মনের ক্যানভাসে শেষ পর্ব

0
887

#মনের ক্যানভাসে🌼
#শেষ পর্ব
#Tabassum Ferdous Samiya

রিক্সায় উঠার পরে হঠাৎ জায়ান ভাইয়া আমার হাতের মাঝে তার হাত রাখলো।আর আমার চোখে রাখলো তার চোখ।তার হঠাৎ এমন একটি কাজ আমি পুরো হতভম্ব হয়ে গেলাম।আমার মুখে কোনো কথা নেই শুধু তাকিয়ে আছি জায়ান ভাইয়ার দিকে।দেখি তিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে আমার দিকে।তার ওই চাহনিতে হাজারো না বলা কথা আছে যা আমি বুঝতে পারছি।কিন্তু তাকে কিছু বলতে পারছি না যে, সে কেনো আমার হাত ধরেছে? আমি চুপ করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।বেশ কিছু খন পরে জায়ান ভাইয়া আমার হাত ধরে রেখে বলল,

“আমি যেই কথা তোকে এখন বলবো তা শুনে তুই আমাকে পাল্টা কোন প্রশ্ন করবি না ওকে।”

জায়ান ভাইয়ার কথা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।তাই তার কথা মত চুপ করে রইলাম আমি।উনি যখন বুঝতে পড়লো আমি কিছু বলবো না।তখন আবার বেশ নরম গলায় বলে উঠলো,

“এত বেশি কথা বলবো না শুধু এতোটুকুই বলব যে,আমি তোকে প্রচন্ড ভালোবাসি।কিন্তু কেনো বসি কখন থেকে বসি এত প্রশ্নের কোন উত্তর দিব না। সঠিক সময় আসলে সব বলবো এখন শুধু এই টুকুই জেনে রাখ যে আমি তোকে ভালোবাসি।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি নিশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে যেন ভুলে গেলাম। শুধু গোল গোল চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে রইল।আমার কি বলা উচিত তা আমি বুঝতে পারছি না।তখন ভাইয়া আমাকে বলল,

“একটা কথার উত্তর দে তো সায়রা!”

জায়ান ভাইয়ার কথা শুনে আমি আবারও চুপ করে রইলাম।তখন জায়ান ভাইয়া আমার হাতটা আরো শক্তি করে ধরে বললেন,

“আমি জানি তুইও আমাকে অনেক ভালোবাসিস।কিন্তু আমি যদি কোথাও চলে যাই তাহলে কি তুই আমাকে ঠিক একই ভাবে ভালোবাসবি?”

ভাইয়ের এমন কথা শুনে আমি চমকে গিয়ে তার দিকে তাকালাম আর আনমনে ভাবলাম, কোথাও চলে যাবে মনে কি! কোথায় যাবে ভাইয়া? আর কেনই বা যাবে?এই সব ভাবছি সেই সময় ভাইয়া মৃদু হেসে বলল,

“তুই যেমন ভাবছিস ওই রকম কিছু না।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভাবছি,ভাইয়া কি ভাবে বুঝলো আমি কি ভাবছি? তখন ভাইয়া আবার বলল,

“আমি দেশের বাইরে যাবো পড়াশোনার জন্য।সেখানে আমাকে কয়েক বছর থাকতে হবে।তার জন্য তোকে আমার মনের কথা বললাম।”

আজকে যেনো আমার মুখ দিয়ে একটা কথা বের হতে দিবে না জায়ান ভাইয়া। কি বলছে ভাইয়া এই সব দেশের বাইরে পড়তে যাবে মনে? এই সব কখন ঠিক হলো কই আমি তো কিছু জানি না।আমাকে তো কেউ এই সব ব্যাপারে কোনো কথা বলে নাই!ভাইয়া কথা শুনে ছলছল হয়ে এলো আমার চোখে। ভাইয়া আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“প্লিজ তুই এভাবে কাদিস না। খুব তাড়াতাড়ি চলে আসব তুই শুধু আমাকে একটা কথা দে। তুই আমার জন্য অপেক্ষা করবি?”

জায়ান ভাইয়ের কথা শুনে আমি শুধু তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিনা তখনই রিক্সাওয়াল বলল,

“মামা রিক্সা থেকে নামেন আমরা আইসা পরছি।”

রিক্সাওয়ালা মামার কথা শুনে আমি আর ভাইয়া দুজনেই রিক্সা দেখে নেমে পড়লাম। জায়ান ভাইয়া রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে পুনরায় আমাকে জিজ্ঞাসা করল,

“অপেক্ষা করবি আমার জন্য?”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।এত কিছু ভেবে তো আর লাভ নেই। আমি তো ভালোবাসি জায়ান ভাইয়াকে তাহলে কেনো অপেক্ষা করতে পারবো না তার জন্য। পারবো আমি অপেক্ষা করতে।আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

“হুম পারবো তোমার জন্য অপেক্ষা করতে আমি।”

আমার এইটুকু কঠ শুনে জায়ান ভাইয়া যেনো শান্তির নিশ্বাস ফেল। তারপরে আমরা আর কোনো কথা বলতে পারলাম না। কারণ নাদিরা আপুর চলে এসেছে আর সাথে রাফসান ভাইয়াও আছে।এই পরে আমরা পাঁচ জন অনেক খন ঘুরাঘুরি করে বাইরে থেকে ডিনার সেরে বাসায় ফিরলাম।রাতে আমি জায়ান ভাইয়ার বলা প্রতেকটা কথা ভাবছি।আর এই সব ভাবনার মাঝে ঘুমিয়ে পড়েছি।

ঘুম থেকে সকালে উঠে জানতে পারি জায়ান ভাইয়া নাকি সামনে সপ্তাহ কানাডা চলে যাবে পড়াশোনার জন্য। কথাটা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগলো কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। এভাবেই দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছি। এই এক সপ্তাহের মধ্যে জায়ান ভাইয়া আর আমার সাথে কোন প্রকার কথা বলিনি। মানুষটাকে আমি সত্যিই বুঝিনা সেদিনই তো বলল আমাকে ভালবাসে তাহলে তার পরে কেন কথা বলোনা আমার সাথে? আজকে জায়ান ভাইয়া চলে যাবে। ঘন্টা দের দুয়েক পরে তার ফ্লাইট। বাসা থেকে শেষ বার যখন বের হলো তখন শুধু এক পলক তাকিয়ে ছিল আমার দিকে।

___________

৬ বছর পর আজ জায়ান ভাইয়া আর আমার বিয়ে। দেখতে দেখতে ছয় ছয়টি বছর চলে গেছে জায়ান ভাইয়ার দেশে আসার পরে খালামনির সাথে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলি আর খালামণিও তাতে অমত করেনি তাই আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়। বাসর ঘরে বসে আছি আমি অপেক্ষা শুধু জায়ানের জন্য কখন আসবে তিনি। এইসব ভাবছি তখনই জায়ান ভাইয়া রুমের ভেতরে এসে আমার পাশে বিছানায় বসলো আর আমার হাতটি ধরে তার হাতের মাঝে রেখে কমল সুরে বলল,

“আমি আমার কথা রেখেছি সায়রা। এবার তোকে আমার মনে সকল গোপন কথা বলব তুই সব সময় জানতে চাই কিনা তোর সাথে কেন আমি এত খারাপ ব্যবহার কর? কারণ একটাই আমার ভয় হতো তুই যদি আমার আবেগ অনুভূতি সব জানার পরে আমার সাথে থাকতে না চাস। যদি গুরুত্ব কমিয়ে দিতি আমার প্রতি সেই ভয় কখনো তোকে আমার মনের কোন কথা বলতাম না। তুই যখন খুব ছোট ছিলিস তখন থেকেই তোর প্রতি আমার মনে একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করত যা অন্য কোন মেয়ের প্রতি কখনোই কাজ করেনি। ভালোবাসার কোন ব্যাখ্যা হয় না আর না আমি তোকে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারব শুধু সবশেষে একটি কথাই বলতে পারি তোকে আমি খুব ভালোবাসি।”

কথা শুনে আমি কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,

“আমি তোমার কাছে কোন ব্যাখ্যা জানতে চাই না শুধু সব সময় আমাকে এভাবেই ভালোবেসে যেও।”

জায়ান আমার কথা শুনে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

“সব সময় তোকে এভাবে ভালবাসতে চাই। তুই যদি আমার পাশে থাকিস তবে আমি সব করতে পারবো।”

একে অপরকে এভাবে জড়িয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ সময় পার হয়ে গেল তখন জায়ান আমাকে বলল,

” চল ছাদে যাই আজ আমরা সারারাত চন্দ্রবিলাস করব।”

জায়ানের কথামতো আমি আর জায়ান ছাদে চলে গেলাম। আর সারারাত একসাথে চন্দ্র বিলাস করলাম।

সমাপ্ত

(গল্পটা আমার অনেক বড় করার ইচ্ছে ছিল কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা আর মানসিকভাবে অনেক ডিপ্রেস থাকার কারণে গল্পটা আর বড় করা হলো না। আমি সেভাবে গল্পটা গুছিয়ে লিখতে পারিনি গল্পটা শেষ করতে হবে বলেই কোন রকমের গল্প লিখে শেষ দিলাম। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here