প্রেমপ্রেয়সী পর্ব ১৫

0
684

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_N_K_Orni

— বাবা হঠাৎ আমাকে দ্রুত বিয়ে দিতে কেন চায়? আর রুদ্রের কথায়ই বা কেন বলল? আমি কিছুতেই ওকে বিয়ে করব না। তবে দ্রুত বিয়ে করলে একদিক দিয়ে সুবিধা হবে। আমার যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে ওই গিফট দেওয়া লোকটা আর আমাকে বিরক্ত করতে পারবে না। তখন বাবার কথাও রাখা হবে আর ওই লোকটার থেকেও নিজেকে সরানো যাবে। উফফ! রাহিয়া তোর কতো বুদ্ধি!

কথাটা ভেবেই রাহিয়া একটা মুচকি হাসি দিল। এরপর সে হাতে থাকা ফোন নম্বরের কাগজটার দিকে তাকালো। সেটা দেখে সে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই নিজেকে বলতে শুরু করল,

— কিন্তু আমাকে তো এর সাথে কথা বলতে হবে। আর তার জন্য কলও দিতে হবে। তার মানে এখন আমাকে কল দিয়ে এর সাথে কথা বলতে হবে। এখন আমি নিজে থেকে কল দিয়ে কীভাবে কথা বলব?

বলেই রাহিয়া কিছুক্ষণ ভাবতে লাগল। কিছুক্ষণ ভাবার পর সে সিদ্ধান্ত নিল যে সে কল দিবে না। সে লোকটাকে ম্যাসেজ দিয়ে দেখা করার কথা বলবে। তারপর সে বিছানায় বসে তার কথামতো কাগজ থেকে নম্বরটা ফোনে তুলতে নিল। কিন্তু সে নম্বর লিখার আগেই থেমে গিয়ে ভাবতে লাগল,

— আমি কি এখনই ম্যাসেজ দিব? এতো তাড়াতাড়ি দেওয়া কি ঠিক হবে? কিন্তু বাবা তো বলেছেন যে যা করার তাড়াতাড়ি করতে। নাহলে তিনি আমাকে রুদ্রের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন। নাহ, এটা হতে দেওয়া যাবে না। যাইহোক, আমি এখনই ম্যাসেজ দিব।

বলেই সে মনে মনে সাহস জুগিয়ে নম্বর ফোনে তুলে নিল। তারপর ওই নম্বরে ম্যাসেজ দিল।

— আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।

ম্যাসেজ দেওয়ার পর রাহিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর হঠাৎ তার খেয়াল হলো সে কি করেছে। সে একবার ফোনের দিকে তাকালো। তারপর সাথে সাথে সে ফোনটা বিছানার এক কোণায় ফেলে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়ালো।

— আরে এটা আমি কি করলাম? আমি এই ম্যাসেজ কেন দিয়ে দিলাম? আমি কোনো কথা না বলে প্রথমেই দেখা করার কথা বলে দিলাম? হায়! রাহিয়া তুই এটা কি করলি? প্রথমেই দেখা করার ম্যাসেজ দিয়ে দিলি? আর ওই লোকটা তো তোকে চেনে না আর তোর নম্বরও জানে না। এভাবে হুট করে এক অচেনা লোককে দেখা করার ম্যাসেজ দিয়ে দিলি। এখন কি হবে? লোকটা তো না বুঝে ব্লকও করে দিতে পারে। আবার যদি তোকে চিনে ফেলে তাহলে ভাববে তোর একটুও লজ্জা নেই।

বলেই সে নিজের মাথায় হাত দিল। সে আফসোস করে বলতে লাগল,

— এখন আমি কি করব? ম্যাসেজটা কি ডিলিট করে দিব? না, সেটা ভালো দেখাবে না।

এরপর রাহিয়া কোনো উপায় না বিছানায় গিয়ে শুয়ে রইল। আর তার ফোনটা বিছানার পাশের টেবিলে রেখে দিল।

— আর কিছুই করার নেই। যা হওয়ার হয়েই গেছে। এখন এভাবেই নিজের আত্মসম্মান আর লজ্জা বিসর্জন দেওয়ার শো*ক পালন করি।

রায়ান সাহেব ওনার রুমে বসে আছেন। ওনাকে দেখে বেশ খুশি মনে হচ্ছে। মিসেস নাদিয়া ওনার রুমে সামনে এসে বাইরে এসব লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,

— মেয়ে বিয়েতে রাজি হওয়ায় এতো খুশি নাকি তুমি? আচ্ছা আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না তুমি একটু বেশিই তাড়াতাড়ি করছ না? আমিও রাহিয়ার বিয়ে দিতে চাই। কিন্তু এভাবে হুট করে না।

— হুট করে কই? আমি তো রাহিয়াকে ছেলেটার সাথে দেখা করতে বলেছি। ওর পছন্দ না হলে অন্য কথা ভাবা যাবে।

— হুম বুঝলাম। কিন্তু তুমি কি ওই ছেলের বিষয়ে জানো?

— অবশ্যই। সে খুবই ভালো একটা ছেলে। আর সে রাহিয়ার জন্য একদম পারফেক্ট।

— আচ্ছা। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি করার কারণ?

— আমি ওনাদের দেখিয়ে দিতে চাই রুদ্রের থেকেও অনেক ভালো ছেলে আমার মেয়ের জন্য আছে যে ওকে ভালো রাখতে পারবে। আর আমি বলেছি রাহিয়ার খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দিব।

— আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না রুদ্রকে নিয়ে তোমার কি সমস্যা?

— অনেক সমস্যা আছে। এসব তোমাকে একদিন খুলে বলব।

— আচ্ছা।

রাহিয়া এখনো একইভাবে বিছানায় শুয়ে আছে। সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে সে একটা ছেলেকে এমন একটা ম্যাসেজ দিয়েছে। হঠাৎ তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসার শব্দ এলো। শব্দটা শুনে সে পাশ ফিরে টেবিলের উপরে থাকা ফোনের দিকে তাকালো। তারপর সে উঠে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগল,

— আমার কি ফোনটা খুলে একবার দেখা উচিত কে ম্যাসেজ দিয়েছে? যদি লোকটা ম্যাসেজের উত্তর দেয় তাহলে আমার খুবই অস্বস্তি বোধ হবে। কিন্তু যদি অন্য কেউ ম্যাসেজ দেয়? গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ম্যাসেজও হতে পারে? তাহলে এখন কি করব? ম্যাসেজ খুলে একবার পড়ব? নাকি ফোনটা এভাবেই রেখে দিব।

এভাবে কিছুক্ষণ ভাবার পর সে সিদ্ধান্ত নিল যে সে ফোনটা খুলে দেখবে। সে ফোনটা খুলে দেখল যেই নম্বরে সে ম্যাসেজ দিয়েছিল ওই নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে। এটা দেখে তার কিছুটা অস্বস্তি লাগল। কিন্তু সে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে ম্যাসেজটা খুলল। সেখানে লেখা ছিল, “আচ্ছা। কখন আর কোথায় দেখা করতে চাও বলো? আমি না হয় সেই সময়েই দেখা করব।”

রাহিয়া ম্যাসেজটা পড়ে মনে মনে বলল,

— তার মানে দেখা করতে যেতেই হবে।

তারপর সে কিছুটা একটা মনে করে ম্যাসেজ দিল,

— আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন?

— হ্যাঁ। চিনতে পারব না কেন? না চিনলে দেখা করার কথা বলতাম নাকি? অদ্ভুত!

ম্যাসেজটা রাহিয়া খুবই লজ্জিত হলো। কথাটা তো সত্যিই। যদি না চিনতো তাহলে কি আর দেখা করার কথা বলতো?

— আচ্ছা তাহলে কালকে বিকালে দেখা করি? আর কোথায় দেখা করব সেটা নাহয় আপনি ঠিক করেন?

ম্যাসেজটা দিয়ে রাহিয়া আবার ফোনটা একপাশে রেখে দিল। একটু পরে ম্যাসেজ এলে সে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন তুলে দেখল।

— আচ্ছা। আমি একটু পরে তোমাকে দেখা কোথায় করব সেটা ম্যাসেজ করে দিব।

ম্যাসেজটা পড়ে রাহিয়া চুপ করে বসে রইল। একটু পরে লোকটা দেখা করার জায়গা ম্যাসেজ করে দিল। সেটা দেখে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রাতে রাহিয়া তার রুমে বসে ছিল। তখন ওর রুমে ওর ভাই রাহাত এলো। সে এসেই রাহিয়াকে জিজ্ঞাসা করল,

— শুনলাম তোর নাকি বিয়ের কথা চলছে? কথাটা কি সত্যি?

রাহিয়া তার দিকে তাকিয়ে বলল,

— উমম! কিছুটা।

কথাটা শুনেই সে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে তার বাবার কাছে গেল।

— বাবা আমি কি আর এই বাসার সদস্য নেই? রাহিয়ার যে বিয়ের কথা চলছে তুমি আমাকে বলোনি কেন?

— এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। রাহিয়া পুরোপুরি হ্যাঁ বললে বাকিটা সামনে যাবে।

বাবার কথা শুনে সে তখন কিছুটা কৌতুহলী হয়ে বলল,

— ছেলেটা কে?

— তায়ান ভাইয়ার ছেলে।

— তার মানে তূর্য ভাইয়া?

রায়ান চোখের ইশারা দিয়ে হ্যাঁ বোঝালেন। পরদিন বিকালে রাহিয়া তূর্যের সাথে তার বলা জায়গায় দেখা করতে গেল। অনেকক্ষণ কথা বলে সে সন্ধ্যার দিকে ফিরে এলো বাসায়। বাসায় এসে সে ভাবতে লাগল,

— ছেলেটার সাথে কথা বলে তো একে খারাপ মনে হলো না। যদিও একদিন কথা বলে তার ভালো খারাপ বিচার করা যায়না। তারপরও আমাকে একটা তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। বাবা যেহেতু ঠিক করেছে তাহলে নিশ্চয়ই ভালোই হবে আর আমার কাছেও তো খারাপ লাগেনি। তাহলে কি রাজি হয়ে যাব?

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here