#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৮
#জান্নাতুল_নাঈমা
_____________________
একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে বাড়ির সামনে থেকে মুরাদকে ওঠিয়ে পূজার বাড়ির ঠিকানায় গাড়ি ঘোরালো ইমন। বিমর্ষ মুখে ড্রাইভ করছে সে ৷ মুরাদের মুখেও বিষাদের ছায়া। ওদের দু’জনের কেউ ভাবতে পারেনি মুসকানের এতোটা অধঃপতন হবে। মুরাদ যখন পূজাকে ফোন করে মুসকান কোথায় জানতে চায় পূজা ভয়ে ভয়ে বলে তাদের বাসাতেই। বিচলিত হয়ে মুরাদ মুসকানের সাথে কথা বলতে চাইলে জানতে পারে মুসকান ড্রিংক করেছে৷ পূজা এসবে অভ্যস্ত তাই তার নেশা হয়নি। তুর্য্য মুসকানকে নিজ দায়িত্ব বাসায় দিয়ে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু মুসকানের নাজেহাল অবস্থা দেখে মুসকানকে না নিয়েই চলে গেছে। স্বর্ণা আর মুসকান ব্যাতিত সবাই নিজ বাড়ি ফিরে গেছে। স্বর্ণা আজ পূজাদের বাসায়ই থাকবে৷ তার ফ্যামিলি থেকে এটা এলাও করলেও মুরাদ কখনোই রাত বিরাতে বোনকে অন্যের বাসায় এলাও করবেনা৷ একমাত্র ইমন ব্যাতিত এবং চৌধুরী বাড়ি ব্যাতিত আর কোথাও বা কারো কাছে মুরাদ মুসকানকে এলাও করার কথা ভাবতেও পারেনা। সবাই বিশ্বাসের যোগ্য হয় না, সবাই বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারে না৷
পূজার বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই মুরাদ হন্যে হয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো৷ প্রায় মিনিট দশেক পর মুসকান ছুটে বেরিয়ে এলো। ক্রোধে পুরো শরীর কাঁপছে ইমনের৷ সে ভিতরে গেলে বা মুসকানের সামনে গেলে ভয়ংকর কিছু ঘটে যাবে৷ যা সে ঘটাতে চায় না৷ তাই ভিতরে যায়নি মুরাদ একাই গিয়েছে। কিন্তু মুরাদকে বের হতে না দেখে মুসকান কে একা অমন বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বের হতে দেখে আর স্থির থাকতে পারলো না ইমন৷ ক্ষিপ্ত মেজাজেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। মুসকান তার ওষ্ঠজোড়া ফুলিয়ে নাক টেনে টেনে কাঁদছে আর দ্রুত পা চালাচ্ছে। ইমনের চোয়ালজোড়া ক্রমশ দৃঢ় হতে শুরু করলো। দাঁতে দাঁত চেপে দু’হাতের মুঠো দৃঢ় করে বলিষ্ঠ দেহখানা মাটিতে গেঁড়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। মুসকান যখন ছুটতে ছুটতে ইমনকে পাশ কাটাতে নেয় ইমন তখন নিজের বলিষ্ঠ হাত দ্বারা প্রচণ্ড শক্ত করে মুসকানের একটি হাত টেনে ধরে। মুসকান এবার তার অধর পল্লব আধিক্য ফুলিয়ে ঘাড় উঁচিয়ে অসুস্থ দৃষ্টিজোড়া মেলে তাকায় ইমনের দিকে। ইমনের দিকে দৃষ্টিপাত করার সঙ্গে সঙ্গেই ইমনকে প্রচণ্ড শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুসকান। বক্ষঃস্থলে মাথা রেখে দু’হাতে পিঠ খামচে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। অস্ফুট স্বরে বলতে থাকে,
“নানাভাই তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো। অনেক দূরে নিয়ে চলো। দাদাভাই খুব খারাপ, খুব খারাপ। দাদাভাই আমাকে মেরেছে, অনেক শক্ত করে মেরেছে। ”
কথাটি শেষ করেই ইমনের বুকপিঠের শার্ট খামচে ধরে বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে গুণগুণিয়ে কাঁদতে থাকলো। কানদুটো গরম হয়ে গেলো ইমনের। তার বক্ষঃস্থল কেউ যেনো চিঁড়ে ফেলেছে। এমন ব্যাথা অনুভূত হলো। দৃঢ় হয়ে ওঠা চোয়ালজোড়া নিজের স্বাভাবিকতায় ফিরে এসেছে৷ মস্তিষ্কে চলা সমস্ত ক্রোধ যেনো মাটিতে আছড়ে পড়েছে। মন এবং মস্তিষ্কে শুধু একটি বাক্যই উচ্চারিত হচ্ছে,
” মুরাদ কেন ওর গায়ে হাত তুলেছে? মুরাদ কতোটা শক্তি প্রয়োগ করে ওকে আঘাত করেছে? একই সঙ্গে বন্ধু এবং বোনকে আঘাত করতে ওর অন্তর একটুও কাঁপেনি? ”
মুসকান যখন তার সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে মাথা রেখে অজস্র নালিশ জানাতে ব্যস্ত ইমন তখন অনুভব করার চেষ্টায় আছে কতোখানি ব্যাথা পেয়েছে মুসকান? না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছে এক ধমকেই যাকে কুপোকাত করা যাবে তাকে মারার কি প্রয়োজন? যেজন্য নিজে না গিয়ে মুরাদকে পাঠিয়েছে নিজের রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই সে সেখানে যায়নি। যেটুকুর ভয়ে সে যায়নি সেটুকুই যে মুরাদ ঘটাবে বুঝতে পারলে সে নিজেই যেতো। সঠিক শাসন যখন নিতে পারবে তখন করতে হবে এমন হিতাহিতজ্ঞান শূন্য মানুষ’কে মেরে আঘাত করে তো লাভ নেই।
মুরাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইমন মুসকানকে ওভাবে দেখে কিছুটা থেমে থেমে এগুতে লাগলো। ইমন মুরাদের রক্তিম চোখে চোখ রেখে শান্ত গলায় বললো,
” তুইও এতোটা নিয়ন্ত্রণ হীন বুঝতে পারিনি। ”
মুরাদ চটে গেলো ইমনের থেকে মুসকানকে এক টান দিতে নিলেই ইমন চোখ, মুখ দৃঢ় করে একহাতে মুসকানের পিঠ জড়িয়ে বাঁধা প্রয়োগ করলো। বললো,
” এনাফ একটা দিয়ে রাগ না কমলে বাকিগুলো আমায় দে। ”
ইমন বলতে দেরি করলেও পিঠ বরাবর কষিয়ে কয়েকটা ঘুষি দিতে দেরি হলোনা মুরাদের। গায়ের সর্বস্ব শক্তি খাটিয়ে কয়েকটা ঘুষি দিয়ে বললো,
” হ তোরেই দিমু শালা তোর জন্যই আজ এই অবস্থা। আম্মা আজ মরেই যাবো ওরে দেখলে। ”
ইমনকে ওভাবে ঘুষি দেওয়াতে মুসকান হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অস্ফুটে স্বরে বললো,
” নানাভাই, দাদাভাই আজ আমাদের মেরেই ফেলবে আসো আমরা পালাই। ”
মুরাদ বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে রইলো। ইমন মুরাদের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,
” ওকে আমার বাড়ি নিয়ে যাই। কাকিমা এ অবস্থায় দেখলে অসুস্থ হয়ে পড়বে৷ তোর কাকাও এসব দেখে সবাইকে বকাঝকা করবে আজ বাড়ি ফেরার দরকার নেই তোদের। তুই বরং রিমি’কে ফোন করে বলে দে সকালে ফিরবি তোরা। ”
চিন্তিত দৃষ্টিতে ইমনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মুরাদ। মুসকান ইমনের বুকে মাথা রেখেই উন্মাদের মতো মাথা চুলকাচ্ছে, বুকপিঠে শার্টে নাক ঘষছে। যদিও এতো কিছুর মাঝে ইমনের প্রচণ্ড রিয়্যাক্ট করার কথা ছিলো। তবুও সে কোন প্রকার রিয়্যাক্ট করতে পারলো না৷ পারবে কি করে? তার হৃদপিণ্ড নামক পাখিটা যে তার বক্ষঃস্থলে নিশ্চিন্ত মনে জায়গা করে নিয়েছে। সেই নিশ্চিন্ত অনুভূতি’টা কে অনিশ্চিত করার সাহস যে তার নেই৷ মুরাদের ফোনের রিংটোনে আচমকাই ধ্যান ভাঙলো তিনজনের। মুসকান মাথা ওঠিয়ে মুরাদকে দেখে আবারও ভীতিগ্রস্থ হয়ে ইমনের পিছনে চলে গেলো। মুরাদের থেকে লুকানোর চেষ্টা করে পিছন থেকে ইমনের শার্ট খামচে ধরে বিরবির করে বললো,
” দাদাভাই আমাকে একটুও ভালোবাসেনা। সবার সামনে আমাকে মারলো। দাদাভাই খুব খারাপ আমি আর দাদাভাইকে ভালোবাসবো না ”
ফোন রিসিভ করতেই মরিয়ম আক্তার জানালো রিমি মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। তাই নিয়ে রিমির মা মরা কান্না জুড়ে দিছে। আর দোষারোপ করছে মুরাদকে। সে নাকি রিমিকে যত্ন করেনা৷ বাড়ির মেয়ে বিয়ে করে কোন দাম দেয় না মুরাদ৷ হতো পরের মেয়ে বুঝতো এমন অনাদরে পরের বাড়ির লোকেরা কেমন শায়েস্তা করে। এসব শুনে মুরাদের মেজাজ আরো খারাপ হলো। ফোন কেটে দিয়ে গালিগালাজ করতে করতে বললো,
” শালার চাচা আর আম্মার কথায় ঐ বেটির মেয়ারে বিয়া করাই ভুল হইছে। বাল ছাল আলাপ আর ভাল্লাগে না। ”
মুরাদের রাগ দেখে মুসকান ভয়ে কেঁপে ওঠলো। ইমনকে ছেড়ে ছুটে পালানোর জন্য পিছন ঘুরতেই ইমন চট করে মুসকানকে ধরে ফেললো। ব্যস্ত গলায় বললো,
” মুরাদ গাড়িতে ওঠে বোস ওকে নিয়ে। হুঁশে নেই যা তা অবস্থা ঘটিয়ে ফেলবে। ”
মুরাদ দাঁতে দাঁত চেপে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। পিছনের সিটে মুসকানকে বসিয়ে মুরাদকে ওঠতে বললে মুরাদ বললো,
” ডোর লক কর আমার পাশে বসবে না। কান্নাকাটি করবে ”
ইমন ভ্রু কুঁচকে মুসকানের দিকে তাকিয়ে ডোর লক করে দিলো। মুসকান গাড়ির সিটে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে গুণগুণিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
ড্রাইভিং সিটে ইমন তার পাশে মুরাদ বসেছে। ইমন জিগ্যেস করলো,
” এবার বল কি হয়েছে? ”
” আর বলিস না জীবনটা তেজপাতা বানাই দিছে আমার চাচি। নিজেদের মধ্যে আসলে বিয়ে সাদি করাই উচিৎ না। যারে বিয়ে করছি তার কোন অভিযোগ নাই যতো অভিযোগ ঐ বেটির। রিমি অসুস্থ হয়ে পড়ছে তাই বেটির ধারণা আমি ওর যত্ন করিনা। ”
বাঁকা হাসলো ইমন বললো,
” সবাই কি আমার শাশুড়ি’র মতো হবে নাকি? একটা দু’টো ডিফারেন্ট হওয়াই চাই। ”
” মজা লস? শাশুড়ি নিয়ে গর্ব কর কর তোর জীবন তেজপাতা কুঁচি করা আমার বা হাতের খেল। ”
মিররে মুসকান’কে এক ঝলক দেখে নিয়ে ইমন বললো,
” যেমন জামাই তেমন শাশুড়ি। শাশুড়ি’কে বেটি বেটি করস ক্যান,চাচি হিসাবেও তো সম্মান দিতে পারিস নাকি? ”
তাচ্ছিল্য সহকারে মুরাদ বললো,
” সামনাসামনি যে বেটি বলিনা এইটা ওর চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য। ”
” যাক বাদ দে এসব তুই বাড়ি যা রিমির পাশে তোকে দরকার এতো সমস্যার মাঝে মুসকান’কে এ অবস্থায় বাড়ি নেওয়া একদমই ঠিক হবেনা। আমি চাইনা কেউ ওকে কটুবাক্য শোনাক বা কাকি’মা ওর জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ুক। ”
” না না মুসকান কে একা রেখে যাব না আমি। ওর অবস্থা দেখছিস তুই? ”
শান্ত দৃষ্টিতে এক পলক তাকিয়ে আবার সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইমন। বললো,
” বন্ধুর প্রতি এটুকু ভরসা করতেই পারিস। আর আমার বাড়িতে আমি একা থাকিনা মা,বাবা, আছে পারুল আছে। ”
.
মুরাদকে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে সোজা নিজের বাড়ি এসেছে ইমন। ইরাবতী’কে ফোন করে মুসকানের কন্ডিশন জানানোর ফলে ইরাবতী মুসকানের জামাকাপড় নিয়ে নিচের ওয়াশরুমে অপেক্ষা করছে। মুসকানের এক সেট জামা সেদিন রেখে গেছিলো বলে আজ রক্ষা হলো। ইমন মুসকানকে ধরে ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে ওয়াশরুমের সামনে গিয়ো ইরাবতী’কে ডাকলো। ইরাবতী সব গুছিয়ে বের হতেই মুসকান ঢুলুঢুলু শরীরে ইরাবতী’র তাকিয়ে অধরপল্লব উঁচিয়ে বললো,
” ও আন্টি… দেখো দাদাভাই আমাকে শক্ত করে থাপ্পড় দিয়েছে। ”
মুখ এগিয়ে গাল পেতে কথাটা বলতেই ইরাবতী একবার ইমনের দিকে তাকালো। ইমন মাথা নিচু করে মুসকান’কে ছেড়ে উপরে ওঠে গেলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইরাবতী মুসকান’কে ধরে ওয়াশরুমের ভিতরে নিয়ে বললো,
” আমি তোমাকে হেল্প করি গোসল সেরে নাও। ”
বিনিময়ে মুসকান হুহু করে কেঁদে ওঠলো। বললো,
“তুমিও আমাকে ভালোবাসো না আন্টি কেউ আমাকে ভালোবাসে না। আমি এখানেও থাকবো না।”
কথাটি বলেই ইরাবতী’কে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে গেলো মুসকান৷ বাড়ির বাইরে যাবে কিন্তু নেশার ঘোরে বাইরের রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে প্রায় পাঁচ মিনিট বাঁধিয়ে দিলো। তারপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠতে ওঠতে সোজা ছাদে চলে গেলো। এদিকে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে ইরাবতীর বা হাতে কনুইতে বেশ লেগেছে। ব্যাথায় পুরো হাত অবশ হওয়ার উপক্রম। কোনমতে একটু পানি দিয়ে অমনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে পারুলকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো ইরাবতী। ডাক শুনে উপর থেকে ইমন, আকরাম চৌধুরী রান্নাঘর থেকে পারুল ছুটে এলো। মুসকান বেরিয়ে গেছে শুনতেই গা শিউরে ওঠলো ইমনের। ইরাবতীর উপর রাগ ঝাড়তে গিয়েও পারলো না। আকরাম চৌধুরীর কথা শুনে,
” এসব কি ইমন? এমন থার্ডক্লাশ আচরণ আমার বাড়িতে চলবে না। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি কোন পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে যাচ্ছি আমরা। ”
চোয়ালজোড়া শক্ত হয়ে এলো ইমনের। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
” এটা একটা মিসটেক ছিলো বাবা। ”
ইরাবতী ক্রন্দনরত কন্ঠে বললো,
” আমি ধরে রাখতে পারলামনা ধাক্কা মেরেই চলে বেরিয়েছে বেশী দূর যায়নি ইমন তুই ওকে খোঁজ। রাত বিরাতে না জানি কোন অঘটন ঘটায়। ”
হুঁশ ফিরলো ইমনের উৎকন্ঠা হয়ে বাড়ির বাইরে গেলো সে৷ এদিক সেদিক তাকিয়ে দৌড়ে রাস্তায় গেলো। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ সব দিক দেখে নিয়ে হঠাৎই দৃষ্টি স্থির হয়ে গেলো ছাদের কার্ণিশে।
আর দেরি করলো না ইমন বাড়ির ভিতর গিয়ে উপরে যেতে যেতে বললো,
” পারুল মায়ের হাতে মলম লাগানোর ব্যবস্থা কর। মুসকান ছাদে আছে আমি দেখছি ওকে দরকার পড়লে ডেকে নেবো। ”
ইমন চলে যেতেই আকরাম চৌধুরী ক্রোধে ফেটে পড়লেন। চিৎকার করে বললেন,
” এসব কি ইরা! কোন সভ্য বাড়ির মেয়ের আচরণ এটা হতে পারেনা। ”
ইরাবতী সোফায় বসে ব্যথা পাওয়া হাতটি চেপে ধরে বললো,
” বাচ্চা মেয়ে ভুল করে ফেলেছে বাদ দাও। ”
“আমার নিজের সন্তান যেখানে এসবের ধারেকাছেও যায় না সেখানে ছেলের হবু বউ কিনা মাতাল হয়ে এ বাড়িতে প্রবেশ করেছে আমি কি মরে গেছি! ”
” কিসব বলছো তুমি? ”
” ইমনের বুদ্ধি লোপ পেয়েছে বলে তুমিও একই পথে হাঁটা ধরেছো? ”
” তাহলে কি করবো ওদের ওপর চিৎকার চেচামেচি করবো? এতে সমাধান হবে, কোন সমস্যার? নাকি তোমার ছেলে আমার ভয়ে তোমার ভয়ে নিজের ভালোবাসার জলাঞ্জলি দেবে কোনটা বলো? ”
ভয়ংকর রেগে হাত ঝাঁকি দিয়ে উপরে চলে গেলো আকরাম চৌধুরী। পারুল ভয়ে ভয়ে মলম নিয়ে এসে ইরাবতীর সামনে বসতেই ইরাবতী পারুল কে এক ধমক দিয়ে গটগট করে উপরে চলে গেলো। স্বামী, স্ত্রী, ছেলের সমস্ত রাগ যেনো পারুলের ওপর আছড়ে পড়লো। তব্দা খাওয়া চেহেরায় ইরাবতীর যাওয়ার পানে কয়েক পল চেয়ে থেকে রান্না ঘরে চলে গেলো পারুল।
.
রাত ন’টা ছুঁইছুঁই। শহুরে রাত। বিস্তর আকাশের নিচে বেসামাল হয়ে ছাদের কার্ণিশে দাঁড়িয়ে আছে আঠারো বছর বয়সী এক তরুণী। তারা ঝলমলে আকাশের মধ্যমনি চাঁদটির আলোয় উজ্জীবিত হয়ে আছে সমগ্র ধরণী। শহরের আনাচকানাচে রয়েছে ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র আলোক বাতি, রাস্তায় রয়েছে ল্যামপোস্টের ঘোলাটে বাতি। সে রাস্তায় বিরতিহীন ভাবে চলছে যানবাহন। চারদিকের এতো এতো আলো, ভিন্ন মাত্রার সুর ধ্বনি কোন কিছুতেই আর খেয়াল দিতে পারলো না ইমন। তার খেয়াল কেবল এক দিকেই। সেদিকেই সম্মোহনী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে আছে। শাড়ির ধরাশায়ী আঁচলটা ছাদের মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে মুসকানের। কোমড় ছাড়া চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পুরো শরীরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ছাদের বর্ডারে দু’হাত রেখে বিরতিহীন ভাবে বিরবির করে চলেছে মেয়েটা। সেদিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়েই রইলো ইমন। এক পর্যায়ে দৃষ্টিজোড়া বদ্ধ করে ওষ্ঠজোড়া ফাঁক করে কয়েকদফা উত্তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। যখন দৃষ্টি মেলে সম্মুখে তাকালো বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠলো।
চলবে…
।কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।