তুমি আমার অভিমান পর্ব ২৬

0
1120

#তুমি_আমার_অভিমান❤
|| পর্ব – ২৬ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

কেটে গেল এক সপ্তাহ। এ কয়েকদিনে ফায়াজ নীরার সামনে আসেনি। এই সুযোগে ম্যানেজার এর সাথে অনেক প্ল্যান করে রেখেছে নীরা। সঠিক সময়ের অপেক্ষায় তা কার্যকর করার জন্য। ফায়াজকে ফাঁদে ফেলতে হবে। আর সেটা যেভাবেই হোক। ফায়াজকে স্বীকার করতেই হবে যে সে ফায়াজ নয় সে অভিক।

অফিসের কাজ অর্ধেক শেষ করে নীরা উঠে যায়। শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা তার। মাথা ব্যথা ইদানীং প্রচন্ড বেড়ে যাচ্ছে। দুপুর হতেই ম্যানেজারকে বলে সে বেড়িয়ে যায়।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে নীরা। রোদের তাপে মাথা যেন যায় যায় অবস্থা। শীতের রোদ এতো কড়া হয় নাকি? ড্রাইভার আসতেই গাড়িতে সে উঠে বসে। ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

মাঝপথে নীরার গাড়ির সামনে অন্য একটা গাড়ি এসে পড়ে। ড্রাইভার ব্রেক কষতেই নীরা ঝুকে পড়ে সামনের দিকে। নীরা ড্রাইভারকে বলে,

‘কি হয়েছে?’

ড্রাইভার নীরাকে বলে,

‘ম্যাম, সামনে একটা গাড়ি এসে পড়েছে।’

ড্রাইভার নেমে সেই গাড়িটির সামনে যেতেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ফায়াজ। এদিকে ফায়াজকে দেখে নীরার চোখ কপালে উঠে যায়৷ সাথে সাথেই ম্যানেজারকে একটা মেসেজ দিয়ে রাখে নীরা। নীরা গাড়ি থেকে নেমে ফায়াজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ফায়াজ আজ মাস্কবিহীন। নীরার সামনে সিগারেট খাওয়া শুরু করে সে। নীরা নাক ছিটকায়।

‘সমস্যা কি আপনার? গাড়ি আটকিয়েছেন কেন?’

ফায়াজ সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে বলে,

‘আপনি দেখছি সব ভুলে যান। কনট্রাক্ট পেপার সাইন করেছেন মনে নেই? আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।’

‘আপনার বিরুদ্ধে আমি লিগ্যাল স্টেপ নিব মিস্টার ফায়াজ। আপনি নিজেকে কি মনে করেন? আপনি যা বলবেন তাই হবে?’

‘ফায়াজ যা চায় তা-ই হয় মিস উফফ স্যরি মিসেস নীরা চৌধুরী।’

নীরা মাথা ব্যথার জন্য ভালো করে তাকাতেই পারছেনা। হঠাৎ করেই কোত্থেকে যেন কয়েকজন গুন্ডা এসে নীরাকে নিয়ে টানাটানি করছে। নীরা চিৎকার করে ফায়াজকে বলছে।

‘আপনি এতো খারাপ? লোকদের দিয়ে আমাকে হেনস্তা করছেন?’

এদিকে ফায়াজ সিগারেট ফেলে দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এদের তো ফায়াজ চিনেই না। ফায়াজ তো একাই এসেছে। তাহলে এরা কারা?

গুন্ডাগুলো নীরাকে কয়েকটা চড় থাপ্পড় দিয়েছে। নীরা এতেই অজ্ঞান হয়ে গেছে। নীরার শরীর এমনিতেই দূর্বল ছিল৷ তারপর এ ধকল সে নিতে পারেনি। ফায়াজ নীরাকে দেখবে নাকি গুন্ডাগুলোকে দেখবে এটাই ভেবে পাচ্ছেনা। ফায়াজ আগে নীরাকে ধরে আগে ড্রাইভারকে বলে নীরাকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসাতে। ড্রাইভার নীরাকে নিয়ে যায়।

ফায়াজ গুন্ডাগুলোর উপর ক্ষেপে ওদের মারতে থাকে। তারপর নিজের রিভালবার বের করে ওদের দিকে ধরে। গুন্ডাগুলো রিভালবার দেখেই ভয়ে চুপসে যায়। তারপর এক দৌড়ে ওখান থেকে পালিয়ে যায়। ফায়াজ দুটো গুলিও করে ওদের।

গুন্ডাগুলো চলে যেতেই ফায়াজ নীরার কাছে আসে। গাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখে নীরা এখনো সেন্সলেস। ফায়াজ একটা পানির বোতল নিয়ে নীরার চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়। নীরা পিটপিট করে চোখ খুলে। মাথায় হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে। চোখের সামনে ফায়াজকে দেখে সে আরও চমকে যায়! নীরা দ্রুত উঠে যায়।

‘আপনি! আপনি আমার সাথে কি করেছেন? আমি এখানে কি করছি? আমিতো বাড়ি যাচ্ছিলাম।’

নীরার চোখে ভয় দেখে ফায়াজ বলে,

‘শান্ত হোন নীরা। আপনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। তাই ড্রাইভারকে দিয়ে আপনাকে গাড়ির ভিতরে নিয়ে আসি। কিছু গুন্ডা আপনার উপর হামলা করেছিল।’

‘ওই গুন্ডাগুলো আপনার। কি ভাবেন নিজেকে? আপনি আমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে বাজে কিছু করবেন আর আমি মেনে নিব?’

‘আমি কিছুই করিনি।’

‘ফায়াজ চৌধুরী পারেনা এমন কিছুই নেই।’

‘আমি ফায়াজ ন…’

চিৎকার দিয়ে কিছু একটা বলতে চেয়েছিল ফায়াজ। কিন্তু কথাটা সে শেষ করেনি। ওইটুকুতেই আটকে যায়। নীরা বলে,

‘আপনি ফায়াজ নন? তাহলে কে আপনি?’

‘আমি ফায়াজ।’

‘মিথ্যে কথা। আপনি ফায়াজ নন, আপনি অভিক।’

‘আমি ফায়াজ, ফায়াজ, ফায়াজ।’

নীরা নিজের শাড়ি পড়া কোমড় থেকে একটা ধারালো ছুরি বের করে। ফায়াজ শুধু তাকিয়ে দেখছে। নীরা ছুরিটা নিজের গলায় ধরে বসে।

‘আমি নিজেকে শেষ করে দিব। আমি আর নিজের কথাও ভাববো না। শুভ্রর কথাও ভাববো না। আমি আর বেঁচে থাকতে চাইনা।’

ফায়াজ ঢোক গিলে বলে।

‘কি করছেন এসব! ছুরিটা ফেলে দিন লেগে যাবে।’

‘আপনার কি তাতে? আমি মরে যাবো। এক্ষুণি শেষ করে দিব।’

‘নীরা প্লিজ এসব করবেন না।’

‘আপনি যদি আজ না স্বীকার করেন যে আপনি ফায়াজ নন, আপনি অভিক। তাহলে আমি সত্যিই এটা নিজের গলায় চালিয়ে দিব।’

‘আপনি কিন্তু পাগলামি করছেন। আমি অভিক নই, আমি ফায়াজ।’

‘নীরা মানুষ চিনতে ভুল করেনা মিস্টার বহুরূপী। আর নীরার জেদ কেমন তা আপনি ভালো করেই জানেন।’

‘আমি ফায়াজ। এর বাইরে আমার আর কোনো পরিচয় নেই। আপনি থাকুন এখানে আমি যাচ্ছি।’

ফায়াজ চলে যেতে নিলেই নীরা নিজের হাতে ছুরি বসিয়ে দেয়। ফায়াজ পিছনে তাকিয়ে দেখে নীরার হাত থেকে কলকল করে রক্ত পড়ছে।

‘পাগল হয়ে গেছেন আপনি? কি করলেন এটা?’

ফায়াজ মীরার হাত চেপে ধরে। নীরা রেগে বলে,

‘ছোবেন না আমায়। আমায় শুধু অভিকই ছুঁতে পারবে। আর কেউ না। আমি গলায় চালিয়ে দিব ছুরিটা। আপনি স্বীকার করবেন কিনা?’

ফায়াজ রক্তচক্ষু নিয়ে নীরার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন এক্ষুণি নীরাকে খেয়ে ফেলবে সে। কষিয়ে একটা থাপ্পড় দেয় নীরার গালে। থাপ্পড়টা এতোই তীব্র যে নীরার হাত থেকে ছুরিটা পড়ে যায়। নীরা খুব ব্যথা পায়। চোখ দিয়ে টলমল করে পানি পড়তে থাকে। ফায়াজ নীরার হাতটা ধরে টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছে নেয়। তারপর নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে নীরার হাতে বেঁধে দেয়। নীরা চুপচাপ সব দেখে যাচ্ছে। ফায়াজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

‘কি শুনতে চাও তুমি? আমি ফায়াজ নই অভিক তাইতো? তাহলে শুনো। আমি অভিক। তোমার অভিক।’

নীরা কৌতুহল নিয়ে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘এখন নিশ্চয়ই এটা বলবে যে কেন আমি ফায়াজ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি? কেন তোমাকে একা রেখে চলে গিয়েছি? তবে শুনো। শুভ্রর খুনিকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই এই প্ল্যান করি। প্রথমে নিজে হারিয়ে যাই। তারপর গড়তে থাকি নিজের একার সাম্রাজ্য। খুন করতে থাকি খুনিদের। শেষমেশ শুভ্রর খুনিকেও শেষ করে দেই। ওর অবস্থা এতোটা খারাপ করেছি যে, পশুপাখিও ওর দিকে ফিরে তাকাবে না। ভেবেছিলাম আরো কয়েকমাস এভাবে ফায়াজ হয়ে থাকবো। কিন্তু তুমি সামনে চলে এলে। নিজেকে দূরে রেখেছি বলে এটা ভেবো না যে আমি তোমার খোঁজ নেইনি। প্রতিদিন নিয়েছি। খুব খুশি হয়েছি যখন তুমি শক্ত হয়ে আমার বিজনেস এর হাল ধরেছ। আমার বিজনেসকে এগিয়ে নিয়ে গেছ। তোমার উপর ভরসা রেখে আমি আর তোমার সামনে আসিনি।’

‘ব্যাস। অনেক বলেছেন। সরুন সামনে থেকে। আমি যাবো। আমাকে ঠকানোর শাস্তি পেতেই হবে আপনাকে।’

নীরা অভিককে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। একটা অটো ধরে বাসায় চলে যায়। অভিক শুধু নীরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here