মিঠা রোদ পর্ব ৬

0
2470

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“জি বলুন আদুরে তোশামণি।একজন অসুন্দর পুরুষ কবীর শাহ বলছি।”

ফোনের ওপাশ থেকে কোকিলের কুহুরবের অনুরুপ অস্পষ্ট এক শব্দ করলো তোশা।ফিসফিস করে বলল,

“আপনি ভীষণ সুন্দর জানেন।হুহ নিজেকে অসুন্দর বলবেন না।”

“তা বেবী গার্ল আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?তাছাড়া এতো রাতে কল করলে যে?সব ঠিক আছে তো?”

“সব ঠিক আছে।”

তোশা বিশেষ কোনো বাক্য খুঁজে পাচ্ছে না বলার জন্য।কীভাবে বলবে?আজ শপিং মলের কান্ডে সে লোকটির ব্যক্তিত্বে ভীষণ মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে।পেটের ভেতর বহু লাল নীল রঙের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে।শুকনো ঢোক গিলে নিজের গলা ভিজিয়ে নিলো তোশা।

“আপনাকে বলেন তো আমি কী নামে ডাকি?”

কবীর চট করে একটা সম্বোধন করতে গিয়েও থেমে গেলো।তোশা কখনো বিশেষ কিছু বলে তাকে ডাকেনি?কেন?তাছাড়া কবীর অহেতুক ওসব সম্বোধন মন থেকে হয়তো মেনে নিতেও পারবেনা।গম্ভীর সুরে বলল,

“এখনও কোনো নামে ডাকো নি।”

“ঠিক করে দেন কী নামে ডাকবো।”

“আমি তোমার মা-বাবার বন্ধু।সেই হিসেবে না হয় ডাকবে।”

“নাহ কবীর বলে ডাকবো।”

ধমকে উঠলো কবীর।ছোটো কারো মুখে নিজের নামটা শুনতে সে মটেও পছন্দ করেনা।তোশার কিছু বিষয় ভীষণ বাচ্চামো লাগছে তার কাছে।

“আমাকে নাম ধরে ডাকছো কেন?তুমি আমার ফ্রেন্ড নাকী তোমার মা?”

“এমনভাবে বলছেন কেন?নাম ধরে ডাকা যাবেনা?”

“অবশ্যই না।গুরুজন তোমার।কিছু বাচ্চামো আমি ক্ষমা করে দেই মায়ান ও তাহিয়ার জন্য।কিন্তু আজকে বেশী হয়ে গেলো না?তাহিয়া কোথায়?ওকে ফোন দাও।”

“মা ঘুমে।”

“তুমি এতো রাত জেগে কী করছো তাহলে?”

“আপনাকে থ্যাংকস জানাতে।দিনে সাহায্য করার জন্য।আপনি ছেলে মানুষ লজ্জা না পেয়েও।”

“শুনো তুমি একটা পনের বছরের বাচ্চা আমার জন্য।এছাড়া কিছুই নয়।নাম ধরে কখনো ডাকবেনা আমাকে।রাখো এখন।”

তোশা হয়তোবা কেঁদে ফেলবে এখন।প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে শুধু মামী ও নানী কথা বলে তার সঙ্গে।আর আজ কবীর বলল।একটু নাম ধরে ডেকেছে দেখে ব্যক্তিটা এমন শুনালো।নাক টানার শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেলো কবীর।মেয়েটা হয়তো ভুলে বলে ফেলেছে।সে নিজেকে সামলে কিছু বলতে যাবে এর পূর্বেই কল কেঁটে দিলো তোশা।হুট করেই কবীরের বুকে নির্জনতা নেমে এলো।ক্লান্ত বিক্ষিপ্ত মন ও ঘামভেজা শরীরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।তোশাকে এভাবে বলার কোনো অভিপ্রায় ছিলনা তার।কিন্তু রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।একটা বাচ্চার কাছে কী ক্ষমা চাওয়া?এই চিন্তায় ধীরে ধীরে তন্দ্রায় তলিয়ে যাচ্ছে সে।ক্ষণবাদে বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করলো।চোখ তুলে সে দেখলো লম্বা চুল ও লাল রঙের সুন্দর একটি সিল্কের শাড়ী পরনে মেয়ে তার বুকে মাথা দিয়ে আছে।কবীর আনমনে তাকে জোরালো ভাবে জাপটে ধরলো।মিষ্টি করে শুধালো,

“কোথায় ছিলে এতোদিন?আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।”

মেয়েটি জবাব দেয়না।বরং গুনগুন করে কিছু গাইতে থাকে।কবীর ব্যকুল কণ্ঠে বলল,

“কী হলো বলো কোথায় ছিলে?”

এবার মেয়েটি চট করে নিজের মাথাটি উঠালো।কবীর ঘুম ঘুম চোখে দেখলো গোলগাল অতীব সুন্দর মেয়েটি হাসছে।ভীষণ হাসছে।মেয়েটিকে পরীর মতোন দেখাচ্ছে।তবে কবীর চিনে তাকে।সমস্ত মায়া দিয়ে উচ্চারণ করলো,

“তোশামণি?”

“উহু পরী।দেখুন তো কবীর আবার ডাকলাম আপনাকে নাম ধরে।বকেন আমাকে।কী হলো কবীর?”

তোশাকে একটুও বকতে ইচ্ছে করছেনা কবীরের।এতো মায়াময় কাওকে কটূ কথা শোনানো যায়?সে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে চাচ্ছে।মেয়েটা কী সুন্দর করে শাড়ী পরেছে।আঁচলটা আরেকটু টেনে নিলে কী হতো?ফর্সা চিতল মাছের মতোন গলাটি দেখে তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠলো কবীর।হাতটা যেই তোশাকে স্পর্শ করবে তৎক্ষনাৎ মেয়েটি তা ধরে কামড় বসিয়ে দিলো।কবীর আর্তনাদ করে উঠে বসলো।পুরো রুম জুড়ে ঈষদুষ্ণ আলোর ছড়াছড়ি।কিন্তু কোথাও উজ্জ্বল আলোর মতোন লাল শাড়ী পরিহিত কেউ নেই।কবীরের ঘুম ছুটে যেতে মিনিট দশেক সময় লাগলো।পুরোপুরি বিচার, বুদ্ধি মস্তিস্কে আগমণ করতেই নিজের উপর ঘৃ ণা য় ম রে যাচ্ছে সে।তোশা যে কীনা বিশ বছরের ছোট তার থেকে।সেই মেয়েটির উপর এমন চিন্তা?লাল রঙের বিশেষ শাড়ীটিকে সে চিনেছে।এটা নিজ স্ত্রীর জন্য কিনেছিল উনিশ বছর বয়সে।পরবর্তী একজন মালিক পেয়েছিল শাড়ীটি।কিন্তু এখন শূন্য হয়ে আলমারির এক কোণায় রয়ে গিয়েছে। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো কবীর।পাশের ফ্রিজ থেকে রুট বিয়ারের ক্যান নিয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো।এমন স্বপ্ন কখনো দেখবেনা বলে স্থির করলো সে।

(***)

“কী ব্যাপার তোশামণি?মন খারাপ তোমার?”

“না আম্মু।”

“তাহলে চোখ ফোলা কেন?এলার্জি হলো না তো?”

তাহিয়া ব্যস্ত হয়ে তোশার চোখ দুটো দেখতে লাগলো।এঁটো হাত থাকার দরুণ ভালোভাবে কিছু বুঝছে না।পাশে কল্লোলের মা তটিনী দাঁড়িয়ে আছে।তাহিয়া তাকে বলল,

“ভাবী দেখো তো একটু মেয়ের চোখে কী হয়েছে?”

তটিনী থমথমে মুখে জবাব দিলো,

“কেন আমার অফিস নেই?খেতে এমনিতেই দেরী হয়ে যাচ্ছে।”

“দেখতে কতোক্ষণ লাগে?”

“দেখে কী লাভটা বলো?কিছুই হয়নি চোখে।দেখো গিয়ে বেশী ঘুমানোর দরুণ।”

রাগ উঠে গেলো তাহিয়ার।মেয়ের জন্য একটু বেশীই অস্থির সে।তোশা তাকে আশ্বস্ত করে বলল,

“মা আমার কিছুই হয়নি তো।টেনশন নিওনা।”

“নিশ্চয় পানি কম খাচ্ছো।”

তটিনী মাঝখান থেকে বলে উঠলো,

“মেয়েকে নিয়ে এতো আহ্লাদ তোমার।কী দরকার ছিল পৃথিবীতে আনার।পেটের ভেতর রেখে দিতে।আমাদের অন্তত এতো ন্যাকামি দেখতে হতো না।”

মামীর কথায় তোশার খুব কান্না পাচ্ছে।কিন্তু কিছু বলতে পারবেনা।একদিন জবাব দিয়েছিল।ফলস্বরুপ নানা-নানু এখন তোশার সঙ্গে খেতে বসেনা।দুঃখে ভাত মুখে নিয়েই ব্যাগ কাঁধে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো সে।তাহিয়া তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে এসে দেখলো রাস্তার কোথাও নেই তোশা।ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার।মেয়েকে কখনো একা ছাড়েনা সে।গাড়ী নিয়ে বের হয়ে এলো তখুনি।কিন্তু ভাগ্য খারাপ ছিল।কিছুদূর যেতেই সিগন্যালে পড়তে হলো।এরপর শুরু হলো জ্যাম।প্রায় বিশ মিনিট পর কিছু মনে হলো তাহিয়ার।তার জীবনে কবীর সব বিপদে সাহায্য করেছে।আজও ব্যতিক্রম নয়।কবীরের নাম্বার ডায়াল করলো।ওপাশ থেকে রিসিভ করলে বলল,

“শুনো কবীর।তুমি কোথায় এখন?”

“স্কুলের সামনে কেন?বাচ্চাদের দিতে এসেছিলাম।”

“একটু দেখো তোশা পৌঁছে গিয়েছে কীনা।ভাবী বাসায় কথা শুনিয়েছে তাই একা একা চলে গেলো।”

কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে কবীর বলল,

“চিন্তা করো না।তোশামণি ক্লাসে ঢুকেছে।আমি দেখেছি।”

“কথা হয়েছে ওর সঙ্গে?”

“হ্যাঁ।”

“বাঁচালে।আমি যাচ্ছি স্কুলে।”

কবীর ফোনটা রেখে দিলো।তাহিয়াকে সে একটু মিথ্যা বলেছে।তোশা ও তার দেখা হয়েছে ঠিক।কিন্তু মেয়েটা কবীরের সাথে মটেও কথা বলেনি।বরং উপেক্ষা করেছে।ছোট্ট এই মেয়েটির এমন ব্যবহারে অনেক কষ্ট পাচ্ছে সে।মেয়েটির অভিমান সে মেনে নিতে পারছেনা।অথচ অনুভূতি দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয় তাদের।কবীরের মনে হলো দুনিয়ায় সবথেকে মিষ্টি মেয়ে তোশামণির সঙ্গে একটু কথা বলতে হবে তার।উহু,একটু না।সুদীর্ঘ পাঁচ মিনিট কথা বলতে হবে।তবেই ভেতরের য ন্ত্র ণা কমবে।

চলবে।

এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে রেসপন্স করবেন।এতে আমি নিয়মিত দিতে ভরসা পাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here