অদ্ভুত_অনুভূতি পার্ট_৫

0
1318

অদ্ভুত_অনুভূতি পার্ট_৫
#নুসরাত_জাহান_অংকুর

নির্ঝরের সাথে মায়ার সম্পর্ক ছিল অন্যরকম। নির্ঝর মায়া বলতে পাগল ছিল আর মায়া নির্ঝর বলতে । মায়ার সাথে নির্ঝরের বিয়ে ঠিক হবার পর মায়া খুব ভয় পেত যদি নির্ঝর অন্য স্বামী দের মত ওর উপর অত্যাচার করে কিন্ত মায়ার ধারণা ভুল প্রমাণ করে । নির্ঝর মায়াকে এতটাই ভালোবাসত যে মায়া নির্ঝর ছাড়া অচল ছিল কিন্ত সব সময় কি সুখ কপালে থাকে

সুখ দুঃখ নিয়েই তো জীবন ।

মায়া এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো

“‘ নিয়তির কাছে সবাই হেরে যায় আজ তোমার একটা ভুল আমাদের জীবন টা বদলে দিলো । ভুলটা যদি না হতো তাহলে গল্পটা অন্য রকম হতো

তুমি আমি আর আমাদের সন্তান । খুব কি ক্ষতি হতো

কথাটা বলতে বলতে মায়া ডুকরে কেঁদে উঠে। নির্ঝর কে যে মায়া নিজের জীবন এর থেকে বেশী ভালোবাসত ।

মায়া কিছুক্ষণ ওভাবে কাদলো। তারপর উঠে নিচে গিয়ে দেখে সবার খাওয়া প্রায় শেষ ।

রাতে মায়া ওর আব্বুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে । আর মায়ার আব্বু মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।

নিরবতা ভেংগে মায়া বলে

‘” আব্বু আমি যদি কখনো ভুল করি তখন কি তোমরা আমায় মাপ করবে

মেয়ের প্রশ্নে মায়ার আব্বু কিছুটা অবাক হলেন। তারপর ও বললেন

‘” আমার মায়া কখনো ভুল করতে পারে না কারণ আমি আমার মেয়েকে তেমন শিক্ষা দেয়নি আর যদি ও ভুল করে তাহলে ভুলের উপর নির্ভর করে মাপ করবো

মায়া কিছুটা নড়ে চড়ে বসলো। তখনই নিবিড় আসলো

‘” আংকেল নির্ঝর এর আব্বুকে আমি অনেক বুঝিয়েছি কিন্ত তিনি যেতে নারাজ আর আমার মনে হয় উনাকে একা রাখা ঠিক হবে না আপনি যদি একটু বলতেন

“‘ হুম আমি ওকে বলছি তোমরা সব গুছিয়ে নাও

‘” জি

মায়ার আব্বু উঠে যেতেই নিবিড় মায়ার পাশে বসে

‘” এখনও মন খারাপ

মায়া নিশ্বাস নিয়ে বললো

‘” মন থাকলে ত খারাপ হবে সেটা তো নির্ঝরের সাথে কবর দেওয়া হয়ে গেছে

‘” মায়া তুমি কি জানো তুমি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছো

মায়া ভ্রু কুচকে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে । নিবিড় একটু কেশে বলে

‘” টা নয় তো কি আগে তুমি নামাজ পড়তে কুরআন পড়তে ।আজ এত দিন হয়ে গেল ওসব কিছু পড়ছো না কেনো

নিবিড়ের কথার বিনিময়ে মায়া শুধু মুচকি হাসি দিল । নিবিড় ও আর কিছু বলল না

দুইজনের মধ্যে কিছুক্ষণ নিরবতা । মায়া বলে

‘” নিবিড় তুমি আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না তো

নিবিড় কি বলবে বুঝতে পারছে না তার হাতে তো কিছু নেই । নিবিড় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে

‘” মায়া আমি যেখানে থাকি না কেন এটা মনে রাখবে আমি সব সময় তোমার সাথে আছি তোমার উপর আমার সব সময় নজর থাকবে

‘” না আমি অত কিছু জানিনা আমি জানি তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যাবে না আম্মু ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে নির্ঝর ও ।এখন আমি কোনো মূল্যে তোমাকে হারাতে চাই না কিছুতেই না

‘” মায়া জন্ম মৃত্যু বিয়ে এসব কারোর হাতে থাকেনা কেউ চায় না তার আপন জন তাকে ছেড়ে চলে যাক কিন্ত তাকে যেতেই হবে

প্রকৃতির নিয়ম বলতে ত কিছু আছে । আর এই সব ত আল্লাহ বানিয়েছে

তাই তুমি ওসব নিয়ে না ভেবে এখন আমার পুচক কে নিয়ে ভাবো। ওর কোনো কিছু হলে কিন্ত আমি তোমাকে অনেক বকবো

মায়া এসে দেয়।

‘” ও তার মানে এখন আমি কেউ না সব এখন এই পুচকো (গাল ফুলিয়ে)

‘” জি তুমি তো খুব হিংসুটে শুনে রাখ আমার মাম্মাম কে নিয়ে কোনো হিংসা না

‘” তোমায় কি বলে রাখছে ছেলে হবে না মেয়ে হবে

‘” মেয়েই হবে দেখে নিও আর মেয়ের নাম কিন্ত

‘” রাত হবে !! মেয়ে হলে রাত নাম রাখবো এক রাত মারা গেছে তো কি হইছে আরেক রাত আসবে

আর আমি জানি এই রাত আগের রাতের মত হাসি খুশি আর চঞ্চল হবে

নিবিড় এর চোখে পানি জমে আছে তাই তাড়াতাড়ি বলে

‘” তুমি ঘুমাও আমি আসছি কাল আবার বের হতে হবে

মায়া বুঝতে পারলো নিবিড় এর কষ্ট হচ্ছে । কিন্ত মায়া চাইলে ও নিবিড়ের কষ্ট দুর করতে পারবে না । নিবিড় চলে যেতেই মায়া রাত নিবিড় আর ওর পিক দেখতে থাকে

‘” আর কিছু সময় যদি তোর সাথে থাকতে পারতাম খুব মিস করি তোকে । তোর দুষ্টুমি তোর আপুনি বলে ডাকা সব কিছু মিস করি রাত

মায়া রাতের পিক দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে

সকালে সবাই রেডী হয়ে আছে মায়া নির্ঝরের একটা ছবি ব্যাগ এ নিয়ে নিচে নামে ।

মায়া নির্ঝরের আব্বু কে সালাম করে বাড়িটা একবার ভালো করে দেখে গাড়িতে উঠলো। নির্ঝরের আব্বু কে হাজার বুঝানোর পর রাজি হলো না তাই মায়া নিবিড় আর মায়ার আব্বুকে যেতে হলো ।

৪ঘণ্টা পর ওরা ঢাকা এসে পৌঁছাল ।

মায়া ঘরে ঢুকতেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় । নিবিড় ওর আর মায়ার জিনিস পত্র রেখে ফ্রেশ হয়ে নেয়।

মায়ার চোখে এখন রাজ্যের ঘুম। এই অবস্থায় বেশি জার্নি করা শরীরের জন্য ঠিক না । মায়ার চোখ বুজতে যাবে তখনই নিবিড় আসে

‘” মায়া রেডী হয়ে নাও আমাদের বের হতে হবে

‘” মানে কি এখন আবার কোথায় যাবো

“‘ ডক্টরের অ্যাপোমেন্ট আছে ৫তাই এখন বের হতে হবে নাহলে সিট পাবো না

আমি খাবার দিতে বলছি খেয়ে বের হবো।

মায়ার আর কি রেডী হতে হলো। রেডী হয়ে খেয়ে বেরিয়ে পড়লো

আজ অনেক দিন পর মায়া নিজের শহরে আসলো। বিয়ের পর তো নির্ঝর মায়া কে নিয়ে চলে গিয়েছিল আর কখনো আসতে দেয়নি । কারোর সাথে মায়ার এই এক বছরে যোগাযোগ হয়নি এমন কি নিবিড়ের সাথে ও না । এক মাস আগে নিবিড় কোথা থেকে খবর পেয়ে মায়ার সাথে দেখা করতে যায় ।

অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর মায়ার নাম ডাকে । মায়া আর নিবিড় যায় ।

ডক্টর মায়া কে চেকআপ করে কিছুটা চিন্তিত । মায়া ওর আব্বুর সাথে বাইরে বসে আছে । নিবিড় ডক্টরের সামনে

অনেকক্ষণ যাবত উনি কিছু বলছে না নিবিড় অনেকটা বিরক্ত।

‘” ডক্টর কি হইছে একটু বলবেন ?

‘” মায়া মেন্টালি অনেক অসুস্থ । ওর বার বার নির্ঝর কে দেখা সব টা ওর ভ্রম । নির্ঝর কে মায়া অনেকটা ভালোবাসত কিন্ত হটাৎ এমন কিছু ও জেনে গেছে যেটা ওর জানার কথা না আর নির্ঝরের এভাবে হটাৎ চলে যাওয়া ওর মাথায় অনেকটা ইফেক্ট ফেলছে। এখন ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে

আমি মায়া কে বস করে অনেক কিছু জানতে চেয়েছি ওর শুধু একটা কথা অন্যায় কারির কোনো ক্ষমা নেই সবাই কে সবার পাপের শাস্তি পেতে হবে

ডক্টরের কথা শুনে নিবিড় অনেক চিন্তিত এখন মায়া কে কি করে স্বাভাবিক জীবনে আনবে

‘” ডক্টর এখন কি করবো ?

‘” ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করুন আর এটা জানার চেষ্টা করুন যে ও কি এমন জেনেছে যার জন্য ওর মাথায় এত চাপ ।আমি ওষুধ দিছি সেইগুলো ওকে খাওয়াতে হবে । ওকে সব সময় চোখে চোখে রাখতে হবে

‘” ওকে ডক্টর

নিবিড় আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে আসে। নিবিড় কে দেখে মায়া বলে

‘” আচ্ছা ডক্টর আমার প্রেগন্যানসি নিয়ে না চেক করে মাথা কেনো স্ক্রীন করলো

‘” ডক্টর তুমি নাকি সে

‘” রেগে যাওয়ার মত কি বললাম । আচ্ছা আইস ক্রিম খাবো

” আংকেল আপনি ওকে নিয়ে যান আমি ওষুধ নিয়ে আসছি

‘” আচ্ছা ঠিক আছে

নিবিড় ওষুধ আনতে যায় । আর মায়া আর ওর আব্বু যাচ্ছে

রাস্তায় হটাৎ কেউ মায়ার ঘাড়ে হাত দেয় মায়া পিছনে তাকিয়ে দেখে আবির (নির্ঝরের বন্ধু)

‘” আরে মায়া কেমন আছো ?

‘” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি কেমন আছেন ?

আবির কিছু বলতে যাবে তখন ওখানে নিবিড় আসে। নিবিড় কে দেখে আবির কেমন একটা করছে

‘” কি হলো ভাইয়া ?

‘” আমি পরে কথা বলছি

কথাটা বলে আবির আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে চলে যায় ।

‘” কিহলো উনার ?

” হয়তো কোনো পাপের কথা মনে পড়ে গেছে

কথাটা বলে নিবিড় একটা মিষ্টি হাসি দিল। মায়া আর বেশি না ভেবে গাড়িতে উঠলো।

রাতে নিবিড় শুয়ে শুয়ে ভাবছি কি করে মায়া কে সুস্থ করবে

চলবে

(গল্পটা লিখতে গেলে আমার অনেকটা ভেবে লিখতে হয়। কোনো গল্প লিখার সময় এত ভাবতে হয়নি আর গল্পটা যেহেতু কাল্পনিক তাই একটু অন্য রকম হবে । গল্পটা ২,১দিনের মধ্যে শেষ করে দেবো )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here