#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১১
শাফিন বললো, যেতে- তো সমস্যা নেই কিন্তু আমাকে ঘটা করে বাড়ি বয়ে ইনভিটেশন দিয়ে নিতে আসার কারণ জানতে পারি?
– কেন নয় অবশ্যই জানতে পারেন। তবে এভাবে না বলে চলুন আমাদের সাথে দু’প্লেট নাস্তা দিলে আপনার বুঝতে সু্বিধে হবে মিস্টার মাহমুদ।
– আপনি হয়তে আমার সম্পর্কে অত ভালো জানেন না। যা-তা খাবার শাফিন স্পর্শ করেও দেখেনে, খাওয়া তো দূরের কথা।
– আপনি নতুন জামাই তো তাই জানিনা তবে আমাদের সাথে চলুন আস্তে ধীরে জেনে নেবো।
শাফীন নিজের রাগকে সংযত করে, মিহিকে বললো,মিহি আম্মুকে নিয়ে ভেতরে যাও।
মিহি আর সাথী বেগম চলে গেলেন রুমে। সাথী বেগম বললেন, আমার ভয় করছে মিহি পুলিশ কেন আসলো?
– আহা মা টেনশন নিওনা তোমার জামাই ঠিক মেনেজ করে নেবে।
মিহি আর সাথী বেগম চলে যেতেই। শাফিন বলে,তো শ্বশুর মশাইরা এবার বলুন কি বরতে এসেছেন।
ইন্সপেক্টর সজিব বললো, তোর সাহস তো কম না। তুই আমাদের সামনে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে কথা বলছিস।
-হে ইউ সাহসের কি দেখেছিস? আর একবারও উগ্র কথা বললে তোর আর দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থা থাকবে না।
ইন্সপেক্টর সজিব শাফিনের কলার ধরতে চাইলে শাফিন পা দিয়ে জোড়ে লাথি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একজন কনেস্টবলকে ইশারা করে মিহিরা যে রুমে আছে সে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসতে বলে,ইন্সপেক্টর সজিব ফ্লোরে মুখ থুবড়ে পরলো। নাক দিয়ে র*ক্ত পরতে লাগলো। শাফিন বললো, একে নিয়ে সোজা হসপিটালে যাবি। আর রাত দশটার পর আমি আসছি তোদের কাছে। তোদের আমাকে নিতে আসতে হবে না। বলেই কাউকে একটা কল করে এক পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, কথা বল।কথা শেষ করে পুলিশ অফিসারা সব চলে যেতে নিলে,নুহাস নামের একজন অফিসারকে ডেকে শাফিন বলে,তোদের র*ক্ত তোরাই পরিস্কার করে রেখে যা। আমার বউ দেখলে ভয় পাবে।নুহাস র*ক্ত পরিস্কার করার বাহানায় এখানে থেকে গেলো। শাফিন নুহাশ কে জিজ্ঞেস করলো৷ কিরে কাহিনিটা কি? এরা আমার বাসায় আসার সাহস পেলো কি করে?
নুহাস শাফিনের কানে মুখে কিছু বললো, ফ্লোরের র*ক্তটুকু নিজের রুমাল দিয়ে মুছে নিয়ে চলে গেলো নুহাস।
শাফিন মিহির রুমের দরজা খুলে দিতেই মিহি দ্রুত বের হয়ে বলে, তুমি ঠিক আছো তো? ওরা কেন এসেছিল? তোমাকে কিছু করেনি তো?
– রিলাক্স মিহি তেমন কিছুই না। তারা ভুল ঠিকানায় চলে এসেছিলো। এখন ভুল বুঝতে পেরে চলে গেছে।
– তুমি কি আমাকে মিথ্যে বলছো শাফিন?কারণ পুলিশ তোমার ফুল নেইম বলেছিলো, ভুল করে শাফিন মাহমুদ বলে ফেললো কি করে?
– সন্দেহ করছো? আমি সত্যি বলছি ওনারা যাকে ধরতে এসেছিল তার নামও শাফিন মাহমুদ। তাইতে ভুল হয়েছে। রোড নাম্বার তিনশো দশ।ওনারা ভুল করে তিনশো পনেরোতে চলে আসছে।
যদিও শাফিনের কথা মিহি বিশ্বাস করলো না। তবুও চুপ করে রইলো। শাফিন হাত ধুয়ে আবার খেতে বসল।খাবার খেয়ে স্বাভাবিক ভাবে নিজের রুমে চলে গেলো।
মিহি আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাফিনের দিকে এমন গা ছাড়া ভাব দেখে মিহি সত্যি আবাক না হয়ে পারলো না। শাফিনের পিছু পিছু রুমে গেলো। শাফিন বেডের উপর অর্ধ শোয়া অবস্থায় ল্যাপটপে কিছু করছিলো। মিহি সোফায় বসে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো শাফিনের দিকে। শাফিন এখন নিজের কাজে ব্যস্ত তাই মিহিকে খেয়াল করছে না।মিহি শাফিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে পরলো শাফিনের সাথে প্রথম দেখা হওয়ার ঘটনা।
ফ্লাশব্যাক……
ভার্সিটির প্রথম দিন। তার উপরে এ শহরে নতুন। একটা সাদা টপস আর ব্লক কালারের সলোয়ার ওড়না পড়া ছিল মিহি সাথে ছিলো বর্ষা। ভার্সিটিতে র্যাগ হয় সেটা শুনেছিল কিন্তু ওদের সাথে এমন কিছুই হলো না। মিহি বললো, বর্ষা আমাদের ভাগ্য ভালো দেখলি কেউ আমাদের কিছুই বললো না। ক্লাস শেষ করে বাহিরে এসে ভার্সিটি ঘুরে ঘুরে দেখছে দু’জনে এমন সময় পেছন থেকে একজন ডেকে বললো,এই যে ব্লক কুইন, মিহি ডাক শুনেও থামলো না। নিজের মতো হাঁটতে লাগলো। বর্ষা বললো, আমার মনে হচ্ছে ব্লাক কুইন তোকে ডেকেছে।
– দূর আমাকে কে বলবে?ভার্সিটিতে আরো কত মেয়ে আছে কাকে না কাকে ডাকছে। মিহির কথার মাঝেই সামনে থেকে একজন বলল,ব্লাক কুইন তোমাকেই ডেকেছি। হঠাৎ অপরিচিত পুরুষ কন্ঠ শুনে মিহি চমকে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে। ব্লাক হুটি আর হোয়াইট প্যান্ট, হোয়াইট জুতো, কালো ঘড়ি,আর একটা কালো সান গ্লাস পড়া সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে, তার আশে পাশে আরো দু’তিনজন ছেলে মেয়ে। মিহি বোকার মতো সামনে তাকিয়ে আছে। মিহিকে তাকিয়ে থাকতে থেকে শাফিন বললো,তোমার আমাকে দেখা শেষ হলে বলবা, তোমার নামটা কি?
মিহির কর্ণকুহরে যেন কোন আওয়াজ পৌঁছচ্ছে না। বর্ষা মিহিকে হাত দিয়ে চিমটি কাটতেই মিহি বলে,আউচ, রাগী চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে বর্ষু এতো জোড়ে কেউ চিমটি দেয়?
বর্ষা বলে, তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। বর্ষার কথা শুনে মিহি বলে ওহহহ সরি।
শাফিন বলল,অভিনয় শেষ হলে নিজের নামটা বলুন মিস ব্লাক কুইন।
– মার্শিয়া জাহান মিহি।
– নাইস নেইম
মিহি আর কিছু না বলে বর্ষার হাত ধরে সামনে এগোতেই শাফিন পেছন থেকে ডেকে বললো,মিস মার্শিয়া জাহান মিহি, তুমি কি ছোট থেকেই সুন্দরী নাকি বড় হয়ে এতো,সুন্দরী হয়েছো।
মিহি পিছনে ফিরে বলে, ও হ্যালো মিস্টার ব্লাক ড্রাকুলা। না আমি রাশি খান্না। আর না আপনি বিজয় দেবরাকুন্ডা। সো এসব ফ্লাটিং অন্য কোথাও কাজে লাগান।
– আমি তো জানতাম সুন্দরী মেয়েরা বোকা হয়। তুমি দেখছি বেশ বুদ্ধিমতী।বাট তুমি রাশি খান্না না হলেও ব্লাক কুইন আর আমি বিজয় না হলেও ব্লাক ড্রাকুলা। সো আমাদের মধ্যে কিছু হওয়ার চান্স আছে।
– আমিতো কুইন আপনার ভাষ্যমতে আর কুইন অবশ্যই কোন ড্রাকুলা পছন্দ করবে না।তার জন্য হয়তো কোন রুপকথার রাজকুমার আসবে।
উদয় বললো তোকে কি করতে বলা হইছে আর তুই কি করছিস।
শাফিন বললো, মিস কুইন,” উইল ইউ ম্যারি মি”?
– মিহি জোড়ে হেসে হেসে বলে, হাউ ফানি, এভাবে প্রপোজ করলে আমি কেন কোন কাকও রাজি হবে না। মিস্টার ড্রাকুলা। বলেই হাসতে হাসতে বেড় হয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। রাস্তায় এসে রিকশা নিয়ে দু’জনে উঠে বসে,বর্ষা বলে ছেলেটা কিন্তু হ্যান্ডসাম ছিলো। কি বলিস।
– হু পুরোই বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলের মতো এই আরকি।
– তোকে আমি কি বললাম আর তুই কি বলছিস।
– তোর যেটা মনে হয়েছে তুই সেটা বলেছিস আমার যেটা মনে হয়েছে আমি বলেছি।
– আরে মিহি কি বাচ্চি। একটু সিরিয়াসলি নে বিষয়টা। দেখ হতেই পারে প্রথম দেখায় তোর প্রেমে পরেছে। তাই ডিরেক্ট বিয়ের জন্য প্রপোজ করেছে।
– তোর মাথা। দেখ এও হয়তো ভার্সিটিতে নতুন সিনিয়রের চাপে পরে এসব করেছে। বাদদে তো।
– আজকের মতো বাদ দিলাম তবে কাল ভার্সিটিতে এসে আবার শুরু করবো। গোয়েন্দা গিন্নির মতো গোয়েন্দা গিরি।
– তুই আর তোর সিরিয়াল দু’টোই ফালতু।
______________________________________________
উদয়,ইরা তিন্নি,নুহাস সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। উদয় বলে, এতো মেয়েকে রিজেক্ট করে শেষে কিনা দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম বয় নিজেই রিজেক্ট হলো। মাজা য়্যা গ্যায়া।
শাফিন, ইরার কান ধরে বলে, তোর জন্য হয়েছে এসব তোর ফালতু ট্রুথ, ডেরায় খেলার জন্য শেষে কিনা জুনিয়রের কাছে রিজেক্ট হলাম।
– কান ছাড় ব্যাথা পাচ্ছি তো। তুই তো বলে ছিলে, এই ডেয়ার তোর জন্য দুধ,ভাত। আর এখন সব দোষ আমার।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
শাফিন বললো থামবি তোরা। নাকি সব ক’টার দাঁত খুলে দেবো।
সাথী বেগমের ডাকে ভাবনার জগত থেকে বের হয় মিহি। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, কিছু বলবে মা।
-একটু এদিকটায় আয় তো মা।
#চলব