প্রেমপ্রেয়সী পর্ব ১৬

0
742

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_N_K_Orni

— ছেলেটার সাথে কথা বলে তো একে খারাপ মনে হলো না। যদিও একদিন কথা বলে তার ভালো খারাপ বিচার করা যায়না। তারপরও আমাকে একটা তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। বাবা যেহেতু ঠিক করেছে তাহলে নিশ্চয়ই ভালোই হবে আর আমার কাছেও তো খারাপ লাগেনি। তাহলে কি রাজি হয়ে যাব?

কথাটা ভেবেই রাহিয়া কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল।

— আমার মনে হয় আমার এখন রাজি হয়ে যাওয়াই উচিত। নাহলে বাবা আমাকে রুদ্রের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। তাছাড়া আমাকে তো ওই লোকের থেকেও নিজেকে সরাতে হবে। তাহলে আমি বরং রাজি হয়েই যাই। তারপর কি হবে দেখা যাবে।

রাহিয়া এসব বিষয়ে এতোটাই চিন্তা করছিল যে সে বাইরে থেকে আসার পর এখনো জামাকাপড় বদলায়নি। হঠাৎ তার খেয়াল হলো যে সে বাইরে যে ড্রেস পরে গেছিল এখনো সেটাই পরে আছে। তাই সে দ্রুত ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। তারপর ওয়াশরুম থেকে ফিরে তার মায়ের কাছে গিয়ে বলল যে সে এই বিয়েতে রাজি। এই কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া খুবই খুশি হয়ে গেলেন। রাহিয়ার বাবা তখন বাসায় ছিলেন না। রাতের দিকে উনি বাসায় ফিরলে মিসেস নাদিয়া ওনাকে রাহিয়ার বিয়েতে রাজি হওয়ার বিষয়টা জানালেন। কথাটা শুনে তিনিও খুব খুশি হয়ে গেলেন। এরপর তিনি রাহিয়াকে ওনার রুমে আসতে বললেন। মিসেস নাদিয়া গিয়ে ওকে ডেকে নিয়ে এলো। রাহিয়া তার বাবার সামনে এসে বলল,

— বাবা ডেকেছিলে?

— হ্যাঁ। শুনলাম তুমি নাকি বিয়েতে রাজি। তা ভালো করে ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছ তো? পরে কিন্তু আমি অন্য কোনো কথা শুনব না।

— না বাবা। আমি অনেক চিন্তাভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর যা হবে তার জন্য আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

— আচ্ছা। তুমি নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছো তো? নাকি রুদ্রের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব এই ভয়ে এতো তাড়াতাড়ি করছ? তাহলে আমি বলব তুমি একটু সময় নিয়ে ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নেও।

কথাটা শুনে রাহিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠল,

— না বাবা আমি বিয়েতে রাজি।

— আচ্ছা। তাহলে তো ভালোই।

রাতে খাওয়ার সময় মিসেস নাদিয়া ওনার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— রুদ্রকে পরশু হসপিটাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ও এখন অনেকটা সুস্থ। তাই ভাবছিলাম কালকে একবার ওকে দেখতে যাব।

কথাটা শুনে রাহিয়া একবার তার মায়ের মুখের দিকে তাকালো। তারপর মনে মনে ভাবতে লাগল,

— রুদ্রকে ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে আমার ভালো লাগল কেন? তাহলে আমি কি এখনো ওকে…? না এটা কীভাবে হবে? আমি ওকে এখন আর একদমই পছন্দ করি না।

— তুমি কি যাবে? এছাড়া রাহিয়া আর রাহাতও তো একবারও ওকে দেখতে যায়নি। ভাবছি ওদের দুজনকেও নিয়ে যাব।

— হ্যাঁ আমি অবশ্যই যাব। আর রাহাতও যাবে।

কথাটা শুনে রাহাত তার বাবার কথায় সম্মতি জানাল। কিন্তু রাহিয়া তখনও চুপ করে ছিল। কারণ সে এসব বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিল। তাই সে এই কথাটা শুনতে পায়নি। তাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে মিসেস নাদিয়া জিজ্ঞাসা করলেন,

— রাহিয়া তুই যাবি না?

মায়ের কথায় রাহিয়ার ঘোর ভাঙল। সে কথাটা শুনে মনে মনে ভাবল,

— যতই অপছন্দ করি ওকে আমার একবার দেখতে যাওয়া উচিত।

— হ্যাঁ আম্মু আমিও যাবো।

খাওয়া শেষ করে রাহিয়া তার রুমে চলে এলো। রুমে এসে সে হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগল,

— আচ্ছা আমার মনে কি এখনো রুদ্রের জন্য একটু হলেও জায়গা আছে? কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা না। আমি তো ওকে ভুলে যাওয়ার অনেক কিছু করেছি। তাহলে আমি কেন এসব নিয়ে চিন্তা করছি? ওইদিনও আমার মন বলছিল ওকে দেখতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি সেই ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে যাইনি। কিন্তু এসব এখনো কেন হয়? ওর চারপাশে থাকার জন্য? না আমাকে যতটা সম্ভব নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

এসব ভেবে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরক্ষণেই তার মনে পড়ে গেল যে কালকে তাকে রুদ্রকে দেখতে হসপিটালে যেতে হবে। কথাটা মাথায় আসতেই সে উঠে বসল।

— তাহলে কালকে কি করব? আমি যদি ওর থেকে দূরে থাকতেই চাই তাহলে ওর সাথে কালকে দেখা করাটা কি ঠিক হবে? নাহ, আমার ওকে একবার হলেও দেখতে যাওয়া উচিত। পছন্দের বিষয়টা যদি বাদ দেই তাহলে একসময় তো আমরা বন্ধু ছিলাম। এখন যদিও নেই তবুও সেই বন্ধুত্বের জন্য হলেও আমার ওকে একবার দেখতে যাওয়া উচিত।

এসব ভেবে রাহিয়া ঠিক করল যে সে কালকে রুদ্রকে দেখতে যাবে। পরদিন সকালে রাহিয়া ওদের সাথে রুদ্রকে দেখতে গেল। যাওয়ার কিছুক্ষণ পর রায়ান সাহেব সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

— রাহিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ের তারিখ এখনো ঠিক হয়নি তবে খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। তখন আপনাদের তারিখটা বলব। আপনারা ওর বিয়েতে আসবেন কিন্তু।

কথাটা শুনে মিসেস রায়া বলে উঠলেন,

— অবশ্যই যাব। আমাকে দেখতে হবে তো কার সাথে রাহিয়ার বিয়ে হচ্ছে?

মুখে কথাটা বলে হাসি দিয়ে তিনি মনে মনে বললেন,

— আমি তো দেখতে চাই আমার এতো ভালো ছেলেকে বাদ দিয়ে কোন ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে।

এদিকে রাহিয়ার বিয়ের কথা শুনে রুদ্রের মুখটা মলিন হয়ে গেল। সে সাথে সাথে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রাহিয়ার মুখের দিকে তাকালো। রাহিয়াও তখন ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। যার কারণে দুজনের চোখে চোখ পড়ল। রাহিয়া ওকে এভাবে তাকাতে দেখে প্রথমে ওর দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো। পরে কিছু একটা মনে পড়তেই সে তার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিল। সেটা দেখে রুদ্র সাথে সাথে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল। তাকে এমন করতে দেখে রাহিয়া একটা মুচকি হাসি দিল। রুদ্র চোয়াল শক্ত করে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ছিল। রাহিয়াকে হাসতে দেখে সে মনে মনে বলল,

— তুমি যতই খুশি হও না কেন আমি এই বিয়ে হতে দেব না। আমি কিছুতেই তোমাকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে দিব না। তোমাকে তো শুধু আমিই বিয়ে করব। এর মাঝে কেউ আসলে আমি তাকে কিছুতেই ছাড়ব না। আমি আমার লক্ষ্য পূরণ করেই ছাড়ব। তোমার বিয়ের এখনো দেরি আছে। ততদিনে আমি সুস্থও হয়ে যাব। তখন আমি দেখব তুমি কীভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করো। আমি যেভাবেই হোক বিয়েটা আটকাবো।

বলেই সে অদ্ভুত রকমের একটা হাসি দিল। ওখানে অনেকক্ষণ থেকে দুপুরের একটু আগে ওরা বাসায় ফিরে এলো। বাসায় আসার পর রাহিয়া তার রুমে গিয়ে বসে পড়ল। সেই সময় রুদ্রের মুখের প্রতিক্রিয়া তার চোখের সামনে আসতেই তার খুব হাসি পেল।

— এখন এসব করে কি হবে? আমার প্রত্যাখ্যান করার পর, এতোগুলো কথা বলার পরও সে এখনো কীভাবে আমাকে পাওয়ার আসা করে? এগুলো সত্যিই খুবই বিরক্তিকর।

বিকালে রাহিয়া তার রুমের বারান্দায় বসে ছিল। তখন ফোনে ম্যাসেজ আসার শব্দ এলো। সে ফোন খুলতেই দেখল সেই নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে। সে সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

— ওই লোকটা আবার ম্যাসেজ দিয়েছে? আবার কি বিষয়ে বলতে চান তিনি? আমাকে যেভাবেই হোক এর থেকে নিজেকে দূরে সরাতে হবে। এখন দেখি কি ম্যাসেজ দিয়েছেন?

বলেই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর ম্যাসেজটা খুলে পড়তে শুরু করল। সেখানে লেখা ছিল,

— আমি তোমাকে বলেছিলাম যে অন্য ছেলেদের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে। কিন্তু তুমি বারবার এটাই করো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই এটাই ভালো হবে তুমি অন্য ছেলেদের কাছে না যাও।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here