প্রেম আমার পর্ব ১

0
2131

একহাত দিয়ে চুলের মুঠি আর অন্য হাত দিয়ে কলম ধরে আছে প্রিয়ম।পুরো মুখচোখ রাগে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।বড় বড় গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তার নাক দিয়ে সাথে গর্জন বের হচ্ছে দাঁত কিচানো ঠোঁট দিয়ে। আর এই সবকিছুর বয়ে যাচ্ছে তন্নির ওপর।বেচারি চুলের ব্যাথায় প্রায় মরমর অবস্থা না পারছে নিজেকে ছাড়াতে না পারছে মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে।ভয়ে ব্যাথায় তন্নি কুঁকড়াচ্ছে।কিন্তু সেদিকে নজর না দিয়েই এবার হুংকার করে প্রিয়ম।

“আমি আবারও বলছি তুমি কি সই করবে নাকি এভাবেই তোমার ওপর করা অত্যাচার সয়ে যাবে?”

“আপনি যায় করুন আমি সই করবো না।আপনার মতো মানুষকে যেখানে এক সেকেন্ড আমি সহ্য করতে পারিনা সেখানে আপনার সাথে সারাজীবন থাকার মতো চিন্তা তো আমি করতেই পারিনা।তারচেয়ে বরং আপনি আমাকে মে*রে ফেলুন তাতেও আমার কষ্ট হবে না।”

“বাহ্ ম*রার তো দেখি খুব শখ।তা ম*রতে তো তোমাকে দিবই না আর আমার সাথেই তোমাকে থাকতে হবে।শুধু তাই নয়,এক সেকেন্ড যেখানে নিতে পারবে না সেখানে ২৪ ঘন্টায় তোমাকে আমার সাথে একত্রে থাকতে হবে।এবং খুব শীঘ্রই সেই কাজটা হবে।”

বজ্রকন্ঠে কথা শেষ করেই তন্নির সেলোয়ারের একটা অংশ ছিড়ে ফেলে প্রিয়ম।তন্নি আর্তনাদ করে উঠে কারণ প্রিয়ম তার ধারালো নক দিয়ে তন্নির খোলা হাতের বাহুতে আঁচড় কাটে।সাথে সাথে অন্য হাতের অংশটাও ছিড়ে ফেলে প্রিয়ম। এবার তন্নি নিজেকে বাঁচাতে সজোরে ধাক্কা দেয় প্রিয়মকে।বলিষ্ঠ আর সুগঠিত শরীরের প্রিয়ম তো সড়লই না বরং তাকে ধাক্কাতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে যায় তন্নি।শরীরের ব্যাথা সাথে পা উল্টে পড়াতে কান্নায় ভেঙে পড়ে তন্নি।প্রিয়মের সেদিকে নজর নেই সে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় তন্নির প্রান্তে।কাছাকাছি যেতেই তন্নি চিৎকার দিয়ে উঠে,

“প্লিজ আমার সম্মান নিয়ে আপনি খেলা করবেন না আপনার পায়ে পড়ছি,আপনার অপমানের বদলা হিসেবে আপনি আমাকে মা*রুন আঘাত করুন কিন্তু আমার সাথে খারাপ কিছু করবেন না প্লিজ।”

প্রিয়মের সেদিকে কান যায় না সে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় তন্নির দিকে। হাতের হাতা ফোল্ড করতে করতে আর বাঁকা হেসে জানায়,

“আমার দিকটা যখন তুমি ভাবলে না তখন তোমার দিকটা ভাবার মতো সময় আমার কই বলো?তোমাকে অফার দিলাম বিয়ে করে ফুলসজ্জা করার কিন্তু তোমার তো তড় সইছে না তাই বিয়ের আগেই ফুলসজ্জাটা সেড়ে নিই কি বলো?”

প্রিয়ম তন্নির দিকে হাত বাড়াতেই তন্নি চিৎকার দেয়।

“প্লিজ আমাকে খারাপ করবেন না আমি আপনার শর্তে রাজি।আমি কাগজে সই করবো।”

প্রিয়ম থেমে যায় এ কথা শুনে।শয়তানি হাসিটা প্রশস্ত করে পেছনে ব্যাক করে।টেবিলে অবহেলার সাথে পড়ে থাকা কাগজটা তুলে নিয়ে এগিয়ে দেয় তন্নিকে।হাতের একপিঠ দিয়ে চোখটা মুছে অন্য অন্য হাত দিয়ে কাগজে নিজের নামটা সই করে।কলমে লেখা প্রতিটি অক্ষরের সাক্ষী হিসেবে তন্নির চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। নিজের জীবনকে জীবন্মৃত করে তোলার জন্য এ একটা সইই যথেষ্ট। সইটা শেষ হতেই একটানে কাগজটা নিয়ে নেয় প্রিয়ম।

“দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল।প্রথমেই যদি এটা করতে তাহলে এত কষ্ট তোমাকে সহ্য করতে হতো না।ওহ্ মাই সুইট ওয়াইফ প্লিজ ফোরগিভ মি।তোমাকে আঘাত করে আমারই অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তোমাকে এ কষ্টে রেখে যেতে তো ইচ্ছে করছেনা।এসো তোমার কষ্টটা লাঘব করি।’

কথা শেষ করার আগেই তন্নি কে টেনে তন্নির ঠোঁটে কিস করতে থাকে।আহতপ্রায় তন্নি স্তম্ভিত হয়ে যায়। শরীরের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয় প্রিয়মকে।প্রিয়ম টাল সামলিয়ে হেসে দেয় যদিও রাগ হওয়ার কথা কিন্তু তন্নির এ ধাক্কাটা এখন তার মনে রাগ নয় বরং প্রেম জাগিয়েছে।এদিকে রাগে ঘৃনায় তন্নি কাঁপছে। যদি এ অসভ্য লোক তার সাথে কোনোকিছু করে তাহলে সে কীভাবে সেটার মোকাবেলা করবে।প্রিয়মের চাহনি তন্নি কে আরো ভীত করে তুলে।মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ে সে।প্রিয়ম এগোতে গিয়ে আবর থেমে যায়।

“জানেমান ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিলেই কি আমি দূরে যাব?এটা ভাবা ভুল।সুদেআসলে তোমার এ ধাক্কাটা তুলে রাখলাম।খুব তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিব।”

প্রিয়ম নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে তন্নি কে কিছু একটা বুঝায় সেটা দেখেই তন্নি আরো রেগে যায়। প্রিয়ম তন্নির রাগ দেখে হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আর তন্নি দৌড়ে যাওয়ার আগেই দরজা লক হয়ে যায়। দরজার গোড়ায় বসে কান্নায় গুড়িয়ে যায় সে।আর একসময় জ্ঞান হারায় সেখানে।

জ্ঞান ফিরতেই তন্নি আশপাশ তাকায় নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে।তখনি সে বেডের পাশে প্রিয়মকে দেখতে পায়।আর প্রিয়মকে দেখেই সে চোখ বন্ধ করে।সাথে সাথপ প্রিয়ম চেঁচিয়ে উঠে,

“এই মেয়ে চোখ বন্ধ করবে না,চোখ বন্ধ করে আবার জ্ঞান হারানোর দরকার নেই। এভাবে কান্না করে নিজের চেহারাটা ভুতের মতো করে রেখেছো কেনো?কোথায় আজকে বিয়ে করেছো নাচবে গাইবে আর আমার জন্য সেজে বসে থাকবে, আমি এসে কোথায় আমার বউটাকে আদর করবো তা না বউ আমার জ্ঞান হারিয়ে বসে আছে! তুমি কি চাও আমি আচল কামড়ে থাকা ছেলেদের মতো তোমার পেছনে পেছনে থাকি?”

কথাটা শুনেই চোখ মেলে তন্নি।আবারও বলে উঠে প্রিয়ম,

“আমি জানি আমার বউটা কখনো এটা চাইবে না
তাই নিজের শরীরের দিকে নজর দাও কারণ এ শরীর এখন একা তোমার না এটার ওপর কিন্তু আমারও ভাগ আছে। তাছাড়া আমি তুমি যখন এক হবো তখন কিন্তু তৃতীয় একজনও তোমার এ শরীরে থাকবে তাই এখন থেকে নিজেকে তৈরি করো।মনে রেখো বরাবরের মতো অবহেলা করাটা আমি অপছন্দ করি আর সেটার বড় প্রমাণ তো দেখলেই।”

কথাটা বলেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে প্রিয়ম।প্রিয়মের এহেন কথায় তন্নির সর্বাঙ্গে জ্বলে যায়। কিছু বলার মতো শক্তি না পেয়ে কপালে হাত রেখে চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়।

“দয়া করে আপনার নাটক যদি শেষ হয় তবে আমাকে ঘুমোতে দিন।যদি আরো মা*রার ইচ্ছে থাকে তাহলে মা*রতে পারেন তবুও এমন গা জ্বালানো কথা বলবেন না।আমি খুব ক্লান্ত। আর আমাকে বাসায় রেখে আসবেন কখন, আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।’

“পাগল নাকি তুমি,শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে তুমি আবার কই যাবে।এটাই তো তোমার বাড়ি আর আমিই তো তোমার বর।কই এখন বরকে সোহাগ করবে তা না করে বলছো চলে যাবে।ভুলেও দ্বিতীয়বার এ কথা মুখে তো দূরে থাক মনেও এনো না তাহলে কিন্তু…. ”

মাঝপথে কথা রেখে চোখ গুলো পাকিয়ে চেয়ে থাকে তন্নির দিকে।তন্নি আর কথা বলে না।চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।তখনো তার চোখ থেকে জল পড়ছে।মনে হচ্ছে সে বেড়াজালে পড়েছে যেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ হয়তো আল্লাহ বন্ধ করে দিয়েছে।এমন একটা মানুষের সাথে তাকে থাকতে হচ্ছে যাকে সে মন থেকে তো দূরে থাক,চিন্তাতেও সামিল করতে ভয় পায় আর সেই মানুষ কিনা তার স্বামী?কীভাবে এ লোকটাকে সে মেনে নিবে যার জন্য মনের মধ্যে ঘৃনার পাহাড় গড়ে উঠেছে, কীভাবে সে সংসার করবে যাকে দেখলেই মৃত্যুকে আপন মনে হয়,কি করবে তন্নি?
,
,
,
#প্রেম_আমার

#তানিয়া

সূচনা পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here