অদ্ভুত_অনুভূতি পার্ট_২
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
নিবিড় মায়াকে এভাবে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না দৌড়ে গিয়ে মায়াকে জড়িয়ে ধরে কিন্ত মায়া এক কথা বলেই যাচ্ছে আমাকে মেরো না আমাকে মেরো না। নিবিড় বুঝতে পারলো মায়া ভয় পেয়েছে নিবিড় মায়ার মুখে হাত দিয়ে বলে
“‘ লুক মায়া আমি তোমার নিবিড় ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি আছি তো কিছু হবে না
নিবিড়ের কথায় যেনো মায়া একটু ভরসা পেলো নিবিড় কে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাদতে লাগলো
‘” নিবিড় ও এসেছিল আমাকে ওর সাথে নিয়ে যেতে এসেছিল কাউকে ছাড়বে না ও
মায়ার কথায় নিবিড় অবাক হয়ে রইলো
‘” মায়া কে এসেছিল কাকে দেখেছো তুমি? আমায় বলো?
” ও কাউকে ছাড়বে না ওর করা প্রমিজ ও রাখবেই আমাকে নিয়ে যাবে ওর সাথে হা নিয়ে যাবে
‘” কে বলো আমাকে কে নিয়ে যাবে ?
‘” নি নি নি নির্ঝর আমাকে নিতে এসেছে ও প্রমিজ করেছিলো আমাকে ছেড়ে যাবে না যেখানে যাবে আমাকে নিয়ে যাবে ও নিজের করা প্রমিজ রাখতে এসেছে
‘” মায়া লুক আট মি নির্ঝর আর বেঁচে নেই তোমার মনের ভুল এসব তুমি আমার সাথে আসো কিছু নেই
‘” না আমি বলছি ও এসেছিল আমাকে নিতে কাউকে ছাড়বে না
“‘ মায়া চুপ আর একটা কথা না নির্ঝর মারা গেছে তুমি ওকে অনেক ভালোবাসতে তাই তোমার মনে হচ্ছে ও আছে
” নিবিড় আমার কথা বিশ্বাস করো আমি ওকে দেখেছি ও এসেছিল
‘” আমি বিশ্বাস করছি এখন অনেক রাত হইছে আসো ঘুমাবে
‘” না আমি ঘুমাবো না ও আবার আসবে
‘” কেউ আসবে না আমি আছি তো আমার সাথে চলো
নিবিড় মায়াকে ধরে খাটে শুয়ে দেয়।মায়া নিবিড় এর কোলে মাথা রেখে আর নিবিড় মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে
“‘ মায়া তুমি একদম রাত এর মতো। রাত ও ভয় পেলে ওর মাথায় আমার হাত বুলিয়ে দেওয়া লাগতো
মায়া মাথা তুলে বলে
‘” রাত কে তোমার খুব মনে পড়ে ?
নিবিড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
“‘ এই দুনিয়াতে ত ও ছাড়া আমার কেউ ছিল না কিন্ত ভাগ্য আমার কাছ থেকে সব কেড়ে নিছে
“‘ আমি আছি তো তোমার সাথে আমি কখনো তোমায় একা ফেলে যাবো না
মায়ার কথায় নিবিড় একটা মুচকি হাসি দিল। নিবিড় মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মায়া ঘুমাচ্ছে ।
দরজার আড়াল থেকে মায়ার আব্বু নিজের চোখের পানি মুছে ঘর থেকে চলে যায় ।
মায়া ঘুমিয়ে পড়ে আর নিবিড় অতীতের কথা ভাবতে লাগে। অতীত সবার জীবনে একটা কালো অধ্যায় যা কখনো মুছা যায় না আর না ভুলে থাকা যায় ।
মায়া আর নিবিড় এর পরিচয় একটা পার্কে থেকে হয়। দুইজন খুব ছোট মায়া যেই দোলনায় বসতো সেখানে আর কাউকে বসতে দিত না কিন্ত একদিন নিবিড় এসে দোলনায় বসে আর মায়া উঠতে বলে কিন্ত নিবিড় উঠে না । মায়া ঝগড়া করে না পেরে কান্না করে দেয় বেচারা নিবিড় কি করবে ভেবে না পেয়ে পকেট থেকে চকোলেট দেয় মায়া তো খুব খুশি । সেদিন এর পর থেকে নিবিড় আর মায়ার রোজ দেখা হতো ওই পার্কে এক সময় ওদের মধে খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয় ।
মায়ার আম্মু নেই শুধু আব্বু আছে । ছোট থাকতে মায়া কে দুনিয়াতে আনতে গিয়ে মায়ার আম্মু মারা যায় । মায়ার আব্বু নিজের মেয়েকে সব ভালোবাসা দিয়ে বড় করছে কখনো কোনো কমতি দেয়নি । কিন্ত মায়ের ভালোবাসা তো কেউ পরুণ করতে পারে না । নিবিড়ের আব্বু আম্মু কার অ্যাকসিডেন্ট এ মারা যায় । নিবিড়ের আপন বলতে ওর দাদু আর ওর ছোট বোন রাত।
নিবিড় একদিন ওর দাদুর সাথে বেড়াতে গিয়েছিলেন তখন মায়াকে একটা স্কুল থেকে বের হতে দেখে নিবিড় ছুটে মায়ার কাছে যায়
“‘ হাই মায়া তুমি এখানে ?
“‘ হা লুডু খেলতে আসছি তুমি এখানে কেনো ?
“‘ দাদুর সাথে বের হয়েছিলাম কিন্ত স্কুল ড্রেস পড়ে কেউ লুডু খেলতে আসে ?
“‘ বুঝতে যখন পারছ তখন কেনো প্রশ্ন করছো (বিরক্তি নিয়ে)
“‘ কি হইছে মায়া তুমি রেগে আছো কেনো ?
“‘ আমাকে ওই ছেলে মারছে আমি পাপা কে বলে দেবো
কথাটা বলে মায়া চলে যায় নিবিড় এর যেনো খুব কষ্ট হইছিলো সেদিন নিবিড় ওর দাদুকে বলে মায়ার স্কুলে ভর্তি হয় আর যে মায়া কে মেরেছিল তাকে ইচ্ছা মত মারে ।
সেদিন মায়া নিবিড় জড়িয়ে সে কি খুশি। তারপর থেকে মায়া আর নিবিড় কে সবাই মায়াবীর নামে চিন্ত। যেখানে মায়া সেখানে নিবিড় ।
আস্তে আস্তে ওরা বড়ো হয় স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে সব তাতে মায়াবীর এক সাথে থাকতো । মায়াকে নিবিড় ভার্সিটিতে নিয়ে যেত আর নিয়ে আসতো। মায়ার চোখে পানি পড়ার আগেই নিবিড় মুছে দিত কখনো মায়া কে কষ্ট পেতে দেয়নি । মায়া ও নিবিড় বলতে পাগল ছিল । ওদের সম্পর্ক ভালই চলছিল । যাকে বলে বেস্টফ্রেন্ড ফরেভার । মায়া আর নিবিড়ের পরিবার ও ওদের এক বাড়িতে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবত। বয়সের সাথে সাথে মায়ার প্রতি নিবিড়ের এক #অদ্ভুত_অনুভূতি তৈরি হয় যে অনুভুতির কোনো নাম নেই।
একদিন রাত হটাৎ ফোন করে নিবিড় কে । নিবিড় ফোনটা ধরতেই ওর মাথা ঘুরতে লাগে।
মায়া নিবিড় এর পাশে আসতেই নিবিড় বলে
‘” আমাকে যেতে হবে
নিবিড় দৌড়াতে লাগে মায়া ও ওর পিছনে যেতে লাগে । নিবিড় গাড়ি তে উঠতে গেলে মায়া ও উঠে বসে ।
নিবিড় কোনো দিন না তাকিয়ে সোজা বাসায় যায় । সেখানে গিয়ে দেখে রাত ওর দাদুর পাশে বসে কাদচে
নিবিড় দৌড়ে ওর দাদুর কাছে গিয়ে বলতে লাগে
‘” দাদু উঠ না দেখো তোমার নিবিড় এসে গেছে উঠ কেনো এমন করছো দেখো বনু কাদঁছে তুমি উঠ না উঠ এবার কিন্ত আমি রাগ করবো উঠ
মায়ার চোখে ও পানি চলে আসে। নিবিড় পাগল এর মত ওর দাদুকে ডেকে যাচ্ছে কিন্ত ওর দাদুর উঠার নাম নেই কি করে উঠবে সে তো চলে গেছে না ফেরার দেশে।
মায়া ধির পায়ে নিবিড়ের কাছে যায় ওর কাধে হাত রাখতেই নিবিড় বলে
‘” দাদু দেখো মায়া এসেছে তুমি না মায়া কে খুব ভালোবাসো উঠ না দাদু । এই মায়া দাদুকে উঠতে বলো দেখো না উঠছে না আমার কথা শুনবে না তুমি একবার বলো
মায়া নিবিড় কে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিচ্ছে । কিন্ত নিবিড় ওর দাদুকে ডেকেই যাচ্ছে ।
সবাই অনেক বুঝাচ্ছে কিন্ত নিবিড় এর কানে কোনো কথা যাচ্ছে না নিবিড় একবার ওর বন এর দিকে তাকিয়ে দেখে তার মুখ লাল হয়ে গেছে । নিবিড় ওর বোনের জন্য হলেও নিজেকে সামলাচ্ছে ।
নিবিড়ের দাদুর শেষ কাজ নিবিড় নিজে হাতে করেছে। সব কাজে সে চুপ ছিল যেনো কেউ ওর মুখে আটা লাগিয়ে দিয়েছে ।
রাতের দিকে নিবিড় ওর বোনকে ঘুম পাড়িয়ে দাদুর রুমে বসে আছে । তখন মায়া আসে
মায়া নিবিড়ের কাধে হাত দিতেই নিবিড় মায়া কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
মায়া অবাক হয়ে রইছে যে নিবিড় এতদিন মায়া যে শক্ত থাকতে বলতো সে আজ এমন বাচ্চাদের মত কাদচে । পরিস্থিতি মানুষকে কি না বানিয়ে দেয় ।
সেদিন মায়া নিবিড় কে চুপ করতে বলেনি নিবিড় কেঁদেই গেছে হয়তো সব কষ্ট এই কান্নার মধে বেরিয়ে আসবে।
সেদিন এর পর থেকে নিবিড় চুপ করে থাকতে মায়া অনেক কষ্টে নিবিড় কে আবার আগের মত করেছিল কিন্ত মধ্য রাতে নিবিড়ের আবার সেই কষ্ট দেখা দিত তখন নিবিড় মায়া কে ফোন করে কাদত আর মায়া ও ওর বেস্টফ্রেন্ড কে সামলাত।
এভাবে ওদের দিন চলতে থাকে নিবিড় পড়ালেখার পাশাপাশি দাদুর বিজনেস সামলাত।
মায়া একদিন নিবিড় কে নির্ঝরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। নির্ঝর এর আব্বু আর মায়ার আব্বু দুই বন্ধু । নির্ঝর আর মায়ার বিয়ে ছোট থেকে ঠিক মায়া জানত না কিছু দিন আগে জানতে পারে আর তখন থেকে নির্ঝরের সাথে কথা হয়।
ওদের বিয়ে ও ঠিক হয় । মায়ার বিয়েতে নিবিড় সব কাজ নিজে হাতে করে ।
কিন্তু বিয়ের রাতে হঠাৎ একটা অ্যাকসিডেন্ট এ সব শেষ।
অতীত মনে পড়তেই নিবিড়ের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে । নিবিড় তাকিয়ে দেখে মায়া ঘুমিয়ে গেছে । নিবিড় ওকে ঠিক করে শুয়ে নিজের ঘরে যায় ।
সকালে মায়া ঘুন থেকে উঠে দেখে নিবিড় ওর সামনে কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মায়ার হটাৎ নির্ঝরের কথা মনে পড়ে আর মায়া ডুকরে কেঁদে উঠে ।
নিবিড় ব্যাপার টা বুঝতে পারে মায়া কে সান্তনা দেয়। কঠিন সময়ে একটা মানুষের একটু মেন্টালি সাপোর্ট অনেক কিছু । মেন্টালি সাপোর্ট দেওয়া মানুষ পাওয়া খুব কষ্টের।
মায়া নিজেকে সামলাতে বাগানে হাটাহাটি করছিল তখনই কারোর কথা বলার আওয়াজ পায়। মায়া বাগানের পিছনের দিকে গিয়ে দেখে মায়ার শশুর, মায়ার আব্বু আর নিবিড় দাড়িয়ে আছে সাথে একটা পুলিশ
মায়া আগ্রহ নিয়ে শুনতে চাইলে এমন কিছু শুনে যা মায়া বিশ্বাস করতে পারছে না
চলবে