অদ্ভুত_অনুভূতি পার্ট_৬
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
হটাৎ জানলা দিয়ে অনেক বাতাস আসছে। নিবিড় উঠে জানালা বন্ধ করতে গেলে দেখে কে মায়া কোথাও একটা যাচ্ছে ।
নিবিড় অবাক হয়ে দেখছে এত রাতে মায়া কোথায় যাচ্ছে তাও কাউকে না বলে। নিবিড় ও মায়ার পিছন পিছন যেতে গেলে মায়া হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। নিবিড় হাজার খুঁজে ও পায় না ।
অনেকক্ষণ খোজাখোজি করে না পেয়ে নিবিড় মায়ার ঘরে যায় । ঘরের দরজা খুলতেই নিবিড় দেখে মায়া শুয়ে আছে। নিবিড় কোনো কথা না ভেবেই মায়া কে টেনে তুলে ।
মায়া ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে
‘” কি হইছে নিবিড় প্লিজ ঘুমাতে দাও
‘” তুমি একটু আগে কোথায় ছিলে?
‘” কোথায় মানে আমি তো এখানে ছিলাম ঘুমাচ্ছিলাম
‘” মায়া তুমি কি লুকাচ্ছ আমাদের থেকে
মায়া হেসে উত্তর দেয়
‘” আজব কি লুকাবো তোমার থেকে পাগল হলে নাকি
” না আমি ঠিক আছি কিন্ত তুমি কিছু একটা লোকাচ্ছ।
‘” এই প্রশ্ন যদি আমি তোমাকে করি তুমি কি উত্তর দিবে
মায়ার কথায় নিবিড় কিছুটা চমকে গেলো। নিবিড় আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
এদিকে মায়া মুচকি হাসি দিয়ে শুয়ে পড়ে।
সারারাত নিবিড় মায়ার কথা ভেবে ভেবে কাটিয়ে দিলো। যতই হোক দায়িত্ব নিয়েছে মায়াকে সুস্থ করবে আর মায়ার আব্বু নিবিড় কে নিজের ছেলের মত ভালবাসে সেটা কিছুতেই নিবিড় নষ্ট করতে চায় না কিন্ত মায়ার কালকের ব্যাপার কিছুতেই নিবিড়ের মাথায় ঢুকছে না ।
সকালে মায়া ঘুম থেকে উঠে নিবিড়ের রুমে যায় । নিবিড় এখনও টেবিলের উপর বসে আছে
মায়া আস্তে আস্তে নিবিড়ের রুমে গিয়ে বসে নিবিড় চিন্তায় এত মগ্ন যে মায়া আসছে সেটা বুঝতে পারেনি ।
মায়া একটু কাশি দিতেই নিবিড়ের ভাবনার ছেদ ঘটে। নিবিড় মায়ার দিকে তাকিয়ে অবাক ।
অন্যদিনের তুলনায় মায়া আজ অনেক হাসিখুশি কিন্তু চোখ ফোলা। বুঝা যাচ্ছে সারারাত কেঁদেছে। নিবিড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
‘” এত সকালে উঠলে যে
‘” সকাল কোথায় ফজরের আজান দিচ্ছে কখন নামাজ পড়ে একটা গল্পের বই পড়ছি তারপর আসলাম
‘” ওহ
‘” তুমি কি সারারাত এখানে বসে ছিলে
‘” হা না মানে হা
‘” আচ্ছা বাদ দাও তুমি তো কফি খাবে না আমার মাথা ব্যাথা করছে আমি কফি খাবো
মায়া চলে যেতেই নিবিড় ডাক দেয়
‘” মায়া
মায়া দাড়িয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে
‘” নিজেকে এভাবে কষ্ট দিও না কোনো কিছু তো আমাদের হাতে থাকে না তাই না
‘” হা কিন্ত আমাদের কাজের দায় ভার ত আমাদের তাই না যা হইছে তাতে কোনো না কোনো ভাবে আমি দায়ী
আর নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কথা বলছো তুমি পাশে থাকলে চলবে। এক বার হারিয়েছি দ্বিতীয় বার আর হারাতে চাই না
কথাটা বলে মায়া চলে গেলো। নিবিড় প্রতিবারের মত এবার ও কিছু বললো না । আজকাল মায়া কে নিয়ে খুব চিন্তা হয় কেমন ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলে যার কিছু বুঝা যায় না
নিবিড় হতাশ হয়ে ছাদে গেলো। প্রকৃতির মাঝে থাকলে হয়তো কষ্ট ত একটু হলেও কমবে । নিবিড় ছাদে হাঁটছে ।
এদিকে মায়া কফি খাচ্ছে আর পুরনো বই দেখছে তখনই একটা অ্যালবাম বেরিয়ে আসলো ।
মায়া কফির মগ রেখে অ্যালবাম টা খুলে দেখতে লাগলো। মায়ার ছোট বেলা থেকে শুরু করে সব ছবি এখানে
নিবিড় এর সাথে কাটানো প্রত্যেক টা মুহিতের ছবি এখানে । মায়া আনমনে হেসে দেয়। কি সুন্দর ছিল সেই সব দিন । এক সাথে ভার্সিটিতে যাওয়া ,ক্যান্টিনে আড্ডা দেওয়া গান শুনা
‘” নিবিড়ের কি সেই সব দিন গুলোর কথা মনে আছে
মায়া আর না ভেবে নিবিড়ের রুমে যায় কিন্ত নিবিড় নেই ।
‘” কোথায় গেলো ছাদে যায়নি তো
মায়া ছাদে গিয়ে দেখে নিবিড় হাঁটছে মায়া দোলনায় বসতে বসতে বলে
‘” আগে তো খুব চিন্তিত হলে ছাদে হাটাহাটি করতে তাহলে এখন কিসের চিন্তা হুম
‘” না কিছু না
‘” তোমার মুড ভালো করার উপায় আমার কাছে আছে
নিবিড় ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে । মায়া হেসে বলে
‘” এখানে আসো তারপর বলছি
মায়ার কথা মত নিবিড় মায়ার পাশে বসে। মায়া অ্যালবাম টা এগিয়ে দেয় । নিবিড় হেসে বলে
‘” এটা কোথায় পেলে ?
‘” পুরনো বই এর ভিতর মনে আছে এই ছবির কথা
‘” তুমি একদিন কাদতে কাদতে চোখের পানি নাকের পানি এক করেছিলে তখন তুলেছিলাম
‘” মোটেও না (গাল ফুলিয়ে)
“‘ জি হা
দুইজন আরো ছবি নিয়ে কথা বলছে আর হাসছে ওদের সাথে মায়ার আব্বু ও যোগ দিলো । হাসতে হাসতে মায়া বলে উঠে
”’ আমি আর রাত মিলে একবার তোমাকে মেয়ে বানিয়ে ছিলাম সেই পিক তুমি নষ্ট করেছিলে নাহলে এখানে থাকতো
” আমার পিচ্চি বোনের মাথা তো তুমি নষ্ট করেছিলে সেদিন এর পর থেকে ও প্রায় ঘুমের মধ্যে সাজিয়ে দিত
‘” দেখতে হবে না কার বোন
” হ্ন আয়ছে দুই ঢং
‘” ওই একদম উল্টা পাল্টা বলবে না
মায়ার আব্বু দুইজনের কান্ড দেখছে । মায়া রেগে নিচে যায় মায়ার আব্বু ও হাসতে হাসতে যায় আজ অনেক দিন পর মায়া কে সেই আগেই মায়ার মত লাগছে ।
নিবিড় এখনও ছাদে বসে রাতের পিক দেখছে ।
‘” আজ যদি তুই থাকটিস বনু তাহলে অনেক মজা হতো খুব মিস করি তোর পাগলামি গুলোকে আমাকে মাপ করে দে আমি তোকে বাঁচাতে পারলাম না । তোর ভাইয়া তোর জীবন বাঁচাতে পারলো না
কথাটা বলে নিবিড় কেঁদে দেয়। দরজার আড়াল থেকে মায়া সব দেখে নিজেও কেঁদে দেয়।
‘” রাত তোর আপুনি তোর খুনি দের শাস্তি দেবে । নিবিড় কিছু না করলে ও আমি কাউকে ছাড়বো না
কথাটা বলে মায়া কাউকে ফোন করে ।
দুপুরের দিকে নিবিড় বের হতেই মায়া ওর বেরিয়ে পড়ে।
একটা পুরনো বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে মায়া । চোখে তার পানি
এক পা দুই পা করে মায়া ভিতরে যায় । দোজরায় তালা দিয়া তাই মায়া জানলা ভেংগে ভিতরে যায়। ভিতরটা কি সুন্দর গুছানো মনে হচ্ছে এখনও মানুষ থাকে
কিন্ত এখানে এক বছর ধরে কোনো মানুষ আসে না । মায়া সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে একটা রুমে যায় । রুমের ভিতর একটা ছেলে আর একটা মেয়ের হাস্যোজ্বল ছবি । মায়া ছবির কাছে গিয়ে হাত বুলায় ।
ঘরটা ভালো করে দেখছে বড়ো একটা বেড তার কিছুটা পাশে ডেসিন টেবিল। জিনিস গুলো এখনও সাজানো মনে হচ্ছে একটু আগে কেউ সাজিয়ে গেছে ।
‘” বরাবরই তুই খুব গুছালো ছিলি কোনো কিছু এলোমেলো তোর পছন্দ না কিন্ত তোর জীবন টাই এলোমেলো হয়ে গেলো আমাকে মাপ করে দে বোন
মায়া টেবিলের উপর থেকে একটা ছবি নিয়ে কাদচে ।
বেশ কিছুক্ষণ পর মায়া অন্য আর একটা রুমে যায় সেটা ও একই ভাবে গুছানো। রুমটার কালার থেকে শুরু করে সব কিছু খুব সুন্দর ।
মায়া টেবিলের উপরে কিছু বই পেলো তার মধে একটা ডাইরি
দাইরিতার উপরে লেখা #অদ্ভুত_অনুভূতি
মায়া প্রথম পৃষ্ঠা পড়তে শুরু করে তখনই পিছন থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে উঠে ।
‘” তাহলে তুমি সব যেনো গেছো ?
মায়া কিছুটা ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকায়।
“‘ নির্ঝর কে কেনো মারছো?
মায়ার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় কি করবে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না । ওর হাত থেকে ফোন টা পড়ে যায়
চলবে