প্রেমপ্রেয়সী পর্ব ৭

0
974

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_৭
#লেখিকা_N_K_Orni

রাহিয়া বাসার ভেতরে ঢুকে বক্সটা নিচে একপাশে রাখল। তারপর সে দরজা লাগিয়ে যখন বক্সটা ওঠাতে গেল তখনই তার চোখ গেল বক্সের উপরে থাকা কাগজটার দিকে। সেখানে তার নাম দেখতে পেয়ে সে খুবই অবাক হয়ে গেল। সে বক্সটা না তুলেই সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তারপর নিজেই নিজেকে বলতে লাগল,

— আমার পার্সেল কীভাবে আসে? বাবা মা অথবা বাসার অন্য কি আমার জন্য এনেছে? কিন্তু সেটা কীভাবে হয়? আচ্ছা বক্সটা খুলে দেখলেই বোঝা যাবে। যাই এটাকে টেবিলের উপরে নিয়ে যাই।

বলেই সে নিচ থেকে বক্সটা তুলে টেবিলের উপর নিয়ে এলো। তারপর সে সামনে বসে বলতে লাগল,

— বক্সটা তো কিছুটা ভারীই মনে হলো। আচ্ছা এর ভেতরে কি থাকতে পারে? উমম! একবার খুলে দেখি। কিন্তু তার আগে দেখি এটা কে পাঠিয়েছে?

বলেই সে কাগজটা ভালো করে দেখল কিন্তু কে পাঠিয়েছে তার নাম বা অন্য কোনো তথ্য দেখতে পেলো না। এতে সে আরও বেশি অবাক হয়ে গেল।

— বুঝলাম না। কে পাঠিয়েছে এই বিষয়ে তো কিছুই লেখা নেই। তাহলে এটা এলো কীভাবে? এমন তো কখনো দেখিনি। এটা কি আমার খুলে দেখা ঠিক হবে? একবার খুলেই দেখি। দেখলে হয়তো বুঝতে পারব কে পাঠিয়েছে।

বলেই সে বক্সটা খুলতে শুরু করল। সে বক্সটা খুলে দেখতে পেল তার ভেতরে আরও একটা বক্স রাখা। সে সেটা উঠিয়ে বাইরে বের করল। সেই বক্সটা খুলতেই দেখল তার ভেতরে অনেকগুলো চকলেট রাখা। রাহিয়া এবার বক্সটাকে বন্ধ করে একপাশে রেখে দিল। তারপর আবারও বড়ো বক্সটার ভেতরে তাকালো। ভেতরে দুইটা প্যাকেট দেখতে পেল। সে ওই দুটো প্যাকেট বাইরে বের করতেই দেখল ওখানে একটা কাগজ রাখা। সে প্যাকেট দুটো টেবিলে রেখে কাগজটা হাতে তুলে নিল। সে কাগজটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগল। তারপর সে কিছুটা কৌতুহলী হয়ে কাগজটা খুলল। সেখানে লেখা ছিল, “I Love You Rahiya. Welcome to Bangladesh my love.”
রাহিয়া লেখাটা পড়ে অবাক হয়ে বলল,

— এটা দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ আমাকে প্রোপোজ করেছে। কিন্তু এটা কে লিখেছে? শুধু এটা লেখেইনি সাথে আরও কিছু জিনিসও দিয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো আমাকে দিল কে?রুদ্র দিয়েছে নাকি? না না, ও কেন আমাকে এসব দিবে? আর ওই ফালতু ছেলের হাতের লেখা এতো সুন্দর না?

কথাটা বলেই রাহিয়া রুদ্রের চেহারা মনে করে একটা ভেঙ্চি দিল। তারপর সে আবারও কাগজটার দিকে তাকালো। হলুদ কাগজের উপর কালো কালি দিয়ে লেখার কারণে লেখাটা কিছুটা অন্য রকম মনে হচ্ছে। আর লেখাটা বেশ উজ্জ্বল লাগছে। হলুদের উপর সাধারণত লাল অথবা সবুজ বেশি ভালো দেখায়। কিন্তু এখানে কালো কালি দিয়ে লেখার কারণে সবথেকে অন্য রকম লাগছে।

— উহুহ! লিখেছে মাত্র দুইটা লাইন। তার জন্য আবার এতো বড়ো একটা কাগজ নিয়েছে। আমি তো প্রথমে দেখে ভেবেছিলাম অনেক কিছু লেখা থাকবে। কিন্তু এখানে মাত্র দুই লাইন লেখা।

বলেই সে কাগজটা আবার আগের মতো ভাঁজ করে টেবিলের এক কোণায় রেখে দিল। এরপর সে বক্সটা আবার দেখল যে আর কিছু আছে কিনা। আর কিছু না থাকায় সে বাকি সব জিনিসগুলো বক্সের ভেতরে রাখতে শুরু করল।

— এখন এসব নিয়ে রুমে রেখে দেই। আমার আরও কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে।

বলেই সে সবকিছু গুছিয়ে রুমে নিয়ে গেল। কিন্তু সে কাগজটা টেবিলেই রেখে দিল। কিছুক্ষণ পর সে ফিরে এসে কাগজটা নিয়ে রুমে গেল। রাহিয়া কাগজটা হাতে নিয়ে তার রুমে দাঁড়িয়ে আছে আর চারপাশে তাকাচ্ছে।

— জীবনে প্রথম এমন কিছু পেলাম। তাই এটাকে যত্ন করে রাখা দরকার। আর এমন জায়গায় রাখা দরকার যাতে এটা অন্য কারো নজরে না পড়ে। কিন্তু এটাকে এমন কোথায় রাখা যায় যেখানে রাখলে এটা আম্মুর হাতে না পড়ে। উমম! কোনো সিক্রেট জায়গায় রাখতে হবে।

বলেই সে এটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যে সে কাগজটা একটা সুরক্ষিত জায়গায় রেখে দিল। তারপর তার চোখ গেল রুমের এক কোণে থাকা বক্সটার দিকে। রাহিয়ার ওটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল,

— নাহ, বক্সটাকেও অন্য কোথাও রাখতে হবে? এটা কাউকে দেখতে দেওয়া যাবে না। আমি চাই না কেউ এই বিষয়ে জানুক। তাহলে অন্য কিছুও ভাবতে পারে। কিন্তু ভেতরের ওই প্যাকেট দুটো তো খুলে দেখা হলো না যে ওর ভেতরে কি আছে? থাক ওটা পরে খুলে দেখব। এখন আমার বেশি সময় নেই।

এরপর সে বক্সটা রাখার জায়গা খুঁজতে শুরু করল। রাতের দিকে রাহিয়ার বাসার সবাই বাসায় ফিরে এলো। রাহিয়া দরজা খুলে দিয়ে রুমে চলে এলো। বাসায় আসার কিছুক্ষণ পর রাহিয়ার আম্মু মিসেস নাদিয়া ওর রুমে এলেন। রাহিয়া তখন বিছানায় বসে ফোন চালাচ্ছিল। ওর আম্মুকে দেখে সে উঠে বসল। মিসেস নাদিয়া ওর সামনে গিয়ে বসে বলে উঠলেন,

— বাসায় একা ছিলি কোনো সমস্যা হয়নি তো?

— না, আমার আবার কি সমস্যা হবে? পুরো বাসা ফাঁকা আর বাসায় আমি একা। আমার তো ভালোই লেগেছে। শান্ত পরিবেশ হওয়ায় কাজ করতে সুবিধা হয়েছে।

— আমি ভাবছিলাম তুই একা একা ভ*য় পাচ্ছিস না তো? আচ্ছা রাতে খেয়েছিস?

— হ্যাঁ খেয়েছি। আর ওসব ভয় পাই না। আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি?

মেয়ের কথা শুনে মিসেস নাদিয়া এক গাল হাসলেন। তারপর হাসি থামিয়ে বলে উঠল,

— তুই তো গেলি না? ওখানে সবাই তোর কথা জিজ্ঞাসা করছিল।

কথাটা শুনে রাহিয়া মজা করে বলে উঠল,

— ভালো তো। আমাকে নিয়ে সবাই কত ভাবে!

— নিরা তোর কথা জিজ্ঞাসা করছিল। তুই না যাওয়ায় ও কিছুটা মন খারাপ করেছিল। যাইহোক, কালকে ওরা আমাদের বাসায় আসছে।

— ওহ ভালো তো।

মায়ের বলা কথাটা শুনে রাহিয়া মুখে কথাটা বললেও মনে মনে সে অন্য কিছু বলল।

— কালকে এসে আবার না জানি কি সমস্যা করে? যাওয়ার আগে তো বলেই গেছে আমাকে নাকি ভালো থাকতে দেবে না? তবে যাইহোক, মেয়েটা অভিনয় ভালো করে। আমি এতোদিন ওর অভিনয়ের কাছে হার মানলেও এখন আর মানব না।

— রাহিয়া কি ভাবছিস?

— তেমন কিছুই না আম্মু। আসলে আমি কাজ করে অনেক ক্লান্ত। তাই ভাবছি এখনই ঘুমিয়ে পড়ব।

— আচ্ছা। তাহলে তুই ঘুমিয়ে থাক আমি যাই।

বলেই মিসেস নাদিয়া উঠে চলে গেলেন। উনি যেতেই রাহিয়া উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। অফিস থেকে বের হতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে রুদ্রের। তাই সে কিছুটা দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে যাতে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে পারে। চালাতে চালাতে হঠাৎ সে দেখল সামনে একটা গাড়ি আড়াআড়ি হয়ে পুরো রাস্তা জুড়ে আছে। ফলে সামনে যাওয়ার পথ নেই। এটা দেখে সে বিরক্ত হয়ে ওই গাড়ির সামনে গেল।

গাড়ির গ্লাসে নক করতেই পেছন থেকে কেউ এসে তাকে চেপে ধরল। তারপর তাকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে তার গলার সামনে ছু*রি ধরল। ছু*রিটা গলার থেকে খুবই সামান্য দূরত্বে ছিল যেন হালকা সামনে গেলেই গলা কে*টে যাবে। হঠাৎ এমন কিছু ঘটায় রুদ্র বেশ ভয় পেয়ে গেল। ছু*রির ধারালো পাশের বিপরীত পাশ গলায় ধরায় তার তেমন কোনো ক্ষতি হলো না। কিন্তু সে সেটা বুঝতে না পেরে বেশ ভয়ে ছিল। রাত হওয়ায় আর রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলো না থাকায় রুদ্র লোকটার মুখ দেখতে পেল না। লোকটা এবার ছু*রিটা ওর গলায় জোরে চেপে ধরল। এতে রুদ্র ভাবল আজকেই তার শেষ দিন।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

[ বি:দ্র: কাগজের রঙ ও কালির বিষয়ে কেউ কিছু বলবেন না। আমাকে কেউ কখনো এসব দেয়নি তাই এসব সম্পর্কে জানিনা। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here