প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
পার্ট : ৯
প্রীতি খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ছেলে মেয়ে দুইটা ঘুমিয়ে গেছে ৷একটু আগেই কত কাদঁছিল ৷তারা তাদের মায়ের কাছে যাবে ৷এত মায়ের কাছে কেন যেতে হবে ৷সে ওদের মেরেছে নাকি ৷ওর সাথে একটু থাকলে কি এমন ক্ষতি হবে ৷কয়েক দিন পর তো এমনিতেই দিয়ে আসবে ৷ প্রীতি ঘরে গেল ৷তারপর ছেলে মেয়ে দুটোকে নিজের বুকে নিয়ে চোখ বন্ধ করলো ৷এখন বেশ ভালো লাগছে প্রীতির ৷
ফজরের আজান কানে আসতেই প্রীতির ঘুম ভেঙ্গে গেল ৷সে নামাজ পরে কিচেনে চলে গেল ৷রান্নাটা বেশ ভালো না পারলেও ৷মোটামুটি রান্না পারে প্রীতি ৷ এখন তো আবার ছেলে মেয়ে দুটো আছে ৷ওদের জন্য নাস্তা বানাতে হবে ৷প্রীতি নাস্তা বানিয়ে বেড রুমে গেল ৷সে রুমে গিয়ে যা দেখলো তাতে ওর চোখ কপালে উঠে গেছে ৷
তার ভাইয়ের ছেলেটা ওয়াসরুমের সামনে দাড়িয়ে বলছে
এই ডাইনি বেল হ বলতি ৷আমাল হিতু বেলিয়ে দাতছে ৷তালাতালি কল ৷
প্রীতি বুঝতে পারছে না ৷ছেলেটা কাকে ডাইনি বলছে ৷প্রীতি মুখে রাগ ফুটিয়ে বলল
এই সব কোন ধরনের কথা ৷আর কাকে তুমি ডাইনি বলছো হ্যা ৷
ওকে বেল হতে বলো ৷আমাল হিতু ৷উফফফ আমি আর পালছি না ৷পিলিগ ৷
প্রীতি কেন যেন ছেলেটার কথা শুনে খুব হাসি পাচ্ছে ৷কিভাবে দাতঁ চিবিয়ে কথা বলছে ৷প্রীতি নিজের হাসি আটকে বলল
তুমি আমার সাথে চলো ৷আমি তোমাকে অন্য ওয়াসরুমে নিয়ে যাচ্ছি ৷ছেলেটা প্রীতির পিছু পিছু গেল ৷একটু পরে ছেলেটাকে নিয়ে আবার ঘরে এলো ৷এ মা এসে দেখে মেয়েটা কেদেঁ চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে ৷ ছোট মেয়েটা নিজের ভাইকে দেখেই ভ্যা ভ্যা করে কেদেঁ দিল ৷
মেয়েটা কাদঁতে কাদঁতে বলল তুই কোথায় গিয়ে ছিলি ভাই ৷ আমি ভেবে ছিলাম এই আন্টি টা হয়তো তোকে মেরে ফেলেছে ৷
ছোট মেয়েটার কথা কানে যেতেই প্রীতির চোখে জলরাশি জমা হলো ৷সত্যি কি সে এত খারাপ ৷হয়তো খুন করতে করতে চেহারায় খুনের ছাপ বসে গেছে ৷ প্রীতি ওয়াসরুমের ভেতর গেল ৷আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে লাগলো ৷তারপর নিজের হাত দেখতে লাগলো ৷ কই তার চেহারা তো ঠিকই আছে ৷তাহলে বাচ্চা দুটো কেন ওর কাছে থাকতে চায় না ৷প্রীতি নিজের চোখের পানি মুছতে লাগলো ৷
প্রীতি একটু পর নিজেকে সামলে বেড়িয়ে এলো ৷ছেলে মেয়ে দুটো বিছানায় বসে আছে ৷প্রীতি ওদের কাছে যেয়ে বলল
চলো ফ্রেশ হবে ৷আমি সারাদিন বাসায় থাকবো না ৷এখন একেবারে গোসল করবে চলো ৷
প্রীতি খুব সুন্দর করে এক এক করে গোসল করিয়ে দিল ৷কিন্তু বিপত্তি ঘটলো ছেলেটার কাপড় পাল্টাতে যেয়ে ৷মেয়েটার থেকে ছেলেটা বেশ লাজুক ৷প্রীতি যখনই ছেলেটার কাপড় পাল্টাতে যাবে ৷তখনই ছেলেটা চিৎকার করে বলল
পিলিগ আমাকে ছেলে দাও ৷আমাকে নেংটু কলো না ৷
তোমার ভেজা কাপড় না পাল্টালে তোমার ঠান্ডা লাগবে তো ৷
ছেলেটা হাত দিয়ে নিজের চোখ ডাকলো ৷তারপর লাজুক হেসে বলল তুমি তো মেয়ে ৷আল আমাল মেয়েদেল সামনে লজ্জা করে ৷
এতটুকু একটা ছেলের এত লজ্জা ৷প্রীতির কানে কথাটা যেতেই সে হু হা কে হেসে দেয় ৷হাসতে হাসতে তার পেট ব্যাথা করছে ৷প্রীতির হঠাৎ হাসি বন্ধ হয়ে যায় ৷নিজের কাজে নিজেই বোকা হয়ে যাচ্ছে ৷আজ চৌদ্দ বছর পর মন খুলে হাসলো সে ৷ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখলো ও গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে ৷প্রীতি হালকা হেসে বলল
ওকে আমি বাইরে যাচ্ছি তুমি চেঞ্জ করো কেমন ৷ছেলেটা মাথা নাড়লো ৷
প্রীতি ওদের খাইয়ে দিয়ে নিজে রেডি হয়ে গেল ৷আজ ভার্সিটি যেতে হবে তার ৷যাওয়ার আগে সে ছেলে মেয়ে দুইটার সামনে বসে বলল
আমি কখন আসবো জানি না ৷তোমরা সাবধানে থাকবে ৷আসার সময় তোমাদের জন্য সব নিয়ে আসবো কেমন৷ঘরে খাবার আছে ৷খেয়ে নিও ৷ভালো না লাগলে টিভি দেখো ৷আমি আসছি ৷তারপর প্রীতি সব কিছু লক করে চলে গেল ৷
আবেশ চৌধুরী নিজের স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে কাল রাতেই ৷তার অবস্থা ভালো না ৷ছেলে মেয়ের জন্য সে প্রায় পাগল ৷পুলিশও তাদের খুজে পাচ্ছে না ৷
অপর দিকে দ্বীপ চৌধুরী নিজের বাড়ীতে বসে আছে ৷তার পাশেই স্ত্রী আর ছেলে বসে আছে ৷
দ্বীপ চৌধুরীর স্ত্রী বলল প্রীতি কি করে ফিরে আসতে পারে ৷ও তো চৌদ্দ বছর আগেই মরে গেছে ৷
আমিও তো সেটা বুঝতে পারছি না ৷আমি নিজে ওকে মরতে দেখেছি ৷আমি নিজের হাতে ওকে গাড়ী চাপা দিয়ে মেরেছি ৷তারপর ওর লাশ নির্জন রাস্তায় ফেলে এসেছি ৷ওর যেই অবস্থা ছিল ৷তাতে ওর বেচে থাকার কথা না ৷আমি নিজের হাতে ওকে মেরেছি ডায়না ৷দ্বীপ চৌধুরী বলল ৷
কেউ আমাদের ফাসাচ্ছে ডায়না ৷আমার খুব ভয় করছে ৷ও বলেছে জেসিকা আর ওসমানকে নাকি মেরে ফেলেছে ৷এবার নাকি আমাদের দিহানের পালা ৷
ওহ তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো বাবা ৷প্রীতি যদি ঐ বার বেচেঁও যায় ৷কিন্তু এইবার আর বাচঁবে না দিহান বলল ৷
আমাদের সাবধানে থাকতে হবে ৷আর আবেশের সাথে এখন এমন ভাবে মিশতে হবে যেন ও কিছু না বুঝতে পারে ৷আমাদের যেন অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ৷দ্বীপ চৌধুরী বলল ৷
প্রীতি নিজের ভার্সিটিতে এসেছে ৷কিন্তু ভার্সিটিতে আসতেই এমন কিছু ঘটলো যা সে কল্পনাও করে নি ৷কয়েকটা ছেলে মেয়ে সে আসতেই তার দিকে কালো রং ছুড়ে মারলো ৷প্রীতির আপাদমস্তক কলো রংয়ে ভরে গেছে ৷ছেলে মেয়ে গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো তারা হাসছে ৷তাদের হাতে ছোট ছোট বালতি ৷ভার্সিটির সবাই হাসছে তাকে দেখে ৷হঠাৎ তাদের মধ্যে থেকে একটা চিরচেনা সুর প্রীতির কানে এলো ৷ সামনে তাকিয়ে দেখলো ভার্সিটির ভিপি নির্ঝর শাহরিয়া দাড়িয়ে আছে ৷সে মিটিমিটি হাসছে ৷নির্ঝর নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে বলল
কি রে মিলা কেমন দিলাম ৷
মিলা প্রীতির চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে বলল বাহ ভাইয়া এই কালো ভুতটাকে এখন তো চেনাই যাচ্ছে না ৷একদম সত্যি কারের ভূতের মতো লাগছে ৷তবে সেই লাগছে ৷
নির্ঝর প্রীতির দিকে এগিয়ে এসে বলল এটা আমার বোনকে অপমানের শাস্তি ৷বাকিটা তোলা রইলো মিস প্রীতি লতা ৷
প্রীতি নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল আপনি যদি আমার সূর্য সেন হন ৷ তাহলে আমিও প্রীতিলতা ৷এবার দেখুন আমার কাজ ৷প্রীতি কথাটা বলেই নির্ঝরকে জরিয়ে ধরলো ৷তারপর নির্ঝরের দুই গালে নিজের গাল ঘষলো ৷নির্ঝর প্রীতিকে ছাড়াতে পারছে না ৷প্রীতি নির্ঝরের গলায় মুখ ঘষতে ঘষতে বলল
এমন করে রোজ আমায় রং মেখে দিও সূর্য সেন ৷ রং মাখার পর তোমায় না হয় এভাবেই আদর দিলাম ৷কি বলো সোনা ৷প্রীতি নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো ৷
নির্ঝর প্রীতিকে একটা ধাক্কা দিল ৷প্রীতি কিছুটা পিছিয়ে গেল ৷
নির্ঝরের চোখ লাল হয়ে গেছে রাগে ৷ রাগে কাপঁছে সে ৷ওর কপালের রগটাও ফুলে উঠেছে ৷নির্ঝর পারছে না এখন প্রীতিকে গলা টিপে মারতে ৷নির্ঝর চেচিঁয়ে বলল এর প্রতিশোধ তো আমি নেবই সেটা যেভাবে হোক ৷আর নিজেকে একবার আয়নায় দেখো ৷ কালো ভূত একটা ৷ তুমি আমার জুতোর যোগ্যও নও ৷কাল কিস করেছো আর আজ এভাবে জরিয়ে ধরে ঠিক করো নি ৷ আমি এর শোধ নেব ৷ ছাড়বো না তোমাকে আমি ৷ নির্ঝর কথাটা বলেই চলে গেল ৷
প্রীতির চোখে পানি ৷হয়তো শরীরের রং এর জন্য কেউ দেখতে পায় নি ৷প্রীতি চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে নিল ৷তারপর ভার্সিটি থেকে বের হয়ে গেল ৷
(আজ রক্ত দিতে গিয়ে ছিলাম ৷তাই সকালে গল্প দেই নি ৷রাতে বোনাস পার্ট পারলে দেব ৷ভালো থাকবেন সবাই ৷আর গঠন মূলক কমেন্ট করবেন দয়া করে ৷next আর nice পড়তে পড়তে হাপিয়ে গেছি ৷)
চলবে