আঠারো_বছর_বয়স পর্ব-১৭
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। অন্ধকার ঘরে বইছে দখিনা বাতাস। বিভোর রুহিকে বলছে,
‘একদিন একটা মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো। গ্রামের মেয়ে। কিছু জানতোনা, বুঝতো না। সে ট্রেনে উঠেই ঘুমিয়ে পড়লো। সেই ট্রেনেরই একটা ছেলে হঠাৎ দেখতে পেলো একটা মেয়ে ঘুমুচ্ছে। কামরাটা তখন খালি ছিলো বিধায় মেয়েটির নিরাপত্তার জন্য ছেলেটি মেয়েটির কাছাকাছি সিটে বসে। মেডিকেল কলেজের ছাত্র সে। ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলো। তখন বেশ রাত। মেয়েটির কপালে কাঁটাছেড়া ছিলো। ছেলেটি মেয়েটিকে ডাকলো। হঠাৎ সামনে একটা অচেনা লোককে দেখতে পেয়ে মেয়েটি ভয়ার্ত চাহনি নিয়ে তাকায়। ছেলেটি ওকে সহজ করার জন্য বিভিন্ন কথা বলে। একসময় জানতে পারে ডাক্তারদেরকে মেয়েটা খুব পছন্দ করে। ছেলেটি হাসলো। মেয়েটিকে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো মেয়েটি অপূর্ব সুন্দরী। লালচে আভায় গাল দুটি টকটকে রক্তজবা ফুলের মতো স্নিগ্ধ লাগছিলো। ছেলেটি মেয়েটার নাম দেয় রক্তজবা। মেয়েটি জানতোনা সে কোথায় যাবে, ছেলেটা ওকে বকাঝকাও করলো। হঠাৎ কয়েকটা ছেলে ধরেবেঁধে ওদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে দেয়।’
রুহি অবাক হয়ে বলল,
‘এটা কোনো গল্প হলো নাকি!’
বিভোর মিষ্টি হেসে বলল,
‘হ্যাঁ। তুমি শুনো আগে।’
তারপর আবার বলা শুরু করলো,
‘হঠাৎ এইরকম একটা কান্ড ছেলেটা মানতে পারলোনা। সে ভাবলো মেয়েটার জন্যই সবকিছু হয়েছে তাই ওকে শাস্তি দিবে। কিন্তু সদ্য ভোরের স্নিগ্ধ আলোতে আঠারো বছর বয়সের সেই ছোট্ট মেয়েটির মুখপানে তাকিয়ে ছেলেটির মনে হলো ওরা দুজনই পরিস্থিতির শিকার। মেয়েটির সাহায্য দরকার ছিলো বিধায় সে সিদ্ধান্ত নিলো মেয়েটাকে সাহায্য করবে এবং ওর বাড়ি দিয়ে আসবে, ফ্যামিলির লোকজনদের সবকিছু বুঝিয়ে বলবে। হঠাৎ হয়ে যাওয়া বিয়েটা ভেঙ্গে দিবে।’
এতটুকু বলে বিভোর থামলো। লক্ষ করলো রুহির চোখে পানি। বিভোর আবারও বলল,
‘কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস। মেয়েটার বাড়ির লোক ভালো ছিলোনা। খুব জঘন্য আচরণ করলো ওর সাথে। ছেলেটা এসব দেখে সিদ্ধান্ত নিলো মেয়েটাকে ঢাকায় নিজের সাথে নিয়ে আসবে। পড়াশোনা করাবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। যেহেতু সে একজন মেডিক্যাল ছাত্র ছিলো সেই সুবাদে তার সাথে অনেকের ভালো সম্পর্ক ছিলো। ঢাকায় নিয়ে এসে সবকিছু বন্দোবস্ত করে দেয় ছেলেটি। ওর এক বান্ধবীর তত্ত্বাবধানে রাখে। এতটুকু পর্যন্ত মেয়েটি ওর সাথেই ছিলো। আঠারো বছর বয়সের সেই মেয়েটির প্রতি তখন ছেলেটার কোনো অনুভূতি জন্মায়নি। ভেবেছিলো বিয়েটা ভেঙ্গে দিবে। কিন্তু সদ্য করা বিয়ে ভাঙ্গা যায়না, অনেক ফর্মালিটি আছে। তাই এই কাজটা করা ছেলেটির পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাছাড়া পড়াশোনার চাপে আর বিদেশে একটা কোর্স করতে গিয়ে ছেলেটি নিতান্তই ভুলে গেলো তার বিয়ের কথা, ছোট্ট বউটির কথা।’
রুহি চুপচাপ হয়ে সবকিছু শুনছে। বিভোরের কথায় বিভোর হয়ে আছে। বৃষ্টির ঝাপটা প্রবল। কেমন মায়াময় আভাস চারদিকে।
‘ছেলেটা আর মেয়েটার বিয়ের কথা তখনো কেউ জানতোনা। কখনো খোঁজও নেয়নি তার বউয়ের। মেয়েদের মন বোঝার ক্ষমতা সবসময়ই কম তার।’
রুহি এবার বলে উঠলো,
‘ জি!’
বিভোর গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ কিন্তু ছেলেটা একটা ভুল করে ফেলেছে।’
‘ কী?’
‘ বিদেশে ওর ইন্সটিটিউটের একজন কলিগ ছিলো। ভারতীয় বাঙালি, তবে মুসলমান। সে ছিলো নিদারুণ সুন্দরী। কথাবার্তা বলতো খুব চমৎকারভাবে। সবদিক দিয়ে মেয়েটা ছিলো ভালো। হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করতো৷ সব ছেলেরা মেয়েটার প্রতি ইন্টারেস্টেড ছিলো। নাম ছিলো জান্নাহ, ওর মনটা ভালো ছিলো। আর ইন্সটিটিউটের অন্যান্য ছেলেদের মতো ওই ছেলেটা ছিলোনা। সে ভালোবাসতো বই পড়তে, সবার কাজে সাহায্য করতো। জান্নাহ প্রায় সবাইকে রিফিউজ করলো। কিন্তু বাংলাদেশী ডাক্তারকে নিজ থেকে প্রপোজ করেছে। সেসময় ছেলেটা ভাবলো এমন জীবনসঙ্গী মন্দ হবেনা। সে রাজি ছিলো ওকে বিয়ে করতে। কখনো কোনো অবৈধ সম্পর্ক ছিলোনা ওদের। মেয়েটার রুপ দেখে নয় মূলত গুণ দেখেই আকৃষ্ট হয়েছিলো ছেলেটা। অতঃপর এক গ্রীষ্মের সকালে জান্নাহ এসে জানালো ওদের রিলেশন কন্টিনিউ করা যাবেনা। কাউকে সে ঠকাচ্ছে, কিন্তু জানেনা কাকে। এই বলে চলে গেলো। ছেলেটি তখন মুষড়ে পড়লো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ঠিকও হয়ে গেলো। আসলে ওটা প্রকৃত ভালোবাসা ছিলোনা। প্রকৃত ভালোবাসা কখনোই ভোলা যায়না।’
এই পর্যায়ে এসে রুহি বলল,
‘ ছেলেটা ঠিক করেনি। কেন সে বউকে ভুলে গেলো? একবারও মনে করার বা খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না! সে কী জানে এই তিন বছরেরও বেশি সময় মেয়েটা কত স্ট্রাগল করেছে? সবকিছু খুব সহজ মনে করে কেন ছেলেটা? হেসেখেলে তো জীবন কাটানো যায়না। জীবন তো সিনেমার চেয়েও কঠিন।’
বিভোর বলল,
‘ হ্যাঁ। কিন্তু তুমি ভেবে বলো ওইরকম পরিস্থিতিতে অচেনা একটা মেয়েকে বউ হিসেবে মেনে নেওয়াটা কী এতোই সহজ? ছেলেটার কথা ভেবে বলবে।’
‘ আমি কিছু জানিনা।’
‘ হ্যাঁ। ওটাই পারো।’
‘ মানে?’
‘ নিজের মতো উল্টাপাল্টা ভেবে মানুষকে ভুল বুঝতে ঠিকই পারো। একবারও বিপরীত দিকের মানুষটাকে বুঝতে চাওনা।’
‘ কিন্তু তা বলে এটা নয় যে সে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখবে।’
‘ তুমি যদি কোনোকিছু নেগেটিভ ভাবো ইটস টোটালু ইউর প্রবলেম। মেয়েটির সাথে শুধু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো, ঠিক করেছিলো দুজন বিয়ে করবে। ওটা কী ভুল বলে মনে হয় তোমার?’
‘ অবশ্যই।’
‘ বুঝিয়ে বলো।’
‘ কেউ যদি নিজের বিয়ে ভুলে গিয়ে অন্যকে বিয়ে করার কথা ভাবে তাহলে সেটা ভুল নয় কী? হতে পারে বিয়েটা হঠাৎ হয়েছে, কেউ কাউকে চিনেনা। কিন্তু হয়েছে তো? এটা কী তার বউকে ঠকানো হলোনা?’
‘ সে মানছে একটা ভুল হয়েছে, কিন্তু ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতাও কী রাখেনা? সে তো বউয়ের কাছে ফিরতে চায়।’
রুহি কথাটা শুনে থম মেরে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ পর শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ না। কারণ ওই মেয়েটা ছেড়ে চলে গিয়েছে বলেই ছেলেটা ফিরে এসেছে। নাহলে কখনোই আসতো না, বিয়ে করে নিতো। তখন তার বউয়ের কথা সে ভুলেই যেতো চিরজন্মের মতো।’
‘ শুনো..!’
বিভোরকে কিছু বলতে না দিয়েই রুহি বলল,
‘ তাছাড়া এখন আপনি দেখলেন যে আঠারো বছর বয়সের সেই পিচ্চি বউটি দেখতে খুব সুন্দরী। এটাও ফেরার কারণ হতে পারে। নিশ্চয়তা কী যে, সে সবার অন্য নারীতে আকৃষ্ট হবেনা?’
বিভোর ধমক দিয়ে বলল,
‘আমি যদি সেরকমই হতাম তাহলে তোমাকে সাহায্য করতাম না। স্বামীর অধিকার সেদিনই খাটাতে পারতাম। বিদেশে গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে বেলাল্লাপনা করে বেড়াতাম৷ নিজের গার্লফ্রেন্ড এর কথাও স্বীকার করতাম না৷ এরকম হাজার চান্স রেখেও আমি কোনো খারাপ কাজ কিছু করিনি। জান্নাহের রুপ দেখে নয় ওর গুণ দেখেছি আমি। আর আজ যখন এতগুলো দিন পরে তোমাকে কাছ থেকে দেখছি, বোঝার চেষ্টা করছি আমার মনে হচ্ছে তোমাকেই আমার দরকার। কাউকে যখন তোমার হাত ধরতে দেখি, তখন প্রচন্ড খারাপ লাগে। এরপরও তুমি আমাকে বুঝবেনা রক্তজবা?’
রুহি চুপ করে রইলো।
বিভোর ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
‘ কীভাবে বুঝালে তুমি বুঝবে?’
‘ আমি কিছু বুঝতে চাইনা।’
‘ আমি কখনো কারোর রুপে আকৃষ্ট ছিলাম না। তোমাকে দেখার পর থেকেই এক অদ্ভুত অনুভূতির দেখা পেয়েছি যেটা জান্নাহের বেলায় পাইনি। তবুও তুমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও তাহলে আর কিছু বলবোনা।’
‘ কী?’
‘ তুমি তো আমাকে বিশ্বাস করছোনা। আমি যদি ক্যারেক্টারলেস হতাম তাহলে এই খালি বাড়িতে এতোক্ষণে তোমার কী হাল হতো ভাবতে পারছো?’
‘ হতেও তো পারে, নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে চাইছেন।’
বিভোর হেসে ফেললো। বলল,
‘ এজ ইউর উইশ।’
বলে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। বসার ঘরের সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। রুহি ওকে এতোটা অবিশ্বাস করে ভাবতেই বেঁচে থাকাটা বৃথা মনে হলো।
এতো কষ্ট করে লিখি, কিছু পাঠক গঠনমূলক মন্তব্য করেন শুধু। বেশিরভাগই স্টিকার বা নেক্সট কমেন্ট করেন। যদি জিজ্ঞেস করি গল্প কেমন হচ্ছে তাহলে যে পাঠক কখনো মন্তব্যই জানাননি বা আমাকে উৎসাহিত করেননি, কখনো ভুল ধরিয়ে দেননি তিনি সোজা এসে বলে দেন (ফালতু হচ্ছে, আজগুবি লিখা, অবাস্তব কাহিনী, এগুলো গল্পের কাতারেই পড়েনা, পড়ে শুধু সময় নষ্ট)। আপনারা জানেন এই কথাগুলো কাউকে কতোটা এফেক্ট করতে পারে? হতে পারে আমার লিখা অসুন্দর, আমি সেটা জানিও। কিন্তু আমিতো শিখছি এখনো, চর্চা করছি! আপনারা কেন আমার ভুল ভ্রান্তি ধরিয়ে দেন না? আমিতো চাই ভালো লিখতে, আপনারা যদি সাহায্য না করেন তাহলে কীভাবে হবে? মানুষ জন্ম থেকেই তো সবকিছু শিখে আসেনা। দু-তিন ঘন্টা সময় নষ্ট করে আমি গল্প লিখি, হাত ব্যথা হয়ে যায়। অথচ আপনারা একলাইনের মন্তব্যও জানান না। পার্সোনাল এ্যাটাককে সমালোচনা বলেনা, সমালোচনা সেটাই যেটা আমার লিখার কাজে আসবে, আমাকে শিখতে সাহায্য করবে। কারো যদি খারাপ লাগে তাহলে প্লিজ ক্ষমা করবেন। কিছু পাঠকদের ব্যবহারে অনেক কষ্ট পেয়েছি। কারো যদি একান্তই গল্প ভালো বা খারাপ লাগে তাহলে সুন্দর ভাষায় লেখার সমালোচনা করবেন। আমি তাতে খুশিই হবো। নাহলে দ্রুত শেষ করে দিবো।
চলবে…ইনশাআল্লাহ!