প্রেম আমার পর্ব ২

0
1721

#প্রেম_আমার

#তানিয়া

পর্ব:২

একঘুমে সকাল হয়ে গেছে অথচ সারারাত একবারের জন্যেও ঘুম ভাঙলো না তন্নির।এটা কীভাবে হলো,সামান্য একটু টেনশন মাথায় ঢুকলেই যেখানে হাজারবার চোখ খুলে যায় সেখানে জীবনের এত বড় একটা ঘটনার মুখে পড়েও কেনো যে তার ঘুম ভাঙলো না সেটা তন্নি বুঝতেছে না।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দরজা খোলার আওয়াজ পায়।দরজার দিকে তাকাতেই দেখে একজন সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে এসেছে। তন্নি চেয়ে থাকে তার দিকে।কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পায় তখনি দেখে প্রিয়ম তার দিকে হাসিমুখে চেয়ে আছে। প্রিয়মকে দেখেই গতকালের ঘটনাটা আবারও মাথা নাড়া দিয়ে উঠে সাথে সাথে ফুঁসে ওঠে তন্নি।আর তন্নির ফোঁসানির আওয়াজ এতটাই বিকট ছিল যে সেটা প্রিয়মের কান অবধি গিয়ে পৌঁছায়।

“কুল বেবি এভাবে নাগিনের মতো ফুঁসাচ্ছো কেনো মনে হচ্ছে আমি সাপের ওঝা আর তুমি নাগিন?”

“কোনো সন্দেহ কি আছে এরমধ্যে? সাপের ওঝা যেমন অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের স্বার্থে সাপকে আটকে রাখে আপনিও তো তাই করছেন,আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন আমাকে জোর করে এ ঘরে আটকে রেখেছেন আর কি চাই? আপনি কি মানুষ? ”

“হ্যাঁ আমি মানুষ বলেই তো তুমি এখনো শান্তি নিয়ে কথা বলতে পারছো, যদি অমানুষ হতাম তাহলে হয়তো আমার সাথে গলা উঁচু করে কথা বলার মতো সাহস দেখাতে না।যাই হোক ঘুম কেমন হলো?”

তন্নি নিশ্চুপ। সাতসকালে এ লোকটার সাথে ঝগড়া করতে একটুও ভালো লাগছে না তার অথচ সে যদি পারতো তাহলে হয়তো দৌড় দিয়ে বেরিয়ে যেত।প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে প্রিয়ম কিন্তু অন্যমনস্ক হয়ে অন্য দিকে চেয়ে আছে তন্নি। প্রিয়ম জানে তন্নি এখন অন্য চিন্তায় মশগুল তাই নিজেই প্রশ্ন করে,

“তা গতকাল ঘুম কেমন হলো বলো তো,আশা করি ভালোই হবে কারণ ঘুমের ঔষধ খেলে তো আর ঘুম ভাঙার চান্স নাই তাই না?”

প্রিয়মের কথা শুনেই চোখ বড় করে তাকায় তন্নি।ঘুমের ঔষধ সে কখন খেলো?তখনি মনে পড়েছে গতকাল রাতে সে এক গ্লাস দুধ খায় বাধ্য হয়ে তার কিছুক্ষণ পর মাথা ঝিমঝিম করে, এরপর কিছু মনে নেই। তার মানে দুধের সাথে ঘুমের ঔষধ মিক্স করা ছিল।তাহলে কি……

“না অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না!
ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলাম যাতে তোমার মাথাটা কিছু সময়ের জন্য চাপমুক্ত থাকে আর সেই সাথে তোমার যেন ভালো ঘুম হয়।তাছাড়া ঘুমের মাঝে তোমার সাথে কিছু করার মতো ইনটেনশন আমার নাই। আমি কোনো বস্তির বখাটে ছেলে না আর তুমিই বা আমার একদিনের মানুষ না।আমার বউ আমার সহধর্মিণী। আগে তোমার সাথে গল্প করি,সময় পার করি তারপর ভালোবাসাটা ধীরে ধীরে তৈরি করবো ঠিক আছে। এখন আপাতত বেড টি শেষ করো আর দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো।নাস্তা করে তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিব। যা বলার সব বলে নিবা আমি অফিস শেষে তোমাকে নিয়ে আসবো।”

তন্নি কিছু বলার আগেই প্রিয়ম রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। প্রিয়মের বেরোনোর মুহুর্তেই নজরে আসে কথার ফাঁকে ফাঁকে প্রিয়ম তৈরি হয়ে নিছে যেটা এতক্ষণ দেখে নি তন্নি।কি হলো তন্নির,সে এত অল্প সময়ে এতটা খামখেয়ালি কি করে হলো?

বাসায় এসেছে আধঘন্টা হলো এরমধ্যে হাজারটা প্রশ্নের মুখে পড়েছে তন্নি।ভাই ভাবি তাকে একঝাঁক প্রশ্নের মুখে ফেলেছে অথচ এসব প্রশ্নের উত্তর সে নিজেই জানে না।কে এই প্রিয়ম,কি তার পরিচয় কিছুই জানা নেই তার অথচ কীভাবে বিশ্বাস করাবে এদের?তন্নির ভাই সুমন তো প্রায় রেগে আগুন।গতকাল সারাদিন সারারাত তন্নির খোঁজ মিলে নি, সুমন অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করেছিল কিন্তু বাইরে আবার এ কথা বের হয় তাই একদিন অপেক্ষা করছিল।তবুও হাতের কাছে যে ক’জন তন্নির বান্ধবীর ফোন নাম্বার ছিল তাদের থেকে জিজ্ঞেস করলো তন্নির খবর কেউ কিছু বলতে পারেনি শুধু রেশমা জানিয়েছিল তন্নি নাকি রেস্ট টাইমে বের হয়েছিল এরপর আর ক্লাসে আসেনি।ব্যস তাতেই মাথার রগ ধরে যায় সুমনের।কথাটা সুবাহকে জানাতে সেও টেনশনে পড়ে যায়। বাপ মা মরা একমাত্র বোন তন্নি,সেই স্কুল জীবন থেকে একা হাতেই মানুষ করেছে তাকে।বয়সের ব্যবধান আর এতিম হওয়ায় কখনো স্নেহের তন্নিকে একরাত বাইরে থাকতে দেয়নি। আর সেই মেয়ে কিনা গতকাল থেকে নিখোঁজ। চাইলে থানায় ডায়রি করা যায় কিন্তু তারা তো একদিন সময় নিবে তার ওপর কথাটা আশেপাশে মানুষের কানে গেলে সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে তাই সে অপেক্ষায় ছিল বোনের আসার।হঠাৎ বাড়ির বাইরে গাড়ির আওয়াজ শুনে জানলায় উঁকি দিতেই দেখে একটা দামি গাড়ি থেকে তন্নি বের হচ্ছে। তন্নিকে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটা চলে যায়। তন্নি বাড়িতে ঢুকতেই সুমন ঠাস করে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়।সুবাহ স্বামীর এহেন কান্ডে দৌড়ে এসে তন্নিকে কেড়ে নেয়।

“কি করছো কি পাগল হয়ে গেছো নাকি, তুমি তন্নিকে মা*রছো কেনো?”

“মা*রবো না,তুমি কি বলছো ওকে কোলে নিয়ে আদর করবো?মা বাবা ছিল না বলে ওকে শাসন করিনি, ভুল হলেও মাফ করেছি কিন্তু তাই বলে সে এতটা বড় হয়ে গেছে বাড়ির বাইরে রাত কাটালো, কোথায় গেছে কার সাথে ছিল একটা খবর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না এত বড় হয়ে গেছে সে?”

মাথার ওপর বাবা মা না থাকলেও ছাদ হিসেবে এতবছর বড় ভাই তাকে আগলে রেখেছে।কখনো ধমক দিয়ে তো কথা বলা দূর সবসময় সবকিছুকে হেয়ালি ভাবে নিয়েছে আজ সেই বড় ভাই তাকে মে*রেছে শুধু মাত্র ঐ লোকটার জন্য। কিন্তু সে তো অন্যায় করেছে আর এই অন্যায়ের কথাটা এখন সে কীভাবে বলবে?লজ্জা আর অভিমানে তন্নি দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। সুবাহ সুমনকে ধমক দিয়ে নিজেও চলে যায় তন্নির কাছে।তন্নিকে মে*রে নিজের হাতে আঘাত করে সুমন।সুবাহ কয়েকবার ডাকার পর তন্নি দরজা খুললে সুবাহ আৎকে উঠে। এতক্ষণ খেয়াল না করলেও এখন খেয়াল করলো তন্নির চেহারার যা তা অবস্থা। সুবাহ তাড়াতাড়ি তন্নিকে নিয়ে বিছানায় বসে।

“তন্নি কি হয়েছে তোর,তোর এ চেহারা কীভাবে হলো?’

তন্নি কথা বলতে পারে না কান্নায় তার গলায় বারবার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। তবুও সুবাহের কথা তন্নি বললো,

“ভাবি আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ”

তন্নির মুখ থেকে এমন কথা শুনে চমকে যায় সুবাহ।নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারে না।বিয়ে কি খেলা নাকি একদিনের মাঝে পরিবার পরিজন ছাড়া যে কাউকে বিয়ে করা যায়? সুবাহ তন্নিকে শান্ত করে এবং জিজ্ঞেস করে ঘটনা কি?

“কি বলছো এসব,তোমার বিয়ে হয়েছে কার সাথে কখন আর কীভাবে? ”

“ভাবি আমি ওকে চিনিও না জানিও না।গতকাল রেস্ট টাইমে ক্লাস ছেড়ে বের হতেই একজন অচেনা মানুষ জানায় ভাইয়া এসেছে গেইটের মুখে আমিও ভাবলাম হয়তো কাজে এসেছে তাই দেখা করতে যায় কিন্তু গিয়ে দেখি কেউ নেই এরমধ্যে একজন এসে বলে গাড়ির কাছে কে যেন ডাকছে।গাড়ির কাছে যেতেই একটা গন্ধ নাকে লাগে এরপর কিছু মনে নেই। তারপর জ্ঞান আসলে দেখি একজন লোক আমার সামনে বসে আছে। ”

এভাবে একে একে সবটা জানায় তন্নি।কথার মাঝে সুবাহ বলে,

“লোকটাকে কি তুমি আগে থেকে চিনতে?”

“না ভাবি চিনতাম না তবে হ্যাঁ অনেকদিন আগে একবার ঐ লোকটার সাথে আমার রাস্তায় ঝামেলা হয়।”

“কেমন? ”

“আমি রিকশা করে ভার্সিটি যাচ্ছিলাম তখনি একটা গাড়ি সামনে চলে আসে।রিকশাচালক ক্ষমা চাইলেও লোকটা তাকে যা তা বলে,এমনকি গায়ে হাত তোলে।প্রথমে চুপ থাকলেও পরে যখন রিকশাচালককে মা*রলো তখন আমিও ঐ লোককে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলাম।এরপর আর কখনো দেখা হয়নি। ”

“হুমম বুঝলাম হয়তো তোমার দেওয়া থাপ্পড়টার শোধ নিতে তোমার সাথে এসব করেছে। কিন্তু এখন উপায় কি,সে কি সত্যি সত্যি তোমাকে নিতে আসবে?”

“জানিনা ভাবি তবে ওর কনফিডেন্স এমনি ছিল যে হয়তো আসতে পারে।আমি এখন কি করবো ভাবি,একে তো ভাইয়া রেগে আছে তার ওপর এসব ঘটনা জানলে,….'”

কথা শেষ না করেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে তন্নি। এদিকে এসব কথায় সুবাহর মাথা ঘুরতে থাকে।একে তো সুমনের মাথা গরম তর মধ্যে যদি এসব কথা শুনে না জানি কি করে ফেলে?তবুও তন্নিকে রেস্ট করতে বলে সে সুমনের কাছে যায়। যাই হোক এসব কথা তো লুকানো যাবে না, সত্যিই যদি প্রিয়ম ছেলেটা চলে আসে তাহলে বড়সড় কেলেঙ্কারি হবে তারচেয়ে প্রস্তুতি থাকা ভালো।

ডাইনিং রুমে হাতের কাছে যা পেয়েছে সবকিছু ভেঙে ফেলেছে সুমন।রাগে তার শরীর টলমল করছে। তার বোনের সাথে এমন জঘন্য কাজ করেছে সেই লোকটাকে দেখার আগ্রহ যেন তার কমছে না।সুবাহ তাকে যখন সবটা বললো তখনি সে তন্নির কাছে ছুটে যেতে চেয়েছিল প্রিয়মের ঠিকানা জানার জন্য কিন্তু সুবাহ জানায়,প্রিয়ম আসবে তন্নিকে নিতে।হঠাৎ জেগে উঠা হিংস্রতা নিবারণ করতে সুমন ঘরের জিনিস ভাঙতে থাকে।তন্নি রুমে বসে ভাঙার আওয়াজে বুঝে যায় সুমনের কাজ।ভয়ে আর ভীতিতে সে কুঁকড়েযায়।

সন্ধ্যা নেমেছে অনেক্ক্ষণ হলো এখনো প্রিয়ম আসেনি।সেই মাগরিব থেকে তন্নি জায়নামাজে বসে কাঁদছে যাতে প্রিয়ম নামের অভিশাপটা তার জীবনে না আসে।কিন্তু কপাল তার সহায় ছিলো না জায়নামাজরত অবস্থায় সে গাড়ির আওয়াজ শুনতে পায় তখনি বুকের কাঁপুনি সৃষ্টি হয় তন্নির।নিজের অজান্তে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে চোখ থেকে।

প্রিয়ম বাসায় ঢুকেই তন্নির নাম ধরে ডাক দেয় তখনি সুমন আর সুবাহ বেরিয়ে আসে।সুমনকে দেখে সালাম জানায় প্রিয়ম।

“ভালো আছেন সম্বন্ধি?”

“কে তুমি আর আমার বোনের সাথে এসব করার সাহস কই পেলে?’

“সাহস দেখতে চেয়ে লাভ কি বলুন যা দেখানোর বা যা করার তা তো আমি করেই ফেলেছি আর পুরানো কথা বলে লাভ কি, এখন আমি আপনার একমাত্র ভগ্নির একমাত্র স্বামী অর্থাৎ আপনাদের জামাই। কোথায় একটু আদর যত্ন করবেন তা না আসার সাথে সাথেই দুনিয়ার বাকওয়াস প্রশ্ন শুরু করলেন।আমার বউ কই,তন্নি কই গো তুমি?”

প্রিয়মের হেয় আর এটিটিউড মার্কা কথা শুনেই সুমনের দমিয়ে রাখা রাগ চড়চড় করে বেয়ে মাথায় উঠে যায়। তন্নির নাম শুনতেই সুমন দৌড়ে কলার টেনে ধরে মুখ বরাবর ঘুষি লাগিয়ে দেয়।

“কু*ত্তার বা* কোথাকার কোন ছেলে রে তুই যে তোর ডাকে আমার বোন চলে আসবে।তোর সাহস কী করে হয় আমার বোনকে জোর করে বিয়ে করার।তোকে যদি এখানে মে*রে পুঁতে রাখি তোর কোন বাপ এসে তোকে বাঁচাবে?”

সুমনের প্রথম কথাগুলো গায়ে না লাগলেও শেষের কথাটা তার গায়ে লাগে।সাথে সাথে পাল্টা ঘুষি সেও লাগিয়ে দেয়।ঘরের মধ্যেই এক প্রকার লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়ে যায়। তন্নি প্রথমে না আসলেও বাইরের হইচই শুনে চট করে বেরিয়ে আসে।ভাই আর প্রিয়মের ঝগড়া দেখে সে দৌড়ে দুজনের মধ্যে চলে আসে।প্রিয়মের সাথে হাতাহাতির লড়াইয়ে একটা ঘুষি লাগে তন্নির মাথায়।তৎক্ষনাৎ জ্ঞান হারায় তন্নি।
,
,
,
চলবে……

(ভালো আছেন?বলছি কি পেজের গ্রোথ আটকায় রাখছেন কেনো একটু বেশি বেশি ইনভাইট করুন সবাই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here