তুমি আমি দুজনে পর্ব ১৪

0
3117

#তুমি_আমি_দুজনে
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১৪

-হোয়াট ইজ দিস,খাটের নিচে কি করছো তুমি!

অপ্রত্যাশিত ঘটনায় অবাক হয়ে আহান কিঞ্চিৎ জোরেই বলে তুরাকে,,কিন্তু তুরা কোনো নড়চড় না করে চুপচাপ রসগোল্লার মতো চোখ করে চেয়ে আছে আহানের দিকে। তুরার কোনো ভ্রুক্ষেপ না দেখে আহান আবারও চেঁচিয়ে উঠে

-হ্যাভ ইউ গন ম্যাড! সমস্যা কি তোমার মেয়ে?

-আ আমার কোনো সমস্যা নেই

এবার তুরা মিনমিনিয়ে উত্তর দিলো।

-সমস্যা নেই তো তুমি খাটের নিচে কি করছো, বেরিয়ে আসো বলছি,না তো মেরে ঠ্যাং খোরা করে দেবো

গমগম আওয়াজে ধমক দিলো আহান, আহানের এমন রণচণ্ডী রাগী চেহারা দেখে তুরা আর পাকনামি করার সাহস পেলো না, চুপচাপ সুরসুর করে বেড়িয়ে এলো। এক তো কাজের চাপে মাথাটা ধরেছিলো তার উপর বাড়িতে আসতে না আসতেই এই মেয়ের এমন গন্ডগোল করা কান্ডে আহানের মেজাজ যেনো তরতর করে বিগড়ে গেলো।

-খাটের নিচে কি করছিলে তুমি?

নিজেকে কিছুটা শান্ত করে স্বাভাবিক স্বরে প্রশ্ন করলো আহান,তুরা একবার ঘাড় উচিয়ে তাকালো আহানের দিকে ওর এমন রাগে গম্ভীর আর স্থির চেহারা দেখে আর ঘাটার সাহস পেলো নাহ, কিন্তু কি উত্তর করবে সেটাও ভেবে পাচ্ছে নাহ,তুরার এমন চুপ করে থাকা দেখে আহান আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না,তুরার দিকে তেড়ে এগিয়ে গিয়ে চাপা ধমকে বললো

-সমস্যা কি তোমার, সবসময় একটা না একটা ব্লান্ডার করাই লাগে,ওখানে কেনো ঢুকেছো তুমি

আহানের এসব ধমকা ধমকি তুরার নিকট নিছক স্বাভাবিক হলেও আজ বেশ রূঢ় ভাবে বলেছে আহান, না হয় একটু খাটের নিচেই গেছিলো। তার জন্য এভাবে বকলো! হুট করেই তুরার নরম মনটাতে ভীষণ আঘাত লাগলো। তার সাথে কখনও ধমকে কথা বলেনি তার বাবা, বাবার মৃত্যুর পর চাচা চাচী খারাপ ব্যবহারে অতিষ্ঠ হলেও এ বাড়িতে আসার পর পুরোনো আদর যেনো ফিরে পেয়েছে,এখন আহানের এভাবে ধমকানিতেও তার বাধ যেনো চুরচুর হয়ে গেলো। আচানক চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো তুরা না চাইতেও।
তুরার এভাবে কেঁদে ফেলায় আহানের সমস্ত রাগ সরে তার বদলে হতভম্ব হয়ে গেলো, এভাবে আকস্মিক কেঁদে দেবে এটা আহান ভাবতে পারেনি। হুট করে মেজাজ টা এত খারাপ কেনো হলো এটা তারও বোধগম্য হলো নাহ । এখন মেয়েটার কান্না দেখে তার ভালো লাগছে নাহ। ভীষণ অপ্রস্তুত বোধ করলো আহান, দ্বিধাবোধে বুদ হলো ভেতরটা কিন্তু তুরার কান্না তার চেয়েও প্রখর বেদনা দিলো তার ভেতরে। মাঝখানের দূরত্ব আরেকটু ঘুচিয়ে নিলো আহান,তুরার কাছে এসে বললো

-আ আম সরি, আমি এভাবে বলতে চাইনি। তুমি কেদোনা প্লিজ। আমি আর বকবো না

তুরা জলে ভরা টইটুম্বুর দৃষ্টি নিয়েই আহানের দিকে তাকালো। আহানের এভাবে নরম কথায় যেনো আরও গলে গেলো। কান্নার বেগ টা না চাইতেও বেড়ে গেলো।

-আ আব,,আমি সরি তো। আর বকবো নাহ, কান্না থামাও প্লিজ

আহান খানিক এগিয়ে এসে এক হাতে তুরার গাল মুছিয়ে বললো। আহানের সহমর্মিতা পাওয়া যেনো তুরার কাছে ডুমুরফুল দেখার মতোই দুষ্কর,এমন ছোট্ট যত্নে তুরাও আবেগে আপ্লূত হয়ে আহানের এক হাত ঝাপটে ধরলো। ছোট বাচ্চার মতো আহানের হাতের সাথে মুখ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলো।তুরার এহেন কান্ডে আহান ফোস করে একটা প্রশ্বাস ছাড়লো। মেয়েটা যে ভীষণ আহ্লাদী স্বভাবের তা এই কয়দিনে বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে সে। একটু ধমক দিলেই কেঁদে ভাসিয়ে দেবে আবার একটু সহানুভূতি দেখালেই চুপটি করে যায়, সে যাই হোক চুপ তো করেছে, কোনো এক অজানা কারণেই হোক এই মেয়েটির কান্না আহানের একেবারেই সহ্য হয়না। এই চোখের অশ্রু অজান্তেই আহানের বুকে ভীষণ বেদনা অনুভব করায়। কিন্তু এখন ফ্রেশ হওয়া দরকার, এমন ঘর্মার্ত শরীরে থাকতে ভীষণ অসস্থি হচ্ছে আহানের। তুরাকে হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সরে দাঁড়াতে যাবে, ঠিক তখনই পায়ের উপর ছোট্ট একটা নরম দলার উপস্থিতি অনুভব করলো আহান। ঘাড় নামিয়ে নিচে তাকাতেই প্রসস্থ কপালটাতে ভীষণ অপ্রস্তুততার ছাপ পরলো। পায়ের উপর সফেদ লোমে আবৃত ছোট্ট একটা বিড়ালছানা দেখেই আহান হতবাক হয়ে তাকালো তুরার দিকে,

-এইটা এখানে আসলো কি… হা হা হাইচ্চুউউ

পুরো কথা শেষ করার আগেই হাঁচি দিলো,আবার কিছু বলতে নিতেও পরপর দুবার হাঁচি দিলো আহান,চোখ নাক সব লাল হয়ে গেছে। তুরা শিগগির বিড়ালছানা টা হাতে নিয়ে এক দৌড়ে বারান্দায় বেতের মোড়ার উপর রেখে রুমে এসে টিস্যুবক্স নিয়ে আহানের সামনে ধরলো। আহান একটা টিস্যু নিয়ে নাক মুখ মুছেই তুরাকে বললো

-এই বিড়াল টা এখানে আমার ঘরে কি করে এলো?

-আ আসলে আমি ওকে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি

মুখটা ছোট করে ধিমি স্বরে বললো তুরা।

-রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছো মানে কি! আর পেলেও এভাবে নিয়ে চলে এলে, আমার ঘরে এনেছো তুমি কার পারমিশন নিয়ে

-আমি দিয়েছি অনুমতি

পৌঢ় নারী কণ্ঠে আহান পিছু ফিরে তাকালো। শাড়ির কুচিটা এক হাতে ধরে এগিয়ে এলো ধীর পায়ে। আহানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো

-ওকে আমি অনুমতি দিয়েছি দাদুভাই

-দিদুন! তুমি বলছো এটা? তুমি যানো না আমার বেড়ালে অ্যালার্জি আছে, এটা আশেপাশে থাকলেও আমার হাঁচি হয়, সোজা আমার ঘরেই নিয়ে এলে

-শান্ত হও দাদুভাই,,তুরা এত করে বললো তাই আর নিষেধ করতে পারিনি, আর তুরা বলেছে তো, বিড়াল টা একদম তোমাকে জ্বালাবে নাহ। তোমার আশেপাশেও আসবে নাহ,তাই না নাতবউ

বলেই তুরার দিকে ঘুরলে তুরাও অপ্রস্তুত হলেও হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ায়। আহান এক পলক তুরার দিকে ভীষণ রেষ নিয়ে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো

-হ্যাঁ তা তো দেখতেই পাচ্ছি, এসেই আমার পায়ে উঠে বসেছে

বলেই চোখে মুখে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে তোয়ালে হাতে নিলো। আমেনা খাতুন এগিয়ে গিয়ে খাটের উপর বসে, বললো

-আমি নিজে তুরাকে বলেছি তুমি ওকে বকবে না এ ব্যাপারে, তোমার কোনো আপত্তি নেই তো দাদুভাই?

-আমার চলে কই এ বাড়িতে, সবাই তো যাকে পারছে এনে বসাচ্ছে আমার ঘরে

বলেই তুরার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়েই ওয়াসরুমে ঢুকে ধপ করে দরজা টা বন্ধ করে দিলো। আহান যেতেই তুরা কাচুমাচু করে রাখা মুখটাতে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে ছুটে গিয়ে ঝাপটে ধরলো দিদুনকে

-দিদুন,দিদুন দিদুন!! ইউ আর দ্যা বেস্ট! আই লাভ ইউ

বলেই টুস করে একটা চুমু দিলো দিদুনের গালে।

-তুমি এত্তো ভালো,, তোমার জন্যেই জল্লাদ লোকটা এত সহজে মেনে নিলো। না তো কোন লেভেলের হম্বিতম্বি করতো আল্লাহ যানে

তুরার আনন্দ দেখে দিদুন মুচকি হেসে উঠলো

-পাগলি মেয়ে,,তবে যাই করো। বিড়াল তোমায় পুষতে দিয়েছি, এবার জল্লাদ টাকেও পোষ মানাও। অনেক তো হয়েছে আর কত এমন হম্বিতম্বি দেখবো। তোমাদের যা অবস্থা আমার আর নাতি নাতনীর মুখ দেখা কি হবে!

দিদুনের কথায় তুরা বেশ লজ্জা পায়, উঠে দাঁড়িয়ে ‘ধ্যাত’ বলেই দৌড়ে বারান্দায় চলে যায়। দিদুন ও মুচকি হেসে উঠে দাড়ালো। মৃদু পায়ে হেটে প্রস্থান করলো

★★★

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। তুরা বসার ঘরে সবার সাথে বসে চা নাস্তা খাচ্ছে। সবাই বলতে দিদুন মা রাইমা আর মিনু ফুফু। বাবা এখনো ফেরেনি অফিস থেকে, আর ওই জল্লাদ বসেছে ল্যাপটপ নিয়ে, দুপুরেই তুরা বেরিয়েছে ঘর থেকে টুনিকে নিয়ে,আর যায়নি ও ঘরে। টুনি হলো বেড়ালছানা টার নাম, তুরা আর রাইমা মিলে পছন্দ করেই রেখেছে। সে আপাতত সোফার এক কোণায় বসে দুধ খেতে ব্যস্ত। সবার সাথে গল্প আলাপচারিতার মাঝেই দরজার বেল বেজে উঠলো।

-এ সময় আবার কে এলো রুবি

আমেনা খাতুনের প্রশ্নে রুবি খাতুন হাত থেকে চায়ের কাপটা নামিয়ে বললো

-আমিও তো জানি না মা,আচ্ছা দেখি কে আসলো

বলে বসা থেকে উঠতে নিলেই তুরা দাঁড়িয়ে বলে

-আপনি বসুন মা,আমি গিয়ে দেখছি

বলেই এগিয়ে গিয়ে দরজার ছিটকিনি টা খুললো।
পরনে লাল টুকটুকে একটা সালোয়ার কামিজ, চুল দুটো দুপাশে বিনুনি করে রাখা,সেখানেও লাল ফিতা। দু হাত ভরা কাঁচের চুড়ি, আর কাধের সাথে মাঝারি সাইজের একটা ব্যাগ।

-আসসালামু আলাইকুম আফা

সামনে দাঁড়ানো হাস্যজ্বল চেহারার মেয়েটিকে দেখে তুরা এতক্ষণ আগাগোড়া পরখ করছিলো। মেয়েটি হতে সালাম পেয়ে তুরা থতমত খেয়ে উত্তর দিলো

-ওয়ালাইকুমুস সালাম

-হাউ আর ইউ আফা? আপনে কি এ বাড়িতে বেরাইতে আসিছেন?

এমন হুরহুর কথা শুনে তুরা কি বলবে ভেবে পেলো নাহ। এর মাঝেই পেছন থেকে রুবি খাতুন বললো

-কে এসেছে তুরা, দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

রুবির কথা শেষ হওয়ার আগেই তুরার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি তুরাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকেই হড়বড়িয়ে বললো

-আমি আন্টি, আপনাগো চুমকি!

বলেই গা দুলিয়ে একটা হাসি দিলো। নিজেকে চুমকি বলা মেয়েটার কথায় তুরা বাদে আর কেও ই অবাক হয়নি। রাইমা বেশ প্রফুল্লচিত্তে বললো

-আরে চুমকি। বেড়ানো শেষ হলো তোর, তা কেমন দিলি ট্যুর?

-একদম ঝাক্কাস আফা। ইয়া বড় পাহাড় পর্বত জীবনেও দেখছিলাম নাহ

বলেই এগিয়ে গেলো। দিদুন চায়ের কাপ টা হাত থেকে নামিয়ে বললো

-তুই তাহলে ফিরলি। আমি আবার ভাবলাম বোনের বাড়ি ঘুরতে গিয়ে ওইখানেই শ্বশুরবাড়ি পাতলি নাকি

-আরে না না কি যে কন না আম্মা। আপনেরা ছাড়া আমি আবার কই সংসার পাতমু।

বলেই মুখে লাজুক লাজুক হাসি দিলো। তুরা এখনো কিছুটা হতভম্ব হয়েই দাঁড়িয়ে আছে। এই মেয়ে কে? দেখে তো মনে হচ্ছে এদের অনেক পরিচিত, হুট করে কোত্থেকে এলো। তুরাকে এমন বিহ্বলিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাইমা বললো

-আরে তুরা,ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলি ক্যান। আই চুমকির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

রাইমার ডাকে তুরা এগিয়ে এসে দাড়ালো, রাইমা তুরাকে চুমকিকে দেখিয়ে বললো

-ও হলো চুমকি। ও আমাদের বাড়িতেই থাকে। ওর দুঃম্পর্ককের বোনের বাড়িতে গেছিলো ঘুরতে, সেখান থেকেই এসেছে প্রায় মাস খানেক পর। এই জন্যেই তোর সাথে পরিচয় নেই

রাইমার কথা শুনে চুমকি নামের মেয়েটা তুরার দিকে তাকিয়ে বললো

-হ্যালো আফা, মাইসেল্ফ চুমকি।

-আফা না চুমকি, ভাবি বল ও আহানের বউ

বাংলা সিনেমাতে শাবনুরের বিয়ের কথা শুনেও সাকিব খান এতটা রিয়েক্ট করেনা যতটা চুমকি করলো আহানের বউ কথাটা শুনে।

-ও আল্লাহ। কি কন আন্টি। বউ? ভাইজানের বউ, ইনি? ক্যামনে কি হইলো?

-ওর সাথে আহানের বিয়ে হয়েছে দিন দশেক আগেই। হুট করেই অপরিকল্পিত ভাবে বিয়েটা হয়েছে। তুই বাড়ি ছিলিস না তাই জানানোও হয়নি

কিন্তু চুমকি নামের মেয়েটা হয়তো একটু বেশিই বাংলা সিনেমা দেখে,একদম বাপ্পারাজের মতো মুখটা মাত্রাতিরিক্ত বিহ্বল ভঙ্গিমায় বললো

-এ আমি বিশ্বাস করি নাহ, এ আমি বিশ্বাস করি নাহ! এইডা কি কইলেন আম্মা। আমিতো মাত্র এক মাসের জন্যই ঘুরতে গেছিলাম। এর মাঝেই আমার ভোলাভালা শান্তশিষ্ট বিয়ে বিদ্রোহী ভাইজানেরে বিয়াও দিয়ে দিলেন!

চুমকি নামের মেয়েটার এমন প্রতিক্রিয়া আর কথায় হয়তো সবাই অভ্যস্ত, তাই রাইমা দিদুন আর মা কোনো রা না করলেও মিনু ফুফু মুখে বেশ বিরক্তি টেনে বললো

-এহ আইছে আমার বিশ্বাস করা আলা। এই মেয়ে তোমার বিশ্বাস করা না করা নিয়ে কি আমার বাবুকে বিয়ে দেবে?

বলেই ফুফু মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন

-এইডা সেই চুমকি না রে রুবি। ছোট বেলায় ইনসাফ যেইটারে আনছিলো

রুবি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই ফুফু বেশ ভাব নিয়ে বললো

-আমিতো জানি। আমার স্মৃতিশক্তি বেশ কড়া। দু বছর আগে এসে দেখছিলাম এই ছুনবুনিরে। এখনো ওইরকম ই আছে। এই মেয়ে মনে আছে তোর আমার কথা?

চুমকির দিকে তাকিয়ে বললো মিনু। চুমকি বেশ ভাবান্বিত চেহারায় ফুফুকে খানিক দেখে বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো

-আপনে হেই ফুফু না যে দুই বছর আগে আইসা বাথরুমে পইরা গেছিলেন?

-মানেহ?

-মানে বুঝেন নাই? আমার কিন্তু এখনো মনে আছে। গতবার আপনে যেইবার আইছিলেন। বাথরুমে গোসল করতে গিয়ে সাবানে পিছলাই পরছিলেন। আমি আর আন্টিই তো আপনারে হাত পা ধইরা আনছিলাম। আহারে কি পরাডাই না পরছিলেন ফুফু, এক্কেরে বোয়াল মাছের মতো চিত হয়ে ছিলেন

ভীষণ আফসোসের স্বর টেনে বললো চুমকি। কিন্তু এতে যেনো মিনু ফুফুর মেজাজ টা তরতর করে বেড়ে গেলো। গাল মুখ ফুলিয়ে বললো

-বেদ্দপ মেয়ে, তুমি এখনো বেদ্দপ ই আছো। আগের মতোই উড়নচণ্ডী। একটুও মানুষ করতে পারেনি তোমায় রুবি

মিনুর কথায় উপস্থিত সবাই মুখ টিপে হাসা শুরু করলো, তুরা পুরোটা না বুজলেও চুমকি আর ফুফুর কথায় ওউ হেসে দিলো।

-চুমকি, যা নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হ,অনেকটা পথ এসেছিস।আর দাঁড়িয়ে থাকিস নাহ

রুবির কথায় চুমকি সম্মতিসূচক হেসে নিচে রাখা ব্যাগটা আবারও কাধে নিয়ে পা বাড়ালো। তুরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো

-আপনারে তো প্রথমে চিনি নাই ভাবিজান। জানতাম নাহ তো তাই মিশটেক। এখন জাইনা যামুনে। আপনে অনেক সুন্দরী। সারাদিন তো আপনার লগেই থাকুম নে

বলেই আবারও স্বভাব সুলভ হেসে চলে গেলো রান্নাঘরের পাশের ঘরটাতে। তুরা অবাক হয়ে যাওয়ার পানে চেয়ে থাকা অবস্থায় রাইমা বললো

-আরে ও এমনি। একটু চটপটে হলেও এমনিতে অনেক ভালো। প্রায় সাত বছর ধরেই আছে আমাদের বাড়িতে।

তুরা স্মিত হেসে এগিয়ে গিয়ে বসলো ফুফুর পাশে। রুবি উঠে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। রাইমার ফোন বাজতেই ওউ মিষ্টি হেসে উঠে গেলো,,তুরার হঠাৎ কি একটা মনে হতে ওউ উঠতে নিলে মিনু হাত ধরে বসিয়ে দিলো,তুরা প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি দিয়ে মিনুকে বললো

-কিছু বলবেন ফুফু আম্মা?

-তোমার সাথে কথা আছে বউ, বসো

~~

একভাবে কয়েক ঘন্টা ল্যাপটপের স্ক্রিনে চেয়ে থেকে আবারও মাথা টা ঝিমুনি দিলো আহানের। প্রতিবারই বছরের এই সময়টাতে তার কাজের অনেক চাপ হয়। ডিপার্টমেন্ট হেড হওয়ার দরুন নিউ ইয়ার স্টুডেন্টস দের সকল পেপারস ডকুমেন্টস সহ বাকি সবকিছুর চেকিং আর সব কাজের সিকুয়েন্স ঠিক রাখা তারই দ্বায়িত্ব। এ নিয়েই ইদানীং বেশ ঝামেলায় থাকতে হয়।
উঠে ওয়াসরুমের ভেতরে গেলো আহান। খানিক সময় নিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরতেই দেখলো ল্যাপটপ টা টি-টেবিলে নেই। তার জাগায় ধোঁয়া উঠা কফির মগ রাখা। চোখ ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো তুরা বিছানার বালিশ ঠিক করছে। কিঞ্চিৎ কপালে ভাজ ফেলে এগিয়ে গিয়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে তাতে এক চুমুক দিতে দিতে নিলেই তুরা এগিয়ে এসে আহানের তোয়ালে টা বাড়িয়ে দেয়। আহানের বেশ টনক নড়ে, এই মেয়ে আজ এমন লক্ষীমন্ত আচরণ করছে যে?
উৎকন্ঠা ভেতরেই দমিয়ে রেখে, তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে কফিতে এক চুমুক দিলো। তুরা বিছানা গুছিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। আহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ল্যাপটপ টা তার বেড সাইড টেবিলেই রাখা। কিঞ্চিৎ ঘাড় নাড়িয়ে বিছানায় গিয়ে নিজের জায়গা তে আধশোয়া হয়ে বসলো হাতে একটা বই নিয়ে।

-লাইট কি বন্ধ করে দেবো?

তুরার কথা শুনে আহান বই থেকে মুখ তুলে বেশ হতবাক হয়ে তাকায়। এই মেয়ের জন্য রোজ তার লাইট জ্বেলে রাখতে হয় আর সেই কি না আজ নিজ থেকে বন্ধ করার কথা বলছে? স্ট্রেঞ্জ!
তবুও আহান উপরের ভ্রুক্ষেপহীনতা বজায় রেখে না বোধক ইশারা করলো। তুরাও লক্ষী মেয়ের মতো এসে চুপচাপ পাশে শুয়ে পরলো। বেশ খানিকটা সময় নিঃশব্দে পার হলেও নিস্তব্ধতা ভাংলো তুরার কণ্ঠে

-আপনার কি কিছু লাগবে?

মাঝরাতে চোখ খুলে হুট করে তুরার এহেন কথা বলায় আহান বেশ হকচকিয়ে গেলো,

-নাহ

বলেই আবারও বইয়ে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করলো। এই মেয়ের মাথার তার ছেড়া আছে বলেই আহানের ধারণা, তাই তো কখন কি বলে কি করে ঠিকানা নেই।

-আপনার কি কিছু দরকার?

খানিক বাদে আবারও বললো তুরা।

আহান এবারও নির্লিপ্ত ভাবে না সূচক উত্তর দিলো। তুরা ওপাশ ঘুরে শুয়ে পরলেও মিনিট দুয়েক পার না হতেও আবারও বললো

-আপনার কিছু লাগলে আমাকে বলতে পারেন

এবার আহান অবাক হওয়ার সাথে বেশ বিরক্ত ও বোধ করলো।

-আমার কেনো কিছু লাগবে,আর লাগলেও আমি নিজেই নিতে পারবো তুমি চুপচাপ ঘুমাও

বলেই থপ করে বইটা বন্ধ করে পাশে রেখে মুখের উপর এক হাত রেখে চিত হয়ে শুয়ে পরলো আহান।জেগে থাকলে এই মেয়ে আবারও টেপ রেকর্ডারের মতো একই কথা বলবে। থেকে থেকে কোন ভূতে ধরে আহান ভেবে পাইনা।
বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলে তুরা আর কিছুই বলে নাহ, আহানেরও ঘুমে চোখ লেগে আসে। কিন্তু হুট করেই নিজের বুকের উপর ছোট পায়ের পদক্ষেপ অনুভব করলো আহান। টি-শার্ট ভেদ করে তীক্ষ্ণ নখের খামচি গেঁথে যাচ্ছে যেনো। মুখের কাছে লোমশ জিনিসটা আসতেই আহানের ঘুম ছুটে গেলো

-হাইচ্চুউউহ!!

তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো আহান। বুকের উপর থেকে ছোট জিনিসটা ধপ করে নিচে পরেই ‘মিয়াও’ করে উঠলো । ঘরের মধ্যে বিড়ালটা ঢুকলো কি করে!এতক্ষণ তো ছিলো নাহ। বার দুয়েক হাঁচি দিয়ে আহানের চোখ জ্বলে যাচ্ছে। মেজাজ টা তার এবার লাভার মতো গরম হয়ে গেলো। শেষে কি না তার বুকের উপর উঠেছে বিড়ালটা।

-কি হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন তো স্বামী?

যেনো এইটার ই কমতি ছিলো, মেয়েলি স্বরের এমন উদ্ভট কথা শুনে পাশে তাকিয়ে দেখলো তুরা উঠে বসে তার দিকেই তাকিয়ে আছে, স্বামী? এটা আবার কেমন ডাক হলো! পাগল হয়ে গেছে নাকি!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here