তুমি আমি দুজনে পর্ব ১৫

0
3650

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব-১৫

-হোয়াট!

-হোয়াট আবার কিভাবে হলো স্বামী, আপনার কি হয়েছে,ঠিক আছেন তো?

-হোয়াট রাবিশ, কি যা তা বলছো তুমি,হাইচ্চুউ!

তুরা খাট থেকে নেমে টিস্যু বক্স টা এনে আহানের সামনে ধরে বললো

-আপনার এসব হোয়াট ফোয়াট পরে বলবেন টিস্যু নিন স্বামী

-সাট আপ! আরেকবার এই ডিসগাস্টিং নামটা বললে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেবো

বলেই তুরার হাত থেকে টিস্যু বক্স টা নিয়ে নাক মুছতে লাগলো। এমন সময় খাটের নিচ থেকে ‘মিও মিও’ আওয়াজ শুনে তুরা হাটু গেড়ে বসে টুনিকে খাটের নিচ থেকে বের করে বললো

-ওহ তুই, তুই এখানে কেনো এসেছিস। তোকে না বলেছি এই লোকটার সামনে আসবি নাহ।

বলেই টুনিকে আহানের মুখ বরাবর ধরে বললো

-এই দেখ, ভালো করে দেখে রাখ এই লোকটাকে, উনাকে দেখলে তিন হাত দূরত্ব মেইনটেইন করে চলবি বুঝলি?

বলেই বিড়াল টাকে হাতে নিয়ে বারান্দায় রেখে আসলো। আহান নাকে টিস্যু ধরেই হা করে চেয়ে দেখছে তুরার এসব কান্ড। পাগল নাকি এই মেয়ে! বিড়ালের বাচ্চা কিভাবে ওর কথা বুঝবে?
আহানের ভাবনার মাঝেই তুরা বারান্দায় টুনিকে রেখে এসে আহানের পাশে বসে হাসি হাসি মুখ করে বললো

-টুনিকে বলে দিয়েছি, ওর আর আপনার আশেপাশে আসবে না

-টুনি! এই টুনিটা আবার কে?

-আরে আমার বিড়ালটাই তো টুনি

-বিড়ালের নাম আবার টুনি কি করে হয়?

-ওমাহ,কেনো হবে না রাখলেই হয়। আমি আর রাইমা আপু দুজনে পছন্দ করে এই নামটা রেখেছি

তুরার এমন গর্ব করে বলা দেখে মনে হলো খুব এক অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে। আহান কিছুক্ষণ ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বললো

-এই পাগলেই সাথে মিশলে যে কেও পাগল হয়ে যাবে

-আপনি বিড়বিড়িয়ে কি বলছেন, আমি তো শুনতে পাচ্ছি না

আহানের কথা বুঝতে না পেরে তুরা বোকা বোকা মুখ করে বললো। আহান তুরার দিকে ফিরে শক্ত গলায় বললো

-তোমাকে কিছু শুনতে হবে নাহ, চুপচাপ শুয়ে থাকো। তোমার আর তোমার ওই বিড়ালের বাচ্চার জন্য আমার ঘুমটাই মাটি হলো

-ওর নাম তো টু..

-সাট আপ, নো মোর ওয়ার্ডস! চুপচাপ ঘুমাও না তো পিঠে লাঠি ভাঙবো আমি

আহানের এমন গমগমে গলায় ধমক শুনে তুরা আর কথা বাড়ানোর সাহস করলো নাহ। এই লোককে দিয়ে একদম বিশ্বাস নেই। সত্যিই যদি পিঠে লাঠি ভাঙে? তাহলে কাল সকালে খবরের কাগজের হেডলাইন হবে ‘জল্লাদ স্বামীর হাতে লাঠিপে’টা খেয়ে নিহত হলো এক ভোলাভালা কিশোরী’
চুপচাপ একপাশে কাত হয়ে শুয়ে পরলো তুরা । বেশ কয়েক মিনিট পার হলে পেছন থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে চুপিচুপি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়েই দেখলো আহান তার দিকেই তীক্ষ্ণ নজরে চেয়ে আছে, এভাবে চোখাচোখি হয়ে যাওয়ায় তুরা থতমত খেয়ে গেলো, আমতাআমতা করে বললো

-আ আম..আপনার কিছু লাগবে স্বামী, আমি আপনার কিভাবে সেবা করতে পারি..

-আরেকবার যদি আজেবাজে বকেছো তাইলে তুমি আর তোমার টুনি দুইটাকেই জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে বউগিড়ি বের করে দেবো একদম

বলেই ওপাশ ঘুরে শুয়ে পরলো, এক হাত বাড়িয়ে ধপ করে টেবিল ল্যাম্প টাও বন্ধ করে দিলো। পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে গেলো,,তুরা ভয় পেলেও আরেকটা শব্দ করার সাহস করলো নাহ,শেষে যদি সত্যিই তাকে আর টুনিকে ফেলে দেয়। অন্ধকারে নড়তেও তার ভয় করছে। চুপিচুপি আহানের কাছে সরে গিয়ে পিঠ ঘেঁষে শুয়ে পরলো।

~~

-ভাইজান ও ভাইজান? ভাবি? আপনারা কি উঠেন নি?

বাইরে থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বরের হাঁক শুনে আহান হাতের উপর থেকে তুরাকে নামিয়ে বালিশে শুইয়ে দিলো। বিছানা নেমে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই ওপাশ থেকে উৎফুল্লতা নিয়ে সালাম দিলো

-আসসালামু আলাইকুম ভাইজান,কেমন আছেন?

-ওয়ালাইকুমুস সালাম, কি ব্যাপার তুই কবে এলি চুমকি?

-কালকে রাইতেই আইছি ভাইজান। আপনে উপরে ছিলেন তাই দেখা হয়নি

বলেই আহানের উত্তরের অপেক্ষা না করে ঘরের ভেতরের দিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে বললো

-ভাবি এখনো উঠে নাই ভাই?

চুমকির কথায় আহান একবার পেছন ঘুরে দেখে বললো

-না আমি ডেকে দিচ্ছি দারা

আহান পিছু ঘুরার আগেই চুমকি হড়বড়িয়ে বললো

-আরে না না ভাই। আমিতো এমনেই জিগাইলাম। নতুন বউ তো একটু তো দেরিতে উঠবই।আমিতো আপনেরে জন্য কফি আনছিলাম নেন

বলেই কফির ট্রে টা আহানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওড়না দিয়ে মুখের হাসি ঢেকে দৌড়ে চলে গেলো। আহান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো চুমকির যাওয়ার পানে, এটা কি হলো! এভাবে লজ্জা পাওয়ার কি ছিলো আজব! তারপর আবার ঘরে ঢুকে হাতের ট্রে টা রাখলো টেবিলের উপরে। চুমকি আর ওর পাগলামি নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো মানেই হয়না।
বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াতেই আহানের দৃষ্টি স্থির হলো ঘুমন্ত তুরার চেহারা পানে। একদম গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে আহানের জায়গায়,দু’হাতে বালিশ ঝাপটে ধরে রেখেছে, রাতে লাইট বন্ধ করে দেওয়ায় তুরা একদম আহানের পিঠ ঘেঁষেই ঘুমিয়ে গেছিলো। ভোরের দিকে পিঠের কাছে কিছু খামচে লেপ্টে থাকার আভাস বুঝতে পেরে আহান ফিরে দেখে তুরা এক হাতে আহানের পিঠ খামচে ধরে ঘুমে বুদ হয়ে আছে,, আহান বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরলেও তুরার এমন আরামের ঘুম দেখে আর ভাঙতে ইচ্ছে হলো নাহ। পাশ ফিরে তুরাকে এক হাতে আগলে নিলেই তুরাও ঘুমের মাঝে আহানের বুকেই লেপ্টে গেছিলো। ভোর থেকে সকাল হওয়া অবদি আবছা আলোতে আহান শুধু তুরার চেহারাটাই দেখেছে। যতই ধমকা ধমকি করুক, মেয়েটাকে সেও কষ্ট দিতে চাইনা। বড় ঘরের মেয়ে হওয়াই তুরা ভীষণ আদুরে স্বভাবের। আহান বাহিরে কড়া চেহারা টা দেখালেও ইদানীং আগের মতো অসহ্য লাগেনা তুরাকে।
ঘুমের মাঝে তুরার নড়েচড়ে উঠা দেখে আহান সরে গেলো সামনে থেকে, সোফায় পরে থাকা টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে ঢুকলো।
মিনিট দশেক পর শাওয়ার নিয়ে বেরতেই দেখলো তুরা উঠে বসে চোখ মুখ কচলাচ্ছে। আহান এক পলক চেয়ে আবার মাথা মোছায় মনোযোগ দিলো। তুরা কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকলেও আহানকে দেখে হঠাৎ কি মনে হতেই ঝটপট করে উঠে ওয়াসরুমে গেলো, কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলে টেবিলের উপরে রাখা ট্রে দেখে বললো

-এটা কে দিয়ে গেলো?

আহান শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো চুমকি। তুরা কফির কাপটা হাতে নিয়ে দেখলো একেবারে ঠান্ডা জল হয়ে গেছে। ট্রে হাতে নিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মিনিট দুয়েকের মাথায় আবারও ঘরে ঢুকলো হাতে একটা কফির মগ আর মুখভর্তি স্মিত হাসির রেখা নিয়ে। আহানের সামনে গিয়ে মগটা ধরে বললো

-আপনার কফি

আহান এক ভ্রু উচিয়ে মগটা নিয়ে বললো

-ভার্সিটি নেই?

-আছে

-তাহলে এখনো রেডি হচ্ছো না কেনো, দশ মিনিট সময় দিলাম রেডি হয়ে নিচে আসো

বলেই দরজার দিকে পা বাড়াতে নিলে তুরা বললো

-আমি একাই যেতে পা…

-তোমার কাছে শুনতে চেয়েছি? পাকনামি করার চেষ্টা ভুলেও করবা না,চুপচাপ রেডি হয়ে আসো

বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেলো, তুরা যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ চেয়ে ভীষণ অসহায় একটা মুখ করলো। কোথায় ভেবেছিলো নিজে একটু আরামে রিকশায় ঘুরে ঘুরে যাবে না তা এখন জল্লাদ টার সাথে যেতে হবে। চোখে মুখে হাজার অনিচ্ছার ছাপ ফেলেও ব্যাগ থেকে জামা বের করে চেঞ্জ করে নিলো। দশ মিনিটের মাথায় ই রেডি হয়ে নিচে এলো তুরা। ডাইনিং এ সবাই বসা। তুরা গিয়ে সবার সাথে সামান্য বাকচারিতা করে নাস্তা সেরে বেরিয়ে আসলো। গেইটের বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে আহান। তুরা এসে বসতেই গাড়িটা স্টার্ট করে এগিয়ে নিলো। বিশ মিনিটের মাথায় গাড়িটা এসে থামলো ভার্সিটি গেইটের একটু আগে, তুরা দরজা খুলে নামতে নিলে আহান বললো

-ক্লাস শেষে এখানে ওয়েট করবা,আমিই নিয়ে যাবো,আর হ্যাঁ একদম লেট হয়না যেনো

তুরা মাথা নাড়িয়ে মৌন সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে এলো। ক্লাসে আসতেই দেখলো আজ সাদমান বা ফারিহা কেও ই আসেনি। তুরা তো জানতো না সে আসবে কি নাহ,জানার কথাও না। ভার্সিটির বাইরে তুরার কারো সাথেই যোগাযোগ হয়না, যোগাযোগ করার জন্য তো ফোন দরকার সেটাই ওর নেই। তাই চুপচাপ এক কোণায় গিয়ে বসে পরলো।
সামনের সাড়ির বেঞ্চের মেয়েদের ভেতর কিছু একটা নিয়ে বেশ উৎকন্ঠা খেয়াল করলো তুরা, কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে যেনো খুব বেশি এক্সাইটেড, ক্লাসে সামনের বেঞ্চিতে বসা রিফা,অরিন আর মারিয়া নামের মেয়েদের একটি গ্যাঙ আছে, এরা সবসময় একসাথেই থাকে। ছোট ছোট পোশাক,উদ্ভট সাজ,সেলফি আর অন্যদের উস্কানিমূলক উক্তি করাই এদের কাজ। তুরার এরকম মেয়ে মোটেও পছন্দ নাহ,তাই এড়িয়ে চলে। আর সবচেয়ে বিরক্তিকর লাগে আহানকে নিয়ে এদের মাতামাতি করা, আহান ক্লাসে আসলেই এক একটার ঢং শুরু হয়,যেনো ক্লাস করতে না আহানকে দেখতেই আসে এরা। তবে আজ এদের হাবভাব একেবারেই সুবিধার ঠেকছে নাহ।
তুরার ভাবনার মাঝেই ক্লাসে আগমন ঘটলো আহানের,, গটগট করে গিয়ে ডায়াসে দাঁড়িয়ে তর্জনীর ইশারায় সবাইকে বসতে বললো। স্কাই ব্লু কালারের শার্টের হাতা টা গুটিয়ে মার্কার হাতে নিয়ে বোর্ডে ট্রপিকের নাম লিখলো। তুরা আনমনেই হা করে চেয়ে দেখছে আহানকে, আচ্ছা লোকটার বয়স কত হবে? তুরার জানামতে ভার্সিটির স্যারেদের বয়স ত্রিশের বেশিই হয়,উনার ও কি তাই? কিন্তু উনাকে দেখলে মনে হবে বয়স বড়জোর পঁচিশ কি ছাব্বিশ। ফর্সা চেহারায় সুঠাম পেটা শরীরে তাকে অনেক বেশিই আকর্ষণীয় লাগে, তাই তো মেয়েদের এতটা ফ্যান্টাসি আহানকে নিয়ে। আগে এসবে গা না করলেও ইদানীং তুরার বেশ রাগ হয়,মেয়েগুলোর এমন ন্যাকামি সহ্য হয়না একেবারেই ইচ্ছে করে সবগুলোকে ঘাড় ধরে ক্লাস থেকে বের করে দিতে।

-হোয়াট ইজ দিস?

প্রচন্ড জোরে ডেস্কে বারি দিয়ে বললো আহান। ভাবনা ভেঙে তুরা হকচকিয়ে তাকাতেই দেখলো আহানের চোখ আর মুখাবয়ব ভীষণ শক্তরূপ ধারণ করেছে, ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সকলের দিকে, তুরা খেয়াল করলো আহানের নাকের পাটা ভীষণ লাল বর্ণ হয়েছে, আহান রেগে গেলো? হঠাৎ!

-হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস? কার সাহস হলো এধরণের একটা দুঃসাহসিক কাজ করার?

পুরো ক্লাস জুড়ে পিনপতন নীরবতা, আহান বেশ গম্ভীর স্বভাবের হলেও কখনো এভাবে রাগ প্রকাশ করেনি স্টুডেন্টস দের সামনে, আজ ওর এমন বেজায় রাগী ধমকে সকলের টনক নড়ে গেছে।

-আমার ডেস্কে এধরণের লাভ লেটার রাখার সাহস হলো কার!

বলেই আবারও ধমকে উঠলো, এবার তুরার কাছে সবটা স্পষ্ট হলো। এগুলো নিশ্চিত ওই চুন্নি গ্রুপের কাজ। এর জন্যেই এত নিকনিক করছিলো তিনটা। বেশ হয়েছে, এবার পাঠাও লাভ লেটার। তুরার রাগে গা জ্বলছে পারছে না উঠে গিয়ে সবগুলোর মুখে ঝামা ঘষতে।

-আ’ম ওয়ার্নিং ইউ গাইস ফর দ্যা লাস্ট এ্যান্ড ফার্স্ট টাইম। ফারদার যদি এধরণের ইনফেরিওর দেখি তাহলে সবগুলোকে রাস্টিকট্রেড করবো

আহানের ধমকে সারা ক্লাস জুড়ে হীম হাওয়া বয়ে গেলো যেনো। আর সবচেয়ে বেশি করুন হয়েছে ওই তিনটার মুখ। তুরা তো পারছে না উঠে গিয়ে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে,,ইস ফারিহাটা থাকলে ভীষণ মজা হতো। কিন্তু ভেতরের ইচ্ছে ভেতরেই দমিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। আর কিছুক্ষণ ক্লাস নিয়ে সময়ের আগেই বেরিয়ে গেলো আহান,সাথে দিয়ে গেলো গাদা গাদা অ্যাসাইনমেন্ট। এটা যে রাগ ঝাড়তে দিয়েছে সেটা সবাই বুঝতে পারছে। আহান বেরোতেই সারা ক্লাস জুড়ে গুনগুন শুরু হলো। সবাই আহান স্যারের এমন রাগ আর লেটার টা কে পাঠালো এ নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বাকি ক্লাস গুলো করলো তুরা, ক্লাস টাইম শেষ হতেই যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো, এখন বাড়ি ফিরতে পারলেই শান্তি, ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে এলো। সিড়ি বেয়ে নেমে আসতেই সামনে ছাই রঙা শার্ট পরিহিত পুরুষটিকে দেখেই পা থামিয়ে দাড়ালো।
সেদিন গায়ে সস ঢেলে দেওয়ার পর মাহিদ স্যারের সাথে আর দেখা হয়নি, আরেকবার সরি বলা দরকার।

-হ্যালো স্যার?

কান থেকে ফোনটা নামিয়েই মেয়েলি কণ্ঠস্বরে ফিরে তাকালো মাহিদ, তুরা দ্বিধাদ্বন্দিত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, মাহিদ তার স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললো

-হ্যালো

-স্যার আসলে আমি ওইদিনের জন্য সরি বলতে এসেছি

ভ্রু যুগল কুঞ্চিত করে মাহিদ জিজ্ঞাসা করলো

-কোনদিন?

-ওই যে সেদিন আমার জন্য আপনার পোশাক নষ্ট হয়ে গেলো

এবার মাহিদ ভ্রুদ্বয় প্রসারিত করে সাবলীল স্বরে বললো

-আরে তুমি এখনো ওটা নিয়ে হেজিটেশনে আছো! ডোন্ট বি গিল্টি প্লিজ। ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিলো। নেভার মাইন্ড।

মাহিদের স্বাভাবিক কথায় তুরাও বেশ সস্থি বোধ করলো। এমন সময় পাশ থেকে হুট করেই একটা ধাক্কা লাগলে তুরা ছিটকে মাহিদের গায়ের উপর পরে,,আকস্মিক ঘটনায় তুরা ভীষণ অপ্রতিভ হয়ে গেছে, নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে তড়িৎ গতিতে সরে এলো।

-স স্যার,আই আম রিয়েলি সরি হুট করেই ধাক্কা লাগলো আমি তাল সামলাতে না পেরে..

-ওকে ওকে,আমি বুঝেছি। পেছন থেকে ধাক্কা লেগেছে,আমিও খেয়াল করেছি ব্যাপার টা। ভার্সিটিতে এসেও যে ছেলেপেলে এধরণের বেয়াদবি করবে এটা মোটেও এক্সপেকটেড ছিলো নাহ।

বলেই পাশে তাকালো। পেছন থেকে কেও একজন তুরাকে ধাক্কা টা দিয়েছে, কিন্তু ছুটে চলে যাওয়ায় তুরা বা মাহিদ কেও লক্ষ্য করেনি ব্যক্তিটাকে।

-আমি দেখছি

বলেই মাহিদ সেদিকে গেলো,তুরাও ভীষণ অপ্রতিভ চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসলো। এই মাহিদ স্যারের সামনেই কি তার সাথে দুনিয়ায় যত ঘাপলা হতে হয়! একদিন ধাক্কা লেগে পরে,তো একদিন সস ঢেলে দেয়। আজ আবার গিয়ে পরলো লোকটার গায়ে। তুরার এবার বেশ অপমানিত বোধ হচ্ছে, শেষে তুরাকেই ছ্যাচড়া মনে করবে।
এসব ভাবতে ভাবতে গেইট পেরিয়ে বেরোতে সামনেই অদূরে দাঁড়ানো গাড়িটা দেখে তুরার টনক নড়ে উঠলো। তার ক্লাস তো শেষ হয়েছে আরও আধ ঘন্টা আগে, সে আস্তে ধীরে ঢিলামি করে বেরোতে আর স্যারের সাথে কথা বলতেই এতগুলো সময় পার হয়ে গেছে অথচ মনেই মেই আহান বলেছিলো ক্লাস টাইম শেষেই যেনো চলে আসে,সে অপেক্ষা করবে।
এতক্ষণে নিশ্চয় বোম হয়ে গেছে লোকটা। তুরা মনে মনে ভয় নিয়ে এগিয়ে আসলো গাড়ির সামনে, এমনিতেই তো আজ ক্লাসে বো’ম ব্লা’স্ট করিয়েছে, এখন না জানি কোন ঝড় তুলবে, তুরা তু তো গায়া!
ভেবেই দরজা খুলে সিটে বসলো তুরা, আড়চোখে একবার চেয়ে দেখলো আহান চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, কোনো হাবভাব ধরতে পারছে না তুরা,এমন ফিক্সড ফেস করে আছে কেনো লোকটা! দুই মিনিট চুপ করে বসে থাকলো। আহান এখনো গাড়ি স্টার্ট করেনি, তুরা ভীষণ শঙ্কিত মুখ টেনে মিনমিন করে বললো

-কি হয়েছে? এমন করে আছেন কেনো?

তুরার কথা শেষ হতে না হতেই আহান বিদ্যুতের বেগে ওর কাছে এসে হাতের কব্জিতে চেপে ধরে, এভাবে আকস্মিক আক্র’মণে তুরা বিহ্বলিত হয়ে ভিতগ্রস্ত্র চেহারায় আমতাআমতা করে কিছু বলতে নিলেই আহান হিসহিসিয়ে বললো

-তোমাকে বলেছিলাম না ক্লাস শেষ হতেই যেনো তোমাকে এখানে পাই, এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি

তুরার হাতের চিকন কবজিটা ওমন বলিষ্ঠ হাতের চাপে মুষড়ে যাচ্ছে যেনো। হাতের চাপে যেনো অবশ হয়ে গেলো। বাধা বাধা কণ্ঠে বললো

-আ আব..নামতে গিয়ে দেরি হয়েছে

তুরার এমন উত্তরে আহানের মেজাজ এক ডিগ্রি হাই হয়ে গেলো, কব্জি ছেড়ে বাহুতে ধরে বললো

-তোমার সাহস কি করে হলো আমায় মিথ্যে বলার, কি মনে হয় তোমার আমি কিছুই দেখিনা? মাহিদের সাথে কি করছিলে তুমি

-আ আমি আমি উনার সাথে একটু কথা বলছিলাম শুধু

ভাঙা গলায় বললো তুরা,আহানের এম আকস্মিক রাগের কারণ কিছুতেই তার বোধগম্য হচ্ছে নাহ, এমব ব্যাবহার কেনো করছে!

-আবার মিথ্যা! আবার মিথ্যা! মাহিদের গায়ে ঢলে পরে কিসের কথা তোমার

আহানের বজ্রকণ্ঠের ধমকে আপাদমস্তক কেঁপে উঠলো তুরার, তখন মাহিদের গায়ের উপর পরে যাওয়ার দৃশ্যটাই হয়তো আহান দেখেছে, আর তার জন্য এমন করছে। কিন্তু তুরা এখন আহানকে পুরোটা কি করে বোঝাবে যে ওটা ইচ্ছাকৃত ছিলো নাহ, সে তো সরি বলতে গেছিলো। আবার সরি বলার কারণ টা জানলে হয়তো আরও বেশি রেগে যাবে। ভয়ে আর হাতে লাগা চাপে তুরা কেঁদে উঠলো। তুরার এমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে আহান তুরাকে ছেড়ে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। তুরা ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে আহানকে দেখছে। এভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া কর‍তে দেখেনি আহানকে সে,,এটা কি শুধু সকালের ঘটনার জন্য তার উপরে রাগ ঝারলো নাকি মাহিদ স্যারের সাথে ওভাবে দেখেছে বলে? আর যদি তাই হয় তাহলে এতটা কেনো রাগলো লোকটা, বউ বলে তো পরিচয় ই দেয়না,সে কার সাথে কথা বললো তাতে উনার কি?
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here