আঠারো_বছর_বয়স পর্ব-১৩
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
বিভোরের কথা শুনে বিষম খেলো রুহি। এই ডাক্তার নির্ঘাত পাগল হয়ে গিয়েছে। সবার সামনে এসব কি বলছে? রুহি নিচু গলায় বলল,
‘ এসব কী বলছেন আপনি?’
‘ কেন? ঠিকই তো বলছি।’
‘ দেখুন আপনার সাথে ফাজলামি করার মুড আমার নেই।’
‘ আমিতো সত্যি বলছি।’
‘ আপনার এসব কথা গার্লফ্রেন্ডকে বলতে পারেন, ওনি নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে।’
‘ তুমি হওনি?’
‘ আমি হবো কেন?’
‘ আমার মতো ছেলে তোমার সাথে থাকতে চেয়েছে এটা তো অনেক খুশির কথা তাইনা?’
‘ মোটেও না।’
‘ তুমিতো আরও বেশি খুশি হয়েছো তাইনা?’
‘ আমাকে মগা মনে হয় আপনার?’
‘ মগা? সেটা কী?’
‘ আমার হাত ছাড়ুন।’
‘ নেভার।’
‘ আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।’
‘ সো হোয়াট?? আমি আজ তোমার সাথেই ঘুমাবো।’
‘ আমার সাথে কেন ঘুমাবেন? বাসায় কী ঘর কম পড়েছে?’
‘ জানিনা।’
বিভোরের কথাবার্তায় বিরক্ত হচ্ছে রুহি। সবার মনোযোগ টিভির দিকে। রুহির ঘুম পাচ্ছে। তাই উঠে চলে আসতে নিলেই টের পেলো ওর হাত এখনো চেপে ধরে রেখেছে বুড়ো ডাক্তার।
‘ হাত ছাড়ুন।’
‘ কোথায় যাচ্ছো?’
‘ আপনাকে বলতে ইচ্ছুক নই।’
রুহি ঝটকা দিয়ে বিভোরের হাত ছেড়ে দ্রুত ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। পেয়েছে কি লোকটা? রুহিকে সস্তার প্রেমিকা মনে হয়! কীভাবে বলতে পারে রাতে একঘরে ঘুমাবে? যদি বউ হিসেবে মানতো তাহলে কথা ছিলো। জোর করে আজ ওর হাতে খেয়েছে এখন আবার উল্টাপাল্টা কথা বলছে। কী ভয়ংকর কথা, একঘরে নাকি ঘুমাবে! ভাবতেই ঘাম ছুটে গেলো রুহির। অসহ্য।
ওদিকে বিভোর হাসতে হাসতে খুন। মেয়েটাকে চমকে দিয়ে ওর ভালো লাগছে। ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। নাদিরার বাসায় থাকায় রুহিকে কাছে পাচ্ছে, কিন্তু ক’দিন পরে বাসায় চলে গেলে তো আর দেখতে পারবেনা। কী করবে বিভোর? মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেলো। সারারাত ছটফট করতে করতে ভোরবেলা চোখ লেগে এলো বিভোরের।
আজ ইভার রিসেপশন। বেলা গড়াতেই গেস্টরা বাসায় আসতে শুরু করলো। এখান থেকে সবাই একসাথে ইভার শ্বশুরবাড়ি যাবে। নাদিরা বাসার দারোয়ানকে লিস্ট ধরিয়ে বাজার করতে পাঠালেন। দই, মিষ্টি আর বাদবাকি সবকিছু। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যাবে এটুকু তো নিতেই হয়। বিভোরকেও সাথে পাঠালেন জোর করে, যেতেই চাচ্ছিলো না। জোড়াজুড়ি করায় বাজারের ব্যাগ হাতে দারোয়ানের পিছু গেলো।
দুপুর তিনটে। আজ সূর্য এতোটাও তপ্ত নয়। মেঘ করেছে আকাশে। বাতাসও ঠান্ডা। মেহমানরা যারা যাবে সবাই রেস্ট নিচ্ছে ভেতরের আর উপরের রুমগুলোতে। তারপর রেডি হতে হবে। সব কাজ সামলে রুহি গিয়েছে গোসল করতে। নাসিমা, নাদিরা সব গোছগাছ করে চা গল্প করছে। সোফায় বসে আছে বিভোরের বাবা।
বাবর চৌধুরীর একহাতে পত্রিকা, অন্য হাতে চায়ের কাপ, আয়েশ করে চা খাচ্ছে। এমন সময় তিনটা বাজারের ব্যাগ হাতে ঢুকলো বিভোর। যাচ্ছেতাই অবস্থা। পুত্রকে হাতে-পায়ে কাদা মাখানো অবস্থায় দেখে হাত থেকে চামচ পড়ে গেলো বাবর চৌধুরীর। পেট ফেটে হাসি আসছে। হু হা করে হেসে উঠলেন তিনি। বললেন,
‘ গরুর ডাক্তারের একী অবস্থা হয়েছে রে? ও ডাক্তারের মা, দেখে যাও তোমার ইডিয়ট পুত্রের কান্ড।’
বিভোরের মাথা গরম হয়ে গেলো। একেতো পুরো শরীরে জাঙ্ক আবার বাবার গা জ্বালানো কথা।
নাসিমা স্বামীর হাঁকডাক শুনে দ্রুত এলেন। বিভোরকে এই অবস্থায় দেখে আহত গলায় বললেন,
‘ এ কী অবস্থা হয়েছে তোর?’
নাদিরা জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কোথাও পড়েটড়ে গিয়েছিলি নাকি?’
বিভোর দরজায় দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল,
‘ রাস্তায় খাদ ছিলো, বাজার থেকে আসার পথে হঠাৎ একটা গাড়ি সেই খাদের উপর দিয়ে চলে যায়। সব এসে আমার গায়ে পড়ে। ছিঃ!’
বাবর চৌধুরী পুত্রের অসহায় অবস্থার পূর্ণ সুযোগ নিলেন। বললেন,
‘ বাবার সাথে বেয়াদবি করলে কী হয় বুঝতে পেরেছিস? রিভেঞ্জ অব নেচার বলে একটা কথা আছে, ভুলে যাস না।’
বিভোর মা’কে বলল,
‘ আমাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে দাও।’
‘ যা বাবা।’
বিভোর দ্রুত নিজের ঘরে গেলো। ওখানে গিয়ে ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। মেহমানদের কয়েকজন বসে গল্প করছে। এই অবস্থায় ওদের সামনে যাওয়া মানে নিজেকে হাসির পাত্র করা। বিরক্ত হয়ে বিভোর অন্যান্য ওয়াশরুমগুলো পর্যবেক্ষণ করে এলো। একটাতে কেউ গোসল করছে, অন্যটাতে একটা বুয়া কাপড় ধুচ্ছে। এতোক্ষণ ময়লা আর জীবাণুযুক্ত কাপড় গায়ে দিয়ে রেখে বিভোরের গা গুলিয়ে উঠলো। এই বিষয়গুলোতে ও বেশ সেনসেটিভ। মনে হচ্ছে এক্ষুনি গোসল না করলে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে। বিভোর দ্রুত নিচে নেমে এলো। নাসিমাকে এই ঘটনা জানালো, কিন্তু কোথাও কোনো ওয়াশরুম ফাঁকা পাওয়া গেলোনা। হঠৎ বিভোরের মনে হলো রুহির ওয়াশরুম খালি পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
মাকে জানিয়ে বাধ্য হয়ে বিভোরকে রুহির ওয়াশরুমে যেতে হলো। কারণ ওর ঘরের ওয়াশরুমটাই ফাঁকা ছিলো। রুহি সদ্য গোসল সেরে রেডি হচ্ছিলো তখনই কর্দমাক্ত বিভোর এসে বলল,
‘ তোমার ওয়াশরুম ফাঁকা আছে?’
রুহি বড়বড় চোখ করে বলল,
‘ আপনার এ অবস্থা কেন?’
‘ এক্সিডেন্ট!’
‘ জি ফাঁকা আছে।’
আর কোনো কথা না বলে বিভোর তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকলো। রুহির হাসি পেলো। কিন্তু হাসাহাসি বন্ধ করে সাজগোজে মন দিলো। লাল রঙের সালোয়ার-কামিজে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো। চুলগুলো ছেড়ে দিলো পিঠের উপর। হালকা মেক-আপ করলো। পার্স গোছাতে যাবে তখনই বাথরুমের দরজায় ধ্রিমধ্রাম শব্দ হতে লাগলো। রুহি চমকে উঠলো। কোথা থেকে শব্দ হচ্ছে দেখার জন্য বাইরে গেলো। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে আওয়াজ আসছে। শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে মাথায় এলো উল্লুক ডাক্তার ওর ওয়াশরুমে। এই লোকটা এরকম করছে কেন? দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রুহি জিজ্ঞেস করলো,
‘ আপনি এরকম করছেন কেন?’
ভেতর থেকে বিভোর উওর দিলো,
‘ আমাকে একটা হেল্প করো।’
রাগত স্বরে রুহি বলল,
‘ কীসের হেল্প? এরকম অভদ্রের মতো দরজা ধাক্কাধাক্কি করছেন কেন? বাসায় অনেক মেহমান আছে, তারা কী ভাববে!’
বিভোর বলল,
‘ আই ডোন্ট কেয়ার।’
‘ ডিজগাস্টিং।’
‘ কথা না বলে চুপচাপ আমাকে একটা টাওয়াল দাও।’
রুহি বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ কেন? আপনি টাওয়াল আনেননি?’
‘ তাহলে কী চাইতাম তোমার কাছে?’
‘ টাওয়াল লাগবেনা, কাপড় পরে বেরিয়ে আসুন।’
‘ আরে বাবা, আমি কিছুই আনিনি। তুমি কী চাচ্ছো আমি এমনিই বেরিয়ে আসি? ওকে, ডোন্ট মাইন্ড।’
রুহি বিভোরের অসংলগ্ন কথাবার্তায় হতভম্ব হয়ে গেলো। কীসব বলছে ও!
‘ না না। দিচ্ছি আমি। কিন্তু আপনি তো অন্যের জিনিস ইউজ করেন না।’
‘ কে বলেছে?’
‘ আপনার আম্মু।’
‘ করিনা। কিন্তু তোমারটা করতে তো অসুবিধা নেই। আফটার অল আমার বউ হও তুমি। আমার জিনিস তোমার, আবার তোমার সবকিছু আমার।’
রুহি স্তব্ধ হয়ে গেলো। বউ? বিভোরের বউ? বাথরুম থেকে বিভোর রুহিকে তাড়া দিলো। রুহি দ্রুত বারান্দায় গেলো তোয়ালে আনতে। ওদিকে রুহিকে চমকে দিয়ে ভেতরে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে ডাক্তার। আচ্ছা, মেয়েটাকে আরেকটু চমকে দিলে কী হয়? না থাক, সবাই তাড়া দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি বেরুতে হবে।
দরজার অল্প একটু ফাঁক দিয়ে রুহি বিভোরের হাতে টাওয়াল দিলো। মনে মনে হাজারটা গালি দিলো রুহি। ভাবখানা এমন যে রুহি ওর কলিজার বউ। হুহ!
দু’মিনিটে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই রুহির সামনে পড়লো বিভোর। তোয়ালে পরিহিত বিভোরকে দেখে লজ্জ্বায় লাল হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে অন্যদিকে সরে গেলো। বিভোর আচমকা হুট করে রুহির হাত টেনে ধরলো। একটান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। তারপর হুট করেই চুমু খেয়ে বসলো ওর গালে।
কাঠ হয়ে গেলো রুহি। এটা কী করলো বিভোর? সত্যিই এটা ডাক্তারবাবু? সুন্দরী মেয়ে দেখে কী নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি? রুহি তো চায় বিভোর ভালোবেসে ওকে নিজের জীবনসঙ্গী করুক, ওর মন বুঝতে পারুক। এরকম তো ভাবেনি বিভোরকে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে। কান্না চলে এলো রুহির। ও কারো ভালোবাসারই যোগ্য নয়, সবাই শুধু ওকে নিজের কাজে ব্যবহার করে। তবে ইভা-নাদিরা বাদে। ওরা রুহিকে কতোটা আপন ভাবে সেটা ওরা নিজেরাই জানেনা। এই মানুষগুলো না থাকলে রুহির অস্তিত্বই হয়তো থাকতো না।
ওকে ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো বিভোর। আচ্ছামতো চমকিয়েছে রক্তজবা। লাল টুকটুকে জামাতে সদ্য ভোরের আলোতে ফুটে ওঠা জবা ফুলের মতোই লাগছিলো মেয়েটাকে। লজ্জ্বায় মিশে যাচ্ছিলো বিভোরকে দেখে। রুহিকে ওরকম টমেটোর মতো লজ্জায় লাল হতে দেখে বিভোর নিজেকে আটকাতেই পারেনি।
প্রতি পর্বগুলো ১২০০ শব্দের কাছাকাছি থাকে। এতোটাও ছোট হয়না। লিখতে আসলে অনেকক্ষণ সময় লাগে। নইলে আরও বড় বড় পর্ব দিয়ে শেষ করে দিতাম। একলাইনে হলেও মন্তব্য প্রকাশ আশা করছি। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। দুইদিন ব্লকে ছিলাম, তাই দিতে পারিনি। দুঃখিত
চলবে…ইনশাআল্লাহ!