#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব_৫
চন্দ্রের কপালে হাত দিয়ে স্পন্দন দেখে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করে পানি এনে মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলো। কিন্তু না চন্দ্র প্রচন্ড অস্থির হয়ে উঠেছে। ছটফট করছে শুধু। উপায় না দেখে নিচে গিয়ে মা’কে ডাকলো স্পন্দন।ওর বাবাও উঠে এলেন।এসে ঐ অবস্থা দেখে সৈয়দ মির্জা বললেন,
__দেখো স্পন্দন মেয়েটার কি হাল করেছো তুমি। এখন আমি আমার ছোট ভাইকে কি জবাব দিবো? একবার ভেবে দেখেছো তুমি?এতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাজ তোমার মতো ছেলের কাছ থেকে ছাড়া আর কারো কাছে আশা করা যায় না।
__আপনি দয়া করে একটু শান্ত হন।কি করবেন এখন সেটা নিয়ে ভাবেন।
__কি আর করবো? তোমার ছেলের জন্য যখন এমন হয়েছে চন্দ্রর তখন ওকেই সব সামলাতে হবে।
স্পন্দন চুপচাপ মাথা নুইয়ে চন্দ্রর হাতটা ধরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবলো,
__মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে চন্দ্রর।কতটা যন্ত্রণা পাচ্ছে মেয়েটা তাইতো এমন ছটফট করছে। না আর বসে থকলে চলবে না ।
উঠে দাঁড়িয়ে মা’কে বললো,
__তুমি একটু ওর মাথায় জলপট্টি দাও মা।আমি একটা ডাক্তার নিয়ে আসছি। কোথাও যেওনা মা।ওর পাশে থেকো প্লিজ।
ওর মায়ের চোখে জল। চন্দ্র এভাবে ছটফট করছে।স্পন্দন ও যে ভেতরে ভেতরে কতটা ছটফট করছে তা কেউ না বুঝলেও ওর মা বুঝতে পারলো।তাই স্পন্দনের কথামতো চন্দ্রের পাশে গিয়ে বসলো। বারবার দোয়া পড়ে চন্দ্রের চোখে মুখে ফুঁ দিতে লাগলো। সৈয়দ মির্জা বললেন,
__তুমি যে ডাক্তার আনতে যাচ্ছো, তা এতো রাতে ডাক্তার পাবে?
__সেটা আপনার না ভাবলেও চলবে মিস্টার সৈয়দ মির্জা সাহেব।আসছি মা।
__দেখেছো দেখেছো? তোমার ছেলে আমার সাথে কিভাবে কথা বলে?
__আহ্ একটু চুপ করেন না। দেখছেন তো মেয়েটার ছটফটানি দেখে ছেলেটা কেমন ভেঙে পড়েছে।তার মধ্যে আপনি আবার এসব বলে ওর মাথা নষ্ট না করে ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকেন।এদিকটা আমি আর স্পন্দন সামলে নিবো।
__কি আর সামলাবে তোমরা?সব তো আমার জ্বালা। ছেলে বকে গেছে তো সামলাতে বিয়ে করালাম।আর এখন তো আরো খারাপ ব্যবহার শুরু করেছে তোমার ছেলে।
এভাবে বকবক করতে করতে সৈয়দ মির্জা ঘর থেকে চলে গেলেন।আধ ঘন্টা পর স্পন্দন ডাক্তারকে নিয়ে ফিরে এলো।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ডাক্তার বাবুকে ঘুম থেকে ডেকে আনা হয়েছে। উনি দেখে মেডিসিন দিলেন চন্দ্রকে। বললেন,
__খুব বেশি মানসিক প্রেসারে আছে মেয়েটা।নিতে পারছেনা এতো চাপ। আচ্ছা এরমধ্যে কি এমন কিছু হয়েছে যাতে মানসিক ভাবে খুব বেশি ভেঙে পড়েছে মেয়াটা?
স্পন্দনের মা একবার স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
__আসলে বিয়ের এতো চাপ হয়তো নিতে পারে নি মেয়েটা।
__না তো? শুধু এটা হলেও এতো ভেঙে পড়ার কথা নয়।হয়তো আরো বড় কোনো ধাক্কা খেয়েছে। যাইহোক কোনো মানসিক চাপ দেওয়া যাবেনা ওকে।সেদিকে খেয়াল রাখুন।আর সবার সাথে হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করুন। মেডিসিন দিয়ে দিবেন। আশাকরি দুই একদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে। আমি এখন আসি।
__ডাক্তার বাবুকে এগিয়ে দিয়ে আয় স্পন্দন।
__তার আর দরকার হবে না।ভোর হতে এসেছে। আমি যেতে পারবো। তাছাড়া ওর এখন বউয়ের পাশে থাকা অনেক বেশি জরুরী।
__মা তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে নাও একটু।আমি আছি চন্দ্রের কাছে। তোমার শরীর খারাপ করবে।
__কিন্তু বাবু?
__ভয় নেই মা। তোমার ছেলে আর যাইহোক কাউকে মে’রে ফেলবে না কোনো দিন। আমি থাকতে চন্দ্রের কিছু হবে না মা। আমি জানি এমনিতেই ওর জীবনে নরক হয়ে উঠেছে শুধু আমার জন্য।আর এখন যদি আমি ওকে সেখান থেকে মুক্ত না করি তাহলে তো নিঃশেষ হয়ে যাবে চন্দ্র।স্পন্দন থাকতে সেটা কখনোই হতে পারে না মা।
স্পন্দনের মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।স্পন্দন গিয়ে চন্দ্রের পাশে বসে ওকে ধরে আধশোয়া করে বসালো। চন্দ্রের মধ্যে তেমন হুঁশ নেই। শরীরে আর কোনো জোর দিচ্ছে না এখন।স্পন্দন মুখটা হা করে অনেক কষ্ট করে কিছু খাইয়ে মেডিসিন গুলো দিলো। এরপর শুইয়ে দিয়ে আবার মাথায় জলপট্টি দিতে লাগল।আর মনে মনে ভাবলো,
__তোকে এই নরকে আর থাকতে হবে না চন্দ্র। আমি খুব তাড়াতাড়ি করে তোকে মুক্তি দিয়ে দিবো। শুধু আমাকে একটু সময় দে। এভাবে নিজের হাতে নিজের ক্ষতি করিস না চন্দ্র।প্লিজ!
সকালের সূর্য উঁকি দিচ্ছে পূর্ব আকাশে। রোদের ঝিলিক চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে।একটু একটু করে চোখ খুললো চন্দ্র।মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে। কপালে ঠিক মাঝ বরাবর কারো গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে।হাত দিতেই বিপরীত লিঙ্গের কিছু অনুভব হলো চন্দ্রের।মুখে চোখে হাত ঠেকাতেই খোঁচা খোঁচা দাড়ি বাঁধলো হাতে।পাপরি গুলো ও বড় বড়।এক ঝটকায় উঠে বসলো চন্দ্র। তাকিয়ে দেখে স্পন্দন একহাত ধরে রেখেছে চন্দ্রের আর কপালে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।কিছু বুঝে উঠার আগেই স্পন্দনের ঘুম ভেঙে গেলো।উঠে ধড়ফড় করে বসে পড়লো। চন্দ্রের কপালে হাত ঠেকিয়ে দেখে পানির মগ আর ভেজা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। চন্দ্র মনে মনে ভাবলো,
__এই গোমড়া মুখোর আবার কি হলো। আমার কপালে ছুঁয়ে দিয়ে কি জ্বল দেখলো নাকি?রাতে তাহলে জ্বর এসেছিলো মনে হয়। কোথায় মাথা ব্যথা ছাড়া আমার তো আর কিছুই মনে নেই।
এতো সব না ভেবে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরে গেলো চন্দ্রের।ধপ করে আবার বসে পড়লো। স্পন্দন বাইরে এসে বললো,
__ফ্রেশ হয়ে নে চন্দ্র। ভালো লাগবে।
বলেই তড়িঘড়ি করে জামা কাপড় পড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। চন্দ্র এখনো অবাক হয়ে বসে আছে।এর মধ্যে বড় আম্মু এলো।বললো,
__এখন কেমন লাগছে চন্দ্র?
__মাথা ব্যথা করছে শুধু।আর উঠতে গিয়ে একটু চক্কর খেলাম মনে হলো।
__স্পন্দন আমাকে বললো তোকে খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে দিতে।আর লাফালাফি করতে মানা করে গেছে।বলেছে সারাদিন শুয়ে থাকতে।
__আমি এসব কথা শুনতে পারবোনা বড় আম্মু।আর আমি তো ঠিক আছি।কিছু হয়নি তো আমার।
__কাল রাতে জ্বরে বেহুঁশ ছিলি। ছটফট করে সারা রাত কেটেছে।স্পন্দন ঐ রাতে ছুটে গিয়ে ডাক্তার ডেকে এনে মেডিসিন খাইয়েছে। সারারাত ধরে মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিয়েছে। আমার শরীর খারাপ করবে বলে থাকতেই দেয়নি।
চন্দ্র অবাকের উপর চরম অবাক হয়ে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে বড় আম্মুর দিকে।
__আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি চন্দ্র। তুই আমাদের ভুল বুঝিস না মা। আমাদের সিদ্ধান্ত ভুল নেই।অন্তত কালকে তোর ঐ অবস্থায় স্পন্দনের সেই বিধ্বস্ত মুখটা দেখার পর আমার মনে হলো আমরা ঠিক করলাম চন্দ্র।
__আমাকে তোমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে আমার জীবনটা নরক বানিয়ে বলছো ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো বড় আম্মু?
__হ্যাঁ বলছি চন্দ্র। আমার ছেলেটা এমন ছিলো না মা।ওর মতো ভালো ছেলে কোথাও পাবি না তুই। আমার উপর বিশ্বাস কর চন্দ্র।ও খারাপ ছেলে নয়।
স্পন্দনের মা শাড়ির আঁচল টেনে ভেজা চোখ গুলো মুছতে মুছতে বললো,
__ওকে কখনো ছেড়ে যাস না মা। আমার কথটা রাখিস চন্দ্র। আমার ছেলেটা খারাপ নয়।
__ঐ রকম একটা বদরাগী, নেশাগ্রস্ত লোককে তুমি বলছো ভালো ছেলে বড় আম্মু। আমাকে ঐ মানুষটার সাথে আবার সারাজীবন থেকে যেতে বলছো।কেনো বড় আম্মু? আমি তোমার নিজের মেয়ে না বলে আমার জীবনের কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে? আজকে যদি তোমার মেয়ের এমন একটা ছেলের সাথে বিয়ে হতো তাহলেও এক কথাই বলতে বড় আম্মু?এতোটা স্বার্থপর কেনো বড় আম্মু? তোমার ছেলের জীবনে আমি থাকবো না। কিছুতেই না।আর কয়েকটা দিন যেতে দাও আমি অনেক দূরে চলে যাবো তোমাদের থেকে। আমি নিজের হাতে নিজেকে শেষ করে দিবো তবুও এই ছেলের সাথে এক ঘরে এক ছাদের নিচে কোনো দিন করবো না। আমাকে ক্ষমা করে দাও বড় আম্মু। আমি তোমার কথা রাখতে পারবোনা।
__চন্দ্র? আমি তোর দুটি হাত ধরে মিনতি করছি আমার ছেলেটা সত্যি খুব ভালো ছেলে।তাকে ছেড়ে যাস না মা। আমি তোর মায়ের মতো।তোর খারাপ কোনোদিন চাইবো না। শুধু নিজের ছেলের স্বার্থেই নয় আমি বলছি স্পন্দন তোকে যতটা ভালোবাসা দিতে পারবে তা আর কেউ দিতে পারবে না চন্দ্র। তবুও এই ঘর এই সংসার স্পন্দন কে ছেড়ে যাস না মা।যাস না তুই।
এই মুহূর্তে চন্দ্রের চোখের সামনে বসে আছে যে মহিলা তাকে তার চোখে সবচেয়ে স্বার্থপর মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই মানুষটি তার ছেলের জন্য আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।না এ চন্দ্র কোনো দিন করতে পারবে না।থাকবেই না চন্দ্র।
#চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। গল্প ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে লেখিকাকে লেখায় উৎসাহিত করবেন।হয়তো অনেকের কাছে ভালো না লাগতে পারে তবুও পড়তেই পারেন।নিরাশ হবেন না।