#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“স্বপ্ন দেখা শেষ হলে বাস্তবে ফিরে আসেন।কী যেন নাম?তোশা রাইট?”
এক ধ্যানে খাতার দিকে তাঁকিয়ে ছিল তোশা।হুট করে নতুন ম্যাডামের কণ্ঠে চেতনা ফিরলো।বিব্রত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো সে।
“সরি ম্যাডাম।”
“এর মানে সত্যিই এতোক্ষণ যা বুঝিয়ে চলেছিলাম তার এক ভাগও শুনতে পাওনি?”
“না।”
এমন অকপটে সত্য বলার দরুণ দিশা অবাক হলো।জীবনে অনেক স্টুডেন্ট দেখেছে সে।কিন্তু ভুল করে সহজে স্বীকার করার মতো কাওকে দেখেনি।পরক্ষণে তোশার মা,বাবার নামটা স্মরণে এলো তার।
“ঠিক আছে বসো।আর যা পড়াচ্ছি মনোযোগ দাও।তোমার বাবা কিন্তু অনেক ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলেন।”
তোশা অবাক হয়ে শুধালো,
“আপনি আব্বুকে চিনেন?কীভাবে?”
“চিনি একভাবে।এখন মহাকর্ষের সূত্র গুলো মুখস্থ করো জলদি ক্লাসের আর সকলে পাঁচ মিনিট ধরে পড়ছে।”
তোশা চট জলদি গুনগুন করে মুখস্থ করতে লাগলো।যদিও পড়াটি সে বুঝেছে।এখন কয়েকবার পড়েই ভালো মতন আয়ত্ত্ব করে নিলো।চোরা চোখে সে স্কুলে আসা নতুন ম্যাডাম দিশার পানে তাঁকালো।ভদ্র মহিলা বেশ সুন্দর।টানা দুটো চোখ।ঠোঁট দুটো কী সুন্দর আকৃতিতে তৈরী।ভীষণ ফর্সা।প্রথমবার তোশার মনে হলো দিশার মতো চেহারার আকৃতিতে সে কাওকে দেখেছে।পিরিয়ড শেষ হওয়ার ঘন্টা বাজলো।দিশা সুন্দর পরিপাটি করে শাড়ী পরেছে।আঁচলটা একটু টেনে উঠে দাঁড়ালো।বৃষ্টি ঠায় বসে আছে।কিন্তু তাকে ইশারা করে বাহিরে আসতে বলল দিশা।
“কিছু বলবে চাচী।”
দিশা উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।সম্পর্ক না থাকলেও সম্বোধন রয়ে যায়।বৃষ্টিকে একটু গোপনে নিয়ে ব্যাগ থেকে বক্স বের করে দিলো।
“এটা আহনাফের জন্য।নানুর হাতের সন্দেশ ও খুব পছন্দ করে।”
“কিন্তু চাচী কোর্ট থেকে তোমার দেওয়া কিছু নেওয়া মানা।”
“বৃষ্টি জানো তো।বাঘিনী কখনো নিজ শাবকের শি কা র করেনা।রাখো আহনাফের ভালো লাগবে।আর কাইন্ডলি কবীরকে বলবেনা আমি এই স্কুলে জব নিয়েছি।”
বৃষ্টি মাথা নাড়ালো।দিশার সঙ্গে এক সময় খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তার।সেই সুবাদে আজ দিশার ব্যাপারটা গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিলো।বক্সটা হাতে নিয়ে সে আহনাফের ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো।দিশা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ভেতরটা ভীষণ জ্ব লে যায় তার।একটি সিদ্ধান্তের জন্য আজ সে ছেলের কাছে থেকেও দূরে।
(***)
আগামীকাল একটা বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।এই কারণে শাহ কমিউনিটি সেন্টারটি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো হচ্ছে।তোশা সবুজ ঘাসের উপর বসে এক মনে গেম খেলছে।পরনে তার গোলাপি রঙের একটি ফ্রক।দেখতে মিষ্টি লাগছে।চুলগুলো তাহিয়া ভালোমতন বিনুনি করে দিয়েছে।এরকম বড় কোনো অনুষ্ঠানে সচরাচর মেয়েকে নিয়ে আসে তাহিয়া।যেন কাজের ব্যাপারে শিখতে পারে।হুট করে বড়সড় এক মূর্তিমানব তার পাশে এসে বসলো।তীব্র কড়া সুগন্ধ গা থেকে আসছে।তোশামণি আড়চোখে দেখে সেই মানুষটিকে।অভিমানে মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।কবীর ঘামে ভেজা শরীর থেকে শার্টটি একটু টেনে নিলো।হাতে ভর দিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নেয়।অসম বয়সী মেয়ের অভিমানে সে পুলকিত বোধ করে।মজা নেওয়ার জন্য শুধায়,
“তা তোশামণি এতো বা জে ড্রেস পরে কেন এসেছো?”
নাক কুঁচকে তোশা জবাব দেয়,
“আপনার শার্টটাও ভীষণ পঁ চা।”
“তাই?কী বলো তো।আমি দরিদ্র এক মানুষ।একটা ভালো শার্ট কিনে দিও।”
“সত্যি দিবো?”
“সত্যি দিবে।”
“মজা করছেন।”
“মজা করছিনা।”
“মিথ্যা।”
“সত্য।”
“উহুহহ।”
“হুহহহ।”
তোশামণির ছোট্ট হৃদয়ে রাগ এসে জমা হলো।গেমে হেরে যাওয়ার আশংকা থাকলেও ফোনটা রেখে দিলো।কবীরের মুখোমুখি হয়ে বলল,
“আমার কথার বিপরীত বলছেন কেন?”
“কেন?কথায় পারবেনা দেখে ভয় পাচ্ছো?”
“আমাকে হারাতে পারবেন না।”
“তাই?আহারে তুমি না রাগ করেছিলে আমার উপর।সেটিই তো এখন নেই।”
লজ্জা পেলো তোশা।একটু দূরে গিয়ে বসলো।ওদিকে পাইপের কাজ চলছে।আগামীকাল বর-বউয়ের হলুদে উপর থেকে বৃষ্টির মতোন পানি দেওয়া হবে।কবীরের মনের হাসি মুখে ফুঁটে উঠলো।সে একবার ভেবেছিল বাচ্চার রাগ ভাঙাবেনা।পরক্ষণে মনে হলো হোক না বয়সের ছোট একটা মানুষের খুশির কারণ।কবীর এগিয়ে এসে তোশার কাঁধের সঙ্গে বাহু মিলালো।যদিও তার মনে ঝড় বইছে নরম ছোঁয়ায়।কিন্তু সেটাকে তোয়াক্কা না করে বাহু দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“এই তোশামণি বলো আমাকে কবে শার্ট কিনে দিবে।”
“দিবো না।”
“মন খারাপ হলো।”
“বেশ হয়েছে।”
হুট করে জোরে একটা শব্দ হলো।কবীর দুহাত দিয়ে তোশাকে আগলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিলো।তাদের থেকে অনতিদূরে পানির পাইপটা জোরে শব্দ হয়ে ফেটে গেছে।সেখান থেকে হালকা পানি এসে দুটো মানুষকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।কবীরের ভেতরকার পঁয়ত্রিশ বছরের পুরুষ থমকালো।মন বলছে পনের বছরের এই মেয়েটা নেহাৎই বাচ্চা মেয়ে।কিন্তু অপর মন বলছে বয়সে কী?এই মেয়েটাও সুন্দর একজন নারী।যার দেহে উষ্ণ র ক্ত প্রবাহিত।নরম ত্বক পুরুষের ছোঁয়ায় লাল হয়।গা দিয়ে তীব্র মেয়েলি সুগন্ধ বের হয়।নিজের সঙ্গে দ্বন্ধ করেও তোশাকে জড়িয়ে ধরে রাখলো।ওদিকে মেয়েটা চোখবন্ধ করে স্বপ্ন অনুভবে ব্যস্ত।
দূর থেকে আলিঙ্গনরত এই দুজনকে দেখে কারো কপালে ভাঁজ পড়লো।নিজের সঙ্গে লোকটি বলে উঠলো,
“মায়ানের মেয়ের সাথে কবীরের এতো ঘনিষ্ঠতা যে দিনে দুপুরে এরকম জড়িয়ে ধরে আছে।বাহ, দিশাকে জানাতে হবে ব্যাপারটা।”
চলবে।