#আমি_আপনিতে_আসক্ত (৩+৪)
#ফারহানা_জান্নাত
[কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ]
“আপু!”
–আরুহি অবাক হয়ে ছবিটা দেখে। একটা ছবিতে প্রায় ১২-১৩ জন ছেলে-মেয়ে আছে। সেই ছবিতে রাহুলের পাশে মাইশা দাঁড়িয়ে আছে। আরুহি ছবিটার দিকে অনেক্ষণ থেকে তাকিয়ে থাকে। তারপর সব ভূলে বেলকনিতে গিয়ে বসে দুমনা ভাবনা নিয়ে রাহুল এর ইনবক্সে সেই গ্রুপ ফটোটা সেন্ড করে। রাহুল দেখে আরুহি খান আইডি থেকে মেসেজ আসছে। কপালে ভাজ ফেলে, সে আরুহির মেসেজের আশা করে নাই। মেসেজ সিন করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে সিন করে। দেখে তার আইডি থেকে নেওয়া একটা পিক দিসে তাকে। রাহুল বুঝতে পারে না এই পিক ও দেখে কি করবে?
“কি?”
–রাহুল এর রিপ্লে পেয়ে আরুহির হার্ডবিট বেরে যায়। নিজেকে শান্ত করে রাহুল স্যারকে কি কি বলবে ভেবে নেয়।
“স্যার এই এলবাম টাতে যারা যারা আছে সবাই কি আপনার পরিচিত?”
“হ্যা অবশ্যই সবাই আমরা ভালো ফেন্ড। কেনো কি সমস্যা?”
“আচ্ছা আপনি কি এই আপুটাকে চেনেন?”
–আরুহি মাইশার ছবিটাকে মার্ক করে দেয়। রাহুল ছবিটার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আরুহি কে রিপ্লে দেয়।
“হ্যা মাইশা নাম, সবাই আমার ফেন্ড তাহলে ওকে চিনবো না কেনো? আপনি কি ওকে চিনেন?”
“আচ্ছা স্যার মাইশা আপু এখন কই আছে বলতে পারবেন? আমি ওনার একজন বড়ো ফেন্ড। উনি যখন গল্প লিখতেন তখন থেকে আমার ভালো সম্পর্ক। তবে উনাকে আমি ৫ বছর থেকে খুজতেছি কিন্তু পাচ্ছি না।”
–রাহুল ভাবতে থাকে সে কি বলবে। মাইশা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই গল্প লেখা বাদ দিছে। তার জন্য হয়তো তার গল্প প্রেমিরা তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। তারপর হুট করে রাহুল কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বলে।
“এই আপনি ৫ বছর আগে কোন ক্লাসে ছিলেন?”
“এ্যা কেনো! নাইন এ ছিলাম।”
“আপনি কোন ক্লাস থেকে ফেসবুক চালান।”
“হুহ্ ক্লাস নাইন থেকেই।”
“এই মেয়ে তাহলে বললেন কিভাবে আপনি, যে আপনি মাইশার গল্প প্রেমি!! মাইশা তো ৫ বছর আগে থেকে গল্প লেখা বাদ দিছে। আর আপনি ৫ বছর আগে ফেসবুক আইডি খুলছেন। তারমানে মাইশার গল্প পড়তে পারেন কিন্তু কথা কখন ও বলেন নাই বুঝতেই পারতেছি।”
“আসলে কি স্যার আমি তো মাইশা আপুর গল্প প্রেমি। আমি উনার অনেক গল্প পড়ছি কিন্তু এখন নতুন কোনো গল্প উনি দেন না। তাই আপনাকে বললাম যে মাইশা আপু এখন কোথায় আছে একটু বলবেন প্লিজ।”
“জানি না কই আছে।”
“স্যার প্লিজ মাইশা আপুকে আমার দরকার প্লিজ বলেন কই আছে উনি।”
“বললাম তো জানি না।”
—————–
–রাহুল আর কিছু না বলে অফ লাইনে যায়। আরুহি ঠোঁট উল্টায় কেঁদে দেয়। তার আপুকে কি সে খুঁজে পাবে না?
“আপু তুমি কোথায় গেলে আপু। তুমি কি তোমার পিচ্চিকে ভূলে গেছো? তোমার মতো আমাকে আর কেও আদর করে না আপু। আপু তুমি আমার কাছে ফিরে আসো প্লিজ আপু প্লিজ।”
–আরুহি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথাগুলো বলে। মাইশা আরুহির ১০ বছরের বড় ছিলো। আরুহি কে অনেকটা ভালোবাসতো। আর মাহির তখন অনেক ছোট ছিলো। ঠিক মতো সে মাইশা আপুর কথা বলতে পারে না। ক্লাস ওয়ান কি টু’তে ছিলো ও। আরুহি রুমে এসে শুয়ে পড়ে।
[সকালে]
“আপু শোনো মাইশা আপু ফিরে আসছে।”
–মাহির অনেক আগে থেকেই আরুহির দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে কিন্তু খুলতিছে না। এই দিকে আয়ুশ আর মিতু হসপিটালে গেছে। মাহিরের স্কুল ১০ টা থেকে আরুহি তাকে রেখে ভার্সিটিতে যায় প্রতিদিন। কিন্তু আজকে আরুহি এখন ও ঘুম থেকে উঠে নাই দেখে বুদ্ধি করে মাইশার নাম নেয়। মাহির বুঝতে পারে না, যে ছেড়ে গেছে তার নাম আরুহি আপু শুনলে কষ্ট পায় কেনো? আরুহি ধরফরিয়ে উঠে দরজা খুলে এইদিক সেইদিক তাকায়। কিন্তু মাইশাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে মাহির এর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
“হিহি কেও নাই। তুমি ঘুম থেকে উঠছো না দেখে আমি মাইশা আপুর নাম নিছি।”
“মাহির তুই আবার ও মজা করলি। তোকে কতোবার বলবো মাইশা আপুকে নিয়ে মজা করবি না।”
“তুমি উঠছো না তো কি করবো? চলো আমি স্কুলে যাবো আপু।”
“তুই গিয়ে খাবার টেবিল এ বস আমি রেডি হয়ে আসতেছি।”
–আরুহি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে বসে। তখন কলিং বেল বাজে, বিরক্ত হয়ে মাহির কে দরজা খুলতে বলে।
“কিরে তোর হয়নি এখন ও? এতো গিলিস না উঠ সময় নাই।”
“কিসের সময় নাই!! এখন ও ৩০ মিনিট সময় আছে। ভার্সিটি এখান থেকে ১০ মিনিট এর রাস্তা। গাড়িতে গেলে ১০ মিনিট লাগবে আশু।”
“আশুয়া আপু আসো তুমি ও আমাদের সাথে খাবে।”
“এই তোরে বলছি না আমাকে আশুয়া আপু বলবি না। আশা আপু বলবি নয়তো শুধু আপু ওকে।”
“না আমার আশুয়া আপু।”
——————-
–আশা আর মাহির অযথা তর্ক করতে থাকে। আরুহি খেয়ে উঠে রুমে তালা দিয়ে ওদের বের করে, বাহিরের দরজায় তালা লাগায়। তারপর নিচে গিয়ে দেখে ড্রাইভার আগে থেকেই ওয়েট করতিছে। গাড়িতে উঠে আগে মাহির কে ওর স্কুল এ নামিয়ে দেয়।
“আশু কি হয়ছে এতো আগে আসার কারণ কি?”
“মেরা বফ জেদ ধরছে দেখা করবে। তো কি করবো এখন, ওকে বললাম ভার্সিটি শেষে দেখা করবো। কিন্তু না ও এখন দেখা করবে তাই আর কি।”
“তোর বয়ফেন্ড কি জানি জব করে?”
“হুহ্ কি আবার ডাক্তার”
“হাহা ভাই আমাদের ফেমেলির সবাই ডাক্তার ছাড়া কিছু বোঝে না। আমি ডাক্তারি পরিক্ষা দিছিলাম চান্স হয়নি ভালো হয়ছে।”
“অসহ্য সময় দিতে পারে না ঠিক মতো। রুগি নিয়ে পড়ে থাকে।”
–গাড়ি ভার্সিটির সামনে থামালে আরুহি আর আশা নেমে যায়। আশা আরুহির হাত ধরে সোজা নদীর কিনারায় যায়। গিয়ে দেখে আশার বয়ফেন্ড তিয়াশ দাঁড়িয়ে আছে। আশা গিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে তারপর সময় দেখে দুইটা ক্লাস মিস হয়ে গেছে। এখন রাহুল স্যার এর ক্লাস। তাই তিয়াশ এর থেকে বিদায় নিয়ে আরুহির সামনে এসে কাচুমাচু হয়ে দাড়ায়।
“হা’রা’মি ২ ঘন্টাতে কি পিরিত করিস হ্যা? তারাতাড়ি চল রাহুল স্যার এর ক্লাস আছে এখন।”
“হ বুইন চ”
–দুইজনে ক্লাসে এসে দেখে রনি জুথি ওরা সবাই এসে বসে আছে। তাদের জন্য জায়গা রেখে গালে হাত দিয়ে আছে। আরুহিকে দেখে জুথি কিছুটা রাগী সুরে বলে।
“আইছিস কিতা করনের লাইগা! তোরে আমি কতো বার ফোন করছি রিসিভ করিস নাই। আরে আমি তো ভাবলাম তুই মইরা গেছোস। তাই সবাই প্লেন করছি রাহুল স্যারের ক্লাস শেষে তোর বাসায় যামু গা।”
“শালি আমি মরলে তোরা খুশি হবি তাই না? আর আমার ফোন! ওহ নো! ফোন বাসায় ফেলে আসছি। আর দেড়ি হলো কেন জানোস? এইযে আমাগো আশু বফ এর লগে এতোক্ষণ টাংকি মারলো তাই।”
“আশা ওরে আজ খাইছি আমি।”
–রনি উঠে আশাকে মারতে যাবে তখন রাহুল স্যার ক্লাসে প্রবেশ করে। আরুহি নিজের সিটে ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে রাহুল স্যার এর দিকে তাকায়। তারপর একবার আশার দিকে তাকায়, সে কি ভূল দেখতিছে? আরুহির প্রচুর কান্না পায় সেটা কোনো রকমে চেপে রাখে। জুথি রনি আশা বাকিরা সবাই আরুহির দিকে তাকায়। রাহুল স্যারের অনুমতি পেয়ে সবাই বসে পরে। ক্লাস শুরু করে দেয়, ক্লাস চলা কালিন আশা একটা প্রশ্ন করে বসে। কারণ তার পেটে কথা বেশিক্ষণ থাকে না।
“স্যার মেয়েটা আপনার কে হয়!”
“আমার মেয়ে মাহিয়া জান্নাত মাহি।”
–আরুহির কানে কথাটা যাওয়া মাত্র উঠে দাঁড়ায় সে। আশা থতমত খেয়ে আরুহিকে নিয়ে বসে পড়ে। আরুহির এবার কান্না থামবে না বুঝতে পেরে ব্যাগ নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে। ক্লাসের অনেক এ জানতো রাহুল স্যারের মেয়ে আছে আবার কেও কেও জানতো ও না যে রাহুল স্যার বিবাহিত তারা অবাক হয়। রাহুল আর কিছু না বলে ক্লাসে মনোযোগ দেয়।
“বাবাই ঐ আন্নি তা তখন তলে গেলো তেনো?
–রাহুল মাত্র ক্লাস শেষ করে নিজের কেবিন এ আসে। তখন মাহি আদো আদো কন্ঠে কথাটা বলে। মাহির বয়েস মাত্র তিন বছর এই বয়সে যেমন কথা বলতে পারে সেটাই বলে। রাহুল মেয়েকে টেবিল এর উপর বসায় দিয়ে বলে।
“আমি কিভাবে জানবো মামুনি? আমি তো উনার টিচার হই। আর উনি কি যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেছে?”
“আমি ভাবতি আন্নিতা আমাকে দেকে তলে গেতে।”
–মাহি কাঁদো কাঁদো মুখ করে কথাটা বলে। রাহুলের হাসি পায় মেয়ের কথা শুনে। তার সাথে কেও কথা না বলে চলে গেলে নাকি তার কষ্ট হয়। মাহি ভাবে তাকে পছন্দ করে নাই সে জন্য মেয়েটা ক্লাস থেকে চলে গেছে।
“না মামুনি আন্নিতা তোমাকে ইগ্নোর করে নাই সোনা। চলো আমার এখন আর একটা ক্লাস আছে সেটা করে বাসায় যাবো কেমন?”
“আত্তা”
—————————
–আরুহি তখন ক্লাস থেকে এসে রুমের জিনিস ভাঙ্গাচুর করতে থাকে। তার রাগ উঠতিছে, এমন একটা ছেলেকে ভালোবাসলো যার বাচ্চা ও আছে। রাগের মাথায় নিজেই নিজেকে গালি দেয়।
“আরুহি তুই আসলেই একটা পাগল, আ’বা’ল নয়তো একটা ছেলের খোঁজ না নিয়ে এক তরফা ভালোবেসে গেলি। আরে বুইন তোর তো দরকার ছিলো জানার যে ছেলেটা বিবাহিত কিনা। লে! না শুনে প্রেমে পড়ার মজা এখন বোঝ।”
–আরুহি ভাঙ্গচুর থেমে দিয়ে নিজেই বিরবির করে কথাগুলো বলে মেঝেতে শুয়ে পরে। তার এখন সব কিছু বিরক্ত লাগতিছে। কলিং বেল এর শব্দে আরুহি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। মিতু মেয়েকে এলোমেলো অবস্থায় দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। তারপর আরুহিকে জরিয়ে নেয় নিজের বুকের সাথে। আশা ফোন করে তার ছোট আম্মুকে আগেই সব বলে দিছে। তাই মিতু আর দেড়ি না করে তরি’ঘরি বাসায় আসে।
“মা কাঁদে না, এই ভাবে ভেঙ্গে পড়লে কি হবে বলো? তুমি বাচ্চাদের মতো করতিছো কেনো? তুমি যথেষ্ট মেচিউর। এভাবে ভেঙ্গে পড়ে কি লাভ বলো। ছেলেটা যদি কখন ও তোমার এসব জানতে পারে তখন কতোটা কষ্ট পাবে জানো? কারণ ছেলেটার অজান্তেই তুমি তাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনছো।”
“আমার কষ্ট হচ্ছে মা”
“কিছু হয়নি তো মা। কেঁদো না চলো আমি তোমাকে ঘুম পারিয়ে দিবো।”
“আমি ঘুমাবো না মা”
“একটা কথা ও না চলো। বাবা এসব জানতে পারলে কষ্ট পাবে মা।”
[দুইদিন পর]
–আরুহি দু’দিন ক্লাসে যায় নি। নিজেকে ঠিক করার জন্য সাভ্বাবিক হওয়ার জন্য এই দু’দিন মা-বাবার সাথে হসপিটালে এসে এখানে সেখানে গিয়ে অসুস্থ ব্যাক্তিদের সাথে একটু গল্প করে সময় কাটিয়ে দেয়। আজকে মাহিরের জেদে শিতের মার্কেট করার জন্য রাত ৮টার সময় বাসা থেকে বের হয়।
“এই মেয়ে তুমি রাহুল এর দিকে তাকিয়ে আছো কেনো? অনেক্ষণ থেকে দেখতেছি তুমি আড় চোখে রাহুলকে দেখতিছো। তুমি কি কোনো ভাবে রাহুল কে চিনো?”
–মাহির আর আরুহি মার্কেট শেষ করে রাতের ডিনার করার জন্য একটা রেস্তোরাঁ তে আসে। তখন দেখে রাহুল, তার মেয়ে আর একটা মহিলা তিনজন বসে খাবার খাচ্ছে। আরুহি খাবার অর্ডার করে মাঝে মাঝে সেই দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। ও ভেবে নিয়েছে রাহুল স্যারের ওয়াইফ পাশের মেয়েটা।
“ইশ মেয়েটা কতো কিউট। স্যারের সাথে মানাইছে কি? আচ্ছা আমার কেনো মনে হচ্ছে যে মানাই নি! মেয়েটা তো সুন্দর, আমার কি জেলাস ফিল হচ্ছে?”
–আরুহি একা একা এসব বিরবির করে। তখন হুট করে রাহুল এর পাশে যে মেয়েটা ছিলো সে এসে আরুহিকে উপরোক্ত কথাগুলো বলে। আরুহি কিছুটা লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
“এই মেয়ে কথা বলতিছো না কেনো? তুমি আমার কলিজার দিকে এতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলে। তুমি কি জানো এর জন্য আমি তোমার শাস্তি দিতে পারি। তুমি আমার জিনিস এ নজর দেও কোন সাহসে।”
“সরি আপু আমাকে মাফ করবেন। মাহির চল এখান থেকে।”
“আপু কই যাবো!! তুমি খাবার অর্ডার করলে খাবে না? আমি না খেয়ে যাবো না। রাগালে কিন্তু চিল্লিয়ে কান্না করবো।”
“মাহির”
–আরুহি জোরে ধমক দেয় মাহির কে। মাহির মাথা নিচু করে উঠতে যাবে তখন অর্ডার কথা সব খাবার ওয়েটার দিয়ে যায়। আরুহির সামনে বসে থাকা মেয়েটা এবার কিছুটা অবাক হয় আরুহির কান্ডে। তারমনে হলো মেয়েটা তার থেকে ছোট তাই হালকা ধমক এর সুরে বলে।
“বসো আর বলোতো তুমি রাহুল কে চেনো?”
“জ্বী উনি আমাদের ভার্সিটিতে ক্লাস নেয়। মানে উনি যে ভার্সিটিতে জব করে ঐ ভার্সিটির স্টুডেন্ট আমি।”
“আচ্ছা তবে বারবার তাকাচ্ছিলে কেনো?”
“তেমন কিছু না”
“তুই এখানে কি করিস!? চল বিল দিয়ে দিছি আমি। রাত হয়ছে উঠ এখন বাসায় যেতে হবে।”
–রাহুল বিল দিয়ে এসে তিথি কে কথাটা বলে। তিথি আরুহির দিকে তাকিয়ে থেকে রাহুল এর সাথে বের হয়ে যায়।
“তুই মেয়েটার সাথে বসে কি করছিলিস রে?”
“তোর দিকে তাকিয়ে ছিলো সে জন্য শুনতে গেলাম তোকে চিনে নাকি, এই আর কি। তুই কি চিনিস মেয়েটাকে?”
“ঐ আর কি, কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট।”
–রাহুল আর কিছু না বলে তিথিকে বাড়ি যেতে বলে নিজে ও একটা রিক্সা ধরে বাড়িতে যায়। তিথি বাড়িতে না গিয়ে রেস্টুরেন্টে এ ঢোকে। তার খুব ইচ্ছে করতিছে রেস্তোরাঁ তে বসে থাকা মেয়েটার সাথে কথা বলার। যেই ভাবা সেই কাজ, ও গিয়ে মেয়েটার সামনে বলে।
“হাই আমি তিথি আর তুমি?”
“আ-আ-আমি আরুহি”
–আরুহি এবার কিছুটা ভড়কে যায়। এখানে আবার এসে তার সাথে কথা বলার মানে কি? আরুহির রাগ উঠে, তবে সরাসরি কিছু বলতে পারে না।
“আপনার হাসবেন্ড বাসায় গেলো না? তাহলে আপনি আবার এখানে কি করতিছেন?”
“হাসবেন্ড! কে আমার হাসবেন্ড?”
–তিথি অবাক হয়ে আরুহির দিকে তাকিয়ে থাকে। আচ্ছা মেয়েটা কি রাহুলের ওয়াইফ ভেবেছে তাকে! তিথি মুখ টিপে হেসে দেয়। এটা রাহুলের সামনে বললে আগে তিথির গালে চড় পড়তো। তারপর আরুহির গালে।
“কেনো রাহুল স্যার আপনার কে হয়?”
“আমার ফেন্ড”
–আরুহি কিছু একটা মনে করে ফোন বের করে। তারপর রাহুল স্যারের গ্রুপ ফটোটা বের করে তিথির মতো কাউকে খোঁজে। বুঝার চেষ্টা করে এর মধ্যে ইনি আছে নাকি। তিথি ফোনের দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেয় সে কোনটা।
“তোমার কাছে এই ছবি কই থেকে আসলো?”
“নেটে পাইছি আপু। আর সরি আমি ভাবছিলাম আপনি রাহুল স্যারের ওয়াইফ।”
“ইট’স ওকে। বাট তুমি রাহুল এর সম্পর্কে সব জানো না বুঝি!? রাহুল তো… ওয়েট তুমি এখন বলোতো রাহুল এর সাথে আমাকে দেখে তুমি কি জেলাস?”
“ছি ছি আপু কি যে বলেন। উনি বিবাহিত ওনার একটা বাচ্চা আছে। আমি কেনো উনার পাশে আপনাকে দেখে জেলাস হবো?”
“আমি রাহুলকে খুব ভালো ফেন্ড তুমি চাইলে সত্যি বলতে পারো।”
“আপু তাহলে আপনি তো মাইশা আপুকে ও চিনেন তাই না?”
“হ্যা ও আমাদের বেস্টফেন্ড ছিলো।”
“ছিলো কেনো? এখন কি মাইশা আপু আপনাদের সাথে কথা বলে না?”
“ওয়েট তুমি মাইশাকে কিভাবে চিনো?”
“মাইশা আপু তো..”
–মাহির কিছু বলতে যাবে তার আগে আরুহি মাহির এর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। মাহির চুপ মেরে যায়। তিথি সেটা দেখে মুচকি হাঁসে।
“তুমি সত্যি টা বললে আমি মাইশার সম্পর্কে তোমাকে বলবো।”
“আমি কোনো এক ভাবে এক তরফা ভালোবেসে ফেলছি রাহুল স্যার কে। রাহুল স্যার অবশ্য জানে না আমি উনাকে ভালোবাসি। তবে আমি জানতাম না উনি বিবাহিত। কয়দিন আগে জানতে পারছি। আপনি প্লিজ এটা রাহুল স্যারকে বলবেন না। এখন আপনি মাইশা আপুর ব্যাপারে বলেন।”
“ওহহ কিহ! রাহুল কে তুমি ভালোবাসো? তুমি আগে থেকে জানতে না যে তোমাদের স্যার বিবাহিত?”
“না জানতাম না সে জন্য তো লাইফের সব থেকে বড় ভূল করছি আমি।”
“রাহুল যা গম্ভীর তুমি ওর কি দেখে প্রেমে পড়ছো আমাকে ভাবাচ্ছে। তবে এটা যদি একজন শুনতো তাহলে তোমাকে হয়তো খুন করতো।”
–তিথি চোখ বন্ধ করে কথাটা বললো। তার খুব কান্না পাচ্ছে, কিন্তু মেয়েটাকে কথা দিয়ে ফেলছে। এখন মাইশার ব্যাপারে না বললে কেমন দেখায়?
“রাহুল স্যারের ওয়াইফ তাই তো? হুহ সাভ্বাবিক। উনি আমার কেও না তাও উনার পাশে কাউকে সহ্য হচ্ছে না। তবে ওনার ওয়াইফ তাহলে কিভাবে সহ্য করবে।”
“তুমি না ঠিক মাইশার মতো।”
–কথাটা শুনে আরুহি কিছুটা বিচলিত হয়ে উঠে।
“আপু বললেন না তো মাইশা আপু এখন কই আছে?”
“তুমি কি মাইশাকে চিনো?”
“হুম”
“আচ্ছা চলো ১৪ বছর আগের অতীত এ গিয়ে তোমাকে আজ রাহুলের জীবন কাহিনি শুনায়।”
“সরি আপু আমি রাহুল স্যারের বিষয়ে কিছু জানতে চাই না। আমি আপনার কাছে মাইশা আপুর বিষয়ে জানতে চাইছি।”
“আমার কথার মাঝে একটা কথা ও বলবে না। রাহুলের অতীত এর সাথে মাইশা জড়িত আছে। তাই রাহুলের অতীত জানলে মাইশা কে খুঁজে পাবে তুমি।”
–আরুহি কিছু বলে না। তবে তিথি আপুকে বসতে বলে ওয়েটার কে ডেকে টেবিল পরিষ্কার করতে বলে। তারপর কর্নার টা সে বুক করে নেয়। আর বলে এখানে যেনো কেও বিরক্ত না করে। মাহির ও খুব এক্সাইটেড হয়ে উঠে। সে আজকে তার মাইশা আপুর বিষয়ে শুনবে। তিথি কিছুটা পানি পান করে অতীত এ ডুব দেয়।
—————–
[অতীত]
–সময়টা তখন ফেব্রুয়ারী মাসের ১৮ তারিখ। আমাদের ফেন্ড সার্কেল এ ১২ জন ছিলাম। আমি রাহুল, মাইশা আরো বাকি ৯জন। ৭ জন মেয়ে ছিলাম আর বাকি ৫জন ছেলে। তার মধ্যে রাহুল আর জয় ছিলো বেস্ট ফেন্ড। বর্তমান এখন যে আমার হাসবেন্ড। কাহিনিতে আসি৷ ফেব্রুয়ারী মাসের ১৮ তারিখ। তখন আমরা ক্লাস নাইন এ ছিলাম। ক্লাস ৬ থেকে আমাদের সবার ফেন্ডশিপ ছিলো। তবে রাহুল আর জয়ের ফেন্ডশিপ নাকি ক্লাস ওয়ান থেকেই ছিলো। যাই হোক, সামনে ২১শে ফেব্রুয়ারী স্যার আমাদের শহীদ মিনার সাজানোর দায়িত্ব দেয়। আমরা সবাই মিলে পুরো স্কুল পরিষ্কার করি আগে। তারপর ১৯ তারিখ এ স্কুলের আশেপাশের জঙ্গল গুলো পরিষ্কার করি। ফুলের গাছ ছিলো অনেক সে গুলোর আগাছা কেটে ফেলি। ২০ তারিখ এ শহীদ মিনার খুব ভালো করে পরিষ্কার করে রং দিয়ে নকশা তৈরি করি। সেইদিন আমরা ছাড়া আরো কিছু ছেলে মেয়ে ছিলো। তো রাহুল সবার থেকে সুন্দর হওয়াই তাকে সবাই পছন্দ করতো। আমরা রং দিয়ে সব কাজ কমপ্লিট করার পর বসে থাকার একটা জায়গা আছে সেখানে গিয়ে বসি। তখন কোথা থেকে একটা মেয়ে হাতে ৭-৮ টা গোলাপ ফুল এনে রাহুল এর সামনে বসে।
“রাহুল ভাইয়া আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন? আমি আপনার সব কথা শুনবো। আপনাকে অনেক ভালোবাসবো।”
–মেয়েটার কথা শুনে আমরা হাসতে থাকি। কিন্তু অবাক করার বিষয় মাইশা খেপে গিয়ে মেয়েটার হাতে লাথি মেরে ফুল গুলো ফেলে দেয়। তারপর মেয়েটার চুল ধরে মারতে থাকে আর চিল্লিয়ে উঠে।
“এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার রাহুল কে প্রপোজ করার? রাহুল শুধু আমার আর কারো না ওকে। হুহ্ আর আসছে প্রপোজ করতে। পাগল ছাগল এর মতো দুইটা কথা বলে প্রপোজ করে। যাহ এখান থেকে আর কখন ও আমার রাহুল এর সামবে আসবি না।”
–মেয়েটা ভয় পেয়ে চলে যায়। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে মাইশাকে দেখছিলাম। রাহুল একটু রাগী টাইপ এর ছিলো। মাইশার এমন ব্যাবহারের কারণে অনেকটা রেগে গিয়ে মাইশাকে ভূল বসত একটা চড় মারে। আমরা যেনো অবাক এর উপর অবাক হচ্ছিলাম।
“মাইশা তুই কোন সাহসে মেয়েটার সাথে এমন ব্যাবহার করলি? প্রপোজ করতেই পারে, তাই বলে তুই এই ভাবে মারবি?”
“তোকে কেনো ঐ প্রপোজ করবে! আমি তোর আশেপাশে কাউকে সহ্য করবো না। তুই কোন সাহসে আমাকে থাপ্পড় মরলি? আজ থেকে তোরা আমার ফেন্ড না।”
–আমরা ভেবাচেকা খেয়ে যাই। সামান্য একটা কারণে মাইশা ফেন্ডশিপ নষ্ট করতে চায়। মাইশা রাগের মাথায় কেঁদে দেয়। তারপর সেখান থেকে চলে যেতে লাগলে রাহুল পড়ে থাকা ফুল গুলো নিজের হাতে তুলে নেয়। তারপর মাইশার সামনে দৌড়ে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে মাথা নিচু করে বসে।
“এই রাগিনী তোমার সব টুকু রাগ দেখার দায়িত্ব আমি নিতে চাই দিবি কি সেই দায়িত্ব? এই যে হুটহাট গাল ফুলিয়ে রাগ দেখাস। সেই সময় তোর গাল টিপে দেওয়ার দায়িত্ব আমাকে দিবি! তোর বেনি ধরে টান মারার অধিকার আমাকে দিবি? তোর ভাগের খাবার চুড়ি করে খাওয়ার দায়িত্ব নিতে চাই। তুই কি আমার মাহির মাম্মাম হবি?”
“ঠাস”
চলবে……………