সুচরিতা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো,,,
-হ্যা বলো,,,
– সুচরিতা আমি তোমাকে,,,,
-তুমি আমাকে?(এতোদিনের অপেক্ষা মনে হচ্ছে আজ শেষ হবে। সাদিক হয়তো বলবে ও আমাকে ভালোবাসে। আমার জীবনের সেই দিনটা আজ এসে পরেছে।)
-আমি তোমাকে,,,
-বলো সাদিক তুমি আমাকে?
– আমি তোমাকে ইয়ে মানে তোমাকে চাঁদ,,চাঁদ দেখাতে চাই। আজকের চাদটা কতো সুন্দর দেখেছো! কথাটা বলা মাত্রই সুচরিতা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ওর কাছ থেকে সরিয়ে বললো,,নিকুচি করেছি তোমার চাঁদের। থাকো তুমি তোমার চাঁদ নিয়ে,,,
সুচরিতা ছাদ থেকে চলে গেলো। আর আমি কপালে হাত দিয়ে ভাবছি এটা আমি কি করলাম,,আমি তোমাকে বের হলো কিন্তু ভালোবাসি শব্দটা আর বের হলো না,,,,নিজেকে ওবায়দুল কাদেরের মতো মনে হছে। অর্ধেক কথা বলতে পারলেও অর্ধেক জুলে থাকে। রুমে যেতেই রাফি আমাকে চেপে ধরে,,কি হয়েছে চুমু খেয়েছিস?
-ছাতার মাথা কিছুই হয়নি। কিছু বলতেও পারিনি কিছু খেতেও পারিনি,,,,
চলবে,,,,