#তুমি_আমার_অভিমান❤
|| পর্ব – ২১ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি
শুভ্রকে কবর দিয়ে মাত্র বাসায় এসেছে অভিক। ফ্রেশ হয়ে আবারও হসপিটালের দিকে রওনা হয় সে। হসপিটালে এসে দেখে নীরা বেড এ বসে আছে মন খারাপ করে। অভিক এসে নীরার পাশে বসে। রোগীর সাদা ড্রেস আর দু’পাশে দুটো বিনুনী। মুখশ্রীতে মন খারাপের ছাপ স্পষ্ট। অভিককে পাশে বসতে দেখেই নীরা বলে,
‘এই আপনার আসার সময় হলো? জানেন কতটা ভয় পাই আমি? সবাই আমাকে একা রেখে চলে যায়। আবার আজ আমার পেটের ব্যান্ডেজটা খুলবে বলছে। আমার অনেক ভয় করছে অভিক।’
অভিক নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘ভয় পেও না। আমি আছি তো।’
‘আচ্ছা! ফাহাদ, প্রীতি আর শুভ্র ভাইয়া নাহয় আসতে পারবে না রোজ। কিন্তু আপনি? আপনারও কি সময় নেই আমার কাছে আসার?’
‘এলাম তো।’
ডাক্তার এসে নীরাকে চেকাপ করে দেখে অবস্থা ভালো নাকি খারাপ। নীরাকে যখন বলা হয় তার ব্যান্ডেজ খোলা হবে একদম শক্ত করে অভিকের হাত ধরে থাকে। ব্যান্ডেজ খোলার দু’দিন পর পেটের সেলাইটা খোলা হবে। এটা শুনে নীরা যেন আরো ভয় পায়। বুক কেঁপে উঠে। এর জন্যই এসব হসপিটাল ডাক্তার ভালো লাগে না।
.
প্রায় চারদিন কেটে গেল। নীরা এখন ওদের বাসায় আছে। শুভ্রর বিষয়টা অভিক নীরার কাছ থেকে এখনো লুকিয়ে রেখেছে। নীরা প্রতিদিন সবার কথা জিজ্ঞেস করে। আর যবে থেকে শুনেছে শুভ্র ওকে রক্ত দিয়েছে, আরও বেশি করে শুভ্রর কথা বলতে থাকে। অভিক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
নীরা গান শুনছিল বিছানায় বসে। অভিক শুভ্রর বাসায় থেকে মাত্র ফিরেছে। শুভ্রর মা আর বাবাকে সান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা ওর ছিলনা। কিন্তু সে বলে এসেছে। অভিকই তাদের ছেলে। ওরা যেন অভিককে তাদের ছেলে ভেবে নেয়। অভিকের মাঝেই শুভ্র বেঁচে থাকবে আজীবন। ওদের নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল অভিক। কিন্তু ওরা আসতে চায়নি। অনেক জোর করেছে। অভিক বারবার তাদের ক্ষমা করতে বলেছে। শুভ্রর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করায় তারা বলে,
‘তুমি নিজেকে দায়ী করো না অভিক। এটা আমাদের ভাগ্য। এক ছেলেকে হারিয়েছি। এখন আর অন্য এক ছেলেকে হারাতে চাইনা।’
অভিকের মাথা থেকে চিন্তা যেন কমছেই না। একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলছে। এর পিছনে আসল কলকাঠি কে নাড়ছে সেটাই জানতে হবে অভিককে।
অভিক এসে নীরার পাশে বসে। নীরা অভিকের মাথায় হাত ছুঁয়ে দিতেই অভিক সরে যায়।
‘কি হলো?’
অভিক অন্যমনস্ক হয়ে বলে,
‘কিছুনা।’
‘কিছুনা মানে? দেখি এদিকে ফিরুন তো।’
নীরা অভিকের কাছে এসে কপালে হাত দিলেই অভিক বিরক্তি নিয়ে বলে,
‘বললাম তো কিছু হয়নি। এমন করছ কেন? একটু শান্তিতে থাকতে দাও।’
অভিকের এমন আচরণে নীরার মন ক্ষুণ্ন হয়। অভিক বিছানায় নীরার পাশে শুয়ে পড়ে। নীরা অভিমান করে চলে যেতে নেয়। অভিক নীরার হাত ধরে ফেলে খপ করে। নীরা অভিকের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ছাড়ুন আমার হাত। আমি থাকলে তো অশান্তিতে থাকবেন। তারচেয়ে বরং আমি চলে যাই।’
‘রাগ করেছ?’
‘রাগ নয় অভিমান।’
‘একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে প্লিজ।’
অভিকের কথা শুনে নীরার অভিমান গায়েব হয়ে গেল। সে অভিকের কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। অভিক চোখ বন্ধ করে রাখে। নীরাকে কথার আঘাতও দেওয়া যাবে না। কিন্তু শুভ্রর সত্যিটা তো জানাতে হবে। এভাবে আর কতদিন লুকিয়ে রাখবে সে? নীরা অভিকের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিজেই অভিকের বুকে ঢলে পড়লো। ঘুমের ঘোরে তাকাতেই পারছেনা ও। অভিক নীরাকে জড়িয়ে ধরে নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বড্ড ক্লান্ত হয়ে যায় এই মেয়েটা।
.
বিকেলের দিকে নীরাকে নিয়ে শুভ্রর কবরে আসে অভিক। তাদের সাথে আসে ফাহাদ আর প্রীতি। নীরাকে সব সত্যি বলে দিয়েছে অভিক। সব শুনে নীরা অভিককে জড়িয়ে খুব কেঁদেছে। শুভ্রকে আর শেষ দেখা হলো না তার। নীরা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রর কবরের দিকে। প্রীতি ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছছে। ফাহাদ চুপ করে আছে গম্ভীর হয়ে। অভিকের ভেতরটা খা খা করছে। নীরা শুভ্রর কবরটা ছুঁয়ে দেখলো। একটা ভাইকে সে হারিয়ে ফেলল! দুনিয়া এতো নিষ্ঠুর কেন?
ওরা সবাই শুভ্রর কবর জেয়ারত করে। হঠাৎ অভিক খেয়াল করে একটা গাড়ি সেই কখন থেকে ওদের ফলো করছে। গাড়িটা আছে তো আছেই। সামনে থেকে নড়ছেই না। অভিক ফাহাদকে বলে নীরা আর প্রীতিকে নিয়ে চলে যেতে। নীরা অভিককে বলে সে যাবে না। তবুও অভিক নীরাকে জোর করে পাঠিয়ে দেয়।
ওরা যাওয়ার পর অভিক নিজের গাড়ি নিয়ে ওই গাড়িটার পেছনে আসে। গাড়িটি অভিককে আসতে দেখেই ওখান থেকে রাস্তায় উঠে পরে৷ এরপর শুরু হয় রেস। অভিক দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে। আর ওই গাড়িটাও দ্রুত এগুচ্ছে। অভিকের পাশ দিয়ে আরো একটি গাড়ি গেল। পিছনে আরও দুটো আসতে লাগলো। অভিক নিজের গাড়িকে নিয়ন্ত্রণে রাখে৷ সামনের গাড়িটাকে ওভারটেক করে ফেলল অভিক৷ একেবারে গাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ালো।
পিছনের সব গাড়ি একে একে থেমে গেল। গাড়ি থেকে অনেকগুলো কালো পোশাক পড়া লোক নেমে এলো। অভিকও নেমে গেল তার গাড়ি থেকে। ওরা সবাই মিলে অভিককে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে। অভিক শুধু ওদের এক নজর দেখতে থাকে।
.
নিজের গাড়ির উপর স্টাইল মেরে বসে আসে অভিক৷ ডান হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করছে সে। কপাল বেয়ে কয়েক ফোটা রক্ত গড়িয়ে পড়তে নিলেই বা হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে তা মুছে নেয় অভিক। মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। একসাথে সবগুলো লোক এক জায়গায় জড় হয়ে আছে। তবে অক্ষত নয়। অভিক আজ ওদের পুরো দমে মেরেছে। প্রথমে ওরা অভিককে আঘাত করলেও পরে ব্যর্থ হয়। অভিক নিজের পুরনো রুপ ধারণ করে ওদের এক এক করে মারতে থাকে। সবশেষে সবাইকে একত্রে জড় করে রাখে। সেই মুহুর্তে তাদের বস কল দিলে অভিক কন্ঠটা চেনার চেষ্টা করে। পরে নাম্বারটা নিয়ে ফোনটা ফেলে দেয়। অনেক অপরিচিত কন্ঠ লোকটার।
অভিক সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘তোরা কি জন্য আমাকে মারতে চাস আমি জানি না। তবে তোরা না বললেও তোদের বস কে আমি জেনেই ছাড়বো। নাম্বারটা নিয়ে গেলাম। পরবর্তীতে আমার সামনে আসার চেষ্টাও করবিনা।’
অভিক চোখে কালো সানগ্লাস লাগিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।
.
নীরা একা একা দরজা বন্ধ করে বসে আছে। ফাহাদরা চলে গেছে। নীরার খুব ভয় হচ্ছে। অভিক যে কখন আসবে। হঠাৎ দরজায় টোকা পড়তেই নীরা কেঁপে উঠে। নীরা কোনো কথা বলে না।
‘নীরা দরজা খোলো। আমি অভিক।’
অভিকের কন্ঠ শুনে নীরা দরজা খুলে দেয়। অভিককে আজ কেমন যেন লাগছে। অভিক নীরাকে এক নজর পর্জবেক্ষণ করে নেয়। তারপর ঝড়ের গতিতে নীরাকে কাছে টেনে নীরার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় সে। নীরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। অভিক নীরাকে আরও কাছে টেনে নিল। নীরা চোখ বন্ধ করে অভিকের ভালোবাসা অনুভব করছে। শক্ত করে অভিকের শার্ট খামছে ধরে নীরা।
আজ দুজন দুজনকে ভালোবাসা উজাড় করে দিচ্ছে। নীরার বেশ লজ্জা লাগছে। কিন্তু অভিক নীরাকে ছাড়তেই রাজি নয়। সে এক ঝটকায় নীরাকে কোলে তুলে নিল। বেডে শুইয়ে দিল নীরাকে। দরজা লক করে লাইটও অফ করে দিল। নীরা ভয়ে ঢোক গিলছে শুধু। আজ ও শেষ! অভিক নীরার পাশে শুতেই নীরা ধপ করে উঠে বসে। অভিক আবার তাকে ধরে শোয়ায়। নীরা আবার উঠে যায়। অভিক এবার নীরাকে বেডের সাথে চেপে ধরে ওর গলায় মুখ গুঁজে রয়। নীরা অভিককে ঝাপটে ধরে। কিছু কথা নাহয় গোপনেই থাক।
চলবে…