প্রীতিলতা আসবে বলে ( সিজন ৩ পর্ব ১১+১২

0
661

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :৩
পার্ট :১২

আর কত ঠকলে একটা মানুষ পাথর হতে পারে বাবা ৷ প্রিয়জনদের মুখোশের আড়ালে থাকা চেহারা গুলো এত ভয়ংকর কেন ৷কেন মানুষ ভালোবাসার ঘরে ছুড়ি চালায় বাবা ৷তবে কি কাউকে ভালোবাসতে নেই ৷তবে কি দয়া করতে নেই কারো উপর ৷আমি আর পারছি না ৷ঐ মানুষটাকে আমি কিভাবে মারবো বাবা ৷ভালোবাসার মানুষদের মারতে যে বড্ড কষ্ট হয় ৷জানো বাবা আমি দিহানকে খুন করতে এনে ছিলাম ৷চেয়ে ছিলাম ওকে ঐ নকল দ্বীপ চৌধুরীর চোখের সামনে খুন করবো ৷ কিন্তু আমি পারি নি ৷আমার চোখের সামনে বারবার কাকুর চেহারাটা ভেসে উঠে ছিল ৷আমি ঐ পাড়ে যেয়ে কি জবাব দিতাম তাকে ৷নিজের মা বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে তার ছেলেকে মেরেছি ৷আমি পারি নি বাবা ৷রাতের আধারে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো প্রীতি ৷বাবা মায়ের ছবি বুকে জরিয়ে ফ্লোরে বসে কাদঁতে লাগলো ৷

দুইদিন পাড় হয়ে গেছে ৷পুলিশ তুরাগ নদীর পাড়ে একটা ভাঙ্গা বাড়ীতে এসেছে ৷আজ সকালে একটা ছেলে নদীর পাড়ে শামুক কুড়াতে আসে ৷ক্লান্ত শরীরে যখন সে ভাঙ্গা ঘরটাতে প্রবেশ করে ৷ তখনই ভেতরে চেয়ারের সাথে বাধা একটা লাশ দেখতে পায় ৷ ছেলেটা চিৎকার করে মানুষ ডাকে ৷এলাকার লোকেরা পুলিশে খবর দেয় ৷লাশটা কার তা কেউ জানে না ৷লাশের গায়ে কোনো প্রকার আঘাত করা হয় নি ৷তবে মৃত লোকটাকে কোনো দড়ি দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে ৷লোকটার চোখ যেন কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়েছে ৷জিহবা এখনো বের হয়ে আছে ৷ তবে খুনটা ভোর রাতেই করা হয়েছে ৷লাশের পকেট থেকে পুলিশ একটা চিরকুট পেল ৷চিরকুটে লেখা

আমার প্রতিশোধের আর মাত্র তিনজন বাকী ৷ তিনটে খুন করে আমি শান্ত হবো ৷যদি তিনজন কে বাচাঁতে চান ৷তাহলে আমায় খুজুন ৷যতটা খুজলে তিনটে খুন আটকানো যায় ৷

এবারের খুনটাও যে সেই একই ব্যক্তি করেছে তা বুঝতে পুলিশের বাকী রইলো না ৷পুলিশ মৃতের পকেট থেকে পাওয়া ফোন থেকে কিছু নাম্বারে কল করলো ৷এবং লাশের ব্যপারে জানতে চাইলে তারা বলে এটা আশরাফ খানের ম্যানেজার এমদাদের নাম্বার ৷অপর দিকে সাংবাদিক চলে এসেছে ৷এবং নিউজ করা শুরু করেছে ৷

অপর দিকে প্রীতি নিজের কেবিনে হাটছে ৷তার মাথায় কাজ করছে না ৷ টিভিতে আশরাফ খানের ম্যানেজারের খুনের সংবাদ শুনে তার মাথায় কাজ করছে না ৷প্রীতি নিজের মধ্যে বিরবির করতে করতে বলল

আমি তো খুন টা করি নি ৷তাহলে এই খুনটা কে করলো ৷তবে কি অন্য কেউ আমার সাথে গেইম খেলছে ৷অন্য কেউ আমাকে ধরতে এসব করছে ৷ কিন্তু কে করছে এমন ৷ আমাকে তো কেউ চেনে না ৷আমাকে সতর্ক হতে হবে ৷তবে যেই হোক সে এই খেলায় আমার বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র করছে ৷কিন্তু আমি তা হতে দেব না ৷ কিছুতেই না ৷

হঠাৎ করেই প্রীতির কেবিনে নক পড়তে সে স্বাভাবিক হয়ে গেল ৷এসিপি এসেছে প্রীতির সাথে দেখা করতে ৷এসিপি কে সালাম দিল প্রীতি ৷তারপর বলল

স্যার আপনি হঠাৎ আমার কেবিনে ৷

একটু কথা ছিল জরুরী ৷

জ্বী স্যার বলুন ৷

প্রীতি আমরা কিছু দিন আগে কর্নেল ওসমানের খুনের কিছু ছবি পেয়ে ছিলাম মনে আছে ৷

জ্বী স্যার ৷খুনী নিজেই ব্যরিস্টার সোহেলের লাশের সাথে রেখে গিয়েছিল ৷

হুমমম ৷আমরা একটা নাম্বার পেয়েছি ৷যেই নাম্বারটা থেকে শেষ বারের মতো ব্যরিস্টার সোহেলকে কল করা হয় ৷তার কয়েক মুহূর্ত পরেই ফোনটা অফ হয়ে যায় ৷আর সঠিক লোকেশন খুজে পাওয়া যায় নি ৷ঠিক সেই একই নাম্বার থেকে আবেশ চৌধুরীকেও কল করা হয়েছে ৷আর আবেশ চৌধুরীর ভাষ্যমতে খুনী নিজেকে তার মৃত বোন প্রীতিলতা বলে দাবী করেছে ৷ এই খুন ,কিডন্যাপ সব একজনের কাজ ৷আমাদের অনুমান যদি ঠিক হয় ৷তাহলে খুনী আশে পাশের কেউ ৷ কিন্তু সে খুন গুলো করছে খুব সাবধানে ৷সে কোনো প্রমান রাখছে না ৷যদি আমরা খুনীর সামান্যতম সন্ধান পাই তাহলে পুরো ফোর্স লাগিয়ে দেব ৷আজও একটা খুন হয়েছে ৷খুনী আরো খুন করবে ৷কিন্তু তার আগেই আমরা তাকে ধরবো ৷এই কেসটা আমাদের যে করেই হোক সমাধান করতেই হবে ৷

ইয়েস স্যার ৷

এসিপি চলে গেল ৷প্রীতি নিজের চেয়ারে বসে পড়লো ৷তারপর বলল

যে এমদাদ্ কে খুন করেছে ৷সে চায় যেন পুলিশ আমাকে দ্বিগুন পাগল হয়ে খোজেঁ ৷কিন্তু কে সে ৷প্রীতির চিন্তার মাঝেই ওর ফোনে একটা কল এলো ৷নাম্বারটা প্রীতি চেনে না ৷প্রীতি নাম্বারটা রিসিভ করলো না ৷একে তো এত চিন্তা ৷ তার মধ্যে আবার ফোন ৷ আবারো প্রীতির ফোন বেজে উঠলো ৷প্রীতি এবার রাগ হয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ৷তারপর বলল

কে বলছেন ৷একটু পরে ফোন করুন ৷

আরে এত তাড়া কিসের ৷আগে একটু কথা বলি মিস প্রীতিলতা ৷ওহ সরি তুমি তো আবার ঐ আয়ান চৌধুরীর মেয়ে ৷তাহলে তোমার নামটা নিশ্চয়ই প্রীতিলতা চৌধুরী ৷ওপাশ থেকে কথা গুলো কেউ একজন বলতে লাগলো ৷

কে বলছেন আপনি ৷

বলবো ৷সব বলবো ৷জানো তোমার বাবাকে নিজের হাতে মারি নি ৷কিন্তু তার মরা লাশটা দেখতে আমার কিন্তু সেই মজা লেগেছে ৷তবে আর যাই বলো আয়ান চৌধুরীর কিন্তু কৈ মাছের প্রান ৷মাথায় এত আঘাত করার পরেও ঐ বাস্টার্ড টা মরে নি ৷

এই একদম আমার বাবাকে গালি দিবি না তুই ৷একবার তোর নাম বল ৷তোকে জ্যান্ত পুতে ফেলবো আমি ৷

আহ হা এত হাইপার কেন হচ্ছো ৷এখনো তো বাকি আছে ৷তোমার বাবা কিন্তু ঐ দিন মরে নি ৷ তাকে পরবর্তীতে একদম জীবিত পুতে দিয়েছি ৷জানো তখন তাকে দেখে আমার বড্ড আফসোস হয়ে ছিল ৷ আমার পছন্দের জিনিস কেড়ে নেওয়ার শাস্তি তাকে আমি দিয়েছি ৷ কি অসহায় লাগছিল তখন ঐ আয়ানকে ৷রক্তাক্ত চোখের অসহায়ত্বের পানি ৷জিন্দা কবর দিয়ে দিয়েছি ওকে ৷শুনেছিস তুই প্রীতিলতা ৷তোর বাপকে জিন্দা কবর দিয়েছি ৷আর শোন এবার তোকে শেষ করবো ৷তোকেও তোর বাবার মতো জিন্দা কবর দেব আমি ৷আর শোন আশরাফের ম্যানেজারকে আমি মেরেছি ৷ওকে না মারলে পুলিশকে আরো সতর্ক কিভাবে করতাম ৷ তোর সময় শেষ হয়ে এসেছে প্রীতিলতা ৷তুই আমার শকুনী চোখে ধরা পরে গিয়েছিস ৷আর এতক্ষনে আমি কে সেটাও হয়তো বুঝে গিয়েছিস ৷আর শোন নারী পাচারকারীর যেই প্রধান ৷সে আর কেউ না আমি ৷যাকে সমাজের সবাই একটা ভালো মানুষ মনে করে ৷আর একটা কথা শোন ৷তোকে তাহলে বলেই দেই আজ সব ৷ তোর মাকে জীবিত থাকতে তো পাই নি ৷কিন্তু মরার পর ঠিক পেয়েছি ৷কি আর বলবো সারা জীবন মনে থাকবে ৷ তোর মায়ের শরীরটা দূর থেকে দেখলে মাথায় কাজ করতো না একদম ৷কিন্তু পথের কাটাঁ ছিল আয়ান ৷কি হয়েছে বলতো ৷ঐ দিন আসতে একটু লেট করে ফেলে ছিলাম ৷ আচ্ছা মরলেও বুঝি মেয়েদের শরীর গরম থাকে ৷

ওপাশের লোকটা হাসতে হাসতে আবার বলল

আমার মুখোশের আড়ালে থাকা জানোয়ারটা কে কেউ চেনে না ৷আমি যে খুন করতে পারি তা কেউ বিশ্বাস করবে না ৷এমদাদকে মারলাম আমি ৷আর নাম পড়লো তোর ৷আজ একটা কথা শোন শয়তান কখনো মানুষের সামনে এসে শয়তানী করে না ৷শয়তান আড়ালে থেকে সর্বনাশ করে ৷আজ থেকে তোর সর্বনাশ শুরু প্রীতিলতা ৷তোরা কেউ বাচঁতে পারবি না ৷

প্রীতি চিৎকার করে উঠলো ৷তারপর বলল আর একটা কথা বলবি না তুই ৷তোকে আমি কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো ৷তুই আমার বাবাকে জীবিত কবর দিয়েছিস ৷আমার মাকে মরার পরেও ছাড়িস নি ৷তোকে আমি এমন মৃত্যু দেব যে ৷মৃত্যুও ভয় পাবে ৷

একদম চিৎকার করবি না বুঝেছিস ৷তোর বাবার মতো তোকেও শেষ করে দেব ৷আর শোন তোর দিন ঘনিয়ে এসেছে ৷খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে আমাদের ৷তত দিন নিজের খেয়াল রাখিস ৷ঐপাশ থেকে ফোন রেখে দিল ৷প্রীতি এখন যেন একটা পাথর হয়ে গেছে ৷তাহলে কি ঐ দিন বাড়ীর পেছনে হুডি পরা লোকটা এই ছিল ৷যাকে প্রীতি দেখতে পায় নি ৷প্রীতি নিজের কপাল চাপড়ে ধরলো ৷তার মাথা কাজ করছে না ৷তার মানে বাবা ঐ দিন বেচেঁ ছিল ৷আর মাকে ওরা মরার পরেও ছাড়ে নি ৷এতটা নিচে কিভাবে নামলো ওরা ৷ প্রীতি নিজের চোখের পানি মুছে বেড়িয়ে গেল ৷কারন হাতে আর সময় নেই ৷ যে কোনো সময় পুলিশের কাছে তার আসল পরিচয় চলে আসবে ৷যা করার আজকে মধ্যেই করতে হবে ৷প্রীতি নিজের বাইক বাড়ীর দিকে ঘুড়ালো ৷ যত প্রমান আছে সব সরিয়ে ফেলতে হবে আজকের মধ্যে ৷ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে ৷

রাত ঘড়িতে এগারোটা আশরাফ খান একটা ক্লাবে বসে আছেন ৷এই পর্যন্ত পাচঁটা বিয়ে করেছেন ৷কিন্তু বউ তার টিকে নি ৷মেয়ে বলতেই আশরাফ খান শেষ ৷আশরাফ খানের রাতের সঙ্গী ক্লাবে থাকা সুন্দরী রমনীরা ৷যখন অনেক টেনশনে থাকেন ৷তখন তিনি ক্লাবে আসেন ৷ আজ তার কাছের বন্ধু তাকে ক্লাবে আসতে নিষেধ করেছে ৷তবুও সে এসেছে ৷সে আর যাই হোক মেয়ে ছাড়া থাকতে পারবে না ৷হঠাৎ চোখ গেল একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা মেয়ের দিকে ৷মেয়েটার চোখে সানগ্লাস ৷পড়নে ওয়স্টার্ন পোশাক ৷মেয়েটা বেশ আকর্ষনীয় ৷হাতে মদের বোতল নিয়ে আশরাফ খান ঐ দিকে চলে গেলেন ৷ মেয়েটাকে তার চাই আজ রাতের জন্য ৷

চলবে

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন:৩
পার্ট :১৩

আশরাফ খান ক্লাবের মেয়েটাকে নিয়ে নিজের নামে বুক করা হোটেলের রুমে চলে এসেছে ৷মেয়েটা ক্লাবে থাকতে চায় নি ৷তাই হোটেলেই নিয়ে এসেছে ৷মেয়েটার চেহারা এখনো সম্পূর্ন দেখা হয় নি ৷মাস্ক আর সানগ্লাসের জন্য দেখতে পায় নি ৷কিন্তু মেয়েটা অত্যাধিক সুন্দর এতে সন্দেহ নেই ৷আশরাফ খানের মাথাটা একটু ব্যাথা করছে তাই তিনি একটু ফ্রেশ হতে গেলেন ৷ সাথে আসা মেয়েটার নাকি ঘুম আসছে ৷তাই যাওয়ার আগে নিজের এবং তার জন্য দুই কাপ চা অর্ডার করে গেলেন ৷আর যাই হোক আজ রাতের শয্যা সঙ্গী তার ৷একটু যত্ন তো করতেই হবে ৷তার মধ্যে মেয়েটাকে নিয়ে আসতে কোনো বেগ পেতে হয় নি ৷অফার করতেই রাজী হয়ে গেছে ৷মেয়েটা যে রাজী হবে তা আশরাফ নিজেও বুঝতে পারে নি ৷

কিছুক্ষন পরে আশরাফ ফ্রেশ হয়ে এলো ৷ মেয়েটা ঘরে নেই ৷বারান্দায় উকি দিয়ে দেখলো মেয়েটা দাড়িয়ে আছে অন্য দিকে মুখ করে ৷আশরাফ বিছানার কাছে থাকা টেবিলের উপর থেকে নিজের চায়ের কাপ তুলে নিল ৷তার পর নিজেও বারান্দার দিকে চলে গেল ৷চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মেয়েটার রেশমি চুলে হাত চালালো আশরাফ ৷বড্ড সুন্দর সেই চুল ৷চায়ের কাপে আবার চুমুক দিয়ে আশরাফ বলল

আজকাল তোমার মতো এত সুন্দর মেয়ে খুজে পাওয়া যায় না ৷

তাই বুঝি ৷

হুমম ৷

একটা কথা বলবো ৷

একটা নয় হাজারটা বলো ৷

যে মেয়ে যত সুন্দর ৷সেই মেয়ে তত ভয়ংকর এটা জানেন ৷

তাদের ভয়ংকর রূপে আমি ভয় পাই না ৷তাদের রূপ হজম করার শক্তি আমার আছে ৷

তাই বুঝি ৷পারলে আমার রূপ হজম করে দেখাও ৷

মেয়েটা ঘুড়ে দাড়াতেই আশরাফ চমকে উঠলো ৷আরে এটা তো সিআইডি অফিসার প্রীতিলতা ৷ এই অফিসারই তো আয়ানের মেয়েকে খুজছে ৷আশরাফের মাথায় কাজ করছে না ৷

কি খুব চিন্তা হচ্ছে ৷এটাই তো ভাবছো আমি তোমার সাথে কেন ৷জানতে চাও এখানে কেন এসেছি আমি ৷

আশরাফ মাথা নেড়ে সায় জানালো ৷যার মানে সে জানতে চায় ৷

প্রীতি ঘাড়টা হালকা কাত করে বলল তোমায় খুন করতে এসেছি আমি ৷আফটার অল তুমি আমার পরিবারের খুনী বলে কথা ৷

মানে কি সব বলছিস ৷তুই তাহলে আয়ানের মেয়ে ৷তোকে তো আমি এখনই মেরে ফেলবো ৷কথাটা বলেই আশরাফ প্রীতির দিকে তেড়ে এলো ৷কিন্তু বেশি দূর আসার আগেই আশরাফের হাত থেকে চায়ের কাপটা পরে গেল ৷ হঠাৎ করেই সে বমি করে দিল ৷প্রীতি পাশে থাকা দোলনায় বসে পড়লো ৷পায়ের উপর পা তুলে সে চা খাচ্ছে আর সময়টা উপভোগ করছে ৷ওপর দিকে আশরাফ নিজের গলা চেপে ধরেছে ৷তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ৷শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে ৷মাথা ঘুড়ছে ৷

প্রীতি নিজের চা শেষ করে আশরাফের কাছে বসলো ৷তারপর বলল

কি খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না ৷কষ্টই তো দিতে চেয়েছি ৷এতক্ষন চায়ের সাথে কি খেয়েছিস জানিস ৷বিষাক্ত অ্যান্টিমনি খেয়েছিস ৷চায়ের সাথে শত্রুকে খাওয়াতে বেশ জনপ্রিয় ৷আর যাই হোক নিজের কাজের কোনো প্রমান প্রীতিলতা রাখে না ৷আর একটু সময় অপেক্ষা কর ৷ তারপর তোর হৃদপিন্ডটা একদম বন্ধ হয়ে যাবে ৷এই জীবনে আর সুন্দর নারী হজম করতে পারবি না ৷তুই ওয়াসরুম থেকে আসার আগেই তোর চায়ে অ্যান্টিমনি মিশিয়ে দিয়েছি ৷ওপারে ভালো থাকিস ৷তোর যাত্রা শুভ হোক ৷কিন্তু তোর ব্যাড লাক ৷প্রীতিলতা নামক এক বিষাক্ত ফুলের আঘাতে তুই মরলি ৷তোর বাকী সদস্যরাও খুব তাড়াতাড়ি আসছে ৷

আশরাফের চোখ স্থির হয়ে গেছে ৷পাথরের মতো পরে আছে ফ্লোরে ৷প্রীতিলতা ওকে দেখে হাসলো ৷তারপর নিজের মুখ ঢেকে বেড়িয়ে গেল হোটেল থেকে ৷

আজকেও হোটেলের মধ্যে রহস্যময় খুন হয়েছে ৷কে খুন করেছে তার হদিস নেই ৷কোনো আঘাত ছাড়াই খুনটা করা হয়েছে ৷লাশ পোস্টমর্ডামে পাঠানো হয়েছে ৷সামাজিক মাধ্যমে মানুষের নানা রকম প্রতিক্রিয়া ৷সবাই এই জঘন্য খুনীর শাস্তি চাইছে ৷যেখানে দেশের এমন বড় বড় মানুষের জীবনের গ্যারান্টি নেই ৷সেখানে তারা তো পিপড়াও না ৷সবার একটাই দাবী খুনীর ফাসিঁ চাই ৷পুলিশ সিসি টিভি ফুটেজ চেক করলো ‌স্পষ্ট সেখানে আশরাফের সাথে একজন মেয়ে ভেতরে গেছে ৷কিন্তু মেয়েটার চেহারা ঢাকা ৷আর মেয়েটা প্রায় একঘন্টা পর বেড়িয়ে গেছে ৷ কিন্তু একা রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে সে ৷তার মানে খুনী এই মেয়ে ৷পুলিশ আশরাফের পাশে পরে থাকা ভাঙ্গা কাপ ল্যাবে পাঠিয়েছে ৷ পাশের টেবিলে আরো একটা কাপ আছে ৷তবে সেটা একদম ক্লিন করা ৷খুনী অনেক চালাক ৷ এত সহজে তাকে ধরা যাবে না ৷

দুপুর ঘড়িতে তিনটে বাজে ৷প্রীতিলতা ক্লান্ত শরীরে নিজের বাড়ীতে ঢুকলো ৷ বাড়ীতে ঢুকতেই কেউ একজন তাকে জরিয়ে ধরলো ৷ প্রীতি প্রথমে চমকে গেলেও পরে নিজেকে সামলে নিল ৷জরিয়ে ধরা মানুষটার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল

কি ব্যাপার ৷হঠাৎ গরিবের বাড়ীতে হাতির পারা কেন ৷

জরিয়ে ধরা মেয়েটা আর কেউ নয় জবা ৷প্রীতিকে ছেড়ে জবা বলল

আমি আর ঐ লোকটার কাছে যাব না আপু ৷আমার একদম ভালো লাগে না ঐখানে ৷

প্রীতি কিছু বলল না ৷জবার হাত ধরে উপরে নিয়ে গেল ৷নিজের রুমে জবাকে বসালো ৷জবা ঘরটা দেখছে ৷ঘরটা বেশ গোছালো ৷তবে ঘরটা থেকে সিগারেটের একটা বাজে গন্ধ আসছে ৷রুমের এক পাশেই তিন চারটে প্যাকেট পরে আছে ৷ প্রীতি জবার দৃষ্টি অনুসরন করে হাসলো ৷তারপর বলল

ঐ টা কিছুই না ৷আমার ব্লাড টেস্ট করলে অনেক মাদকের সন্ধান পাওয়া যাবে ৷তাই সিগারেটের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও ৷যতটা ভালো আমায় ভাবো ৷আমি ততটা ভালো নই ৷এবার বলো চলে কেন এসেছো ৷

জবা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল তার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না ৷শান্ত ছেলে হিসেবে ভালো ৷কিন্তু আমি বউ হিসেবে ভালো নই ৷তাই থাকবো না ৷ আর তার দিকে তাকালে লজ্জায় পরে যাই ৷সে কোথায় আর আমি কোথায় ৷কোথায় আকাশের চাদঁ ৷আর কোথায় আমি বামন ৷

ওকে ৷আমাকে কিছু প্রশ্নের জবাব দাও ৷শান্ত কি তোমাকে শারীরিক সম্পর্কে যেতে জোড় করেছে ৷কিংবা কোনো ব্যাপারে অত্যাচার করেছে ৷নাকি মেরেছে ৷

সে আমায় অত্যাচার তো দূরে থাকুক ৷আমার সব জিনিসে খেয়াল রাখেন ৷ উনি আমার যতটা খেয়াল রাখেন ৷ততটা খেয়াল আমি নিজেও নিজের রাখতে পারি না ৷আর আমাদের মাঝে কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয় নি ৷ উনি বলেছেন যেই দিন আমি চাইবো ঐ দিন ৷

প্রীতিলতা হাসেঁ তারপর বলে

জানো জবা ভালোবাসা কি ৷
ভালোবাসা হলো ভালোবাসার মানুষকে গোপনে আগলে রাখা ৷ছেলেরা যখন কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে তখন কি বলে জানো ৷

জবা মাথা নেড়ে না বোঝায় ৷

ছেলেরা বলে আমি তোমার শরীরকে নয় ৷আমি তোমার মনকে ভালোবাসি ৷কিন্তু সত্যি কি শরীর ছাড়া ভালোবাসা যায় ৷শরীর ছাড়া কখনো ভালোবাসা যায় না ৷ভালোবাসার মানুষের একটা দৃশ্যমান শরীর দরকার হয় ৷যেটার দিকে ইশারা করে বারবার বলা যায় ৷ এটা আমার ভালোবাসার মানুষ ৷ভালোবাসতে গেলে শরীরটা ছুতে হয় না কে বলল ৷শরীর ছুতে হয় ৷যখন ভালোবাসার মানুষটা প্রচন্ড অসুখে জর্জরিত ৷সেই সময় তার মাথায় ভরসার হাতটা রেখে ছুতে হয় ৷কে বলে ভালোবাসতে গেলে সুন্দর মন লাগে ৷তবে কি হিংস্রদের ভালোবাসতে নেই ৷ভালোবাসা কোমল ৷তবে যে যত্নে রাখতে জানে ভালোবাসা শুধুই তার জন্য ৷

প্রীতিলতা থেমে আবারো বলল

যেই মানুষটা তোমার অতীত জেনেও তোমায় ভালোবাসতে জানে সে তোমায় আর যাই হোক ঠকাবে না ৷

যেই মানুষটা হাজারো কাপুরুষের ভিড়ে তোমার হাতটা শক্ত করে ধরে ৷সে আর যাই হোক তোমায় ছেড়ে যাবে না ৷

যেই মানুষটা সর্বোচ্চ অধিকার পাওয়ার পরেও তোমায় ছুয়ে দেখে না ৷ সে আর যাই হোক যৌন পিপাসু নয় ৷

যে মানুষটা দিন শেষে নিজের খাচাঁয় তোমায় বন্দি রাখে ৷আর যাই হোক তাকে ছেড়ে যেও না ৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here