অদ্ভুত_অনুভূতি পার্ট_১

0
1996

বিয়ের একবছর পূর্ণ হওয়াতে স্বামীকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই শকড খেলাম আমার সামনে আমার স্বামীর নিথর দেহ পড়ে আছে । আমার পা মনে হয় অবস হয়ে গেছে মাথাটা বন বন করে ঘুরছে এই বুঝি চোখ বুঁজে এলো।

কোনো স্ত্রী নিজের স্বামীকে এভাবে দেখে ঠিক থাকতে পারবে না। ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাদি কিন্ত চোখ ও যেনো বেইমানি করছে এক ফোঁটা পানি ও বের হচ্ছে না। স্বামীর লাশের পাশে বসে আছি তখনই পিছন থেকে আমার কাঁধে কেউ হাত রাখলো । পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিবিড়

নিবিড় কে দেখে যেনো জীবন ফিরে পেলাম ওকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাদতে থাকি আর নিবিড় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।

(আসুন পরিচিত হয়ে নি আমি মায়া চৌধুরী আর আমার স্বামী নির্ঝর চৌধুরী। পারিবারিক ভাবে আমাদের বিয়ে হয় খুব হ্যাপি ছিলাম লাইফ কিন্ত আমার কপালে মনে হয় বেশি সুখ লিখা ছিল না। নিবিড় আমার ছোট বেলার বন্ধু খুব ক্লোজ আমরা বাকিটা গল্প পড়ে জানতে পারবে )

সোফায় বসে নিবিড় কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে আছি আর নিবিড় আমাকে শান্ত করতে ব্যাস্ত । সামনের সোফায় আমার শশুর আর আব্বু বসে আছে ।

নিবিড় আমাকে শান্ত করতে ব্যাস্ত হটাৎ আমার শশুর বলে উঠে

“‘মায়া মা নির্ঝর তো কখনো নেশা করে না তাহলে হটাৎ ড্রিংক করতে কেনো গেলো?

আমি কিছু বলছি না দেখে নিবিড় বললো

“‘আংকেল ওর বন্ধুরা বলছে ও নাকি প্রায় এসব খেত কিন্ত আজ অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেছে

আমার শশুর নিহাল চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

“‘ মা হারা ছেলেকে আমি মানুষকে করতে পারিনি ওর মায়ের অভাব পূরুন করবো বলে কখনো কোনো কাজে বাধা দেয়নি কিন্ত ছেলেটা আমার এমন কোনো সময় করে না (মাথা নিচু করে)

এবার আমার আব্বু বলে
“‘ নিবিড় তুমি মায়া কে ঘরে নিয়ে যাও

আমি কেঁদেই যাচ্ছি আর নিবিড় আমাকে সামলাচ্ছে।

আমার আব্বুর সাথে সাথে আমার শশুর বললো

“‘ নিবিড় বাবা তুমি মায়া কে নিয়ে যাও ওকে এখন এসব শুনার দরকার নেই

নিবিড় হা জবাব দিয়ে আমাকে ঘরে নিয়ে গেল।

এদিকে

আমার আব্বু আর শশুর এর মধে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।

“‘ নির্ঝর কে তো আমি কখনো ওসব খেতে দেখিনি তাহলে হটাৎ ও কিসের জন্য খেতে গেলো।

“‘ সেটা আমিও বুঝতে পারছি না (চিন্তিত হয়ে)

“‘ আমাদের থেকে তুই কিছু লুকাছিস না তো

“‘ আমি তোদের থেকে কি লুকাবো আমার ছেলে মারা গেছে আর তুই

“‘ মায়ার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে নির্ঝরের এভাবে চলে যাওয়া ও কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না
নির্ঝর আর ও তো একে অপরকে খুব ভালোবাসত

নিহাল চৌধুরী (শশুর)একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ আসলো

নিহাল চৌধুরী কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশ অফিসার বলে

“‘ স্যার নির্ঝর স্যার এর মৃত্যু স্বাভাবিক ভাবে হয়নি

“‘ মানে (অবাক হয়ে)

“‘ উনার শরীরে কিছু ক্ষতিকারক পদার্থ পাওয়া গেছে i think উনি রোজ কিছু মাদক সেবন করতেন

‘” তোমার কি মাথা গেছে আমার ছেলে ওমন কোনো কিছু কখনো খায়নি

“‘ স্যার অনুমান থেকে বললাম কারন উনার গলায় ফুটো পাওয়া গেছে এখন রিপোর্ট আসলে বুঝা যাবে

‘” অনুমান করে কখনো কোনো কথা বলতে নেই সেটা আপনার জানা উচিৎ মিস্টার

“‘ সরি স্যার (মাথা নিচু করে )

“‘ এখন যেতে পারো

পুলিশ অফিসার যেতেই নিহাল চৌধুরী ডুকরে কেঁদে উঠে । নিরব চৌধুরী উনাকে সামলাচ্ছে । খুব আদরের সন্তান ছিল নির্ঝর

এদিকে

“‘ মায়া প্লিজ আর কাদিস না এভাবে হলে ত তোর শরীর খারাপ করবে পরিবারের বাকি লোকদের তো তোকে সামলাতে হবে এভাবে কান্না করলে কি চলবে

“‘ নিবিড় আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল কিন্ত কি থেকে কি হয়ে গেল কত প্ল্যান করেছিলাম সব শেষ আমি কি করে থাকবো ওকে ছাড়া বলে দে আমায় কি করে (কাদতে কাদতে)

‘” আমি বুঝতে পারছি তোর অবস্থা কিন্ত এখন তো আমাদের কারোর কিছু করার নেই

“‘ আমি যাবো আমার নির্ঝর এর কাছে যাবো ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না

বিছানা থেকে উঠে । মায়ার পাগলামি থেকে নিবিড় ওকে সামলাচ্ছে । এক পর্যায়ে মায়া নিবিড়ের বুকে ঢলে পড়ে।

“‘ আল্লাহ আর কত কষ্ট দিবে তুমি বলো তো মায়াকে এভাবে আমি আর দেখতে পারছি না কেনো করলে এমন

নিবিড় মায়াকে বিছানায় শুয়ে দেয়। নিবিড় মায়ার কপালে ভালোবাসা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় । নিবিড়কে আসতে দেখে নিরব চৌধুরী বলে

“‘ মায়া এখন কেমন আছে ?

“‘ কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে গেছে নির্ঝরের মৃত দেহ ওভাবে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছে না

“‘ ছেলেটার মাটি দিতে হবে শেষ বয়সে এসে এত বড়ো ধাক্কা সামলাবো কি করে সারাবাড়ি জুড়ে তো মায়া আর নির্ঝরের অস্থিত্ব কি করে মুছে ফেলবো (চোখের পানি মুছে)

নিবিড় নিহাল চৌধুরী এর কাছে গিয়ে বলে

“‘ আংকেল প্লিজ এভাবে ভেংগে পড়বেন না চোখের পানি না ফেলে নির্ঝরের জন্য দোয়া করেন সেটাই লাভ হবে। আমিও আমার আপন মানুষকে হারিয়েছি আর নির্ঝর তো আমার খুব কাছের ছিল আমার ও ওর এভাবে চলে যাওয়াতে অনেক কস্ট হচ্ছে

নিহাল চৌধুরী হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। কোনো বাবা নিজের সন্তান কে এভাবে দেখে ঠিক থাকতে পারবে না । সেখানে নির্ঝর নিহাল চৌধুরির একমাত্র সন্তান খুব যত্নে বাবা মা নিজের সন্তান কে বড়ো করে তুলে সেই সন্তানের এভাবে চলে যাওয়া কোনো বাপ মা মেনে নিতে পারবে না

বেশ কিছুক্ষণ পর নির্ঝর এর দেহ আনা হয়। মায়া এখনও সেন্সলেস হয়ে আছে হয়তো শেষ বারের মত ওর নির্ঝর কে দেখা হবে না ।

নিবিড় নির্ঝরের আব্বু আর মায়ার আব্বু মিলে নির্ঝরের শেষ কাজ সম্পূর্ণ করে।

নিবিড় নির্ঝরের কবরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে

“‘ মায়া কে এভাবে একা কেনো রেখে গিলে তোমাকে ছাড়া মায়া থাকবে কি করে খুব ভালোবাসে তোমাকে কেনো আপন মানুষ গুলো এভাবে ছেড়ে চলে যায় কেনো

নিবিড় নিজের চোখের পানি মুছে বাড়ির দিকে যায়।

মায়ার সেন্স ফিরতেই সে নির্ঝর নির্ঝর বলে পাগলামি করছে । কেউ মায়াকে আটকাতে পারছে না । নিবিড় কে দেখা মাত্র মায়া দৌড়ে যায়

‘” আমার নির্ঝর কে ওরা কোথায় রেখে আসছে বল আমাকে কোথায় রাখছে আমি যাবো আমার নির্ঝরের কাছে আমাকে নিয়ে চল

“‘ মায়া প্লিজ পাগলামি করিস না একটু শান্ত হ
আমি নিয়ে যাবো তো তোর নির্ঝরের কাছে

“‘ সত্যি নিয়ে যাবি তো

“‘ তোর নিবিড় কি তোকে কখনো মিথ্যে বলেছে নিয়ে যাবো কিন্ত তার আগে তোকে কিছু খেতে হবে না খেলে শরীর খারাপ করবে

“‘ না আমি কিছু খাবো না আমি আগে নির্ঝরের কাছে যাব

“‘ শুন তুই যদি কিছু না খাস তাহলে নির্ঝর কত রাগ করবে বল তো তুই কি চাস

“‘ না না না আমি খাবো খাবো তো

নিবিড় ইশারা করে খাবার আনতে বলে। মায়া খেয়ে নেয়। নিবিড় খাওয়া শেষ করে মায়ার শরীরে ইঞ্জেকশন পুস করে । আর ক্ষণিকের মধে মায়া গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়

নিহাল চৌধুরি ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে ঘর বন্ধি হয়ে আছে । নিবিড় মায়া কে শুয়ে দিয়ে নিহাল চৌধুরি রুমে যায় । নিরব চৌধুরী মায়ার মাথায় কাছে বসে আছে ।

নিবিড় অনেক কস্ট নিহাল চৌধুরী কে খাইয়ে দেয়। একদিন মানুষটার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে তার উপর আবার হার্টের রুগী কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।

নিবিড় সব কাজ করে এসে যেই শুয়েছে ওমনি মায়ার চিৎকার কানে আসে নিবিড় তাড়াতাড়ি করে মায়ার রুমে যায়

গিয়ে দেখে মায়া এক কোনায় গুটি মেরে বসে বসে কাদচে।

নিবিড় যেতে গেলে মায়া বলে

‘”আমায় মেরো না আমি কিছু করিনি আমায় মেরো না (কাদতে কাদতে)

চলবে

অদ্ভুত_অনুভূতি পার্ট_১
#নুসরাত_জাহান_অংকুর

(নতুন গল্প নিয়ে আবার হাজির হলাম গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here