খবরদার জোর করে কিছু করতে আসবেন না।
হৃদয়:- পাঞ্জাবী খুলতে খুলতে তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী, জোর করার কি আছে?
প্রেমা:- বিয়েটা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে। তা আপনি ভালো করেই জানেন।
হৃদয়:- দেখো আমি তোমাকে ফোর্স করে বিয়ে করিনি। বরং তোমার ইচ্ছেতেই বিয়ে হয়েছে,
প্রেমা:- আমার ইচ্ছেতে হাউ ফানি, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি। আমার বাবা মা আপনার অর্থ সম্পদ দেখে বিয়ে দিয়েছে, নয়তো আপনার মত এক সন্তানের বাবাকে আমি কেন বিয়ে করতে যাবে?
হৃদয়:- আমিতো কোন কিছু লুকিয়ে তোমাকে বিয়ে করিনি। সব কিছু জেনে শুনেই তোমার বাবা মা তোমার আমার বিয়ে দিয়েছে। কথাটা বলেই হৃদয় রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
— প্রেমা এক দৃষ্টিতে হৃদয়ের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো। দরজাটা লেগে যাবার পর মনে মনে বললো বেঁচে গেলাম। মনের ভিতর ভয় নিয়ে খাঁটের এক কর্ণারে যেয়ে শুয়ে পরলো প্রেমা। ভয়ে ভয়ে দু’চোখ বন্ধ করতে পারছে না প্রেমা যদি আবার হৃদয় চলে আসে রুমে। এসে জোর পূর্বক কিছু করে। চিৎকার করলেওতো কেউ আসবে না। কারণ আমি তার বিবাহিত স্ত্রী। সে চাইলে আমার সাথে সব কিছু করতে পারে আমার কিছু করার থাকবে না। আর চিৎকার করলেও মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। সেই ভয়ে দু’চোখের পাতা কোন ভাবেই এক করা হচ্ছে না প্রেমার। শেষ রাতে দু’চোখ এতোটাই ক্লান্ত হয় যে প্রেমার পক্ষে আর চোখ মেলে চেয়ে থাকা সম্ভব হয় না। ঘুমের মাঝে প্রেমা স্বপ্ন দেখে নিজের বাসর ঘরের স্বপ্ন যেখানে জোর পূর্বক হৃদয় তার অধিকার আদায় করছে আর প্রেমা নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে হৃদয়কে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এক সময় চিৎকার করে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে প্রেমা, সমস্ত শরীর গেমে শাড়ি লেপ্টে গেছে গায়ের সাথে, প্রেমা হাঁপাতে হাঁপাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল নয়টা বেজে গেছে। বুঝতে পারলো এতো সময় যা ঘটেছে তা স্বপ্নের মাঝে। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশ রুমে যেয়ে ঝর্ণাটা ছেড়ে দিয়ে শাওয়ার নিতে শুরু করলো। দীর্ঘ সময় শাওয়ার নেয়ার পর একটা টিশার্ট পরে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসতেই। দরজা খুলে সরাসরি হৃদয় রুমের ভিতর ঢুকে পরলো।
প্রেমা:- দেখেই চিৎকার করে উঠতে যাবে এমন সময় হৃদয় দৌঁড়ে এসে মুখ চেঁপে ধরে।
হৃদয়:- চুপ একদম চুপ একটু শব্দ বের হয়না যেন বাহিরে সকলে দাঁড়িয়ে আছে। বলে মুখ ছেড়ে দেয়।
প্রেমা:- ছাড়া পেয়ে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি তোয়ালে বুকের উপর তুলে নিয়ে আপনি হুটহাট কেন চলে আসেন রুমে?
হৃদয়:- হুটহাট মানে কি? এটা আমার রুম আর আজই প্রথম আসলাম। আর আমার আসার পূর্ণ অধিকার আছে বলেই আমি এসেছি। এখন ফটাফট তৈরি হয়ে নাও। সবাই বাহিরে তোমার অপেক্ষা করছে।
প্রেমা:- কিসের অপেক্ষা আর কেন?
হৃদয়:- নতুন বউ বরণ করার জন্য সবাই বাহিরে আছে। তাড়াতাড়ি শাড়ি পরে নাও। আমি অপেক্ষা করছি।
প্রেমা:- আমি শাড়ি পরতে পারি না।
হৃদয়:- মেয়ে মানুষ শাড়ি পরতে পারো না তো কি পারো? এখন আমি কা শাড়ি পরিয়ে দিবো?
প্রেমা:- খবরদার সুযোগ নেবার চেষ্টা করবেন না।
হৃদয়:- কি আজব কথা আমি কেন সুযোগ নিবো? এই ধরো এগুলা ওয়াশ রুমে যেয়ে পরে আসো আমি অপেক্ষা করছি।
প্রেমা:- না পেরে বাধ্য হয়ে, শাড়ি কাপড় গুলো নিয়ে সোজা ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো। কিন্তু ওয়াশ রুমে অনেকটা সময় চেষ্টা করেও ঠিক মত শাড়ি পরতে পারছে না। এদিকে হৃদয় বেশ কয়েকবার এসে ওয়াশ রুমের দরজায় নক করেছে। ব্লাউজ আর পেটিকোটের উপর কোন রকম শাড়িটা পেঁচিয়ে তাই কোন রকমে বের হয়ে আসলো প্রেমা। হৃদয়ের সামনে যেয়ে দাঁড়াতেই হৃদয় হেসে দিয়ে বললো শাড়ি পরা হলো?
প্রেমা:- যেমন পেরেছি তেমন পরেছি, এর চেয়ে ভালো আমি পারি না।
হৃদয়:- ঠিক আছে চলো কিন্তু একটা কথা আছে যাবে সবার সামনে যদি শাড়ি খুলে পরে যায়। কিংবা শাড়িতে পেঁচিয়ে তুমি নিজে পরে যাও, তখন সবার হাসির কারণ হলে কিন্তু আমি কিছু বলবো না।
প্রেমা:- মানে?
হৃদয়:- মানে খুব সহজ, যেভাবে শরীরের সাথে শাড়ি পেঁচিয়ে রাখছো তাতে যে কোন সময় তোমার পরে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে, আর ড্রেসিং টেবিলে যেয়ে একটু ঘুরে দেখে নাও পিঠের সাইড পুরোটাই দেখা যাচ্ছে।
প্রেমা:- দ্রুত পিঠের উপর হাত দিতেই বুঝতে পারলো সত্যিই পিঠের উপর শাড়ির কোন অংশই পরেনি। প্রেমা করুণ দৃষ্টি নিয়ে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে তাহলে এখন উপায়?
হৃদয়:- উপায় একটা আছে,
প্রেমা:- কি উপায়?
হৃদয়:- আমি তোমাকে ঠিক করে শাড়ি পরতে সহযোগিতা করতে পারি।
প্রেমা:- সুযোগ নিতে চাচ্ছেন?
হৃদয়:- রেগে প্রেমাকে খাটের উপর ধাক্কা মেরে, সুযোগ কিভাবে নেয় দেখবে বলেই খাটের উপর যেয়ে নিজের মুখটা প্রেমার মুখের খুব কাছে নিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই প্রেমা দু’চোখ বন্ধ করে নেয়। হৃদয় খাট থেকে উঠে দাঁড়ায়, নিজের গায়ে কোন রকম স্পর্শ না পেয়ে প্রেমা চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পায় হৃদয় অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে, প্রেমা খাট থেকে উঠতে যেয়ে বুঝতে পারে গায়ে জড়িয়ে রাখা শাড়িটা আর গায়ে নেই তা পা পেঁচিয়ে খাটের নিচে পরে রয়েছে। তাড়াতাড়ি উঠে শাড়িটা হাতে তুলে নিয়ে বলে পরিয়ে দেন।
হৃদয়:- তুমি পেছন থেকে কোন একটা কাপড় দিয়ে আমার চোখ দুটো বেঁধে দাও যেন তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দেবার সময় দেখতে না পাই।
প্রেমা:- কোন দরকার নেই, তখন কোথায় না কোথায় হাত দিবেন।
হৃদয়:- রেগে ঘুরে তাকায় প্রেমার দিকে, চোখ দুটো রাগে লাল টকটকে হয়ে গেছে, তবুও নিজেকে সামলে রেখে প্রেমার হাতে থাকা শাড়িটা টান দিয়ে নিয়ে নিলো। তারপর পরিয়ে দিতে শুরু করলো। হৃদয়ের স্পর্শে প্রেমা কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। যখন কুঁচি গুলো পেটের উপর গুজে দিচ্ছিলো তখন হৃদয়ের হাতের স্পর্শে প্রেমার দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে। কখন যে শাড়ি পরানো শেষ হয়েছে সেদিকে প্রেমার কোন খেয়াল নেই। হৃদয় বেশ কিছুটা সময় এদিক সেদিক ঘুরে ভালো করে দেখলো সব ঠিকঠাক আছে কিনা। তারপর
হৃদয়:- কি যাবে নাকি চোখ বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে থাকবে?
প্রেমা:- চোখ মেলে তাকিয়ে আরও একবার লজ্জা পায়। তারপর হৃদয়ের সাথে সাথে বাহিরে যেতে শুরু করলো। ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হৃদয় প্রেমার দিকে তাকিয়ে বললো আমাদের সম্পর্কটা কেমন তা যেন ভুল করেও কেউ বুঝতে পারে না। স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক যেমন সম্পর্ক থাকে ঠিক তেমনটাই যেন সবাই বুঝে। বলেই হাঁটা শুরু করলো। প্রেমা মনে মনে মানে আমাকে অভিনয় করতে হবে। ভাবতে ভাবতেই নিচে নেমে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নিচে নেমে আসলো। ঘর ভর্তি মেহমান সব মেহমানকে ঠেলে কিউট একটা বাচ্চা মেয়ে মা মা বলতে বলতে দৌঁড়ে আসতে শুরু করলো। প্রেমা এক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা দৌঁড়ে এসে প্রেমার সামনে দাঁড়ালো।
মিহি:- মামুনি তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে?
— মিহির এমন প্রশ্নের কি উত্তর দিবে প্রেমা বুঝতে পারলো না। এমন সময় হৃদয় এসে মিহিকে কোলে তুলে নিয়ে মামুনি পড়াশোনার জন্য বিদেশ গিয়েছিলো। মিহি বাবার কপালে চুমু দিতে দিতে আমি মামুনির কোলে যাবো। মেয়েকে কি বলবে বুঝে উঠার আগেই প্রেমা মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। মিহি আনন্দে প্রেমার কোলে চলে গেলো। সকলের সাথে একে একে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেলো এদিকে সকাল থেকে কোন খাবারই খায়নি প্রেমা, প্রচণ্ড খুদায় পেটের ভিতর হাহা কার করছে কিন্তু এতো মানুষের মাঝে একা খাওয়াও সম্ভব নয়। এদিকে মিহি যেন প্রেমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতে পারছিলো না। হঠাৎ কোথায় থেকে কেউ একজন এসে প্রেমার হাত ধরে টান দিয়ে নিচ তলার একটা রুমে ঢুকিয়ে ফেললো। ভয়ে প্রেমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। আত্মার পানি শুকিয়ে গেলো অন্ধকারে কোন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চিৎকার করতে যাবে এমন সময় রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। চোখের সামনে হৃদয়কে দেখতে পেলো।
প্রেমা:- একি আপনি? এমন ভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেন? কি চান আপনি?
হৃদয়:- কিছুই চাইনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।
প্রেমা:- বললেই হলো কিছু চান না? নিশ্চই চান আমাকে শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে তাইতো এই অন্ধকার বন্ধ ঘরে নিয়ে এসেছেন। কি চান সুন্দর এই দেহটা? বলেই শাড়ির আঁচলটা একটানে খুলে ফেললো প্রেমা।
— হৃদয় এমন পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। রাগে সমস্ত শরীর লাল হয়ে গেলো হৃদয় প্রেমাকে থাপ্পর মারতে যেয়েও হাতটা নামিয়ে নিয়ে টেবিলের উপর সাজানো প্লেটটা দেখিয়ে দিয়ে বললো খেয়ে নিও। বলেই রুমের দরজা খুলে বের হয়ে গেলো। প্রেমা অপলক চেয়ে রইলো হৃদয়ের চলে যাবার পথে। দরজটা লেগে যেতেই কান্না করে দিলো প্রেমা নিজেকে নিজেই বলতে শুরু করলো এ আমি কি বললাম।
#হারানো_সুর -১ম পর্ব
©শাহরিয়ার